ঢাকা ০৯:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

জনগণ বর্তমান সরকারের পরিবর্তন চায় : নজরুল

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:০৫:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৪০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জনগণ বর্তমান সরকারের পরিবর্তন চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

সোমবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশে মুসলিম লীগের দ্বি-বার্ষিকী সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণ বর্তমান সরকারের পরিবর্তন চায়। জনগণ পরিবর্তন চায় কল্যাণের জন্য, জনগণ পরিবর্তন চায় সমৃদ্ধির জন্য, পরিবর্তন চায় শান্তির জন্য। আর জনগণের শান্তি, কল্যাণ, সমৃদ্ধির আকাংখা যুগে যুগে কেউ কখনোই দমিয়ে রাখতে পারে নাই, এই সরকারও পারবেন না ইনশাআল্লাহ।

নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, আমাদের এতো নেতাকর্মী গ্রেফতার। মাত্র তিন মাসের মধ্যে ১২-১৩ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের ১২ দলীয় জোট, আমাদের অন্যান্য যেসব সংগঠন-জোট গণতন্ত্র মঞ্চ সবাই যারা রাজপখে আছে। তারপরও প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম সফল হচ্ছে। প্রত্যেকটি আন্দোলনে অসংখ্য লোকের সমাগম হচ্ছে। সবাই কি দলের লোক? না। আন্দোলনে সাধারণ মানুষ যুক্ত হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ তখনি যুক্ত হয়, যখন তারা পরিবর্তন চায়। আর জনগণের এই চাওয়া যুগে-যুগে কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি। এই সরকারও পারবে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে তাদের কোন নেতা বাইরে (জেলখানার) ছিল? তখন তো শুধু আমেনা বেগম নামে একজন অপরিচিত নেতা দল পরিচালনা করেছে। সেই আন্দোলনের পরে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেনি? করছে তো নাকি। তাহলে বিরোধী পক্ষকে গ্রেফতার করে রাখলে আন্দোলনে জয়ী হওয়া যায় না, ক্ষমতায় যাওয়া যায় না। তারা (আওয়ামী লীগ) জানে এটা। জানার পরেও তারা একই ভুল করছে। ক্ষমতা কি মানুষকে এতই অন্ধ করে!

জোর করে ক্ষমতায় টিকে থেকে সরকার ভুল করছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এটা তারা জানে। জানার পরও তারা কেন একই ভুল করছে, ক্ষমতা কি মানুষকে এতোই অন্ধ করে দেয়? সব রাজনৈতিক দলের কখনও ভালো অবস্থা গেছে, কখনও খারাপ অবস্থায় গেছে। সুসময়-দুঃসময় যেমন মানুষের জীবনে থাকে, রাজনৈতিক জীবনেও থাকে। আশা করি, যে দলটি ক্ষমতায় আছে তারা বিষয়টি বুঝতে পারবে।

বক্তব্য রাখছেন নজরুল ইসলাম খান

সাবেক এই শ্রমিক নেতা বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতা হয়। আজকে সেই নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে বলবেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছি, এটা তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। হয় কাউকে নির্বাচনে আসতে দেবেন না, কিংবা আগের রাতেই ভোট করে ফেলবেন! আপনারা বলবেন আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণেরে সমর্থনে কাজ করছি, এই রসিকতার কোনো মানে হয় না।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই দেশটা শুরু থেকে লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এতো বেশি দল (রাজনৈতিক), এতো বেশি পদ। আমরা সবাই মানুষের কল্যাণ করতে চাই। কিন্তু জনগণ কার সেবা গ্রহণ করবে সেই চিন্তায় অতিষ্ঠ ও অস্থির হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আমরা বলেছি, সব মত-পার্থক্যের সমন্বয়ে শান্তি ও সৌহার্দের সমাজ গঠন করা দরকার।

নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, উন্নয়ন যেটা হবে সেটা সবার জন্য। গত ৩/৪ বছরে আমাদের দেশে প্রায় ১৩/১৪ হাজার নতুন কোটিপতির সৃষ্টি হয়েছে। কেউ এটা উন্নতি বলতে পারেন। কিন্তু পাশাপাশি যে সাড়ে ৩ কোটি থেকে ৪ কোটি লোক আরও অধিক দরিদ্র হয়ে গেল সেটাকে কি বলবেন? এটা তো কথা ছিল না। কথা ছিল আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে-সমৃদ্ধ হবো। কিছু লোক মাত্র হাতে গোনা কিছু লোক আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাবে আর বাকি লোকরা নিঃস্ব হয়ে যাবে এজন্য তো বাংলাদেশ স্বাধীন হয় নাই। তাই তো হচ্ছে।

তিনি বলেন, তারপরও কি বলবে জনগণের কল্যাণে এ সরকার? জনগণের স্বার্থ রক্ষায় এই সরকার? জনগণ কী বুঝতেছে, জনগণ কী অনুভব করে, জনগণের মনে জ্বালা না আনন্দ কতটা এটা প্রকাশ করার তো কোনো সুযোগও বাংলাদেশে নাই।

তিনি আরো বলেন, জনগণ তো তার আনন্দ বা বেদনা, তার সুখ বা দুঃখ এটা প্রকাশ করার সুযোগ পাঁচ বছরে একদিনই পায় নির্বাচনের দিন। সে তার মতামতটা ব্যক্ত করে। কিন্তু সেদিন তাকে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেবেন না কিংবা যাইয়া দেখবে তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে কিংবা গ্লিসারিন.. দিয়ে ঘইসা ঘইসা আপনি এক যন্ত্রের ভেতরে হাত ঢুকাইয়া অন্য কেউ টিপ দিয়ে দেবে সেই ভোটের মধ্য দিয়ে আপনি যেতে চান এটা গ্রহণযোগ্য নয়। স্যরি।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের দলমত নির্বিশেষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ লড়াই করে একযোগে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। তারা একযোগে আন্দোলন করে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেই ইনশাআল্লাহ যে পরিবেশে নিশ্চিন্তে-নির্বিঘ্নে তার মত প্রকাশ করতে পারবে। আর সেজন্য আজকে দরকার নির্বাচনকালীন একটা নির্দলীয় সরকার। যে ক্ষমতায় যেতে চাইবে না, কাউকে ক্ষমতায় নিতে চাইবে না। জনগনকে সুযোগ করে দেবে, জনগন নির্ধারণ করবে কে দায়িত্ব নেবে রাষ্ট্র পরিচালনার।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা কাকে ধোঁকা দিতে চাই, যে জনগণ আমাদের এত বিশ্বাস করে, আশায় বুক বাঁধে। তাদের সঙ্গে প্রতারণা করার মতো এই বড় পাপ, এত বড় অপরাধ বোধহয় আর কিছু নাই। আমাদের সংবিধানে সমাজতন্ত্রের কথা বলা আছে। কিন্তু আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতি চর্চা করছি।

তিনি বলেন, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে ছিলাম, আক্ষেপটা বোধহয় তাদেরই বেশি। কী ভেবে, কী চিন্তা করে, কী আশা নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলাম। আর কী পেয়েছি। কত রঙ, কত রকমের কথা শুনেছিলাম আমরা— বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হবে। বাংলাদেশকে কত কী করা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করা হবে। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ করা হবে শুনেছি। যে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখেছি, অনাচার দেখেছি, অব্যবস্থাপনা দেখেছি। শেষ পর্যন্ত সে দেশে গণতন্ত্রহীনতা দেখছি। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা দেখেছি। এগুলোর কোনোটাই সোনার মতো মূল্যবান না।

তিনি আরও বলেন, বলা হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র রয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্র চর্চা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করেছে, তারাই এখন গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন বলে দাবি করে। তখন কষ্ট হয়। গণতন্ত্র তো ক্ষমতায় যাবার বাহন না। গণতন্ত্রের বাহন হলো নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। আপনারা সেই নির্বাচন ধ্বংস করে বলবেন— গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন, এটা বলতে পারেন না।

