ঢাকা ১০:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ফুলবাড়ীতে রাসায়নিক সার ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৩:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২
  • / ৪৪৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মোঃ আবু শহীদ,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে গোবর ও গোমূত্র দিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে ধান,পটলসহ অন্যান্য নানা জাতের ফসল চাষাবাদ করে সাড়া ফেলেছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষক মোঃ সোহরাব মন্ডল। তাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে একই গ্রামের অন্য কৃষকরা চাষাবাদ লাভের মুখ দেখছেন। এলাকার কৃষকরা বলছেন,আগামীতে তাদের গ্রামের সকল কৃষক রাসায়নিক সার ছাড়াই চাষাবাদ করবেন। এতে তাদের স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা হবে।

সরেজমিনে উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের নথন জামাদানী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,সোহরাব মন্ডল তাঁর জমি থেকে পটল তুলছেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি চারমণ করে পটল বিক্রি করছেন। একইভাবে তার আমন খেতের জমিতেও ধানের শিষে হলুদের সমারোহ যেন চোখে পড়ার মতো। সোহরাব মন্ডলসহ ওই গ্রামের অধিকাংশ কৃষক কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরীকৃত গোবর ও গোমূত্র দিয়ে তাদের আমন ধানসহ পটল, কলা ও শতীকালীন শাক সবজি আবাদ করেছেন। ১০০ দিনের মাথায় তাঁদের ধান ক্ষেত শিষে ছেয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই পটলে আশানুরুপ ফলন পেয়েছেন এবং বিক্রি করে বেশ মুনাফাও করছেন কৃষক সোহরাব মন্ডল। আর কদিন পরেই আমন ধান ঘরে তুলবেন,ধানেও ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। তার এই চাষের প্রক্রিয়ায় খরচ কম হওয়ায় অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এসপিএনএফ (সুবাস পালাকার ন্যাচারাল ফার্মিং) পদ্ধতি অনুসরণ করে জামাদার্নী গ্রামের সোহরাব মন্ডল প্রথমে তার ২০ শতাংশ জমিতে পটল চাষ শুরু করেন। ফলন ভাল ও খরচ কম হওয়ায় তার কাছে পরামর্শ নিয়ে । এতে কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই গোবর ও গোমূত্র দিয়ে বিশেষভাবে চাষ করেছেন তাঁরা।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশের (সিসিডিবি) দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতায় সোহরাব মন্ডল এই চাষবাদ শুরু করেন ৫ মাস পূর্বে। প্রথমে তিনি ২০ শতাংশ জমিতে সিসিডিবির সহযোগিতায় এসপিএনএফ পদ্ধতিতে পটল চাষ শুরু করেন। পরে পটলের আশানুরুপ ফলন পেয়ে আমন ধান ও কলা চাষ করেছেন। এর মধ্যে কলাও ভাল হয়েছে তার। তিনি বলছেন,আমন ক্ষেতের শীষ দেখে মনে হচ্ছে ফলন ভালই আসবে। দু-একদিনের মধ্যেই ধান কাটতে পারবেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ইতিপূর্বে ওই জমিতে পটল চাষ করতেন রাসায়নিক সার ব্যবহার করে। তাতে তার খরচ হতো প্রায় ৪০ হাজার টাকা এবং পটল বিক্রি করতে পারতেন প্রায় এক লাখ টাকার। বর্তমানে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে তার পটল ক্ষেতে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা এবং পটলের ফলন ও বিক্রি হবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বলে আশা করছেন। একইভাবে তিনি তুলনা করে বলেন রাসায়নিক সার ব্যবহার করে এক বিঘা জমিতে আমন চাষে খরচ হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা আর এসপিএনএফ পদ্ধতিতে আমন ধান চাষ করতে এক বিঘা জমিতে খরচ হবে মাত্র দেড় হাজার টাকা। এতে খরচও সাশ্রয়ী এবং লাভ বেশী । তাই আগামীতে তিনি সব জমি এই পদ্ধিতে চাষাবাদ করবেন বলে জানান। তাঁর ফসলের ফলন দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন একই গ্রামের কৃষক সেলিনা, বেলাল, এনামুল, মমতাজ, নুরুজ্জামান ও মান্নান। তারাও এই পদ্ধতিতে চাষ করেছেন পটল, কলাসহ শীত কালীন শাক সবজি ।

