ঢাকা ০৫:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বিশ্বে শিশু ও নারীদের খতনা করানোর সংখ্যা বেড়েছে

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:২৭:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪
  • / ৪৭৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গত আট বছরে মেয়ে শিশু ও নারীদের খতনা করানোর সংখ্যা ১৫ শতাংশ বেড়েছে। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় এফিএম বা ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমটি জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ। সংস্থাটি জানায়, বিশ্বে প্রায় ২৩ কোটি নারী খতনা করানোর পর বেঁচে আছেন। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ২০ কোটি। খবর বিবিসি

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল জানান, কম বয়সী নারীদের খতনা করানোর প্রবণতা বেশি।

তিনি বলেন, ‘নারীদের যৌনাঙ্গ কেটে ফেললে তাঁদের দেহের ক্ষতি হয়। এটি তাঁদের ভবিষ্যতকেও হুমকির মুখে ফেলে। এই ক্ষতিকর অভ্যাসের অবসান ঘটাতে আমাদের প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।’

নারীদের খতনার মানে হলো ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়েদের যৌনাঙ্গের বাইরের অংশটি কেটে ফেলা।

নারীদের এরকম যৌনাঙ্গ কর্তন বন্ধের আহবান জানিয়ে প্রতিবছরের ৬ই ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ দিবস হিসাবে পালন করে জাতিসংঘ।

ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বজুড়ে নারীদের খতনা করানো না হলেও যেসব দেশে খতনা করানো হয় সেসব দেশে মেয়ে শিশুর জন্মহার বেড়েছে। জাতিসংঘ চাইছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে নারী খৎনার বিষয়টি নির্মূল করতে। আর এ জন্য তারা যে গতিতে কাজ করছে তার চেয়ে ২৭ গুণ দ্রুত করতে হবে।

জাতিসংঘ বলছে, নারীদের যৌনাঙ্গের আংশিক বা সম্পূর্ণ অপসারণ করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ২০১২ সালে এটি নিষিদ্ধ করে একটি রেজ্যুলেশনও পাস হয়।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ৬০ শতাংশ নারীদের খতনাই হয় আফ্রিকায়। সেখানে ১৪ কোটি ৪০ লাখ নারীর খতনা করানো হয়েছে। এরপর বেশি নারীদের খতনা করানো এশিয়াতে। এই মহাদেশে ৮ কোটি নারীর খতনা করানো হয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যেও ৬০ লাখ নারীর খতনা করান রয়েছে।

ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ২৯টি দেশে ব্যাপকভাবে এই রীতি চালু রয়েছে, যদিও এদের মধ্যে ২৪টি দেশেই এটি নিষিদ্ধ।

প্রতিবেদন আরও বলা হয়, আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সোমালিয়া, গিনি, জিবুতি, মিসর, সুদান ও মালিতে সবচেয়ে বেশি নারীদের খতনা করানো হয়। এসব দেশে যুদ্ধ, জলবায়ু সংকট এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মতো সমস্যার কারণে নারীদের জন্য কোনো কর্মসূচি সফল করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।

এরমধ্যে কিছু আফ্রিকান দেশে গত কয়েক দশকে নারীদের খতনা করানোর চর্চা থেকে বেরিয়েছে। তবে মোট সংখ্যা বেড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নারীদের খতনার পেছনে যেসব কারণ মূলত কাজ করে: সামাজিক রীতি, ধর্ম, পরিছন্নতার বিষয়ে ভুল ধারণা, কৌমার্য রক্ষার একটি ধারণা, নারীদের বিয়ের উপযোগী করে তোলা এবং পুরুষের যৌন আনন্দ বৃদ্ধি করার মতো বিষয়।

অনেক সংস্কৃতিতে নারীদের খতনাকে মেয়েদের সাবালিকা হয়ে ওঠা মনে করা হয়। এটিকে অনেক সময় বিয়ের পূর্বশর্ত হিসাবেও দেখা হয়।

যদিও পরিছন্নতার বা স্বাস্থ্যগত কোন সুবিধা নেই, কিন্তু এ ধরণের রীতিতে অভ্যস্ত সমাজগুলোর মানুষেরা মনে করেন, যেসব মেয়েদের এরকম খতনা করা হয়নি, তারা তারা অস্বাস্থ্যকর, অপরিছন্ন বা গুরুত্বহীন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এটি করা হয় এবং বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি নারীদের বিরুদ্ধে একটি সহিংস আচরণ।

