ঢাকা ১০:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ভারতে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত শতাধিক

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:০৬:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুন ২০২৩
  • / ৪৬৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উড়িষ্যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে কলকাতার হাওড়া-চেন্নাইগামী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলায় শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। অন্তত শতাধিক নিহত হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে। দুর্ঘটনায় ৬ শতাধিক আহত হয়েছেন। ১৭৯ জনকে বালেশ্বরের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা যাচ্ছে। রাত ৯টা পর্যন্ত যাত্রী উদ্ধারের যে সংখ্যা মিলেছে, তার ভিত্তিতে এই তথ্য দিয়েছে রেল। এতে বহু আহত ও নিহত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুক্রবার বিকেলে ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে ট্রেনটি পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শালিমার স্টেশন থেকে ছেড়েছিল এবং চেন্নাই যাচ্ছিল। ট্রেনটিতে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপশি বহু বাংলাদেশি নাগরিক দক্ষিণের ভেলোরে চিকিৎসা নিতে নিয়মিত যাতায়াত করেন। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন অনেক বাংলাদেশি।

জানা গেছে সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে ৭টার মধ্যে বালেশ্বর স্টেশন থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বাহানাগা স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়ে যায় ট্রেনটির একাধিক কামরা। মালগাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগেই ট্রেনটির তিনটি কামরা বাদ দিয়ে ১৮টি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। লাইনচ্যুত হয়েছে ট্রেনটির ইঞ্জিনের পর থেকে স্লিপার ক্লাস, প্যান্ট্রি কারসহ যাত্রীবাহী বগিগুলো। দুর্ঘটনার অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি মালগাড়ির উপর উঠে গিয়েছে।

রেল সূত্রে জানানো হয়েছে ঘটনায় বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। তবে ঠিক কত যাত্রী আহত বা কেউ নিহত হয়েছেন কী না তা এখনও রেলের তরফে স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। বিশেষত রাতের অন্ধকারে ট্রেন দুর্ঘটনাটি ঠিক কতটা ভয়াবহ হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রাই প্রথমে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন রেল আধিকারিক, কর্মী সহ বিশাল পুলিশ ও উদ্ধারকারী বাহিনী। রিলিফ ভ্যান ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে বলে খবর।

এই ট্রেন দুর্ঘটনার জেরে হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারত যাওয়ার সমস্ত ট্রেন বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ওড়িশাগামী ট্রেনও বাতিল। এর ফলে যাত্রী দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েছে। বাতিল হওয়া ট্রেনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, আপ জগন্নাথ এক্সপ্রেস, আপ পুরী এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস, চেন্নাই মেল।

দুর্ঘটনার জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেন যাত্রীদের কথায়, ‘হঠাৎ করে এক বিকট আওয়াজ হয়ে থেমে যায় ট্রেনটি।’একটি মালগাড়ি এবং এক্সপ্রেস ট্রেনটি একই লাইনে কোনোভাবে চলে এসেছিল। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, করমণ্ডল এক্সপ্রেসে পশ্চিমবঙ্গ, ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ ভেলোরে চিকিৎসার জন্য নিত্য যাতায়াত করেন। ফলে পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। এখনও কতজন মানুষ ভিতরে আটকে রয়েছেন, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধরি বলেন, ‘‘বালেশ্বরের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে কিছু একটা হয়েছে। আমরা কোনও ভাবে এখনও কিছু জানতে পারিনি। জানার চেষ্টা করছি। জানামাত্রই জানানো হবে।’’

ভারতে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩০ জনের মৃত্যু

শুক্রবার রাতে মমতা টুইটে লেখেন, ‘‘আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় বালেশ্বরের কাছে একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাত্রিবাহী শালিমার-করমণ্ডল এক্সপ্রেসের। আমাদের কয়েক জন মানুষ গুরুতর জখম হয়েছেন। আমরা আমাদের রাজ্যের যাত্রীদের জন্য ওড়িশা সরকার এবং দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। জরুরি ভিত্তিতে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, ০৩৩-২২১৪৩৫২৬/২২৫৩৫১৮৫ নম্বরগুলিতে যোগাযোগ করা যাবে। যাত্রীদের উদ্ধার, পুনরুদ্ধার, সাহায্য এবং সহায়তার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক টুইটে জানিয়েছেন, ওড়িশা সরকার এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে এবং উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করার জন্য ঘটনাস্থলে ৫-৬ সদস্যের একটি দল পাঠানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মুখ্য সচিব এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ রাখছেন।

এ ছাড়া করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় খবরাখবরের জন্য হাওড়া স্টেশনের জন্য হেল্পলাইন নম্বর— ০৩৩-২৬৩৮২২১৭। খড়্গপুর স্টেশনের জন্য হেল্পলাইন নম্বর— ৮৯৭২০৭৩৯২৫, ৯৩৩২৩৯২৩৩৯। বালেশ্বর স্টেশনের জন্য হেল্পলাইন নম্বর— ৮২৪৯৫৯১৫৫৯ এবং ৭৯৭৮৪১৮৩২২। শালিমার স্টেশনের জন্য হেল্পলাইন নম্বর— ৯৯০৩৩৭০৭৪৬।

