ঢাকা ১১:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পাঁচবিবিতে দখল হয়ে যাচ্ছে গুল আহম্মেদ জুট মিলের জায়গা: লুট হচ্ছে সম্পদ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪৮:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৪৫ বার পড়া হয়েছে

পাঁচবিবি গুল আহম্মেদ জুট মিল

বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মোঃ জিহাদ মন্ডল, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের চরম উদাসীনতা আর তদারকির অভাবে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবির গুল আহম্মদ জুট মিলের সম্পদ লুট হওয়ার শেষ পর্যায়ে। রাতারাতি ঘরের টিন, কাঠ, দরজা-জানালা লুট হওয়ার পর এখন ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে মাদক সেবীরা। অপরদিকে ফাঁকা জায়গায় এখন বাঁশ দিয়ে ঘিরে জায়গা দখল করে চলছে চাঁদাবাজী।

বাংলাদেশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান (জাতীয়করণ) আদেশ ১৯৭২ (রাস্ট্রপতির আদেশ নম্বর ২৭,১৯৭২) এর অনুচ্ছেদ ১০ অনুসারে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। পাট উৎপাদিত এলাকার কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে বিজেএমসি পাঁচবিবি সদরের গোহাটা’র দক্ষিণে পাট ক্রয় কেন্দ্র চালু করে।

পাট চাষীদের পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, পাটের মূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং বিদেশে পাটের বাজারের প্রসার ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে পাট ক্রয় ও বিপনণের সাথে জড়িত বাংলাদেশ জুট মার্কেটিং করপোরেশনসহ ৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৯৮৫ সালের ১ জুলাই ৩০নং অধ্যাদেশ মূলে একীভূত করে সরকার বাংলাদেশ জুট করপোরেশন (বিজেসি) গঠন করে। কিন্তু বিশ্ব বাজারে পাটের চাহিদা হ্রাস, অব্যাহত লোকসান ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে ৮বছরের মধ্যে ১৯৯৩ সালে ২৪নং আইনবলে বাংলাদেশ জুট করপোরেশনকে বিলুপ্ত করা হয়। বিলুপ্তির পর ১৯৯৩ সালের ১১অক্টোবরে সংস্থাটির সম্পদ/সম্পত্তিসমূহ বিক্রয় না হওয়া পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্থা গুটানোর কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়ে বিলুপ্ত সেল গঠন করা হয়। কিন্তু আজো বিলুপ্ত সংস্থার সম্পত্তিসমূহের বিক্রয় করা ও সংস্থা গুটানোর কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ জুট করপোরেশন বিলুপ্তির পর গুল আহম্মেদ জুট মিল বেশ কয়েক বছর এখানে পাট ক্রয় করে। সরকার মিলগুলো বেসরকারী পর্যায়ে নিয়ে যাবার পর থেকে পাঁচবিবি পাট ক্রয় কেন্দ্রের গুদাম, অফিস ও কোয়াটারের প্রধান ফটক, দরজা, জানালা, টিন ও কাঠ রাতের আঁধারে পর্যায়ক্রমে লুট হয়ে যায়। এই ঘটনা স্থানীয় সাংবাদিকগণ প্রশাসনকে জানালে কয়েকজনকে আটক করে এবং মামলা দায়েরও করে।

বর্তমানে বিলুপ্ত পাট ক্রয় কেন্দ্রের গুদাম ঘরের ও প্রাচীরের ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে মাদক সেবীরা। মূল কাঠামোর দক্ষিণ পার্শ্বে যেটি চাতালপট্টি হিসাবে পরিচিত সেটিরও ফাঁকা জায়গা দখল করে বাড়ি ঘর নির্মাণসহ জায়গা ক্রয় বিক্রয় চলছে। আবার পাট ক্রয় কেন্দ্রের ভিতরে পাঁচবিবি গোহাটার মহরা ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তি বাঁশ দিয়ে ঘিরে নিজেদের দখলে রেখেছে। সেখানে চাঁদাবাজীরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পাঁচবিবি পাট ক্রয় কেন্দ্রের ৪ দশমিক ৯ হাজার ৮শ’ ৪৩ একর সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে বেদখলী সম্পত্তি রয়েছে ১ দশমিক ১২ একর। মন্ত্রণালয়ের তালিকায় খাদ্যগুদামসহ ১৩ জন দখলদারকে চিহ্নিত করা হলেও এখন প্রায় দ্বিগুণ পরিবারের দখলে রয়েছে জায়গা। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য ২০১৫ সালের ২মার্চ ও ৩০মার্চ আবেদন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে কোন নির্দেশনা পায়নি সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