নারী খতনা নির্মূলে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ফাইভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নিমকো আলী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমি এ ঘটনার ভুক্তভোগী। আমি জানি নারীদের ওপর এর প্রভাব কী। এই সংখ্যা বাড়তে থাকার বিষয়টিতে আমি হতবাক বিশেষ করে যখন আমরা জানি কী কাজ করে আমরা এটিকে প্রতিরোধ করতে পারতাম।’

এরকম খৎনার শিকার একজন নারী বিশারা বলছেন, আরো চারটি মেয়ের সঙ্গে খৎনা করা হয়েছিল।

”প্রথমে আমার চোখ বেধে ফেলা হয়। এরপর আমার দুই হাত পেছনে শক্ত করে বাধা হয়। আমার দুই পা দুইদিকে মেলে ধরে যৌনাঙ্গের বাইরের চামড়া দুইটি শক্ত করে পিন কিছু দিয়ে আটকে দেয়া হয়।”

“কয়েক মিনিট পর আমি তীক্ষ্ণ একটি ব্যথা অনুভব করলাম। আমি চিৎকার করতে লাগলাম, আর্তনাদ করলাম, কিন্তু কেউ আমার কথা শুনলো না। আমি লাথি মেরে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু দানবের মতো কেউ আমার পা চেপে ধরে রাখল।”

তিনি বলছেন, এটি ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। পরে অন্য সব মেয়েদেরও একই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। ব্যথা নিরাময়ের জন্য ছিল শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে তৈরি ভেষজ ওষুধ।

”একটা ছাগলের মতো করে তারা আমার দুই পা টেনে ধরে ক্ষত স্থানে সেই ভেজষ ওষুধ মাখিয়ে দিল। এরপর বলতে লাগলো, পরের মেয়েটিকে নিয়ে আসো।”

যদিও মেয়েদের এরকম খৎনা অনেক দেশেই বেআইনি, তবে দক্ষিণ আফ্রিকা, এশিয়া আর মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশি এটি করা হয়ে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যেও এটি প্রচলিত আছে।

মেয়েদের ক্ষেত্রে চার ধরণের খৎনা
১. ভগাঙ্কুর এবং আশেপাশের চামড়ার পুরোটাই বা আংশিক কেটে ফেলা

২. ভগাঙ্কুর, যৌনাঙ্গের বাইরের বা ভেতরের চামড়া অপসারণ করে ফেলা

৩. যৌনাঙ্গের বাইরের বা ভেতরের অংশের চামড়ার অংশটি কেটে ফেলে পুন:স্থাপন করা।

যৌনাঙ্গের বাইরের এবং ভেতরের চামড়া কেটে এমনভাবে পুনঃ স্থাপন করা হয়, যাতে শুধুমাত্র মূত্র ত্যাগের জন্য ছোট একটি ফাঁকা থাকে। এতে অনেক সময় নারীদের নানা সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

অনেক সময় এই ফাঁকা জায়গাটি এতো ছোট হয়ে থাকে যে, যৌন মিলনের জন্য পরবর্তীতে আবার কেটে বড় করতে হয়। অনেক সময় সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

৪. ওপরের তিনটির বাইরে ভগাঙ্কুরের বা যৌনাঙ্গের সবরকম কাটা ছেড়া বা ক্ষত তৈরি করা

কেন এটি করা হয়?
নারীদের খৎনার পেছনে যেসব কারণ মূলত কাজ করে: সামাজিক রীতি, ধর্ম, পরিছন্নতার বিষয়ে ভুল ধারণা, কৌমার্য রক্ষার একটি ধারণা, নারীদের বিয়ের উপযোগী করে তোলা এবং পুরুষের যৌন আনন্দ বৃদ্ধি করার মতো বিষয়।

অনেক সংস্কৃতিতে নারীদের খৎনাকে মেয়েদের সাবালিকা হয়ে ওঠা মনে করা হয়। এটিকে অনেক সময় বিয়ের পূর্বশর্ত হিসাবেও দেখা হয়।

যদিও পরিছন্নতার বা স্বাস্থ্যগত কোন সুবিধা নেই, কিন্তু এ ধরণের রীতিতে অভ্যস্ত সমাজগুলোর মানুষেরা মনে করেন, যেসব মেয়েদের এরকম খৎনা করা হয়নি, তারা তারা অস্বাস্থ্যকর, অপরিছন্ন বা গুরুত্বহীন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এটি করা হয় এবং বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি নারীদের বিরুদ্ধে একটি সহিংস আচরণ।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিশ্বে শিশু ও নারীদের খতনা করানোর সংখ্যা বেড়েছে