নিউজটি শেয়ার করুন

ভারতে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত শতাধিক

আপডেট সময় : ১০:০৬:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুন ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উড়িষ্যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে কলকাতার হাওড়া-চেন্নাইগামী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলায় শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। অন্তত শতাধিক নিহত হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে। দুর্ঘটনায় ৬ শতাধিক আহত হয়েছেন। ১৭৯ জনকে বালেশ্বরের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে রেল সূত্রে জানা যাচ্ছে। রাত ৯টা পর্যন্ত যাত্রী উদ্ধারের যে সংখ্যা মিলেছে, তার ভিত্তিতে এই তথ্য দিয়েছে রেল। এতে বহু আহত ও নিহত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুক্রবার বিকেলে ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে ট্রেনটি পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শালিমার স্টেশন থেকে ছেড়েছিল এবং চেন্নাই যাচ্ছিল। ট্রেনটিতে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপশি বহু বাংলাদেশি নাগরিক দক্ষিণের ভেলোরে চিকিৎসা নিতে নিয়মিত যাতায়াত করেন। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন অনেক বাংলাদেশি।

জানা গেছে সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে ৭টার মধ্যে বালেশ্বর স্টেশন থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বাহানাগা স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়ে যায় ট্রেনটির একাধিক কামরা। মালগাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগেই ট্রেনটির তিনটি কামরা বাদ দিয়ে ১৮টি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। লাইনচ্যুত হয়েছে ট্রেনটির ইঞ্জিনের পর থেকে স্লিপার ক্লাস, প্যান্ট্রি কারসহ যাত্রীবাহী বগিগুলো। দুর্ঘটনার অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি মালগাড়ির উপর উঠে গিয়েছে।

রেল সূত্রে জানানো হয়েছে ঘটনায় বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। তবে ঠিক কত যাত্রী আহত বা কেউ নিহত হয়েছেন কী না তা এখনও রেলের তরফে স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। বিশেষত রাতের অন্ধকারে ট্রেন দুর্ঘটনাটি ঠিক কতটা ভয়াবহ হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রাই প্রথমে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন রেল আধিকারিক, কর্মী সহ বিশাল পুলিশ ও উদ্ধারকারী বাহিনী। রিলিফ ভ্যান ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে বলে খবর।

এই ট্রেন দুর্ঘটনার জেরে হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারত যাওয়ার সমস্ত ট্রেন বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ওড়িশাগামী ট্রেনও বাতিল। এর ফলে যাত্রী দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েছে। বাতিল হওয়া ট্রেনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, আপ জগন্নাথ এক্সপ্রেস, আপ পুরী এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস, চেন্নাই মেল।

দুর্ঘটনার জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেন যাত্রীদের কথায়, ‘হঠাৎ করে এক বিকট আওয়াজ হয়ে থেমে যায় ট্রেনটি।’একটি মালগাড়ি এবং এক্সপ্রেস ট্রেনটি একই লাইনে কোনোভাবে চলে এসেছিল। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, করমণ্ডল এক্সপ্রেসে পশ্চিমবঙ্গ, ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ ভেলোরে চিকিৎসার জন্য নিত্য যাতায়াত করেন। ফলে পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। এখনও কতজন মানুষ ভিতরে আটকে রয়েছেন, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধরি বলেন, ‘‘বালেশ্বরের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে কিছু একটা হয়েছে। আমরা কোনও ভাবে এখনও কিছু জানতে পারিনি। জানার চেষ্টা করছি। জানামাত্রই জানানো হবে।’’

ভারতে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩০ জনের মৃত্যু

শুক্রবার রাতে মমতা টুইটে লেখেন, ‘‘আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় বালেশ্বরের কাছে একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাত্রিবাহী শালিমার-করমণ্ডল এক্সপ্রেসের। আমাদের কয়েক জন মানুষ গুরুতর জখম হয়েছেন। আমরা আমাদের রাজ্যের যাত্রীদের জন্য ওড়িশা সরকার এবং দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। জরুরি ভিত্তিতে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, ০৩৩-২২১৪৩৫২৬/২২৫৩৫১৮৫ নম্বরগুলিতে যোগাযোগ করা যাবে। যাত্রীদের উদ্ধার, পুনরুদ্ধার, সাহায্য এবং সহায়তার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক টুইটে জানিয়েছেন, ওড়িশা সরকার এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে এবং উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করার জন্য ঘটনাস্থলে ৫-৬ সদস্যের একটি দল পাঠানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মুখ্য সচিব এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ রাখছেন।

এ ছাড়া করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় খবরাখবরের জন্য হাওড়া স্টেশনের জন্য হেল্পলাইন নম্বর— ০৩৩-২৬৩৮২২১৭। খড়্গপুর স্টেশনের জন্য হেল্পলাইন নম্বর— ৮৯৭২০৭৩৯২৫, ৯৩৩২৩৯২৩৩৯। বালেশ্বর স্টেশনের জন্য হেল্পলাইন নম্বর— ৮২৪৯৫৯১৫৫৯ এবং ৭৯৭৮৪১৮৩২২। শালিমার স্টেশনের জন্য হেল্পলাইন নম্বর— ৯৯০৩৩৭০৭৪৬।