কৃষকরা জানান,চাষ পদ্ধতি হিসেবে এসপিএনএফ (সুবাস পালাকার ন্যাচারাল ফার্মিং) পদ্ধতিতে প্রথমে জীবামৃত ‘জীবামুরাদ’ তৈরি করতে হয়। এতে ১০ কেজি গোবর, ১০ লিটার গোমূত্র, ১ কেজি চিটাগুড়, ১ কেজি বেসন ও পরিমাণ মতো মাটি দিয়ে মিশ্রণ তৈরী করতে হয়।সেটি তিন দিন রাখার পর তা জীবামুরদে পরিণত হয়। পরে তা জমিতে প্রয়োগ করে চাষাবাদ করতে হয়।
সিসিডিবির দাউদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক হরি সাধন রায় বলেন, ‘আমরা দেখেছি কৃষকদের একটা বড় অঙ্ক রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পেছনে ব্যয় করতে হয়। তাতে কৃষকের লাভের অর্ধেক চলে যায়। এই অঞ্চলে প্রথমবার সোহরাব মন্ডলসহ কয়েকজন কৃষক আমন ধান, পটল, কলা, আলু, সরিষা এসপিএনএফ (সুবাস পালাকার ন্যাচারাল ফার্মিং) পদ্ধতিতে চাষ করেছেন এবং লাভবান হয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে জৈব পদ্ধিতে চাষাবাদ অবশ্যই ভাল। এতে কৃষকের খরচ বাঁচে এবং ফলনকৃত ফসল পুষ্টি সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। উপজেলার নথন জামাদানী গ্রামের কৃষকরা এসপিএনএফ (সুবাস পালাকার ন্যাচারাল ফার্মিং) পদ্ধতিতে চাষ করছে আমি শুনেছি। বিষয়টি সরজমিনে দেখতে যাবেন বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ফুলবাড়ীতে রাসায়নিক সার ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদ

আপডেট সময় : ০৭:৩৩:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২

মোঃ আবু শহীদ,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে গোবর ও গোমূত্র দিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে ধান,পটলসহ অন্যান্য নানা জাতের ফসল চাষাবাদ করে সাড়া ফেলেছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষক মোঃ সোহরাব মন্ডল। তাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে একই গ্রামের অন্য কৃষকরা চাষাবাদ লাভের মুখ দেখছেন। এলাকার কৃষকরা বলছেন,আগামীতে তাদের গ্রামের সকল কৃষক রাসায়নিক সার ছাড়াই চাষাবাদ করবেন। এতে তাদের স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা হবে।

