ঢাকা ০৯:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কটিয়াদীতে গণহত্যা দিবস, অযত্নে স্মৃতিস্তম্ভ

এম এ কুদ্দুছ, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৪:১৯:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৪১৫ বার পড়া হয়েছে

Exif_JPEG_420

বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে আজ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৪শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী উপজেলায় প্রথম হানা দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে ১১ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। জ্বালিয়ে দেয় বহু ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। শহীদদের স্মরণে আড়িঁয়ল খাঁ নদের তীরে কটিয়াদী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখ সংলগ্ন বৈদ্যভূমিতে একটি স্মৃতির ফলক নির্মিত হলেও অযত্নে আর অবহেলায় সেটিও প্রায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, সেদিন দুপুরের পর থেকেই পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কটিয়াদীতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভয়ে নিহতদের আত্মীয়স্বজনরা তাদের লাশগুলো পর্যন্ত দাফন ও সৎকার করতে পারেনি।

কটিয়াদীতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরুর পূর্বে কটিয়াদী পুরাতন বাজারস্ত বীণাপানি মেডিকেল হলে তৎকালীন কটিয়াদী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত জনাব মুক্তর উদ্দিন মিয়া, তৎকালীন সরকারি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ মন্ডল উরফে টিআই মন্ডল, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তৎকালীন সদস্য ও বর্তমান বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রতন ঘোষ, তৎকালীন থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আব্দুর রশিদ, থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, কটিয়াদী পুরাতন বাজারের বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী ও সাবেক কটিয়াদী বাজার বণিক সমিতির সদস্য প্রয়াত জনাব শহীদুল্লাহ মিয়া (সুরুজ)সহ অনেকেই উপস্থিত থেকে রতন ঘোষের নেতৃত্বে কটিয়াদী পশ্চিম পাড়ার দিলীপ সাহা সহ তৎকালীন কালিয়াচাপড়া সুগার মিলের কটিয়াদী থানা পরিদর্শক জনাব বাদল মিয়ার সহযোগিতায় সুগার মিলের জিপ গাড়িটি মাইকসহ কটিয়াদীতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন এর প্রচারের সহায়তা করেন।

সেই সময় বীণা পানি মেডিকেল হল ও শহীদুল্লাহ মিয়ার (সুরুজ) কাপড়ের দোকানে স্বাধীন বাংলার পতাকা তৈরি ও বিক্রয়ের কারণে বীণাপানি মেডিকেল হলসহ অনেক দোকানপাট আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং শহীদুল্লাহ মিয়ার কাপড়ের দোকানসহ অনেক দোকানপাট লুট করা হয়। কটিয়াদী বাজার লুটপাটের সময় বেঙ্গল রেজিমেন্ট, (সাবেক ইপিআর) র্তমান ক্যাপ্টেন শেখ হারুন অর রশিদ, উপস্থিত থেকে কটিয়াদী থানার তৎকালীন ওসি মাজারুল হককে বাজারের দোকান পাট লুটপাট প্রতিরোধ করার জন্য বলাতে ওসি তার উপর ক্ষেপে যান এবং অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন।

যার ফলে পরদিন ভোর বেলায় শেখ হারুনুর রশিদ ও আব্দুর রশিদ (তারা মাস্টারের) নেতৃত্বে প্রয়াত ছাত্রলীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দ্রজিত ঘোষ, প্রয়াত ও ছাত্রলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রশিদ স্বাধীনতাকামি অনেকেই কটিয়াদী থানা আক্রমণের সহযোগিতা করে থানার অস্ত্রাগার লুট করে প্রতিজন ৪টি করে থ্রী নট থ্রি রাইফেল কাঁধে নিয়ে আড়িঁয়ল খাঁ নদের অপর পাড়ে চরমান্দালিয়া গ্রামে নিরাপদ হেফাজতে রাইফেল গুলি রাখা হয়।

সেই সময় পাকিস্তান বাহিনিকে সহায়তাকারী কটিয়াদী থানার তৎকালীন ওসি মাজহারুল হককে গুলি করে হত্যা করা হয় । এরপর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে হানাদার বাহিনীর আক্রমণ শুরু হয়।

এলাকাবাসী,মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন জনদের দাবি এই গণহত্যা কে কটিয়াদী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হোক। উপজেলার বিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব জমির উদ্দিন বলেন, বৈদ্য ভূমি গুলি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বধ্যভূমি সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে সুপারিশ পাঠানো হবে।

