ঢাকা ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পাকুন্দিয়াবাসীর দুঃখ পৌর এলাকার প্রধান সড়ক

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:১৬:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩
  • / ৫০০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
// আছাদুজ্জামান খন্দকার, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি //
কোথাও ছোট, কোথাও বড়, অসংখ্য গর্ত। বৃষ্টিতে পানি-কাদায় একাকার গর্তগুলো। দিন দিন এসব গর্ত গাড়ীর চাকার চাপে ভাঙতে ভাঙতে আরো বড় ও গভীর হচ্ছে। তাতে প্রতিনিয়তই উল্টে যাচ্ছে যানবাহন। আহত হচ্ছে যাত্রী। কাদা-পানি মাড়িয়ে হেঁটে চলতে গিয়ে পিছলে পড়ে আহত হচ্ছে পথচারী। নষ্ট হচ্ছে পড়নের কাপড় ও জুতা। এমন দুঃখ, দুর্ভোগ ও ভোগান্তি নিয়েই চলাচল করছে হাজারো মানুষ। বিকল্প সড়ক না থাকায় তাদের এ দুঃখের যেন শেষ নেই।
এ চিত্র পাকুন্দিয়া-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাকুন্দিয়া পৌর বাজার থেকে মৌসুমি সিনেমা হল পর্যন্ত। প্রায় এক কিলোমিটার সড়কটি পাকুন্দিয়া উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের দুঃখ ও ভোগান্তির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দেখা দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন সড়কটি সংস্কারের জন্য বার বার দাবি জানালেও তা হচ্ছে না। এ সড়ক পৌরসভা এলাকার মধ্যে পড়লেও তা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীন। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে সড়কটি সংস্কার হচ্ছে না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পৌর এলাকার পাকুন্দিয়া থানার সামনে থেকে মৌসুমি সিনেমা হল পর্যন্ত সড়কটি জুড়ে খানা-খন্দ। ইটের খোয়া, বালু ও পাথর সরে গিয়ে সৃষ্ট হওয়া গর্তে জমে আছে পানি। এই এক কিলোমিটার সড়কে ছোট-বড় শতাধীক গর্ত। গর্তগুলো দেখে মনে হয় যেন ছোট-খাট জলাশয়। কিছু গর্ত দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত গভীর। ফলে যানবাহনগুলো চলছে ঝুঁকি নিয়ে। সড়কটির ডান ও বাম পাশে রয়েছে পাকুন্দিয়া থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ, পাকুন্দিয়া সরকারি কলেজ, পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পাকুন্দিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পাকুন্দিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাকুন্দিয়া মডেল মসজিদ, পাকুন্দিয়া আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজ, উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস ও বিদ্যুৎ অফিসসহ সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। এছাড়া এ পথে উপজেলার চরফরাদি, এগারসিন্দু, বুরুদিয়া ইউনিয়নের লোকজন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ, তাড়াইল ও নান্দাইল উপজেলার লোকজন নিয়মিত চলাচল করেন।
পাকুন্দিয়া পৌর বাজারের ব্যবসায়ী দিদারুল ইসলাম নয়ন বলেন, সড়কটি এখন পাকুন্দিয়াবাসীর দুঃখে পরিণত হয়েছে। খানা-খন্দে ভরা সড়কে বৃষ্টির পানি জমে একাকার হয়ে পড়েছে। কাদাপানি মাড়িয়ে জুতা পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়না। গাড়ির চাপে কাদাপানি ছিটকে শত শত মানুষের জামা-কাপড় নষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন সেট কাপড় আমার পরিবর্তন করতে হয়।
পৌর বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগে সড়কটি ভাঙাচোরা থাকলেও চলাচল করা যেত। এখন এ সড়ক দিয়ে হাঁটাও যাচ্ছে না। এবারের বর্ষায় খানা-খন্দ গুলো রুপ নিয়েছে বড় বড় গর্তে। গাড়ীর চাকার চাপে ভাঙতে ভাঙতে গর্তগুলো আরও গভীর ও প্রশস্ত হচ্ছে। সিএনজি, অটোরিক্সা, ইজিবাইক, রিক্সা, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রায়ই উল্টে যাচ্ছে। আহত হচ্ছে যাত্রী ও পথচারী।