সূত্রমতে, হাসিনা বেগম বনাম বিজেসি’র মামলা নং২৫/০৯(৬৬/৯৭), ৪৫/১৪(৬৯/৯৭),১৭১/১১, সুবাস চন্দ্র দাস বনাম বিজেসি গং এর মামলা নং ১০১/০৫ জয়পুরহাট জজ কোর্ট এবং বিজেসি বনাম ডিসি জয়পুরহাট এর জেলা জজ ট্রাইবুনাল জয়পুরহাট অর্পিত ‘ক’ ২৭/১৪নং মামলা বিচারাধীন আছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জানিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর আরিফ রাব্বানী ইস্তি বলেন, কৃর্তপক্ষের দেখভালের অভাবে গুল আহম্মেদ জুট মিলের সবকিছু চুরি হয়ে গেছে। বর্তমানে জুট মিলের জায়গা ঘিরে দখলের চেষ্টা চলছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময়ে জুট মিলের জায়গা টুকুও দখলদারদের দখলে যাবে।

পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ একরামুল ইসলাম জানান, ৪ দশমিক ৬ হাজার ৭শ’ ২২একর সম্পত্তি জুট মিলের নামে রেকর্ট রয়েছে। পাটমন্ত্রণালয় আমাদের দেখাশুনার দায়িত্ব দেয়নি। এর মধ্যে প্রায় ১ দশমিক ২৯ একর সম্পত্তি অর্পিত ‘ক’ এর অংশ। এই সম্পত্তি মামলা বিচারাধীন থাকায় আমরা দেখাশুনা করি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার মারুফ আফজাল রাজন জানান, কিছু সম্পত্তিতে ছিন্নমূল ভূমিহীন লোকেরা বসবাস করছে। দখলীয় সম্পত্তিতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

বা/খ: এসআর

নিউজটি শেয়ার করুন

পাঁচবিবিতে দখল হয়ে যাচ্ছে গুল আহম্মেদ জুট মিলের জায়গা: লুট হচ্ছে সম্পদ

আপডেট সময় : ১১:৪৮:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ জানুয়ারী ২০২৩

মোঃ জিহাদ মন্ডল, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের চরম উদাসীনতা আর তদারকির অভাবে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবির গুল আহম্মদ জুট মিলের সম্পদ লুট হওয়ার শেষ পর্যায়ে। রাতারাতি ঘরের টিন, কাঠ, দরজা-জানালা লুট হওয়ার পর এখন ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে মাদক সেবীরা। অপরদিকে ফাঁকা জায়গায় এখন বাঁশ দিয়ে ঘিরে জায়গা দখল করে চলছে চাঁদাবাজী।

বাংলাদেশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান (জাতীয়করণ) আদেশ ১৯৭২ (রাস্ট্রপতির আদেশ নম্বর ২৭,১৯৭২) এর অনুচ্ছেদ ১০ অনুসারে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। পাট উৎপাদিত এলাকার কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে বিজেএমসি পাঁচবিবি সদরের গোহাটা’র দক্ষিণে পাট ক্রয় কেন্দ্র চালু করে।