 

বাখ//আর

নিউজটি শেয়ার করুন

কটিয়াদীতে গণহত্যা দিবস, অযত্নে স্মৃতিস্তম্ভ

আপডেট সময় : ০৪:১৯:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে আজ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৪শে এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী উপজেলায় প্রথম হানা দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে ১১ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। জ্বালিয়ে দেয় বহু ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। শহীদদের স্মরণে আড়িঁয়ল খাঁ নদের তীরে কটিয়াদী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখ সংলগ্ন বৈদ্যভূমিতে একটি স্মৃতির ফলক নির্মিত হলেও অযত্নে আর অবহেলায় সেটিও প্রায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, সেদিন দুপুরের পর থেকেই পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কটিয়াদীতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভয়ে নিহতদের আত্মীয়স্বজনরা তাদের লাশগুলো পর্যন্ত দাফন ও সৎকার করতে পারেনি।

কটিয়াদীতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরুর পূর্বে কটিয়াদী পুরাতন বাজারস্ত বীণাপানি মেডিকেল হলে তৎকালীন কটিয়াদী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত জনাব মুক্তর উদ্দিন মিয়া, তৎকালীন সরকারি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ মন্ডল উরফে টিআই মন্ডল, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তৎকালীন সদস্য ও বর্তমান বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রতন ঘোষ, তৎকালীন থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আব্দুর রশিদ, থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, কটিয়াদী পুরাতন বাজারের বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী ও সাবেক কটিয়াদী বাজার বণিক সমিতির সদস্য প্রয়াত জনাব শহীদুল্লাহ মিয়া (সুরুজ)সহ অনেকেই উপস্থিত থেকে রতন ঘোষের নেতৃত্বে কটিয়াদী পশ্চিম পাড়ার দিলীপ সাহা সহ তৎকালীন কালিয়াচাপড়া সুগার মিলের কটিয়াদী থানা পরিদর্শক জনাব বাদল মিয়ার সহযোগিতায় সুগার মিলের জিপ গাড়িটি মাইকসহ কটিয়াদীতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন এর প্রচারের সহায়তা করেন।

সেই সময় বীণা পানি মেডিকেল হল ও শহীদুল্লাহ মিয়ার (সুরুজ) কাপড়ের দোকানে স্বাধীন বাংলার পতাকা তৈরি ও বিক্রয়ের কারণে বীণাপানি মেডিকেল হলসহ অনেক দোকানপাট আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং শহীদুল্লাহ মিয়ার কাপড়ের দোকানসহ অনেক দোকানপাট লুট করা হয়। কটিয়াদী বাজার লুটপাটের সময় বেঙ্গল রেজিমেন্ট, (সাবেক ইপিআর) র্তমান ক্যাপ্টেন শেখ হারুন অর রশিদ, উপস্থিত থেকে কটিয়াদী থানার তৎকালীন ওসি মাজারুল হককে বাজারের দোকান পাট লুটপাট প্রতিরোধ করার জন্য বলাতে ওসি তার উপর ক্ষেপে যান এবং অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন।

যার ফলে পরদিন ভোর বেলায় শেখ হারুনুর রশিদ ও আব্দুর রশিদ (তারা মাস্টারের) নেতৃত্বে প্রয়াত ছাত্রলীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দ্রজিত ঘোষ, প্রয়াত ও ছাত্রলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রশিদ স্বাধীনতাকামি অনেকেই কটিয়াদী থানা আক্রমণের সহযোগিতা করে থানার অস্ত্রাগার লুট করে প্রতিজন ৪টি করে থ্রী নট থ্রি রাইফেল কাঁধে নিয়ে আড়িঁয়ল খাঁ নদের অপর পাড়ে চরমান্দালিয়া গ্রামে নিরাপদ হেফাজতে রাইফেল গুলি রাখা হয়।

সেই সময় পাকিস্তান বাহিনিকে সহায়তাকারী কটিয়াদী থানার তৎকালীন ওসি মাজহারুল হককে গুলি করে হত্যা করা হয় । এরপর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে হানাদার বাহিনীর আক্রমণ শুরু হয়।

এলাকাবাসী,মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন জনদের দাবি এই গণহত্যা কে কটিয়াদী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হোক। উপজেলার বিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব জমির উদ্দিন বলেন, বৈদ্য ভূমি গুলি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বধ্যভূমি সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে সুপারিশ পাঠানো হবে।

 

বাখ//আর