বিএনপির এ নেতা  বলেন, জনগণ আমাদেরকে সম্মান করতে চায়, বিশ্বাস করতে চায়, আমাদের উপর নির্ভর করতে চায়। আমাদের উচিত জনগণকে সেই পরিবেশ দেওয়া। দেশটা এত বছর ধরে লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কখনও এই দেশের মানুষ নিশ্চিত হতে পারছে না, কার সেবা গ্রহণ করবে। সেজন্য আমরা বলেছি, সব মত, পথের সমন্বয়ে শান্তি ও সৌহার্দ্যের একটি সমাজ সৃষ্টি করা দরকার। প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা নয়, সৌহার্দ্যমূলক একটি সমাজ ও জাতি গড়ে তোলা দরকার।

নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, দেশের জনগণ চায় আমরা যারা রাজনীতি করি, মিলেমিশে জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করি। নিজেদের কল্যাণ না। এদেশের টাকা লুট করে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, কানাডায় বেগম পাড়া, দুবাইয়ে থার্ড গুলশান এবং সুইস ব্যাংকে টাকা জমানোর জন্য না। এদেশের মানুষ চায়, আমরা তাদের সাথে থাকি। জনগণ কি বোঝে, কি অনুভব করে, তাদের মনের জ্বালা বা আনন্দ কতটা এটা প্রকাশ করার সুযোগও দেশে নেই অভিযোগ করে তিনি বলেন, জনগণ তো তার আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ প্রকাশের সুযোগ একদিনই পায়। নির্বাচনের দিন। সেদিন জনগণ তার মতামত ব্যক্ত করে। কিন্তু সেদিন তাকে আপনারা ভোট কেন্দ্রে যেতে দেন না। কিংবা গিয়ে দেখে তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মুসলিম লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী বুলবুল। এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ আরও অনেকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

জনগণ বর্তমান সরকারের পরিবর্তন চায় : নজরুল

আপডেট সময় : ০৫:০৫:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জানুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জনগণ বর্তমান সরকারের পরিবর্তন চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

সোমবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশে মুসলিম লীগের দ্বি-বার্ষিকী সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণ বর্তমান সরকারের পরিবর্তন চায়। জনগণ পরিবর্তন চায় কল্যাণের জন্য, জনগণ পরিবর্তন চায় সমৃদ্ধির জন্য, পরিবর্তন চায় শান্তির জন্য। আর জনগণের শান্তি, কল্যাণ, সমৃদ্ধির আকাংখা যুগে যুগে কেউ কখনোই দমিয়ে রাখতে পারে নাই, এই সরকারও পারবেন না ইনশাআল্লাহ।

নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, আমাদের এতো নেতাকর্মী গ্রেফতার। মাত্র তিন মাসের মধ্যে ১২-১৩ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের ১২ দলীয় জোট, আমাদের অন্যান্য যেসব সংগঠন-জোট গণতন্ত্র মঞ্চ সবাই যারা রাজপখে আছে। তারপরও প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম সফল হচ্ছে। প্রত্যেকটি আন্দোলনে অসংখ্য লোকের সমাগম হচ্ছে। সবাই কি দলের লোক? না। আন্দোলনে সাধারণ মানুষ যুক্ত হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ তখনি যুক্ত হয়, যখন তারা পরিবর্তন চায়। আর জনগণের এই চাওয়া যুগে-যুগে কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি। এই সরকারও পারবে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে তাদের কোন নেতা বাইরে (জেলখানার) ছিল? তখন তো শুধু আমেনা বেগম নামে একজন অপরিচিত নেতা দল পরিচালনা করেছে। সেই আন্দোলনের পরে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেনি? করছে তো নাকি। তাহলে বিরোধী পক্ষকে গ্রেফতার করে রাখলে আন্দোলনে জয়ী হওয়া যায় না, ক্ষমতায় যাওয়া যায় না। তারা (আওয়ামী লীগ) জানে এটা। জানার পরেও তারা একই ভুল করছে। ক্ষমতা কি মানুষকে এতই অন্ধ করে!

