ঢাকা ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১৬

বিশেষ প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৮:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৪৩০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গত ১৬ এপ্রিল ফরিদপুর সদরের তেতুলতলা দিকনগর এলাকায় ঢাকা-খুলনাগামী উত্তরা ইউনিক পরিবহনের সাথে বিপরীত দিক আলফাডাঙ্গা থেকে আসা ফরিদপুরগামী একটি পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৫ নিহতদের পর আহত চিকিৎসাধীন অবস্থায় হুরি বেগম (৬৫) নামে এক নারী মারা গেছেন। এর আগে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই পিকআপে থাকা নারী, পুরুষ, শিশুসহ ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের ৪জনসহ ১১ জন নিহত হন। সংঘর্ষে আহত ৭ জনের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে মারা যান আরো ৪ জন। পিকআপে থাকা নিহত রাকিবুল ইসলাম মিলনের পরিবারের ৫জনের মধ্যে বেঁচে থাকা একজন ছিলেন তার মা হুরি বেগম। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাড়ালো ১৬জন।
এ ঘটনায় দুর্ঘটনায় বোয়ালমারী উপজেলা রূপাপাত ইউনিয়নের কুমরাইল গ্রামের নিহত ইকবাল হোসেনের বড় ভাই এনামুল হক বাদী হয়ে চালককে আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে র‌্যাব-১০ অভিযান চালিয়ে ২১ এপ্রিল ঝিনাইদহের কোর্ট চাঁদপুর এলাকা থেকে খোকন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনার ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী সিদ্দিকী রবিবার (২১ এপ্রিল) তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা দেন জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারের কাছে।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে যা উল্লেখ্য করা হয়েছে তার অন্যতম বিষয়গুলো ছিলো, ঈদের পরে বাস চালকের দীর্ঘ সময় গাড়ি পরিচালনায় ক্লান্তি আর চোখে ঘুম ছিলো, তিনি দীর্ঘ সময় গাড়িটি চালাচ্ছিল। সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পেরেছি যাত্রীবাহি বাস ও পিকআপ ভ্যানটি অধিক গতিতে চলছিল। তাদের সামনে অটো রিক্সা থাকার মহাসড়কে নিজস্ব লেন ছেড়ে অন্য লেনে চলে যায়। দুটি গাড়িই ওভার গতিতে ছিলো, যে কারনে যানবাহন দুইটি তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
মহাসড়কে দুঘর্টনা রোধে ফরিদপুরের তদন্ত কমিটি যে সুপারিশ করেছেন সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর মিছিল রোধ করা যেতে পারে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার উক্ত রিপোর্টটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জমা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার ফরিদপুরের করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ১১ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত ৭ জনকে উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ৪ জন মারা যান। মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হুরি বেগম (৬৫) নামে আরেকজন মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি।
এদিকে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত বাসচালক খোকন মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন তথ্য বের করেছেন র‌্যাব। চালকের কোনো পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। হালকা গাড়ি চালানোর লাইসেন্স আছে। এই লাইসেন্স দিয়েই ১৩ বছর ধরে ভারি যানবাহন চালিয়ে আসছেন তিনি। তাকে কেউ আটকালে সেখানে টাকা দিয়ে ও নানা উপায়ে পার হয়ে যেতেন খোকন। র‌্যাবের ফরিদপুরের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার কেএম শাইখ আকতার এ তথ্য জানান।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার জানান, খোকন মিয়া জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন, এ ১৩ বছরে তিনি কখনো দুর্ঘটনা ঘটাননি, ফরিদপুরের দিগনগরেই প্রথম দুর্ঘটনা ঘটে। যে দুর্ঘটনায় মারা যান ১৬ জন।
সড়ক দুর্ঘটনার দিন একটানা বাস চালাচ্ছিলেন খোকন মিয়া। ১৫ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থেকে বাস নিয়ে রাত ৩টায় ঢাকার গাবতলী পৌঁছান। সেখানে মাত্র একঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে ফের ভোর ৪টায় গাবতলী থেকে জীবননগরের উদ্দেশে বাস ছাড়েন। পথে ফরিদপুরের কানাইপুরের দিকনগর এলাকায় তার বাসের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ১৬ জন নিহত হন।
তিনি আরো বলেন, ইউনিক পরিবহনের যে বাসটি খোকন চালাতেন, সে বাসের মালিকানা তিনবার বিক্রি করা হলেও রেজিস্ট্রেশন ছিল প্রথম মালিকের নামেই। পরে যারা বাসের মালিকানা কিনে নেন তারা আর পুনরায় রেজিস্ট্রেশন করেননি। র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, এভাবে একনাগাড়ে চালকদের দিয়ে বাস চালাতে বাধ্য করা কতটা যৌক্তিক ছিল, বাস মালিকপক্ষের এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।
বাখ//আর

