ঢাকা ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

মাজরা ও ব্লাষ্টে আক্রান্ত শতশত বিঘা জমির ধান : কৃষকেরা আতংকে! খবর নেই কৃষি বিভাগের 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৪২:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৭৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

।। শাহজাহান সিরাজ।। 

খুলনার কয়রা উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে মাজরা ও ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত শতশত বিঘা জমির ধান। কৃষকরা আতংকে থাকলেও খবর নেই কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কর্তাদের।

খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বোরো ধান ক্ষেতের ফলনে ব্যাপকহারে রোগ বালাই দেখা দেয়। কিন্তু কৃষকেরা অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ হারে ঔষুধ প্রয়োগ করেও মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারছেন না তাদের ফসলের ক্ষেত। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্তারা কখনও এসব ধান চাষীদের খোঁজ খবর নেয় না বলেও অভিযোগ উঠেছে। কয়রা সদর ইউনিয়নে ২ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বে থাকলেও এই ইউনিয়নের বেশিরভাগ কৃষক তাদের চেনেন না। অনুরুপ অন্যান্য ইউনিয়নেও ব্যাপকহারে মাজরা পোকা অনেক ধানক্ষেত নষ্ট করলেও কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের ক্ষেত পরিদর্শণ করেননি বলেো অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে কয়রা ইউনিয়নের ২নং কয়রার মাঠে গিয়ে সালাম শেখ নামের কৃষকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি এ বছর ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। অধিকাংশ জমিতে ছত্রাকের আক্রমনে ধান চিটা হয়ে গেছে এবং মাজরার আক্রমনে ধান গাছ কেটে দিচ্ছে। ১ বিঘা জমিতে মাজরার কীটনাশক প্রয়োগ করতে ২/৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবার কোন কোন জায়গায় পাতা পর্যন্ত মারা গেছে। অথচ এ ৪ মাস হলো ধান চাষ করেছি কৃষি অফিস থেকে কেউ এসে দেখেও না, পরামর্শও দেয় না। এসব ধানের জমিতে বার বার কীটনাশক, বালাইনাশক ওষুধ দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। বোরো চাষের আগে পরে কোন উপ-সহকারীর পরামর্শ পায়নি। অথচ আমি এই এলাকায় ৫ জন ভাল আবাদী কৃষক থাকলে তাদের মধ্যে একজন।

কৃষক সংকর মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। আমার অধিকাংশ জমিতেই ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি অফিসের লোকজন অফিসে বসে থাকে। মাঠে কখনও তারা নামে না। এত কীটনাশক প্রয়োগ করলাম কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।

মহসিন সানা অভিযোগ করে বলেন, এই যে মাঠ কে মাঠ ধান পোকার আক্রমনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অথচ আমরা সঠিক কোন পরামর্শ পাচ্ছি না। কোন রকমের সভা সমাবেশ লিফলেট দিয়েও আমাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে না। এই মাঠে প্রায় ৪০০ বিঘার মত বোরো চাষ হয়েছে আমার বোরিং আছে যা দিয়ে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে পানি দেই কিন্তু এ পর্যন্ত একদিনও তো কৃষি অফিসের কেউ পরামর্শ দিতে আসেন নাই। শুনেছি আমাদের ইউনিয়নে ২ জন উপ-সহকারী আছে গুরুদাস ও অনুতাপ। তাদের সরকার বেতন দেয় মনে হয় অফিসে বসে থাকতে। কেউ যদি অফিসে যায়, তারা বলে, ধানের কি সমস্যা?  তখন আমরা বলি, ধান গাছ বসে যাচ্ছে, পাতা মরে যাচ্ছে। তখন তারা বলেন অমুক দোকান থেকে একটা ওষুধ কিনে নিয়ে যান। মাঠে যাওয়ার কথা বললে বলেন, এ ওষুধ দাও ভাল হয়ে যাবে।