আপডেট সময় : ০১:২৭:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪

গত আট বছরে মেয়ে শিশু ও নারীদের খতনা করানোর সংখ্যা ১৫ শতাংশ বেড়েছে। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় এফিএম বা ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমটি জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ। সংস্থাটি জানায়, বিশ্বে প্রায় ২৩ কোটি নারী খতনা করানোর পর বেঁচে আছেন। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ২০ কোটি। খবর বিবিসি

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল জানান, কম বয়সী নারীদের খতনা করানোর প্রবণতা বেশি।

তিনি বলেন, ‘নারীদের যৌনাঙ্গ কেটে ফেললে তাঁদের দেহের ক্ষতি হয়। এটি তাঁদের ভবিষ্যতকেও হুমকির মুখে ফেলে। এই ক্ষতিকর অভ্যাসের অবসান ঘটাতে আমাদের প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।’

নারীদের খতনার মানে হলো ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়েদের যৌনাঙ্গের বাইরের অংশটি কেটে ফেলা।

নারীদের এরকম যৌনাঙ্গ কর্তন বন্ধের আহবান জানিয়ে প্রতিবছরের ৬ই ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ দিবস হিসাবে পালন করে জাতিসংঘ।

ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বজুড়ে নারীদের খতনা করানো না হলেও যেসব দেশে খতনা করানো হয় সেসব দেশে মেয়ে শিশুর জন্মহার বেড়েছে। জাতিসংঘ চাইছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে নারী খৎনার বিষয়টি নির্মূল করতে। আর এ জন্য তারা যে গতিতে কাজ করছে তার চেয়ে ২৭ গুণ দ্রুত করতে হবে।

জাতিসংঘ বলছে, নারীদের যৌনাঙ্গের আংশিক বা সম্পূর্ণ অপসারণ করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ২০১২ সালে এটি নিষিদ্ধ করে একটি রেজ্যুলেশনও পাস হয়।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ৬০ শতাংশ নারীদের খতনাই হয় আফ্রিকায়। সেখানে ১৪ কোটি ৪০ লাখ নারীর খতনা করানো হয়েছে। এরপর বেশি নারীদের খতনা করানো এশিয়াতে। এই মহাদেশে ৮ কোটি নারীর খতনা করানো হয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যেও ৬০ লাখ নারীর খতনা করান রয়েছে।

ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ২৯টি দেশে ব্যাপকভাবে এই রীতি চালু রয়েছে, যদিও এদের মধ্যে ২৪টি দেশেই এটি নিষিদ্ধ।

প্রতিবেদন আরও বলা হয়, আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে সোমালিয়া, গিনি, জিবুতি, মিসর, সুদান ও মালিতে সবচেয়ে বেশি নারীদের খতনা করানো হয়। এসব দেশে যুদ্ধ, জলবায়ু সংকট এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মতো সমস্যার কারণে নারীদের জন্য কোনো কর্মসূচি সফল করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।

এরমধ্যে কিছু আফ্রিকান দেশে গত কয়েক দশকে নারীদের খতনা করানোর চর্চা থেকে বেরিয়েছে। তবে মোট সংখ্যা বেড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নারীদের খতনার পেছনে যেসব কারণ মূলত কাজ করে: সামাজিক রীতি, ধর্ম, পরিছন্নতার বিষয়ে ভুল ধারণা, কৌমার্য রক্ষার একটি ধারণা, নারীদের বিয়ের উপযোগী করে তোলা এবং পুরুষের যৌন আনন্দ বৃদ্ধি করার মতো বিষয়।

অনেক সংস্কৃতিতে নারীদের খতনাকে মেয়েদের সাবালিকা হয়ে ওঠা মনে করা হয়। এটিকে অনেক সময় বিয়ের পূর্বশর্ত হিসাবেও দেখা হয়।

যদিও পরিছন্নতার বা স্বাস্থ্যগত কোন সুবিধা নেই, কিন্তু এ ধরণের রীতিতে অভ্যস্ত সমাজগুলোর মানুষেরা মনে করেন, যেসব মেয়েদের এরকম খতনা করা হয়নি, তারা তারা অস্বাস্থ্যকর, অপরিছন্ন বা গুরুত্বহীন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এটি করা হয় এবং বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি নারীদের বিরুদ্ধে একটি সহিংস আচরণ।