সদর ঈদগাহ মার্কেটের বিকাশ ব্যবসায়ী আব্দুল আহাদ লোহানী ডাবলু বলেন, চার-পাঁচ বছর ধরে সড়কের এই অংশটুকু খুবই যন্ত্রনাদায়ক। প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রায়ই গাড়ী উল্টে গিয়ে আহত হচ্ছে যাত্রীরা। প্রায় সময়ই আমরা দৌড়ে গিয়ে উল্টে যাওয়া গাড়ীকে ধাক্কা দিয়ে গর্ত থেকে উঠিয়ে দেই। আহত যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সড়কটি দ্রুত মেরামত না করলে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে।
অটোরিক্সা চালক পলাশ মিয়া বলেন, এবারের বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। অল্প বৃষ্টিতেই গর্তসহ সড়কে পানি জমে যায়। এর ফলে কোনটা ছোট গর্ত আর কোনটা বড় গর্ত তা বোঝার উপায় থাকে না। ফলে গাড়ি উল্টে যায়। এতে গাড়িরও ক্ষতি হচ্ছে, যাত্রীরাও আহত হচ্ছে। আমরা এই সড়কটির দ্রুত মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
পাকুন্দিয়া পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, এ সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। এই সড়কে পৌরসভার পক্ষ থেকে উন্নয়নমূলক কোন কাজ করার সুযোগ নেই। তবে সংস্কারের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা কাজটি করতে গড়িমসি করছে।
এ বিষয়ে জানতে কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রীতেশ বড়ুয়াকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি । তবে উপ-সহকারি প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ কাজের জন্য ঠিকাদারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির জন্য কাজটি শুরু করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি কমলেই অতি দ্রুত এ কাজ শুরু করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

পাকুন্দিয়াবাসীর দুঃখ পৌর এলাকার প্রধান সড়ক

আপডেট সময় : ০২:১৬:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩
// আছাদুজ্জামান খন্দকার, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি //
কোথাও ছোট, কোথাও বড়, অসংখ্য গর্ত। বৃষ্টিতে পানি-কাদায় একাকার গর্তগুলো। দিন দিন এসব গর্ত গাড়ীর চাকার চাপে ভাঙতে ভাঙতে আরো বড় ও গভীর হচ্ছে। তাতে প্রতিনিয়তই উল্টে যাচ্ছে যানবাহন। আহত হচ্ছে যাত্রী। কাদা-পানি মাড়িয়ে হেঁটে চলতে গিয়ে পিছলে পড়ে আহত হচ্ছে পথচারী। নষ্ট হচ্ছে পড়নের কাপড় ও জুতা। এমন দুঃখ, দুর্ভোগ ও ভোগান্তি নিয়েই চলাচল করছে হাজারো মানুষ। বিকল্প সড়ক না থাকায় তাদের এ দুঃখের যেন শেষ নেই।
এ চিত্র পাকুন্দিয়া-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাকুন্দিয়া পৌর বাজার থেকে মৌসুমি সিনেমা হল পর্যন্ত। প্রায় এক কিলোমিটার সড়কটি পাকুন্দিয়া উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের দুঃখ ও ভোগান্তির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দেখা দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন সড়কটি সংস্কারের জন্য বার বার দাবি জানালেও তা হচ্ছে না। এ সড়ক পৌরসভা এলাকার মধ্যে পড়লেও তা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীন। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে সড়কটি সংস্কার হচ্ছে না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পৌর এলাকার পাকুন্দিয়া থানার সামনে থেকে মৌসুমি সিনেমা হল পর্যন্ত সড়কটি জুড়ে খানা-খন্দ। ইটের খোয়া, বালু ও পাথর সরে গিয়ে সৃষ্ট হওয়া গর্তে জমে আছে পানি। এই এক কিলোমিটার সড়কে ছোট-বড় শতাধীক গর্ত। গর্তগুলো দেখে মনে হয় যেন ছোট-খাট জলাশয়। কিছু গর্ত দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত গভীর। ফলে যানবাহনগুলো চলছে ঝুঁকি নিয়ে। সড়কটির ডান ও বাম পাশে রয়েছে পাকুন্দিয়া থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ, পাকুন্দিয়া সরকারি কলেজ, পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পাকুন্দিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পাকুন্দিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাকুন্দিয়া মডেল মসজিদ, পাকুন্দিয়া আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজ, উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস ও বিদ্যুৎ অফিসসহ সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। এছাড়া এ পথে উপজেলার চরফরাদি, এগারসিন্দু, বুরুদিয়া ইউনিয়নের লোকজন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ, তাড়াইল ও নান্দাইল উপজেলার লোকজন নিয়মিত চলাচল করেন।
পাকুন্দিয়া পৌর বাজারের ব্যবসায়ী দিদারুল ইসলাম নয়ন বলেন, সড়কটি এখন পাকুন্দিয়াবাসীর দুঃখে পরিণত হয়েছে। খানা-খন্দে ভরা সড়কে বৃষ্টির পানি জমে একাকার হয়ে পড়েছে। কাদাপানি মাড়িয়ে জুতা পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়না। গাড়ির চাপে কাদাপানি ছিটকে শত শত মানুষের জামা-কাপড় নষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন সেট কাপড় আমার পরিবর্তন করতে হয়।
পৌর বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগে সড়কটি ভাঙাচোরা থাকলেও চলাচল করা যেত। এখন এ সড়ক দিয়ে হাঁটাও যাচ্ছে না। এবারের বর্ষায় খানা-খন্দ গুলো রুপ নিয়েছে বড় বড় গর্তে। গাড়ীর চাকার চাপে ভাঙতে ভাঙতে গর্তগুলো আরও গভীর ও প্রশস্ত হচ্ছে। সিএনজি, অটোরিক্সা, ইজিবাইক, রিক্সা, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রায়ই উল্টে যাচ্ছে। আহত হচ্ছে যাত্রী ও পথচারী।
সদর ঈদগাহ মার্কেটের বিকাশ ব্যবসায়ী আব্দুল আহাদ লোহানী ডাবলু বলেন, চার-পাঁচ বছর ধরে সড়কের এই অংশটুকু খুবই যন্ত্রনাদায়ক। প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রায়ই গাড়ী উল্টে গিয়ে আহত হচ্ছে যাত্রীরা। প্রায় সময়ই আমরা দৌড়ে গিয়ে উল্টে যাওয়া গাড়ীকে ধাক্কা দিয়ে গর্ত থেকে উঠিয়ে দেই। আহত যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সড়কটি দ্রুত মেরামত না করলে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে।
অটোরিক্সা চালক পলাশ মিয়া বলেন, এবারের বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে ভোগান্তি আরও বেড়েছে। অল্প বৃষ্টিতেই গর্তসহ সড়কে পানি জমে যায়। এর ফলে কোনটা ছোট গর্ত আর কোনটা বড় গর্ত তা বোঝার উপায় থাকে না। ফলে গাড়ি উল্টে যায়। এতে গাড়িরও ক্ষতি হচ্ছে, যাত্রীরাও আহত হচ্ছে। আমরা এই সড়কটির দ্রুত মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
পাকুন্দিয়া পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, এ সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। এই সড়কে পৌরসভার পক্ষ থেকে উন্নয়নমূলক কোন কাজ করার সুযোগ নেই। তবে সংস্কারের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা কাজটি করতে গড়িমসি করছে।
এ বিষয়ে জানতে কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রীতেশ বড়ুয়াকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি । তবে উপ-সহকারি প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ কাজের জন্য ঠিকাদারও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির জন্য কাজটি শুরু করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি কমলেই অতি দ্রুত এ কাজ শুরু করা হবে।