কয়রা সদর ইউনিয়নে ২, ৩ ও ৪ নং কয়রা গ্রামে একাধিক মাঠ ঘুরে দেখা গেছে শুধু মাত্র মাজরা পোকার কারণে কৃষকেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিষয় ৩নং কয়রা গ্রামের আবুল হাসান, ২নং কয়রা আঃ সাত্তার, কামরুল শেখসহ একাধিক চাষি জানান, তারা এই ইউনিয়নে কর্মরত কৃষি কর্মকর্তা বাবু গুরুদাস ও অনুতাপ মন্ডলকে কখনও দেখেনি এবং এমন দুজন অফিসার সরেজমিনে মাঠে তদারকি করেন তাও তাদের জানা নেই।

এসব কৃষকরা আরও জানায়, তাদের অনেকেরে ধানক্ষেত আগুনে পোড়ার মত লাল হয়েছে, আবার অনেকের মাজরা পোকায় ক্ষতি করায় অর্ধেক ফসলও না পাওয়ার আশা করছেন।

অনুরুপ মহারাজপুর গ্রামের কৃষক আঃ হক বলেন, বোরো ধানে এ বছর মাজরায় এত আক্রমণ! কিন্তু কৃষি অফিসের কোন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কোন পরামর্শ পায়নি। উত্তরবেদকাশি, বাগালীও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে মাজরা পোকায় ব্যাপক ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে কয়রা সদর ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। কৃষকদের অভিযোগ, এই ২ কর্মকর্তা সারা বছর উপজেলা কৃষি অফিসে বসে অফিসের কাজ করেন। ফলে এই কর্মকর্তাদের সাথে অধিকাংশ কৃষকদের পরিচয় নেই।

এ বিষয় উপজেলা দয়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস এর সাথে কথা বললে তিনি উক্ত দুই উপ-সহকারী কর্মকর্তার বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অফিসে জনবল কম থাকায় তারা অফিসিয়াল কাজ করে। তিনি বলেন, খুব শ্রীঘ্রই সকল উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের নিজ নিজ ইউনিয়নের কর্মস্থলে থাকতে হবে; সেজন্য তিনি অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া ধান ফোলা মুখে মাজরার আক্রমণ কিছুটা কমেছে বলে একাধিক কৃষক তাকে জানিয়েছেন।

তবে উপ-সহকারীদের অসহযোগীতার কারণে কৃষকরা যে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ; মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের করণীয় কি? এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান!

বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

মাজরা ও ব্লাষ্টে আক্রান্ত শতশত বিঘা জমির ধান : কৃষকেরা আতংকে! খবর নেই কৃষি বিভাগের 

আপডেট সময় : ১২:৪২:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

।। শাহজাহান সিরাজ।। 

খুলনার কয়রা উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে মাজরা ও ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত শতশত বিঘা জমির ধান। কৃষকরা আতংকে থাকলেও খবর নেই কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কর্তাদের।

খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বোরো ধান ক্ষেতের ফলনে ব্যাপকহারে রোগ বালাই দেখা দেয়। কিন্তু কৃষকেরা অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ হারে ঔষুধ প্রয়োগ করেও মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারছেন না তাদের ফসলের ক্ষেত। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্তারা কখনও এসব ধান চাষীদের খোঁজ খবর নেয় না বলেও অভিযোগ উঠেছে। কয়রা সদর ইউনিয়নে ২ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বে থাকলেও এই ইউনিয়নের বেশিরভাগ কৃষক তাদের চেনেন না। অনুরুপ অন্যান্য ইউনিয়নেও ব্যাপকহারে মাজরা পোকা অনেক ধানক্ষেত নষ্ট করলেও কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের ক্ষেত পরিদর্শণ করেননি বলেো অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে কয়রা ইউনিয়নের ২নং কয়রার মাঠে গিয়ে সালাম শেখ নামের কৃষকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি এ বছর ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। অধিকাংশ জমিতে ছত্রাকের আক্রমনে ধান চিটা হয়ে গেছে এবং মাজরার আক্রমনে ধান গাছ কেটে দিচ্ছে। ১ বিঘা জমিতে মাজরার কীটনাশক প্রয়োগ করতে ২/৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবার কোন কোন জায়গায় পাতা পর্যন্ত মারা গেছে। অথচ এ ৪ মাস হলো ধান চাষ করেছি কৃষি অফিস থেকে কেউ এসে দেখেও না, পরামর্শও দেয় না। এসব ধানের জমিতে বার বার কীটনাশক, বালাইনাশক ওষুধ দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। বোরো চাষের আগে পরে কোন উপ-সহকারীর পরামর্শ পায়নি। অথচ আমি এই এলাকায় ৫ জন ভাল আবাদী কৃষক থাকলে তাদের মধ্যে একজন।