সরেজমিনে উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের নথন জামাদানী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,সোহরাব মন্ডল তাঁর জমি থেকে পটল তুলছেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি চারমণ করে পটল বিক্রি করছেন। একইভাবে তার আমন খেতের জমিতেও ধানের শিষে হলুদের সমারোহ যেন চোখে পড়ার মতো। সোহরাব মন্ডলসহ ওই গ্রামের অধিকাংশ কৃষক কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরীকৃত গোবর ও গোমূত্র দিয়ে তাদের আমন ধানসহ পটল, কলা ও শতীকালীন শাক সবজি আবাদ করেছেন। ১০০ দিনের মাথায় তাঁদের ধান ক্ষেত শিষে ছেয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই পটলে আশানুরুপ ফলন পেয়েছেন এবং বিক্রি করে বেশ মুনাফাও করছেন কৃষক সোহরাব মন্ডল। আর কদিন পরেই আমন ধান ঘরে তুলবেন,ধানেও ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। তার এই চাষের প্রক্রিয়ায় খরচ কম হওয়ায় অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এসপিএনএফ (সুবাস পালাকার ন্যাচারাল ফার্মিং) পদ্ধতি অনুসরণ করে জামাদার্নী গ্রামের সোহরাব মন্ডল প্রথমে তার ২০ শতাংশ জমিতে পটল চাষ শুরু করেন। ফলন ভাল ও খরচ কম হওয়ায় তার কাছে পরামর্শ নিয়ে । এতে কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই গোবর ও গোমূত্র দিয়ে বিশেষভাবে চাষ করেছেন তাঁরা।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশের (সিসিডিবি) দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতায় সোহরাব মন্ডল এই চাষবাদ শুরু করেন ৫ মাস পূর্বে। প্রথমে তিনি ২০ শতাংশ জমিতে সিসিডিবির সহযোগিতায় এসপিএনএফ পদ্ধতিতে পটল চাষ শুরু করেন। পরে পটলের আশানুরুপ ফলন পেয়ে আমন ধান ও কলা চাষ করেছেন। এর মধ্যে কলাও ভাল হয়েছে তার। তিনি বলছেন,আমন ক্ষেতের শীষ দেখে মনে হচ্ছে ফলন ভালই আসবে। দু-একদিনের মধ্যেই ধান কাটতে পারবেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ইতিপূর্বে ওই জমিতে পটল চাষ করতেন রাসায়নিক সার ব্যবহার করে। তাতে তার খরচ হতো প্রায় ৪০ হাজার টাকা এবং পটল বিক্রি করতে পারতেন প্রায় এক লাখ টাকার। বর্তমানে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে তার পটল ক্ষেতে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা এবং পটলের ফলন ও বিক্রি হবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বলে আশা করছেন। একইভাবে তিনি তুলনা করে বলেন রাসায়নিক সার ব্যবহার করে এক বিঘা জমিতে আমন চাষে খরচ হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা আর এসপিএনএফ পদ্ধতিতে আমন ধান চাষ করতে এক বিঘা জমিতে খরচ হবে মাত্র দেড় হাজার টাকা। এতে খরচও সাশ্রয়ী এবং লাভ বেশী । তাই আগামীতে তিনি সব জমি এই পদ্ধিতে চাষাবাদ করবেন বলে জানান। তাঁর ফসলের ফলন দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন একই গ্রামের কৃষক সেলিনা, বেলাল, এনামুল, মমতাজ, নুরুজ্জামান ও মান্নান। তারাও এই পদ্ধতিতে চাষ করেছেন পটল, কলাসহ শীত কালীন শাক সবজি ।

কৃষকরা জানান,চাষ পদ্ধতি হিসেবে এসপিএনএফ (সুবাস পালাকার ন্যাচারাল ফার্মিং) পদ্ধতিতে প্রথমে জীবামৃত ‘জীবামুরাদ’ তৈরি করতে হয়। এতে ১০ কেজি গোবর, ১০ লিটার গোমূত্র, ১ কেজি চিটাগুড়, ১ কেজি বেসন ও পরিমাণ মতো মাটি দিয়ে মিশ্রণ তৈরী করতে হয়।সেটি তিন দিন রাখার পর তা জীবামুরদে পরিণত হয়। পরে তা জমিতে প্রয়োগ করে চাষাবাদ করতে হয়।
সিসিডিবির দাউদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক হরি সাধন রায় বলেন, ‘আমরা দেখেছি কৃষকদের একটা বড় অঙ্ক রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পেছনে ব্যয় করতে হয়। তাতে কৃষকের লাভের অর্ধেক চলে যায়। এই অঞ্চলে প্রথমবার সোহরাব মন্ডলসহ কয়েকজন কৃষক আমন ধান, পটল, কলা, আলু, সরিষা এসপিএনএফ (সুবাস পালাকার ন্যাচারাল ফার্মিং) পদ্ধতিতে চাষ করেছেন এবং লাভবান হয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে জৈব পদ্ধিতে চাষাবাদ অবশ্যই ভাল। এতে কৃষকের খরচ বাঁচে এবং ফলনকৃত ফসল পুষ্টি সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। উপজেলার নথন জামাদানী গ্রামের কৃষকরা এসপিএনএফ (সুবাস পালাকার ন্যাচারাল ফার্মিং) পদ্ধতিতে চাষ করছে আমি শুনেছি। বিষয়টি সরজমিনে দেখতে যাবেন বলে জানান তিনি।