জোর করে ক্ষমতায় টিকে থেকে সরকার ভুল করছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এটা তারা জানে। জানার পরও তারা কেন একই ভুল করছে, ক্ষমতা কি মানুষকে এতোই অন্ধ করে দেয়? সব রাজনৈতিক দলের কখনও ভালো অবস্থা গেছে, কখনও খারাপ অবস্থায় গেছে। সুসময়-দুঃসময় যেমন মানুষের জীবনে থাকে, রাজনৈতিক জীবনেও থাকে। আশা করি, যে দলটি ক্ষমতায় আছে তারা বিষয়টি বুঝতে পারবে।

বক্তব্য রাখছেন নজরুল ইসলাম খান

সাবেক এই শ্রমিক নেতা বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতা হয়। আজকে সেই নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে বলবেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছি, এটা তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। হয় কাউকে নির্বাচনে আসতে দেবেন না, কিংবা আগের রাতেই ভোট করে ফেলবেন! আপনারা বলবেন আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণেরে সমর্থনে কাজ করছি, এই রসিকতার কোনো মানে হয় না।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই দেশটা শুরু থেকে লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এতো বেশি দল (রাজনৈতিক), এতো বেশি পদ। আমরা সবাই মানুষের কল্যাণ করতে চাই। কিন্তু জনগণ কার সেবা গ্রহণ করবে সেই চিন্তায় অতিষ্ঠ ও অস্থির হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আমরা বলেছি, সব মত-পার্থক্যের সমন্বয়ে শান্তি ও সৌহার্দের সমাজ গঠন করা দরকার।

নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, উন্নয়ন যেটা হবে সেটা সবার জন্য। গত ৩/৪ বছরে আমাদের দেশে প্রায় ১৩/১৪ হাজার নতুন কোটিপতির সৃষ্টি হয়েছে। কেউ এটা উন্নতি বলতে পারেন। কিন্তু পাশাপাশি যে সাড়ে ৩ কোটি থেকে ৪ কোটি লোক আরও অধিক দরিদ্র হয়ে গেল সেটাকে কি বলবেন? এটা তো কথা ছিল না। কথা ছিল আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে-সমৃদ্ধ হবো। কিছু লোক মাত্র হাতে গোনা কিছু লোক আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাবে আর বাকি লোকরা নিঃস্ব হয়ে যাবে এজন্য তো বাংলাদেশ স্বাধীন হয় নাই। তাই তো হচ্ছে।

তিনি বলেন, তারপরও কি বলবে জনগণের কল্যাণে এ সরকার? জনগণের স্বার্থ রক্ষায় এই সরকার? জনগণ কী বুঝতেছে, জনগণ কী অনুভব করে, জনগণের মনে জ্বালা না আনন্দ কতটা এটা প্রকাশ করার তো কোনো সুযোগও বাংলাদেশে নাই।

