ঢাকা ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

মাগুরাতে কৃষক হত্যা: “মানুষ আর কুকুর আমরা একই বাসের যাত্রী”

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:১৮:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৭৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
নওয়াব আলী, মাগুরা প্রতিনিধি :
২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার মাগুরা সদরের মনিরামপুর গ্রামে কৃষক হত্যা ঘটনার পর গ্রামে চলছিল অগ্নি সংযোগ, লুটপাট নির্যাতন। ভয়ে লোকজন বাড়ী ছেড়ে পালাচ্ছে। পালানোর সময় পোষা কুকুরটি মালিককে ছেড়ে যেতে চাইছিলনা।সেও মালিকের (মহিলা) সাথে সারা রাত মাঠে পালিয়ে থেকেছে। সকালে মালিক কুকুর নিয়ে গাড়ীতে উঠেছে অজানার উদ্দেশ্যে। যাত্রীরা প্রথমে নিতে না চাইলেও চালকের চাপে অবশেষে কুকুরটিও বাস যাত্রী হলো। নিচের আংশ ঐ পালান যাত্রীর ফেসবুকে লেখা আবেগ ঘন মুহূর্তেরঃ
“মানুষ আর কুকুর আমরা একই বাসের যাত্রী”
বাইকটি বাজারে রেখে বাসে উঠে পড়লাম  মাগুরার উদ্দেশ্যে। কারণ,পথেই মনিরামপুর এ মার্ডার, তারপর চলেছে নৃশংসতা, নরযজ্ঞ পাশবিকতার এক ভহাবহ কালরাত। পরেরদিনই ও গ্রামের রাস্তায় একা চলার ভয়ে আজকে এ বাসের যাত্রী আমি। ড্রাইভার সিটের পেছনের সিটে বসাতে ড্রাইভার সাহেব বেশ আপডেট দিচ্ছিলেন গত রাতের। আমি সহ অধিকাংশ যাত্রীগুলি ও গ্রামের মধ্যে আসলে জানালার বাহিরে উঁকিঝুকি মারছিলাম। ও গ্রাম ছেড়ে আরেক গ্রামে আসলে যে ছবি দেখছেন এই যাত্রীগুলো অপেক্ষা করছিলেন। কেউ একজন বলছিলেন কুকুরটি বাসে না উঠানোর জন্য। ধমকাচ্ছেন ড্রাইভার সাহেব। রীতিমতো শাসালেন, যিনি কুকুরটি না উঠানোর জন্য বলছিলেন। আস্তে করে বললেন, মানবিকতা উঠে যাচ্ছে। যেহেতু আমি ড্রাইভার সাহেবের পূর্ব পরিচিত, উনি আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলছিলেন, দেখেছেন ভাই, আমরা মানুষ কতটা নিচেই নেমে গেছি? আমি তখন বাকরুদ্ধ! অনেকদিন ফেবু ছেড়ে দিয়েছি বেশ কিছু কারনে। আজকে আবার ছবিটি নিতে বাধ্য হলাম। মনে হলো ৭১ এর শরনার্থীদের কথা, ইয়েমেনের সেই শিশুর চিৎকার, কানে শুনতে পেলাম আরাকানে যাদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছিল তাঁদের চিৎকার!  রবীন্দ্রনাথের সেই লাইনটি।
ভয় তার পশ্চিমে
ভয় তাঁর পুবে
যেদিকে মালিক যায়
সেদিকে ঘুরবে!
কথা হচ্ছিল আমার ছেলের বয়সি ছেলেটির সঙ্গে, ওর স্বজনের সাথে। কুকুরটির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি সকলের বেঁচে থাকার আকুতি। ওরা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে। আমার মায়ের বয়সি মানুষটি বলছিলেন সারারাত মাঠের ভেতরে ফসলের মধ্যে লুকিয়ে ছিলাম, ভোর হলে এ গ্রামে পৌছেছি, কুকুটি কখনো পিছু ছাড়েনি তাই ওকে নিয়েই পালিয়ে যাচ্ছি। ওরা একে একে  বাড়িগুলো যখন আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল সে সময়ে ভেবেছি হয়তোবা আর বেঁচে থাকা হবেনা।বাচ্চা শিশু সহ বৃদ্ধ মানুষ সকলেই মাঠের ভেতরে আমরা রাত যাপন করেছি, সাথে কুকুরটিও। ও যখন যেতেই চাচ্ছেনা, তাই ওকে সাথে নিয়েই ওজানার উদ্দেশ্যে রওনা করছি।
হায়রে মানুষ জ্ঞান যেথা মুক্ত, গ্রহের প্রাচির নয় মুক্ত।
যে প্রাচির নেই এখনো রাজনীতির কাছে মুক্ত।
খোলা আকাশ, খোলা চাঁদ সবই এখন আমাদের কাছে যুক্ত।
বা/খ: জই