নিউজটি শেয়ার করুন

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১৬

আপডেট সময় : ০৪:৫৮:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গত ১৬ এপ্রিল ফরিদপুর সদরের তেতুলতলা দিকনগর এলাকায় ঢাকা-খুলনাগামী উত্তরা ইউনিক পরিবহনের সাথে বিপরীত দিক আলফাডাঙ্গা থেকে আসা ফরিদপুরগামী একটি পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৫ নিহতদের পর আহত চিকিৎসাধীন অবস্থায় হুরি বেগম (৬৫) নামে এক নারী মারা গেছেন। এর আগে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই পিকআপে থাকা নারী, পুরুষ, শিশুসহ ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের ৪জনসহ ১১ জন নিহত হন। সংঘর্ষে আহত ৭ জনের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে মারা যান আরো ৪ জন। পিকআপে থাকা নিহত রাকিবুল ইসলাম মিলনের পরিবারের ৫জনের মধ্যে বেঁচে থাকা একজন ছিলেন তার মা হুরি বেগম। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাড়ালো ১৬জন।
এ ঘটনায় দুর্ঘটনায় বোয়ালমারী উপজেলা রূপাপাত ইউনিয়নের কুমরাইল গ্রামের নিহত ইকবাল হোসেনের বড় ভাই এনামুল হক বাদী হয়ে চালককে আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে র‌্যাব-১০ অভিযান চালিয়ে ২১ এপ্রিল ঝিনাইদহের কোর্ট চাঁদপুর এলাকা থেকে খোকন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনার ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী সিদ্দিকী রবিবার (২১ এপ্রিল) তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা দেন জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদারের কাছে।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে তদন্ত প্রতিবেদনে যা উল্লেখ্য করা হয়েছে তার অন্যতম বিষয়গুলো ছিলো, ঈদের পরে বাস চালকের দীর্ঘ সময় গাড়ি পরিচালনায় ক্লান্তি আর চোখে ঘুম ছিলো, তিনি দীর্ঘ সময় গাড়িটি চালাচ্ছিল। সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পেরেছি যাত্রীবাহি বাস ও পিকআপ ভ্যানটি অধিক গতিতে চলছিল। তাদের সামনে অটো রিক্সা থাকার মহাসড়কে নিজস্ব লেন ছেড়ে অন্য লেনে চলে যায়। দুটি গাড়িই ওভার গতিতে ছিলো, যে কারনে যানবাহন দুইটি তাদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
মহাসড়কে দুঘর্টনা রোধে ফরিদপুরের তদন্ত কমিটি যে সুপারিশ করেছেন সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর মিছিল রোধ করা যেতে পারে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার উক্ত রিপোর্টটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জমা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার ফরিদপুরের করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ১১ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত ৭ জনকে উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ৪ জন মারা যান। মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হুরি বেগম (৬৫) নামে আরেকজন মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি।
এদিকে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত বাসচালক খোকন মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন তথ্য বের করেছেন র‌্যাব। চালকের কোনো পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। হালকা গাড়ি চালানোর লাইসেন্স আছে। এই লাইসেন্স দিয়েই ১৩ বছর ধরে ভারি যানবাহন চালিয়ে আসছেন তিনি। তাকে কেউ আটকালে সেখানে টাকা দিয়ে ও নানা উপায়ে পার হয়ে যেতেন খোকন। র‌্যাবের ফরিদপুরের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার কেএম শাইখ আকতার এ তথ্য জানান।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার জানান, খোকন মিয়া জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন, এ ১৩ বছরে তিনি কখনো দুর্ঘটনা ঘটাননি, ফরিদপুরের দিগনগরেই প্রথম দুর্ঘটনা ঘটে। যে দুর্ঘটনায় মারা যান ১৬ জন।
সড়ক দুর্ঘটনার দিন একটানা বাস চালাচ্ছিলেন খোকন মিয়া। ১৫ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থেকে বাস নিয়ে রাত ৩টায় ঢাকার গাবতলী পৌঁছান। সেখানে মাত্র একঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে ফের ভোর ৪টায় গাবতলী থেকে জীবননগরের উদ্দেশে বাস ছাড়েন। পথে ফরিদপুরের কানাইপুরের দিকনগর এলাকায় তার বাসের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ১৬ জন নিহত হন।
তিনি আরো বলেন, ইউনিক পরিবহনের যে বাসটি খোকন চালাতেন, সে বাসের মালিকানা তিনবার বিক্রি করা হলেও রেজিস্ট্রেশন ছিল প্রথম মালিকের নামেই। পরে যারা বাসের মালিকানা কিনে নেন তারা আর পুনরায় রেজিস্ট্রেশন করেননি। র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, এভাবে একনাগাড়ে চালকদের দিয়ে বাস চালাতে বাধ্য করা কতটা যৌক্তিক ছিল, বাস মালিকপক্ষের এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।
বাখ//আর