কৃষক সংকর মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। আমার অধিকাংশ জমিতেই ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি অফিসের লোকজন অফিসে বসে থাকে। মাঠে কখনও তারা নামে না। এত কীটনাশক প্রয়োগ করলাম কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।

মহসিন সানা অভিযোগ করে বলেন, এই যে মাঠ কে মাঠ ধান পোকার আক্রমনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অথচ আমরা সঠিক কোন পরামর্শ পাচ্ছি না। কোন রকমের সভা সমাবেশ লিফলেট দিয়েও আমাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে না। এই মাঠে প্রায় ৪০০ বিঘার মত বোরো চাষ হয়েছে আমার বোরিং আছে যা দিয়ে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে পানি দেই কিন্তু এ পর্যন্ত একদিনও তো কৃষি অফিসের কেউ পরামর্শ দিতে আসেন নাই। শুনেছি আমাদের ইউনিয়নে ২ জন উপ-সহকারী আছে গুরুদাস ও অনুতাপ। তাদের সরকার বেতন দেয় মনে হয় অফিসে বসে থাকতে। কেউ যদি অফিসে যায়, তারা বলে, ধানের কি সমস্যা?  তখন আমরা বলি, ধান গাছ বসে যাচ্ছে, পাতা মরে যাচ্ছে। তখন তারা বলেন অমুক দোকান থেকে একটা ওষুধ কিনে নিয়ে যান। মাঠে যাওয়ার কথা বললে বলেন, এ ওষুধ দাও ভাল হয়ে যাবে।

কয়রা সদর ইউনিয়নে ২, ৩ ও ৪ নং কয়রা গ্রামে একাধিক মাঠ ঘুরে দেখা গেছে শুধু মাত্র মাজরা পোকার কারণে কৃষকেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিষয় ৩নং কয়রা গ্রামের আবুল হাসান, ২নং কয়রা আঃ সাত্তার, কামরুল শেখসহ একাধিক চাষি জানান, তারা এই ইউনিয়নে কর্মরত কৃষি কর্মকর্তা বাবু গুরুদাস ও অনুতাপ মন্ডলকে কখনও দেখেনি এবং এমন দুজন অফিসার সরেজমিনে মাঠে তদারকি করেন তাও তাদের জানা নেই।

এসব কৃষকরা আরও জানায়, তাদের অনেকেরে ধানক্ষেত আগুনে পোড়ার মত লাল হয়েছে, আবার অনেকের মাজরা পোকায় ক্ষতি করায় অর্ধেক ফসলও না পাওয়ার আশা করছেন।

অনুরুপ মহারাজপুর গ্রামের কৃষক আঃ হক বলেন, বোরো ধানে এ বছর মাজরায় এত আক্রমণ! কিন্তু কৃষি অফিসের কোন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কোন পরামর্শ পায়নি। উত্তরবেদকাশি, বাগালীও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে মাজরা পোকায় ব্যাপক ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে কয়রা সদর ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। কৃষকদের অভিযোগ, এই ২ কর্মকর্তা সারা বছর উপজেলা কৃষি অফিসে বসে অফিসের কাজ করেন। ফলে এই কর্মকর্তাদের সাথে অধিকাংশ কৃষকদের পরিচয় নেই।

এ বিষয় উপজেলা দয়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস এর সাথে কথা বললে তিনি উক্ত দুই উপ-সহকারী কর্মকর্তার বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অফিসে জনবল কম থাকায় তারা অফিসিয়াল কাজ করে। তিনি বলেন, খুব শ্রীঘ্রই সকল উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের নিজ নিজ ইউনিয়নের কর্মস্থলে থাকতে হবে; সেজন্য তিনি অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া ধান ফোলা মুখে মাজরার আক্রমণ কিছুটা কমেছে বলে একাধিক কৃষক তাকে জানিয়েছেন।

তবে উপ-সহকারীদের অসহযোগীতার কারণে কৃষকরা যে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ; মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের করণীয় কি? এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান!

বা/খ: এসআর।