সালিশ বৈঠকে ছেলেকে জুতাপেটা করল বাবা, অপমানে আত্মহত্যার চেষ্টা
- আপডেট সময় : ০৮:৪০:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২
- / ৪৫৯ বার পড়া হয়েছে
তুহিন রাজ, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় বিবাহিত এক তরুণীকে উত্যক্ত ও কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগে সালিশ বৈঠকে জুতা পেটা করার অপমানে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এক যুবক। এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে বসানো হয় সালিশ বৈঠক। সেখানে অভিযুক্ত যুবককে বিচারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসময় চেয়ারম্যানের সালিশ বৈঠকে যুবককে তার বাবাই জুতাপেটা করে। এই অপমানে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই যুবক। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
আত্মহত্যার চেষ্টা করা ওই যুবকের নাম ইমরান ফরাজী(২৩)। সে মৌডুবি ইউনিয়নের মীরকান্দা ভাঙাখাল এলাকার কালাম ফরাজীর ছেলে।
জানা গেছে, বুধবার সকাল ৯ টায় এই সালিশ বৈঠক বসে মৌডুবি ইউনিয়ন পরিষদে। এতে চেয়ারম্যান ছিলেন প্রধান সালিশ। সেখানে অভিযুক্ত যুবক ইমরানের বিচারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইমরানের বাবাকে ছেলের বিচার করতে নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান । পরে বাবা জুতাপেটা করে ছেলেকে। এই অপমান সইতে না পেরে বাড়ি এসে বিষপান (কীটনাশক) করে ইমরান। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাকে কলাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন।
আত্মহত্যার চেষ্টা করা ইমরানের বাবা কালাম ফরাজী বলেন, ‘মেয়ে বলে আমাকে গালিগালাজ করে। আর ছেলে বলে এক বছর ধরে তার সাথে মেয়ের কোন কথাই হয় না। ওই মেয়ে চেয়ারম্যানের নাতনি। আমি সালিশিতে কিছু বলিনি সব হেরাহেরা (তারা তারা)। চেয়ারম্যান বলছে বিচার করতে। আমি জুতা দিয়া দুইটা বাড়ি দিছি। বিচার শেষে চেয়ারম্যান বলছে আপনার ছেলে সামনের দিকে কোন অন্যায় করলে আপনার এক লাখ টাকা জরিমানা আর ছেলেরে কফিতে টানাবো। আর মেয়ের বাবারে বলছে তুমি কিছু করলে তোমারে পুলিশে দিয়া দিমু।’
সালিশ বৈঠকে উপস্থিত থাকা মৌডুবি ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য তুহিন মিয়া বলেন, একসময় মেয়েটির সঙ্গে ছেলেটার সম্পর্ক ছিল। ছয় মাস আগে এক প্রবাসীর সঙ্গে ওই মেয়ের বিয়ে হয়। ওই ছেলে (প্রেমিক) ঢাকা চলে যায়। কিছুদিন আগে আবার এলাকায় আসে সে। বিবাহিত মেয়েটাকে উত্যক্ত করতে থাকে। মঙ্গলবার দুপুরে মেয়েকে উত্যক্ত ও অশ্লীল কথা বলায় তাদের (ছেলে-মেয়ে) মধ্যে ঝগড়াঝাটি এবং মারামারি হয়। এনিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দেয় মেয়ের পরিবার। চেয়ারম্যানের উপস্থিতি এটার ফয়সালা হয়েছে।
সালিশির বিচারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যানই বলছে আপনি আপনার ছেলের শাসন করেন। ছেলের বাবাই ছেলের শাসন করছে। জুতা দিয়া দুই-তিনটা বাড়ি দিছে। তারপরে ছেলেটা বাড়িতে এসে কীটনাশক ঔষধ খাইছে৷
জানতে চাইলে মৌডুবি ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান রাসেল জানান, ঘটনা মেয়েলি সংক্রান্ত। মেম্বারে ওর (যুবক) বাবার হাতে বিচার দিছে। ওর বাবা বিচার করছে। এরপর ছেলে এখান থেকে বের হয়ে এই ঘটনা ঘটাইছে। অভিমান করছে মনে হয় বাবার সাথে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যখন বের হয়ে আসি তখন বলেছি তাদেরকে এ ধরণের মেয়েলি ঘটনায় আপনারা কখনো জড়াইয়েন না।
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম মজুমদার জানান, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এ বিষয়ে আমরা তদন্ত করবো। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
কা/খ:জই