ঢাকা ০২:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

মানুষ দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করতেও ভুলে গেছে : প্রধান বিচারপতি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:১৮:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৪৩৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 
এক সময় সুদখোর ও দুর্নীতিবাজদের ঘৃণার চোখে দেখা হতো। কিন্তু এখন মানুষ দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করতেও ভুলে গেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, এই দেশ স্বাধীন হয়েছে একটি সুখী সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে। কেউ দুর্নীতি করবে, দেশের টাকা পাচার করে সুইস ব্যাংকে জমাবে, সেজন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখনও চলছে।

বিচারপতি শৈশবের উদাহরণ টেনে বলেন, আমরা যারা ষাটোর্ধ্ব তারা জানি, আগে বর্ষাকালে কাদার মধ্যে যখন গরু বেঁধে রাখতো, তখন গরুর পায়ে পোকা জন্মাতো। আমাদের মামা-দাদিরা তখন কাগজে দুর্নীতিবাজ ঘুষখোরদের নাম লিখে গুরুর গলায় ঝুঁলিয়ে দিত। তখন ঘৃণা ভরে গরুর পোকা পা থেকে চলে যেত। এভাবে সুদখোর ও দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করা হতো। এখন আমরা দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করতেও ভুলে গেছি। আসুন আমরা দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করি। কারণ দুর্নীতিবাজরা জাতি বিরোধী, রাষ্ট্র বিরোধী এবং রাষ্ট্রের উন্নয়ন বিরোধী। আসুন আমরা তাদের ঘৃণা করতে শিখি।

তিনি বলেন, আমি দুর্নীতিবাজদের অনুরোধ করে বলব, আপনারা তুলনা করে দেখেন। যারা অবৈধ সম্পদ গড়েছেন, আর যারা কষ্ট করে সৎভাবে সংসার চালিয়েছেন, তারা নিজেরাই দেখেন কাদের সন্তান মানুষ হয়েছে। আপনার দেখুন নিজেদের অবস্থানটা কোথায়।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গর্ব, দুর্নীতি এই গর্বের জায়গাকে আঘাত করে। দুর্নীতি মানুষের সেবার মান ভঙ্গুর করে দেয়। আবার অর্থের প্রতি লোভ-লালসা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। দুর্নীতি হচ্ছে সামগ্রিক উন্নয়নের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ, যা একটি জাতির আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাঁধার সৃষ্টি করে।

কেউ দুর্নীতিবাজ হয়ে জন্মায় না জানিয়ে এই বিচারপতি বলেন, কোনো মানুষই দুর্নীতিবাজ হয়ে জন্মায় না। তারা জন্মের পর পরবর্তীতে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। ধন-সম্পদ অর্জনের লোভ-লালসা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারে যুব সমাজ, দুর্নীতিবাজদের বিবেক আর দুর্নীতিবিরোধী আইনের যথাযথ ও নিরপেক্ষ ব্যবহার। এছাড়া আইনের প্রয়োগ এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক সময়োপযোগী আইনি ব্যবস্থা। দুর্নীতি এক ভয়াবহ ব্যাধি, এই ব্যাধি থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি যতই শক্তিশালী হোক, তার দুর্নীতি শনাক্ত করতে হবে এবং প্রতিরোধ করতে হবে।

এর আগে সকালে বেলুন উড়িয়ে ২০তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদ্বোধন করা হয়। এরপর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো অংশ নেন।

এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব’। দিবসটি উপলক্ষে নতুন সাজে সেজেছে দুদক। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে অফিস ভবন, মিডিয়া সেন্টার ও অফিসের পেছনের গেটজুড়ে দুর্নীতিবিরোধী ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের রেকর্ড করা বক্তব্য প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। যেখানে আরও বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান, জহুরুল হক ও দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

মানুষ দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করতেও ভুলে গেছে : প্রধান বিচারপতি

আপডেট সময় : ০৮:১৮:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : 
এক সময় সুদখোর ও দুর্নীতিবাজদের ঘৃণার চোখে দেখা হতো। কিন্তু এখন মানুষ দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করতেও ভুলে গেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, এই দেশ স্বাধীন হয়েছে একটি সুখী সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে। কেউ দুর্নীতি করবে, দেশের টাকা পাচার করে সুইস ব্যাংকে জমাবে, সেজন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখনও চলছে।

বিচারপতি শৈশবের উদাহরণ টেনে বলেন, আমরা যারা ষাটোর্ধ্ব তারা জানি, আগে বর্ষাকালে কাদার মধ্যে যখন গরু বেঁধে রাখতো, তখন গরুর পায়ে পোকা জন্মাতো। আমাদের মামা-দাদিরা তখন কাগজে দুর্নীতিবাজ ঘুষখোরদের নাম লিখে গুরুর গলায় ঝুঁলিয়ে দিত। তখন ঘৃণা ভরে গরুর পোকা পা থেকে চলে যেত। এভাবে সুদখোর ও দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করা হতো। এখন আমরা দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করতেও ভুলে গেছি। আসুন আমরা দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করি। কারণ দুর্নীতিবাজরা জাতি বিরোধী, রাষ্ট্র বিরোধী এবং রাষ্ট্রের উন্নয়ন বিরোধী। আসুন আমরা তাদের ঘৃণা করতে শিখি।

তিনি বলেন, আমি দুর্নীতিবাজদের অনুরোধ করে বলব, আপনারা তুলনা করে দেখেন। যারা অবৈধ সম্পদ গড়েছেন, আর যারা কষ্ট করে সৎভাবে সংসার চালিয়েছেন, তারা নিজেরাই দেখেন কাদের সন্তান মানুষ হয়েছে। আপনার দেখুন নিজেদের অবস্থানটা কোথায়।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গর্ব, দুর্নীতি এই গর্বের জায়গাকে আঘাত করে। দুর্নীতি মানুষের সেবার মান ভঙ্গুর করে দেয়। আবার অর্থের প্রতি লোভ-লালসা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। দুর্নীতি হচ্ছে সামগ্রিক উন্নয়নের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ, যা একটি জাতির আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাঁধার সৃষ্টি করে।

কেউ দুর্নীতিবাজ হয়ে জন্মায় না জানিয়ে এই বিচারপতি বলেন, কোনো মানুষই দুর্নীতিবাজ হয়ে জন্মায় না। তারা জন্মের পর পরবর্তীতে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। ধন-সম্পদ অর্জনের লোভ-লালসা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারে যুব সমাজ, দুর্নীতিবাজদের বিবেক আর দুর্নীতিবিরোধী আইনের যথাযথ ও নিরপেক্ষ ব্যবহার। এছাড়া আইনের প্রয়োগ এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক সময়োপযোগী আইনি ব্যবস্থা। দুর্নীতি এক ভয়াবহ ব্যাধি, এই ব্যাধি থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি যতই শক্তিশালী হোক, তার দুর্নীতি শনাক্ত করতে হবে এবং প্রতিরোধ করতে হবে।

এর আগে সকালে বেলুন উড়িয়ে ২০তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদ্বোধন করা হয়। এরপর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো অংশ নেন।

এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব’। দিবসটি উপলক্ষে নতুন সাজে সেজেছে দুদক। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে অফিস ভবন, মিডিয়া সেন্টার ও অফিসের পেছনের গেটজুড়ে দুর্নীতিবিরোধী ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের রেকর্ড করা বক্তব্য প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। যেখানে আরও বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান, জহুরুল হক ও দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।