ঢাকা ০৯:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

মাছ শিকার করে সংসার চলে স্বামী পরিত্যাক্তা আছিয়ার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৫০:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০২৩
  • / ৪৭২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি //

বেঁচে ও টিকে থাকার প্রয়োজনে কতই না সংগ্রাম করে যাচ্ছেন পুরুষশাসিত এ সমাজে। তেমনি একটি ব্যতিক্রমী পেশায় জড়িয়ে চার কন্যা শিশু নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন পাবনার বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ গ্রামের রাজেম সরদারের মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্ত আছিয়া খাতুন। শিপ বর্শি দিয়ে মাছ শিকার করে চলছে তার কষ্টের জীবন-সংসার।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মোহনগঞ্জ গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। নদীর পাড়ে অনেকে সারি সারি বসে বর্শি দিয়ে মাছ ধরছে। কেউবা শখের বসে আবার কেউবা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন মাছ শিকারের কাজটি। তবে শিকারিদের মধ্যে একজন মহিলা রয়েছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই পাশের আব্দুল লতিফ নামের একজন মাছ শিকারি বলেন ভাই আছিয়া আপা মাছ শিকারে অনেক পটু। আমরা তার সাথে মাছ শিকার করে পেরে উঠি না। কাছে গিয়ে পেশাগত পরিচয় দিয়ে খুটিনাটি জিজ্ঞাসা করতেই দীর্ঘস্বাস ফেলে বলেন, ভাই লিখে কি হবে। আপনারা কি আছিয়ার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবেন। আছিয়াকে নিয়ে যার ভাবার কথা ছিল সেই তাকে ছেড়ে গিয়েছে।

আছিয়া জানান, বেশ কয়েক বছর আগে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের বেনুটিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলরি সাথে তার বিয়ে হয়েছিল। পেশায় মোহাম্মদ আলী ছিল মাছ শিকারী। বিয়ের পর সংসারে অভাব থাকলেও সুখের কমতি ছিল না তার। তার কাল হয়েছে গর্ভে একে একে চারটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ায় স্বামী তাকে পিতার বাড়িতে রেখে গিয়েছে। সে আরেকটি বিয়ে করে সংসার করছে। অনেক চেষ্টা করের স্বামীর সংসারে ফিরতে পারিনি। বাপ-ভাইয়ের সংসাওে এসে প্রথম দিকে অন্যেও বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করলেও এখন সে কাজ বাদ দিয়েছেন। সকাল বিকাল যমুনা নদীতে মাছ শিকার করে যে টাকা হয় তা দিয়েই কোন রকম ভাবে সন্তানদেন মুখে আহার তুলে দেন।

আছিয়া আক্ষেপ করে বলেন সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে সেটা আল্লাহর হাতে। সেই অপরাধে আমার সংসার ভাংলো কেন ? সে স্বামী ঘরে ফিরে যেতে অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। দরিদ্র বলে কেউ এগিয়ে আসেনি। দুই-একজন যাওবা এগিয়ে এসেছে প্রভাবশালীরা তাদের থামিয়ে দিয়েছে।

প্রতিদিন কতো টাকার মাছ বিক্রি করেন জানতে চাইলে আছিয়া বলেন, সেটা বলা কঠিন আল্লাহ কোনদিন একশো টাকার রিযিক দেন আবার কোন দিন তিন-চারশো আবার কোনদিন হাজার-বারোশোও হয়। নদীতে প্রতিকুল অবস্থা ও স্রোতের ওপর নির্ভর করে কি পরিমান ও কোন প্রজাতির মাছ শিকার হবে। তিনি বলেন, স্রোত বেশি থাকলে বাইম, বড় চিংড়ি, বেলে, বাচা মাছ বরর্শীতে আটকে বেশি। যে দিন বেশি মাছ শিকার করেন সেদিন খাওয়ার মাছ রেখে সন্তানদের মুখে মাছভাত তুলে দিতে পারেন। অতি কষ্টে কাটছে তার জীবন।

স্থানীয় মসজিদেও ঈমাম আল ফালাহ বলেন, প্রথম দিকে মনে করতাম মেয়েটি হয়তো শখের বসে নদীতে মাছ শিকার করেন। পরে জানলাম এটিই তার জীবীকার অবলম্বন। তিনি আছিয়াকে একজন সংগ্রামী মা হিসেবে আক্ষায়িত করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