তিনি আরো বলেন, জনগণ তো তার আনন্দ বা বেদনা, তার সুখ বা দুঃখ এটা প্রকাশ করার সুযোগ পাঁচ বছরে একদিনই পায় নির্বাচনের দিন। সে তার মতামতটা ব্যক্ত করে। কিন্তু সেদিন তাকে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেবেন না কিংবা যাইয়া দেখবে তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে কিংবা গ্লিসারিন.. দিয়ে ঘইসা ঘইসা আপনি এক যন্ত্রের ভেতরে হাত ঢুকাইয়া অন্য কেউ টিপ দিয়ে দেবে সেই ভোটের মধ্য দিয়ে আপনি যেতে চান এটা গ্রহণযোগ্য নয়। স্যরি।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের দলমত নির্বিশেষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ লড়াই করে একযোগে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। তারা একযোগে আন্দোলন করে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেই ইনশাআল্লাহ যে পরিবেশে নিশ্চিন্তে-নির্বিঘ্নে তার মত প্রকাশ করতে পারবে। আর সেজন্য আজকে দরকার নির্বাচনকালীন একটা নির্দলীয় সরকার। যে ক্ষমতায় যেতে চাইবে না, কাউকে ক্ষমতায় নিতে চাইবে না। জনগনকে সুযোগ করে দেবে, জনগন নির্ধারণ করবে কে দায়িত্ব নেবে রাষ্ট্র পরিচালনার।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা কাকে ধোঁকা দিতে চাই, যে জনগণ আমাদের এত বিশ্বাস করে, আশায় বুক বাঁধে। তাদের সঙ্গে প্রতারণা করার মতো এই বড় পাপ, এত বড় অপরাধ বোধহয় আর কিছু নাই। আমাদের সংবিধানে সমাজতন্ত্রের কথা বলা আছে। কিন্তু আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতি চর্চা করছি।

তিনি বলেন, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে ছিলাম, আক্ষেপটা বোধহয় তাদেরই বেশি। কী ভেবে, কী চিন্তা করে, কী আশা নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলাম। আর কী পেয়েছি। কত রঙ, কত রকমের কথা শুনেছিলাম আমরা— বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হবে। বাংলাদেশকে কত কী করা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করা হবে। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ করা হবে শুনেছি। যে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখেছি, অনাচার দেখেছি, অব্যবস্থাপনা দেখেছি। শেষ পর্যন্ত সে দেশে গণতন্ত্রহীনতা দেখছি। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা দেখেছি। এগুলোর কোনোটাই সোনার মতো মূল্যবান না।

তিনি আরও বলেন, বলা হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র রয়েছে, কিন্তু গণতন্ত্র চর্চা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করেছে, তারাই এখন গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন বলে দাবি করে। তখন কষ্ট হয়। গণতন্ত্র তো ক্ষমতায় যাবার বাহন না। গণতন্ত্রের বাহন হলো নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। আপনারা সেই নির্বাচন ধ্বংস করে বলবেন— গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন, এটা বলতে পারেন না।

বিএনপির এ নেতা  বলেন, জনগণ আমাদেরকে সম্মান করতে চায়, বিশ্বাস করতে চায়, আমাদের উপর নির্ভর করতে চায়। আমাদের উচিত জনগণকে সেই পরিবেশ দেওয়া। দেশটা এত বছর ধরে লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কখনও এই দেশের মানুষ নিশ্চিত হতে পারছে না, কার সেবা গ্রহণ করবে। সেজন্য আমরা বলেছি, সব মত, পথের সমন্বয়ে শান্তি ও সৌহার্দ্যের একটি সমাজ সৃষ্টি করা দরকার। প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা নয়, সৌহার্দ্যমূলক একটি সমাজ ও জাতি গড়ে তোলা দরকার।

নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, দেশের জনগণ চায় আমরা যারা রাজনীতি করি, মিলেমিশে জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করি। নিজেদের কল্যাণ না। এদেশের টাকা লুট করে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, কানাডায় বেগম পাড়া, দুবাইয়ে থার্ড গুলশান এবং সুইস ব্যাংকে টাকা জমানোর জন্য না। এদেশের মানুষ চায়, আমরা তাদের সাথে থাকি। জনগণ কি বোঝে, কি অনুভব করে, তাদের মনের জ্বালা বা আনন্দ কতটা এটা প্রকাশ করার সুযোগও দেশে নেই অভিযোগ করে তিনি বলেন, জনগণ তো তার আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ প্রকাশের সুযোগ একদিনই পায়। নির্বাচনের দিন। সেদিন জনগণ তার মতামত ব্যক্ত করে। কিন্তু সেদিন তাকে আপনারা ভোট কেন্দ্রে যেতে দেন না। কিংবা গিয়ে দেখে তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মুসলিম লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী বুলবুল। এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ আরও অনেকে।