পাট চাষীদের পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, পাটের মূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং বিদেশে পাটের বাজারের প্রসার ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে পাট ক্রয় ও বিপনণের সাথে জড়িত বাংলাদেশ জুট মার্কেটিং করপোরেশনসহ ৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৯৮৫ সালের ১ জুলাই ৩০নং অধ্যাদেশ মূলে একীভূত করে সরকার বাংলাদেশ জুট করপোরেশন (বিজেসি) গঠন করে। কিন্তু বিশ্ব বাজারে পাটের চাহিদা হ্রাস, অব্যাহত লোকসান ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে ৮বছরের মধ্যে ১৯৯৩ সালে ২৪নং আইনবলে বাংলাদেশ জুট করপোরেশনকে বিলুপ্ত করা হয়। বিলুপ্তির পর ১৯৯৩ সালের ১১অক্টোবরে সংস্থাটির সম্পদ/সম্পত্তিসমূহ বিক্রয় না হওয়া পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্থা গুটানোর কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়ে বিলুপ্ত সেল গঠন করা হয়। কিন্তু আজো বিলুপ্ত সংস্থার সম্পত্তিসমূহের বিক্রয় করা ও সংস্থা গুটানোর কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ জুট করপোরেশন বিলুপ্তির পর গুল আহম্মেদ জুট মিল বেশ কয়েক বছর এখানে পাট ক্রয় করে। সরকার মিলগুলো বেসরকারী পর্যায়ে নিয়ে যাবার পর থেকে পাঁচবিবি পাট ক্রয় কেন্দ্রের গুদাম, অফিস ও কোয়াটারের প্রধান ফটক, দরজা, জানালা, টিন ও কাঠ রাতের আঁধারে পর্যায়ক্রমে লুট হয়ে যায়। এই ঘটনা স্থানীয় সাংবাদিকগণ প্রশাসনকে জানালে কয়েকজনকে আটক করে এবং মামলা দায়েরও করে।

বর্তমানে বিলুপ্ত পাট ক্রয় কেন্দ্রের গুদাম ঘরের ও প্রাচীরের ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে মাদক সেবীরা। মূল কাঠামোর দক্ষিণ পার্শ্বে যেটি চাতালপট্টি হিসাবে পরিচিত সেটিরও ফাঁকা জায়গা দখল করে বাড়ি ঘর নির্মাণসহ জায়গা ক্রয় বিক্রয় চলছে। আবার পাট ক্রয় কেন্দ্রের ভিতরে পাঁচবিবি গোহাটার মহরা ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তি বাঁশ দিয়ে ঘিরে নিজেদের দখলে রেখেছে। সেখানে চাঁদাবাজীরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পাঁচবিবি পাট ক্রয় কেন্দ্রের ৪ দশমিক ৯ হাজার ৮শ’ ৪৩ একর সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে বেদখলী সম্পত্তি রয়েছে ১ দশমিক ১২ একর। মন্ত্রণালয়ের তালিকায় খাদ্যগুদামসহ ১৩ জন দখলদারকে চিহ্নিত করা হলেও এখন প্রায় দ্বিগুণ পরিবারের দখলে রয়েছে জায়গা। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য ২০১৫ সালের ২মার্চ ও ৩০মার্চ আবেদন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে কোন নির্দেশনা পায়নি সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

সূত্রমতে, হাসিনা বেগম বনাম বিজেসি’র মামলা নং২৫/০৯(৬৬/৯৭), ৪৫/১৪(৬৯/৯৭),১৭১/১১, সুবাস চন্দ্র দাস বনাম বিজেসি গং এর মামলা নং ১০১/০৫ জয়পুরহাট জজ কোর্ট এবং বিজেসি বনাম ডিসি জয়পুরহাট এর জেলা জজ ট্রাইবুনাল জয়পুরহাট অর্পিত ‘ক’ ২৭/১৪নং মামলা বিচারাধীন আছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জানিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর আরিফ রাব্বানী ইস্তি বলেন, কৃর্তপক্ষের দেখভালের অভাবে গুল আহম্মেদ জুট মিলের সবকিছু চুরি হয়ে গেছে। বর্তমানে জুট মিলের জায়গা ঘিরে দখলের চেষ্টা চলছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময়ে জুট মিলের জায়গা টুকুও দখলদারদের দখলে যাবে।

পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ একরামুল ইসলাম জানান, ৪ দশমিক ৬ হাজার ৭শ’ ২২একর সম্পত্তি জুট মিলের নামে রেকর্ট রয়েছে। পাটমন্ত্রণালয় আমাদের দেখাশুনার দায়িত্ব দেয়নি। এর মধ্যে প্রায় ১ দশমিক ২৯ একর সম্পত্তি অর্পিত ‘ক’ এর অংশ। এই সম্পত্তি মামলা বিচারাধীন থাকায় আমরা দেখাশুনা করি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার মারুফ আফজাল রাজন জানান, কিছু সম্পত্তিতে ছিন্নমূল ভূমিহীন লোকেরা বসবাস করছে। দখলীয় সম্পত্তিতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

বা/খ: এসআর