নারী খতনা নির্মূলে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ফাইভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নিমকো আলী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমি এ ঘটনার ভুক্তভোগী। আমি জানি নারীদের ওপর এর প্রভাব কী। এই সংখ্যা বাড়তে থাকার বিষয়টিতে আমি হতবাক বিশেষ করে যখন আমরা জানি কী কাজ করে আমরা এটিকে প্রতিরোধ করতে পারতাম।’

এরকম খৎনার শিকার একজন নারী বিশারা বলছেন, আরো চারটি মেয়ের সঙ্গে খৎনা করা হয়েছিল।

”প্রথমে আমার চোখ বেধে ফেলা হয়। এরপর আমার দুই হাত পেছনে শক্ত করে বাধা হয়। আমার দুই পা দুইদিকে মেলে ধরে যৌনাঙ্গের বাইরের চামড়া দুইটি শক্ত করে পিন কিছু দিয়ে আটকে দেয়া হয়।”

“কয়েক মিনিট পর আমি তীক্ষ্ণ একটি ব্যথা অনুভব করলাম। আমি চিৎকার করতে লাগলাম, আর্তনাদ করলাম, কিন্তু কেউ আমার কথা শুনলো না। আমি লাথি মেরে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু দানবের মতো কেউ আমার পা চেপে ধরে রাখল।”

তিনি বলছেন, এটি ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। পরে অন্য সব মেয়েদেরও একই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। ব্যথা নিরাময়ের জন্য ছিল শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে তৈরি ভেষজ ওষুধ।

”একটা ছাগলের মতো করে তারা আমার দুই পা টেনে ধরে ক্ষত স্থানে সেই ভেজষ ওষুধ মাখিয়ে দিল। এরপর বলতে লাগলো, পরের মেয়েটিকে নিয়ে আসো।”

যদিও মেয়েদের এরকম খৎনা অনেক দেশেই বেআইনি, তবে দক্ষিণ আফ্রিকা, এশিয়া আর মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশি এটি করা হয়ে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যেও এটি প্রচলিত আছে।

মেয়েদের ক্ষেত্রে চার ধরণের খৎনা
১. ভগাঙ্কুর এবং আশেপাশের চামড়ার পুরোটাই বা আংশিক কেটে ফেলা

২. ভগাঙ্কুর, যৌনাঙ্গের বাইরের বা ভেতরের চামড়া অপসারণ করে ফেলা

৩. যৌনাঙ্গের বাইরের বা ভেতরের অংশের চামড়ার অংশটি কেটে ফেলে পুন:স্থাপন করা।

যৌনাঙ্গের বাইরের এবং ভেতরের চামড়া কেটে এমনভাবে পুনঃ স্থাপন করা হয়, যাতে শুধুমাত্র মূত্র ত্যাগের জন্য ছোট একটি ফাঁকা থাকে। এতে অনেক সময় নারীদের নানা সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

অনেক সময় এই ফাঁকা জায়গাটি এতো ছোট হয়ে থাকে যে, যৌন মিলনের জন্য পরবর্তীতে আবার কেটে বড় করতে হয়। অনেক সময় সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

৪. ওপরের তিনটির বাইরে ভগাঙ্কুরের বা যৌনাঙ্গের সবরকম কাটা ছেড়া বা ক্ষত তৈরি করা

কেন এটি করা হয়?
নারীদের খৎনার পেছনে যেসব কারণ মূলত কাজ করে: সামাজিক রীতি, ধর্ম, পরিছন্নতার বিষয়ে ভুল ধারণা, কৌমার্য রক্ষার একটি ধারণা, নারীদের বিয়ের উপযোগী করে তোলা এবং পুরুষের যৌন আনন্দ বৃদ্ধি করার মতো বিষয়।

অনেক সংস্কৃতিতে নারীদের খৎনাকে মেয়েদের সাবালিকা হয়ে ওঠা মনে করা হয়। এটিকে অনেক সময় বিয়ের পূর্বশর্ত হিসাবেও দেখা হয়।

যদিও পরিছন্নতার বা স্বাস্থ্যগত কোন সুবিধা নেই, কিন্তু এ ধরণের রীতিতে অভ্যস্ত সমাজগুলোর মানুষেরা মনে করেন, যেসব মেয়েদের এরকম খৎনা করা হয়নি, তারা তারা অস্বাস্থ্যকর, অপরিছন্ন বা গুরুত্বহীন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এটি করা হয় এবং বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি নারীদের বিরুদ্ধে একটি সহিংস আচরণ।