ঢাকা ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব...

মাধার ঘাম পায়ে ফেলেও ধুঁকে ধুঁকে চলছে মৃৎশিল্পীদের জীবন

// মোঃ শামছুর রহমান শিশির //
  • আপডেট সময় : ০৩:২৭:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩
  • / ৬৫০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘দিন যে আর কাটে না দাদা ! মাটির জিনিস পত্তের ত্যেমন চাহিদ্যা নাই, কামও (কাজ) কুইমচ্যে, মাটি ও ঘুনের (জ্বালানী) দাম বাইরচে। অইনন্যে কোন কামও পারি ন্যা যে হেই কাম করবো। এ্যাহন ডাইল, চাইলের যে দাম ওইছে তাতে কিবাবে পরিবার লিয়্যা সামনের দিনগুলো চইলব্যে, হেই দুঃচিন্ত্যায়ই কইরতেছি।’-হ্যাঁ। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এমন বক্তব্য শুধু সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের প্রাণনাথপুর পালপাড়ার অমিত কুমার পাল নামের এক হৎদরিদ্র মৃৎশিল্পীর নয়! শাহজাদপুরের সকল মৃৎশিল্পীদের বর্তমানে এমনই হা-হুঁতাশ আর দুঃখ কষ্টে দিন কাটছে।

বংশপরষ্পরায় শিখে আসা ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন পেশা মৃৎশিল্পের ধারক বাহক প্রাণনাথপুরের ২০/২২টি পরিবার, নরিনার ৪০টি পরিবার, গাড়াদহ পাল পাড়ার ৫০/৬০টি পরিবার, নবীপুর পালপাড়ার ২০টি পরিবার, জামিরতার ৮/১০টি পরিবারসহ শাহজাদপুরের মৃৎশিল্পীদের অবস্থা বর্তমানে বড়ই করুণ। বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অনেকে পেশা বদলিয়েছে। আর যারা এখনো এ পেশায় সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদের মানবেতর দিন কাটাতে হচ্ছে-এমনটাই জানালেন প্রাণনাথপুরের প্রবীন মৃতশিল্পী অজিত কুমার পাল।

আধুনিক যুগে প্লাষ্টিক, এ্যালুমিনিয়ামসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রের আগ্রাসনে দেশের ঐহিত্যবাহী প্রাচীনতম মৃৎশিল্প বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। এলাকার অবহেলিত মৃৎশিল্পীরা তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নানা জিনিসপত্র তৈরি করলেও চাহিদা ও বাজার না থাকায় তারা দিনে দিনে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।

মাটি ও মাটি পোড়ানোর জ্বালানী ব্যায় বৃদ্ধি পাওয়ায় মৃৎশিল্পীদের উৎপাদন ব্যায় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেলেও তাদের আয় না বাড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের ধুঁকে ধুঁকে দিন কাটছে। তার ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে রীতিমতো মৃৎশিল্পীদের জীবনজীবিকার প্রশ্নে কালো মেঘের ঘনঘটা নেমে এসেছে।

সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বংশ পরম্পরায় জেনে আসা এ শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখতে রীতিমতো চোঁখেমুখে সর্ষের ফুল দেখছে স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা। ফলে অভাব অনটন এখন তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে পড়েছে। আবহমান গ্রাম বাংলার ধারক বাহক ঐতিহ্যবাহী এ  মৃৎশিল্পটি টিকিয়ে রাখতে সরকারী বেসরকারি সহযোগীতার কোন বিকল্প নাই বলে মনে করছেন তারা।

সুপ্রাচীনতম এ শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি, সরকারি বেসরকারি সহযোগীতা, পৃষ্ঠপোষকতার নেই কোন তাগিদ বা গরজ। এই অবস্থায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান।

এক সময়ে আবহমান গ্রাম বাংলার অত্যন্ত জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প রক্ষায় স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের পাশে কখনও যেমন কাউকে দাঁড়াতে দেখা যায়নি; তেমনি ওদের ভাগ্যের চাকাও ঘোরেনি। তাই দেশের সুপ্রাচীন এ শিল্পটি রক্ষায় অতি দ্রুত যেনো যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হয়, তেমনই দাবী এলাকার ভাগ্যবিড়ম্বিত মৃৎশিল্পীদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব...

