ঢাকা ০৫:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

যমুনায় ৮ বার ভাঙনের পরেও সোনাতনী উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:১৫:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩
  • / ৪৭৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// নিজস্ব প্রতিনিধি //

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলের একটি স্কুল সোনাতনী উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯০৫ সালে কুমার শংকর চক্রবর্তী স্কুলটি সুষ্ঠু পরিবেশে মননশীল ও মনস্তাত্বিক শিক্ষাদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলটি ৮ বার যমুনা নদী ভাঙনের কবলে পতিত হলে প্রতিবারই অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। বতমানে স্কুলটি উপজেলার জামিরতা বাজার সংলগ্ন ভাটপাড়া গ্রামে ৩০ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। উপজেলার নিভৃত পল্লীতে স্কুলটির অবস্থান হলেও একটি আদর্শ ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট নিয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে সগৌরবে এগিয়ে চলেছে।

জানা গেছে, ১১ জন শিক্ষক ও প্রায় সাড়ে ৬শ’ ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে স্কুলটি সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে। সোনাতনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, এ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পাশের হার শতকরা ৯৫ ভাগ। স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে যমুনার বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে নৌকায় যমুনা নদী পার হয়ে স্কুলে আসতে হয়। তিনি মনে করেন, এতে ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের ঝূঁকি থাকায় অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের নিয়মিত স্কুলে পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করেন। স্কুলে একটি আবাসিক বহুতল ভবন নির্মিত হলে শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করা যেতো।

স্কুলের শিক্ষকরা জানান, শতবর্ষী পুরাতন স্কুলের শিক্ষাদানের কক্ষগুলো টিনশেডের। এতে বৃষ্টি ও গরমে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যহত হয়। স্কুলটি ১৯৮৬ সালে এমপিওভুক্ত হয়। এমপিওভুক্তির পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ফ্যাসালিটিজ বিভাগের কাছে ভবন চেয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে একবার একটি ভবনের অনুমোদন হলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ক্লাসরুম ও শিক্ষা উপকরণের অভাবে এত অধিক সংখ্যাক ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তাছাড়া, স্কুলের নাজুক পরিকাঠামোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোন খেলার মাঠ।

 

যমুনায় ৮ বার ভাঙনের পরেও সোনাতনী উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে

 

স্কুলের ৯ম ও ১০ম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রতিনিয়ত দুর্গম যমুনা নদী পড়ি দিয়ে তাদের স্কুলে আসতে হয়। বিশেষ করে বর্ষাকালে যমুনা নদীর প্রচন্ড ঢেউ উপেক্ষা করে নৌকায় পারাপার হতে হয়। আমরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝূঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছি। স্কুলের বহুতল ভবন, খেলার মাঠ ও যমুনা পারাপারের জন্য নিজস্ব একিট ফিটনেসযুক্ত নৌযানের ব্যবস্থা করা হলে আমরা নিশ্চিন্তে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারতাম।

স্কুলের শিক্ষক (অবঃ) শ্রী সুভাস চন্দ্র সাহা বলেন, স্কুলটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা করা, সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের আধুনিক ও উন্নতমানের শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া। কিন্তু ভবন ও অবকাঠামোগত পরিবেশ না থাকায় স্কুলটির উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন এই স্কুলের শিক্ষকতা করেছি । এই স্কুলে অনেক স্মৃতি আছে বলে আমি মাঝে মধ্যে স্কুলে এসে অবসর সময় কাটাই। আমার প্রাণের এই স্কুলটির সার্বিক উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন জানাই।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ গর্ব করে বলেন, এই স্কুলের অনেক কৃতী শিক্ষার্থী এখান থেকে লেখাপাড়া করে দেশের বিভিন্ন উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সাবেক পিডি ( প্রকল্প পরিচালক) ও সাবেক সচিব আফজাল হোসেন এবং গাইবান্ধার জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আবু মনসুর মিয়াসহ অনেকেই রয়েছেন। স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বহুতল ভবন, খেলার মাঠ, শিক্ষার্থীদের যমুনা নদী পারাপারের জন্য উন্নতমানের নৌযান ব্যবস্থা থাকলে স্কুলটি আরও এগিয়ে যেতো বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

