ঢাকা ০২:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

প্রমত্তা ধলেশ্বরী এখন সবুজ ফসলের মাঠ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:০১:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৬২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মো. নজরুল ইসলাম, হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি :

হাওর-বাওর, নদী, খাল, বিল বেষ্টিত দেশের অন্যতম উপজেলা কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ধলেশ্বরী নদী। কালের বিবর্তনে প্রমত্তা ধলেশ্বরী এখন পরিণত হয়েছে সবুজ ফসলের মাঠে। উপজেলার ইকুরদিয়া হতে কাস্তুল পর্যন্ত প্রায় ৯কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ধলেশ্বরীর বুকে জেগেছে চর। দখলদারেরা এই চর দখল করে খন্ড খন্ড করে ফসলী জমিতে রূপান্তর করে রোপন করেছে রোরো ধান। এতে যেমনি নষ্ট হচ্ছে নদীর স্বাভাবিক পরিবেশ তেমনি এসব জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এর বিষ ক্রিয়ায় পোনা ও মা মাছসহ নদীতে থাকা বিভিন্ন জলজ প্রাণীর মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

জেগে ওঠা চরের মাঝখান দিয়ে বইছে সরু পানির ধারা। দেখলে মনে হয় প্রমত্তা ধলেশ্বরীর স্বাক্ষী হয়ে এখনও এর ঐতিহ্য বহন করে চলছে এই মরা খাল। কোথাও আবার চর পড়ে নদীর দুই পাড় সমান্তরাল হয়ে গেছে। দেখলে বুঝার কোন উপায় নেই যে, এটাই এক সময়ের প্রবল স্রোত আর গভীর জলরাশির খরস্রোতা ধলেশ্বরী নদী। এই ধলেশ্বরী বাঙ্গালপাড়া গজিয়া খালে মিশে মেঘনার সাথে সংযুক্ত হয়েছে। বর্তমানে ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীর সংযোগমুখও প্রায় বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে। উজান থেকে নেমে আসা পলিমাটি ও বালি জমে তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে যায় এবং বর্ষাকালে স্বাভাবিক নাব্যতা সংকটে অল্পতেই বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে নদী পাড়ের মানুষ।

আগাম বন্যার কারণে নদী তীরবর্তী হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ছে কৃষক। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় হাজার হাজার হেক্টর বোরো জমিতে সেচ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে দুই পাড়ের চাষীরা। যার ফলে অনাবাদী থেকে যাচ্ছে শত শত হেক্টর জমি।

নদীতে পানি না থাকায় বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে নদীর তীরে বসতি গড়া কয়েক হাজার জেলে পরিবার। কেউ আবার বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে ধাবিত হচ্ছে অন্য কোন পেশায়।

অষ্টগ্রাম সদরের সাথে কুলিয়ারচর, ভৈরব ও বাজিতপুরের লঞ্চ ও নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। ফলে পণ্য পরিবহন তথা যাতায়াতে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বাসিন্দারা। ধলেশ্বরী নদী এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা ও শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। এখানকার কৃষি, প্রকৃতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে এ নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাছাড়া নদীটি বন্ধ হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশগত ভারসাম্য। হাওরের বাসিন্দারা মনে করছেন, নদী বাঁচলে, বাঁচবে দেশ এই  স্লোগানকে সামনে রেখে দ্রুত এ নদী খনন করা না হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাওরের হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি অনাবাদী থাকার আশঙ্কাসহ আরও বড় রকমের সমস্যার সম্মুখীন হবে হাওরের জনগণ।

এ বিষয়ে হাওরাঞ্চলবাসী ঢাকা’র প্রধান সমন্বয়ক ড. হালিম দাদ খাঁন এ প্রতিনিধিকে জানান, আমাদের দেশের বেশির ভাগ নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতে। যখন একদেশ তখন কোন প্রশ্ন ছিলনা। দেশ ভাগ হওয়ার পর ভারত নদীগুলোতে তাদের সুবিধামত বাঁধ নির্মাণের ফলে পানির প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে করে পানির প্রবাহ কম থাকায় নদীতে পলি পড়ে নদী ভরাট হচ্ছে। তিনি বলেন, যৌথ নদী কমিশন একটি অকার্যকর সংস্থা। এটিকে কার্যকর করতে হবে। ১৯৯৭ সালের আন্তর্জাতিক নদী প্রবাহ আইনে প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র ভারত স্বাক্ষর করেনি। ভারতকে এ আইনে স্বাক্ষর করতে উৎসাহিত করতে হবে। নদী খননের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের নদী গুলো অপরিকল্পিত ভাবে খনন করা হয়। তাই এটা তেমন কোন কাজে আসেনা। এজন্যে সম্পূর্ণ নদী সার্ভে করে এর মাটি কোথায় ফেলতে হবে এ বিষয়ে আগেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জেম্স এ প্রতিনিধিকে জানান, বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নদী খনন প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে চলছে।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান এ প্রতিনিধিকে জানান-ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করে জমা দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি শীঘ্রই পাশ হবে বলে আশিা করছি। পাশ হলেই আমরা নদী পুণঃখনন করতে পারব।

 