নিউজটি শেয়ার করুন

মাগুরাতে কৃষক হত্যা: “মানুষ আর কুকুর আমরা একই বাসের যাত্রী”

আপডেট সময় : ০৯:১৮:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩
নওয়াব আলী, মাগুরা প্রতিনিধি :
২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার মাগুরা সদরের মনিরামপুর গ্রামে কৃষক হত্যা ঘটনার পর গ্রামে চলছিল অগ্নি সংযোগ, লুটপাট নির্যাতন। ভয়ে লোকজন বাড়ী ছেড়ে পালাচ্ছে। পালানোর সময় পোষা কুকুরটি মালিককে ছেড়ে যেতে চাইছিলনা।সেও মালিকের (মহিলা) সাথে সারা রাত মাঠে পালিয়ে থেকেছে। সকালে মালিক কুকুর নিয়ে গাড়ীতে উঠেছে অজানার উদ্দেশ্যে। যাত্রীরা প্রথমে নিতে না চাইলেও চালকের চাপে অবশেষে কুকুরটিও বাস যাত্রী হলো। নিচের আংশ ঐ পালান যাত্রীর ফেসবুকে লেখা আবেগ ঘন মুহূর্তেরঃ
“মানুষ আর কুকুর আমরা একই বাসের যাত্রী”
বাইকটি বাজারে রেখে বাসে উঠে পড়লাম  মাগুরার উদ্দেশ্যে। কারণ,পথেই মনিরামপুর এ মার্ডার, তারপর চলেছে নৃশংসতা, নরযজ্ঞ পাশবিকতার এক ভহাবহ কালরাত। পরেরদিনই ও গ্রামের রাস্তায় একা চলার ভয়ে আজকে এ বাসের যাত্রী আমি। ড্রাইভার সিটের পেছনের সিটে বসাতে ড্রাইভার সাহেব বেশ আপডেট দিচ্ছিলেন গত রাতের। আমি সহ অধিকাংশ যাত্রীগুলি ও গ্রামের মধ্যে আসলে জানালার বাহিরে উঁকিঝুকি মারছিলাম। ও গ্রাম ছেড়ে আরেক গ্রামে আসলে যে ছবি দেখছেন এই যাত্রীগুলো অপেক্ষা করছিলেন। কেউ একজন বলছিলেন কুকুরটি বাসে না উঠানোর জন্য। ধমকাচ্ছেন ড্রাইভার সাহেব। রীতিমতো শাসালেন, যিনি কুকুরটি না উঠানোর জন্য বলছিলেন। আস্তে করে বললেন, মানবিকতা উঠে যাচ্ছে। যেহেতু আমি ড্রাইভার সাহেবের পূর্ব পরিচিত, উনি আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলছিলেন, দেখেছেন ভাই, আমরা মানুষ কতটা নিচেই নেমে গেছি? আমি তখন বাকরুদ্ধ! অনেকদিন ফেবু ছেড়ে দিয়েছি বেশ কিছু কারনে। আজকে আবার ছবিটি নিতে বাধ্য হলাম। মনে হলো ৭১ এর শরনার্থীদের কথা, ইয়েমেনের সেই শিশুর চিৎকার, কানে শুনতে পেলাম আরাকানে যাদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছিল তাঁদের চিৎকার!  রবীন্দ্রনাথের সেই লাইনটি।
ভয় তার পশ্চিমে
ভয় তাঁর পুবে
যেদিকে মালিক যায়
সেদিকে ঘুরবে!
কথা হচ্ছিল আমার ছেলের বয়সি ছেলেটির সঙ্গে, ওর স্বজনের সাথে। কুকুরটির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি সকলের বেঁচে থাকার আকুতি। ওরা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে। আমার মায়ের বয়সি মানুষটি বলছিলেন সারারাত মাঠের ভেতরে ফসলের মধ্যে লুকিয়ে ছিলাম, ভোর হলে এ গ্রামে পৌছেছি, কুকুটি কখনো পিছু ছাড়েনি তাই ওকে নিয়েই পালিয়ে যাচ্ছি। ওরা একে একে  বাড়িগুলো যখন আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল সে সময়ে ভেবেছি হয়তোবা আর বেঁচে থাকা হবেনা।বাচ্চা শিশু সহ বৃদ্ধ মানুষ সকলেই মাঠের ভেতরে আমরা রাত যাপন করেছি, সাথে কুকুরটিও। ও যখন যেতেই চাচ্ছেনা, তাই ওকে সাথে নিয়েই ওজানার উদ্দেশ্যে রওনা করছি।
হায়রে মানুষ জ্ঞান যেথা মুক্ত, গ্রহের প্রাচির নয় মুক্ত।
যে প্রাচির নেই এখনো রাজনীতির কাছে মুক্ত।
খোলা আকাশ, খোলা চাঁদ সবই এখন আমাদের কাছে যুক্ত।
বা/খ: জই