যমুনায় ৮ বার ভাঙনের পরেও সোনাতনী উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে

আপডেট সময় : ০২:১৫:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

// নিজস্ব প্রতিনিধি //

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলের একটি স্কুল সোনাতনী উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯০৫ সালে কুমার শংকর চক্রবর্তী স্কুলটি সুষ্ঠু পরিবেশে মননশীল ও মনস্তাত্বিক শিক্ষাদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলটি ৮ বার যমুনা নদী ভাঙনের কবলে পতিত হলে প্রতিবারই অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। বতমানে স্কুলটি উপজেলার জামিরতা বাজার সংলগ্ন ভাটপাড়া গ্রামে ৩০ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। উপজেলার নিভৃত পল্লীতে স্কুলটির অবস্থান হলেও একটি আদর্শ ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট নিয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে সগৌরবে এগিয়ে চলেছে।

জানা গেছে, ১১ জন শিক্ষক ও প্রায় সাড়ে ৬শ’ ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে স্কুলটি সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে। সোনাতনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, এ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পাশের হার শতকরা ৯৫ ভাগ। স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে যমুনার বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে নৌকায় যমুনা নদী পার হয়ে স্কুলে আসতে হয়। তিনি মনে করেন, এতে ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের ঝূঁকি থাকায় অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের নিয়মিত স্কুলে পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করেন। স্কুলে একটি আবাসিক বহুতল ভবন নির্মিত হলে শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করা যেতো।

স্কুলের শিক্ষকরা জানান, শতবর্ষী পুরাতন স্কুলের শিক্ষাদানের কক্ষগুলো টিনশেডের। এতে বৃষ্টি ও গরমে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যহত হয়। স্কুলটি ১৯৮৬ সালে এমপিওভুক্ত হয়। এমপিওভুক্তির পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ফ্যাসালিটিজ বিভাগের কাছে ভবন চেয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে একবার একটি ভবনের অনুমোদন হলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ক্লাসরুম ও শিক্ষা উপকরণের অভাবে এত অধিক সংখ্যাক ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদানেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তাছাড়া, স্কুলের নাজুক পরিকাঠামোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোন খেলার মাঠ।

 

যমুনায় ৮ বার ভাঙনের পরেও সোনাতনী উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে

 

স্কুলের ৯ম ও ১০ম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রতিনিয়ত দুর্গম যমুনা নদী পড়ি দিয়ে তাদের স্কুলে আসতে হয়। বিশেষ করে বর্ষাকালে যমুনা নদীর প্রচন্ড ঢেউ উপেক্ষা করে নৌকায় পারাপার হতে হয়। আমরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝূঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছি। স্কুলের বহুতল ভবন, খেলার মাঠ ও যমুনা পারাপারের জন্য নিজস্ব একিট ফিটনেসযুক্ত নৌযানের ব্যবস্থা করা হলে আমরা নিশ্চিন্তে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারতাম।

স্কুলের শিক্ষক (অবঃ) শ্রী সুভাস চন্দ্র সাহা বলেন, স্কুলটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা করা, সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের আধুনিক ও উন্নতমানের শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া। কিন্তু ভবন ও অবকাঠামোগত পরিবেশ না থাকায় স্কুলটির উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন এই স্কুলের শিক্ষকতা করেছি । এই স্কুলে অনেক স্মৃতি আছে বলে আমি মাঝে মধ্যে স্কুলে এসে অবসর সময় কাটাই। আমার প্রাণের এই স্কুলটির সার্বিক উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন জানাই।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ গর্ব করে বলেন, এই স্কুলের অনেক কৃতী শিক্ষার্থী এখান থেকে লেখাপাড়া করে দেশের বিভিন্ন উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সাবেক পিডি ( প্রকল্প পরিচালক) ও সাবেক সচিব আফজাল হোসেন এবং গাইবান্ধার জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আবু মনসুর মিয়াসহ অনেকেই রয়েছেন। স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বহুতল ভবন, খেলার মাঠ, শিক্ষার্থীদের যমুনা নদী পারাপারের জন্য উন্নতমানের নৌযান ব্যবস্থা থাকলে স্কুলটি আরও এগিয়ে যেতো বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।