মাছ শিকার করে সংসার চলে স্বামী পরিত্যাক্তা আছিয়ার

আপডেট সময় : ০৯:৫০:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০২৩

// শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি //

বেঁচে ও টিকে থাকার প্রয়োজনে কতই না সংগ্রাম করে যাচ্ছেন পুরুষশাসিত এ সমাজে। তেমনি একটি ব্যতিক্রমী পেশায় জড়িয়ে চার কন্যা শিশু নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন পাবনার বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ গ্রামের রাজেম সরদারের মেয়ে স্বামী পরিত্যাক্ত আছিয়া খাতুন। শিপ বর্শি দিয়ে মাছ শিকার করে চলছে তার কষ্টের জীবন-সংসার।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মোহনগঞ্জ গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। নদীর পাড়ে অনেকে সারি সারি বসে বর্শি দিয়ে মাছ ধরছে। কেউবা শখের বসে আবার কেউবা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন মাছ শিকারের কাজটি। তবে শিকারিদের মধ্যে একজন মহিলা রয়েছে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই পাশের আব্দুল লতিফ নামের একজন মাছ শিকারি বলেন ভাই আছিয়া আপা মাছ শিকারে অনেক পটু। আমরা তার সাথে মাছ শিকার করে পেরে উঠি না। কাছে গিয়ে পেশাগত পরিচয় দিয়ে খুটিনাটি জিজ্ঞাসা করতেই দীর্ঘস্বাস ফেলে বলেন, ভাই লিখে কি হবে। আপনারা কি আছিয়ার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবেন। আছিয়াকে নিয়ে যার ভাবার কথা ছিল সেই তাকে ছেড়ে গিয়েছে।

আছিয়া জানান, বেশ কয়েক বছর আগে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের বেনুটিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলরি সাথে তার বিয়ে হয়েছিল। পেশায় মোহাম্মদ আলী ছিল মাছ শিকারী। বিয়ের পর সংসারে অভাব থাকলেও সুখের কমতি ছিল না তার। তার কাল হয়েছে গর্ভে একে একে চারটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ায় স্বামী তাকে পিতার বাড়িতে রেখে গিয়েছে। সে আরেকটি বিয়ে করে সংসার করছে। অনেক চেষ্টা করের স্বামীর সংসারে ফিরতে পারিনি। বাপ-ভাইয়ের সংসাওে এসে প্রথম দিকে অন্যেও বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করলেও এখন সে কাজ বাদ দিয়েছেন। সকাল বিকাল যমুনা নদীতে মাছ শিকার করে যে টাকা হয় তা দিয়েই কোন রকম ভাবে সন্তানদেন মুখে আহার তুলে দেন।

আছিয়া আক্ষেপ করে বলেন সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে সেটা আল্লাহর হাতে। সেই অপরাধে আমার সংসার ভাংলো কেন ? সে স্বামী ঘরে ফিরে যেতে অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। দরিদ্র বলে কেউ এগিয়ে আসেনি। দুই-একজন যাওবা এগিয়ে এসেছে প্রভাবশালীরা তাদের থামিয়ে দিয়েছে।

প্রতিদিন কতো টাকার মাছ বিক্রি করেন জানতে চাইলে আছিয়া বলেন, সেটা বলা কঠিন আল্লাহ কোনদিন একশো টাকার রিযিক দেন আবার কোন দিন তিন-চারশো আবার কোনদিন হাজার-বারোশোও হয়। নদীতে প্রতিকুল অবস্থা ও স্রোতের ওপর নির্ভর করে কি পরিমান ও কোন প্রজাতির মাছ শিকার হবে। তিনি বলেন, স্রোত বেশি থাকলে বাইম, বড় চিংড়ি, বেলে, বাচা মাছ বরর্শীতে আটকে বেশি। যে দিন বেশি মাছ শিকার করেন সেদিন খাওয়ার মাছ রেখে সন্তানদের মুখে মাছভাত তুলে দিতে পারেন। অতি কষ্টে কাটছে তার জীবন।

স্থানীয় মসজিদেও ঈমাম আল ফালাহ বলেন, প্রথম দিকে মনে করতাম মেয়েটি হয়তো শখের বসে নদীতে মাছ শিকার করেন। পরে জানলাম এটিই তার জীবীকার অবলম্বন। তিনি আছিয়াকে একজন সংগ্রামী মা হিসেবে আক্ষায়িত করেন।