ঢাকা ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

অন্ধকার থেকে আলোর জীবনে ১৮২ শিশু-কিশোর

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:৩১:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৫৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

এ. এইচ. মাসুক, পাবনা প্রতিনিধি :

অন্ধকার জীবনে ভয়াবহতা বুঝতে পেরে আইনের সহযোগীতায় আলোর পথে ফিরে এলো অপরাধ পথে জড়িয়ে পড়া পাবনার ১৮২ জন শিশু-কিশোর। তারা এখন সবাই আগামী সুন্দর জীবনের সৌন্দর্য বুঝতে পেওে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জীবনটাকে সঠিকভাবে সাজানোর চেষ্টায় মরিয়া। পাবনায় গত ১ বছরে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়া ১৮২ শিশু, কিশোর ও তরুণ আদালদ থেকে প্রবেশনে মুক্তি পেয়েছে।

পাবনা শিশু আদালতের বিচারক (জেলা দায়রা জজ) মিজানুর রহমান কয়েকটি শর্তে তাদের প্রভেশনে মুক্তি দিয়েছেন। মুক্তিপ্রাপ্ত শিশুরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে অন্ধকার জগৎ থেকে এখন আলোর পথে যাত্রী হয়ে নতুন জীবন শুরু করেছে। পাবনার শিশু আদালত ও প্রবেশন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে , গত এক বছরে জামিন মুক্ত ১৪২ জনের বয়স ৯ থেকে ২০ বছর। তারা মাদক সেবন , মাদক ও অস্ত্র বহন , মারধর ও চুরির অভিযোগে হওয়া মামলায় আটক হয়ে শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে ছিল। বিচারপ্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে দোষ স্বীকার , পড়ালেখা করা , সঠিক পথে ফিরে আসা এবং সমাজের মূল-স্রোতে ফিরিয়ে আনতে তাদের এক থেকে তিন বছরের জন্য প্রবেশনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। প্রবেশনে মুক্তি পাওয়া শিশু কিশোরদের মধ্যে ৭৪ জন পড়ালেখা শুরু করেছে। বাকিদের মধ্যে সাতজন পৈতৃক ব্যবসার হাল ধরেছে। একজন শহরের একটি রেস্তেরায় চাকরি করছে। বাকিরা পরিবারকে সহযোগীতা করতে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছে। শিশু বয়সে অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পড়ালেখা। তরুণ বয়সে একটি মামলায় আটক হওয়ায় জীবনে হতাশা নেমে এসেছিল। প্রভেশনে জামিন প্রাপ্ত হয়ে তিনি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। কেউ বা চাকুরী করছে। ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে তাদের পরিবার। প্রবেশনে মুক্তির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া এক তরুণ (২০) বলেন , সাত মাস আগে প্রবেশনে মুক্তি পেয়ে এইচ এসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। পাস করে তিনি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। তিনি আদালতের দেওয়া শর্তে যথাযথভাবে মেনে চলেছেন। ভবিষতে আর কোন অপরাধে জড়াবেন না। এতে তার নিজের জীবনে নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে। পরিবারও তার উপর ভীষণ খুশি রয়েছে। সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারছেন।
অপর এক কিশোর তার পৈতৃক ব্যবসার হাল ধরেছে। সে জানায় , তার বাবা মুরগির ব্যবসা করতেন। সে সংশোধনাগারে আটক থাকতেই বাবার মৃত্যু হয়। তখন ভাই বোন নিয়ে তার মা খুব বিপদে ছিলেন। মুক্তির পর সে বাবার ব্যবসার হাল ধরেছে। এখন মা , ভাইবোন নিয়ে বেশ ভালো আছে। মুক্তির পর আরেক জন জেলা শহরের একটি অভিজাত রেস্তেরায় চাকরি করছে। সে জানান , অপরাধ জীবন মানেই অন্ধকার। জীবনটা অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছিল। মুক্তির পর আলোর সন্ধান পেয়েছি। আদালতের শর্ত মেনে চলছি। আশা করছি , ভালো কাজ করে একদিন পুরোপুরি মুক্তি পাব। জীবনকে আরও সুন্দও করে গড়ে তুলব। প্রবেশনে মুক্তি পাওয়া শিশুদের নিয়মিত তদারক করেন জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা। এ ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রবেশনের মেয়াদে শিশুরা তাদের শর্ত পূরণ করলে তারা সম্পূর্ণভাবে মুক্তি পাবে। তিনি আরো জানান , আইনগত কারণে শিশু অপরাধীদের পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না। জামিনে মুক্ত এসব শিশু , কিশোর , ও তরুণের খোজ খবর রাখেন পাবনা জেলা পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন , শিশু কিশোররা নিজের অজনান্তেই অপরাধে জড়ায়। প্রবেশনের মুক্তি পাওয়ার পর অধিকাংশই শিশু তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। আদালতের শর্ত মেনে তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।

এ ব্যপারে পাবনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা পল্লব ইবনে শায়েথ বলেন , স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবা কর্মকর্তাদের মাধ্যেমে আমরা নিয়মিত এসব শিশু-কিশোরদের খোঁজ নিচ্ছি। তাদের কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। কারও আর্থিক সংকটে থাকলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের আইনগত সহযোগিতাও দেওয়া হচ্ছে। এসব শিশু-কিশোররা এখন আলো ও অন্ধকার জীবনের পার্থক্য বুঝতে পেরেছে। আগামী দিনে তারা আরও ভালো থাকবে বলে প্রত্যাশা করছি।

বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

অন্ধকার থেকে আলোর জীবনে ১৮২ শিশু-কিশোর

আপডেট সময় : ০১:৩১:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩

এ. এইচ. মাসুক, পাবনা প্রতিনিধি :

অন্ধকার জীবনে ভয়াবহতা বুঝতে পেরে আইনের সহযোগীতায় আলোর পথে ফিরে এলো অপরাধ পথে জড়িয়ে পড়া পাবনার ১৮২ জন শিশু-কিশোর। তারা এখন সবাই আগামী সুন্দর জীবনের সৌন্দর্য বুঝতে পেওে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জীবনটাকে সঠিকভাবে সাজানোর চেষ্টায় মরিয়া। পাবনায় গত ১ বছরে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়া ১৮২ শিশু, কিশোর ও তরুণ আদালদ থেকে প্রবেশনে মুক্তি পেয়েছে।

পাবনা শিশু আদালতের বিচারক (জেলা দায়রা জজ) মিজানুর রহমান কয়েকটি শর্তে তাদের প্রভেশনে মুক্তি দিয়েছেন। মুক্তিপ্রাপ্ত শিশুরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে অন্ধকার জগৎ থেকে এখন আলোর পথে যাত্রী হয়ে নতুন জীবন শুরু করেছে। পাবনার শিশু আদালত ও প্রবেশন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে , গত এক বছরে জামিন মুক্ত ১৪২ জনের বয়স ৯ থেকে ২০ বছর। তারা মাদক সেবন , মাদক ও অস্ত্র বহন , মারধর ও চুরির অভিযোগে হওয়া মামলায় আটক হয়ে শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে ছিল। বিচারপ্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে দোষ স্বীকার , পড়ালেখা করা , সঠিক পথে ফিরে আসা এবং সমাজের মূল-স্রোতে ফিরিয়ে আনতে তাদের এক থেকে তিন বছরের জন্য প্রবেশনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। প্রবেশনে মুক্তি পাওয়া শিশু কিশোরদের মধ্যে ৭৪ জন পড়ালেখা শুরু করেছে। বাকিদের মধ্যে সাতজন পৈতৃক ব্যবসার হাল ধরেছে। একজন শহরের একটি রেস্তেরায় চাকরি করছে। বাকিরা পরিবারকে সহযোগীতা করতে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছে। শিশু বয়সে অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পড়ালেখা। তরুণ বয়সে একটি মামলায় আটক হওয়ায় জীবনে হতাশা নেমে এসেছিল। প্রভেশনে জামিন প্রাপ্ত হয়ে তিনি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। কেউ বা চাকুরী করছে। ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে তাদের পরিবার। প্রবেশনে মুক্তির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া এক তরুণ (২০) বলেন , সাত মাস আগে প্রবেশনে মুক্তি পেয়ে এইচ এসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। পাস করে তিনি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। তিনি আদালতের দেওয়া শর্তে যথাযথভাবে মেনে চলেছেন। ভবিষতে আর কোন অপরাধে জড়াবেন না। এতে তার নিজের জীবনে নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে। পরিবারও তার উপর ভীষণ খুশি রয়েছে। সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারছেন।
অপর এক কিশোর তার পৈতৃক ব্যবসার হাল ধরেছে। সে জানায় , তার বাবা মুরগির ব্যবসা করতেন। সে সংশোধনাগারে আটক থাকতেই বাবার মৃত্যু হয়। তখন ভাই বোন নিয়ে তার মা খুব বিপদে ছিলেন। মুক্তির পর সে বাবার ব্যবসার হাল ধরেছে। এখন মা , ভাইবোন নিয়ে বেশ ভালো আছে। মুক্তির পর আরেক জন জেলা শহরের একটি অভিজাত রেস্তেরায় চাকরি করছে। সে জানান , অপরাধ জীবন মানেই অন্ধকার। জীবনটা অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছিল। মুক্তির পর আলোর সন্ধান পেয়েছি। আদালতের শর্ত মেনে চলছি। আশা করছি , ভালো কাজ করে একদিন পুরোপুরি মুক্তি পাব। জীবনকে আরও সুন্দও করে গড়ে তুলব। প্রবেশনে মুক্তি পাওয়া শিশুদের নিয়মিত তদারক করেন জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা। এ ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রবেশনের মেয়াদে শিশুরা তাদের শর্ত পূরণ করলে তারা সম্পূর্ণভাবে মুক্তি পাবে। তিনি আরো জানান , আইনগত কারণে শিশু অপরাধীদের পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না। জামিনে মুক্ত এসব শিশু , কিশোর , ও তরুণের খোজ খবর রাখেন পাবনা জেলা পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন , শিশু কিশোররা নিজের অজনান্তেই অপরাধে জড়ায়। প্রবেশনের মুক্তি পাওয়ার পর অধিকাংশই শিশু তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। আদালতের শর্ত মেনে তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।

এ ব্যপারে পাবনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা পল্লব ইবনে শায়েথ বলেন , স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবা কর্মকর্তাদের মাধ্যেমে আমরা নিয়মিত এসব শিশু-কিশোরদের খোঁজ নিচ্ছি। তাদের কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। কারও আর্থিক সংকটে থাকলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের আইনগত সহযোগিতাও দেওয়া হচ্ছে। এসব শিশু-কিশোররা এখন আলো ও অন্ধকার জীবনের পার্থক্য বুঝতে পেরেছে। আগামী দিনে তারা আরও ভালো থাকবে বলে প্রত্যাশা করছি।

বা/খ: এসআর।