বা/খ: জই

নিউজটি শেয়ার করুন

প্রমত্তা ধলেশ্বরী এখন সবুজ ফসলের মাঠ

আপডেট সময় : ০৬:০১:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

মো. নজরুল ইসলাম, হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি :

হাওর-বাওর, নদী, খাল, বিল বেষ্টিত দেশের অন্যতম উপজেলা কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ধলেশ্বরী নদী। কালের বিবর্তনে প্রমত্তা ধলেশ্বরী এখন পরিণত হয়েছে সবুজ ফসলের মাঠে। উপজেলার ইকুরদিয়া হতে কাস্তুল পর্যন্ত প্রায় ৯কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ধলেশ্বরীর বুকে জেগেছে চর। দখলদারেরা এই চর দখল করে খন্ড খন্ড করে ফসলী জমিতে রূপান্তর করে রোপন করেছে রোরো ধান। এতে যেমনি নষ্ট হচ্ছে নদীর স্বাভাবিক পরিবেশ তেমনি এসব জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এর বিষ ক্রিয়ায় পোনা ও মা মাছসহ নদীতে থাকা বিভিন্ন জলজ প্রাণীর মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

জেগে ওঠা চরের মাঝখান দিয়ে বইছে সরু পানির ধারা। দেখলে মনে হয় প্রমত্তা ধলেশ্বরীর স্বাক্ষী হয়ে এখনও এর ঐতিহ্য বহন করে চলছে এই মরা খাল। কোথাও আবার চর পড়ে নদীর দুই পাড় সমান্তরাল হয়ে গেছে। দেখলে বুঝার কোন উপায় নেই যে, এটাই এক সময়ের প্রবল স্রোত আর গভীর জলরাশির খরস্রোতা ধলেশ্বরী নদী। এই ধলেশ্বরী বাঙ্গালপাড়া গজিয়া খালে মিশে মেঘনার সাথে সংযুক্ত হয়েছে। বর্তমানে ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদীর সংযোগমুখও প্রায় বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে। উজান থেকে নেমে আসা পলিমাটি ও বালি জমে তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে নদীটি শুকিয়ে যায় এবং বর্ষাকালে স্বাভাবিক নাব্যতা সংকটে অল্পতেই বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে নদী পাড়ের মানুষ।

আগাম বন্যার কারণে নদী তীরবর্তী হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ছে কৃষক। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় হাজার হাজার হেক্টর বোরো জমিতে সেচ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে দুই পাড়ের চাষীরা। যার ফলে অনাবাদী থেকে যাচ্ছে শত শত হেক্টর জমি।

নদীতে পানি না থাকায় বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে নদীর তীরে বসতি গড়া কয়েক হাজার জেলে পরিবার। কেউ আবার বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে ধাবিত হচ্ছে অন্য কোন পেশায়।

অষ্টগ্রাম সদরের সাথে কুলিয়ারচর, ভৈরব ও বাজিতপুরের লঞ্চ ও নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। ফলে পণ্য পরিবহন তথা যাতায়াতে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বাসিন্দারা। ধলেশ্বরী নদী এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা ও শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। এখানকার কৃষি, প্রকৃতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে এ নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাছাড়া নদীটি বন্ধ হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশগত ভারসাম্য। হাওরের বাসিন্দারা মনে করছেন, নদী বাঁচলে, বাঁচবে দেশ এই  স্লোগানকে সামনে রেখে দ্রুত এ নদী খনন করা না হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাওরের হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি অনাবাদী থাকার আশঙ্কাসহ আরও বড় রকমের সমস্যার সম্মুখীন হবে হাওরের জনগণ।

এ বিষয়ে হাওরাঞ্চলবাসী ঢাকা’র প্রধান সমন্বয়ক ড. হালিম দাদ খাঁন এ প্রতিনিধিকে জানান, আমাদের দেশের বেশির ভাগ নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতে। যখন একদেশ তখন কোন প্রশ্ন ছিলনা। দেশ ভাগ হওয়ার পর ভারত নদীগুলোতে তাদের সুবিধামত বাঁধ নির্মাণের ফলে পানির প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে করে পানির প্রবাহ কম থাকায় নদীতে পলি পড়ে নদী ভরাট হচ্ছে। তিনি বলেন, যৌথ নদী কমিশন একটি অকার্যকর সংস্থা। এটিকে কার্যকর করতে হবে। ১৯৯৭ সালের আন্তর্জাতিক নদী প্রবাহ আইনে প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র ভারত স্বাক্ষর করেনি। ভারতকে এ আইনে স্বাক্ষর করতে উৎসাহিত করতে হবে। নদী খননের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের নদী গুলো অপরিকল্পিত ভাবে খনন করা হয়। তাই এটা তেমন কোন কাজে আসেনা। এজন্যে সম্পূর্ণ নদী সার্ভে করে এর মাটি কোথায় ফেলতে হবে এ বিষয়ে আগেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জেম্স এ প্রতিনিধিকে জানান, বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নদী খনন প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে চলছে।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান এ প্রতিনিধিকে জানান-ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করে জমা দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি শীঘ্রই পাশ হবে বলে আশিা করছি। পাশ হলেই আমরা নদী পুণঃখনন করতে পারব।

 

বা/খ: জই