মাধার ঘাম পায়ে ফেলেও ধুঁকে ধুঁকে চলছে মৃৎশিল্পীদের জীবন

আপডেট সময় : ০৩:২৭:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩

‘দিন যে আর কাটে না দাদা ! মাটির জিনিস পত্তের ত্যেমন চাহিদ্যা নাই, কামও (কাজ) কুইমচ্যে, মাটি ও ঘুনের (জ্বালানী) দাম বাইরচে। অইনন্যে কোন কামও পারি ন্যা যে হেই কাম করবো। এ্যাহন ডাইল, চাইলের যে দাম ওইছে তাতে কিবাবে পরিবার লিয়্যা সামনের দিনগুলো চইলব্যে, হেই দুঃচিন্ত্যায়ই কইরতেছি।’-হ্যাঁ। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এমন বক্তব্য শুধু সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের প্রাণনাথপুর পালপাড়ার অমিত কুমার পাল নামের এক হৎদরিদ্র মৃৎশিল্পীর নয়! শাহজাদপুরের সকল মৃৎশিল্পীদের বর্তমানে এমনই হা-হুঁতাশ আর দুঃখ কষ্টে দিন কাটছে।

বংশপরষ্পরায় শিখে আসা ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন পেশা মৃৎশিল্পের ধারক বাহক প্রাণনাথপুরের ২০/২২টি পরিবার, নরিনার ৪০টি পরিবার, গাড়াদহ পাল পাড়ার ৫০/৬০টি পরিবার, নবীপুর পালপাড়ার ২০টি পরিবার, জামিরতার ৮/১০টি পরিবারসহ শাহজাদপুরের মৃৎশিল্পীদের অবস্থা বর্তমানে বড়ই করুণ। বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অনেকে পেশা বদলিয়েছে। আর যারা এখনো এ পেশায় সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদের মানবেতর দিন কাটাতে হচ্ছে-এমনটাই জানালেন প্রাণনাথপুরের প্রবীন মৃতশিল্পী অজিত কুমার পাল।

আধুনিক যুগে প্লাষ্টিক, এ্যালুমিনিয়ামসহ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রের আগ্রাসনে দেশের ঐহিত্যবাহী প্রাচীনতম মৃৎশিল্প বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। এলাকার অবহেলিত মৃৎশিল্পীরা তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নানা জিনিসপত্র তৈরি করলেও চাহিদা ও বাজার না থাকায় তারা দিনে দিনে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।

মাটি ও মাটি পোড়ানোর জ্বালানী ব্যায় বৃদ্ধি পাওয়ায় মৃৎশিল্পীদের উৎপাদন ব্যায় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেলেও তাদের আয় না বাড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের ধুঁকে ধুঁকে দিন কাটছে। তার ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে রীতিমতো মৃৎশিল্পীদের জীবনজীবিকার প্রশ্নে কালো মেঘের ঘনঘটা নেমে এসেছে।

সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বংশ পরম্পরায় জেনে আসা এ শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখতে রীতিমতো চোঁখেমুখে সর্ষের ফুল দেখছে স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা। ফলে অভাব অনটন এখন তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে পড়েছে। আবহমান গ্রাম বাংলার ধারক বাহক ঐতিহ্যবাহী এ  মৃৎশিল্পটি টিকিয়ে রাখতে সরকারী বেসরকারি সহযোগীতার কোন বিকল্প নাই বলে মনে করছেন তারা।

সুপ্রাচীনতম এ শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি, সরকারি বেসরকারি সহযোগীতা, পৃষ্ঠপোষকতার নেই কোন তাগিদ বা গরজ। এই অবস্থায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান।

এক সময়ে আবহমান গ্রাম বাংলার অত্যন্ত জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প রক্ষায় স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের পাশে কখনও যেমন কাউকে দাঁড়াতে দেখা যায়নি; তেমনি ওদের ভাগ্যের চাকাও ঘোরেনি। তাই দেশের সুপ্রাচীন এ শিল্পটি রক্ষায় অতি দ্রুত যেনো যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হয়, তেমনই দাবী এলাকার ভাগ্যবিড়ম্বিত মৃৎশিল্পীদের।