ঢাকা ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

“হাওরে জমি না থাকলে এলাকা ছেড়ে চলে যাইতাম”

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৫৮:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৮৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজু আহমেদ রমজান, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :

“হাওরে জমি থাকার কারণে অত্যাচার সহ্য করেও এখানে বসবাস করছি। জমি না থাকলে এলাকা ছেড়ে চলে যাইতাম। মাছ ধরার লোভে বাঁধ কেটে দেওয়ায় আমাদের জমি আজ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখন আমরা কেমনে বাঁচবো’’। এসব কথা মুজরাই গ্রামের কৃষাণী সুজিতা বর্মণের। গোলায় সোনালী ধান তোলার আশাভঙ্গে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে একই গ্রামের বৃদ্ধা নিরমালা বর্মণ ও আশুলতা বর্মণের।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের গনিয়াকুড়ি হাওরে বোরো ফসলী জমি আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন মন্দিয়াতা, মইয়াজুরি, ছিড়িয়ারগাঁও এবং মুজরাই গ্রামের কৃষক। এ হাওরে প্রতিবছরের ন্যায় এবারো প্রায় চারশ একর জমি চাষাবাদ করা হয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, মাছ ধরার ফন্দিতে গত ২২ মার্চ সকালে গনিয়াকুড়ি হাওরের বাঁধ কেটে দেন মন্দিয়াতা গ্রামের আব্দুস ছাত্তার ও তার সহযোগীরা। এতে হাওরের প্রায় একশ একর বোরো ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। হুমকির মুখে রয়েছে অন্যান্য আবাদি জমি। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে কৃষকদের পক্ষে একই গ্রামের কৃষক জায়েদ মিয়া ওইদিন দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর পৃথকভাবে লিখিত আবেদন দাখিল করেন।

এতে তিনি উল্লেখ করেন, মাছ ধরার ফন্দিতে দলবদ্ধ হয়ে গত ২২ মার্চ সকালে গনিয়াকুড়ি হাওরের বাঁধ কেটে দেন মন্দিয়াতা গ্রামের আব্দুস ছাত্তার ও তার সহযোগীরা। হাওরপাড়ের সাধারণ কৃষকরা এর প্রতিবাদ করলে তাদের মারধর করে আব্দুস ছাত্তার বাহিনী। এ ঘটনায় আব্দুস ছাত্তার, আলী আমজদ, আব্দুল জব্বার, সজিব মিয়া, রাজীব মিয়া, বোরহান মিয়া, দিলোয়ার হোসেন, আলম মিয়া, আলীজান, তুয়েল মিয়া, ছিড়িয়ারগাঁও গ্রামের আব্দুল কাদিরসহ অনেকের নাম উল্লেখ করা হয়।

প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে এখন বিপাকে স্থানীয় কৃষকরা। উল্টো অভিযোগকারী ও সাধারণ কৃষকদের ফাঁসিয়ে দিতে বিভিন্ন অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বাঁধ কাটার দায়ে অভিযুক্তরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও কৃষকদের তাচ্ছিল্য করে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়ে আসছেন তারা এমন অভিযোগ উঠেছে।

উল্লেখ্য, গনিয়াকুড়ি হাওরে বাঁধ কেটে ফসলহানি ঘটিয়ে মাছ ধরার অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর সংঘবদ্ধ ছাত্তার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন মন্দিয়াতা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম। ফলে এ বাহিনীর চক্ষুশুলে পরিণত হয়েছেন কৃষক সাইফুল ইসলামসহ অনেকেই। এদিকে গত ২২ মার্চের ঘটনায় জনস্বার্থে জায়েদ মিয়া নামে এক কৃষকের দায়েরকৃত অভিযোগের পর মুজরাই গ্রামের কৃষক আরাধন বর্মণের উপর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আব্দুস ছাত্তার ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে গত ২৩ মার্চ তাহিরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতনের শিকার আরাধন বর্মণ।

বাঁধ কাটার দায়ে অভিযুক্ত আব্দুস ছাত্তার এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ০১৭২২-৬৩৪৭০৩ নম্বরে শনিবার রাতে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর স্বজন বুরহান মিয়া বলেন, বাঁধ কেটে ফসলি সম্পদ নষ্ট করা এমন অভিযোগ অযৌক্তিক। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে বাঁধ দিয়ে কিছু পানি প্রবেশ করছে এমন খবর পাওয়ার পর আমরা বাঁধটি মেরামত করি। মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে আমাদের অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে। বাঁধ কাটার ইস্যু তৈরি করে আমার চাচা আব্দুল ছাত্তারসহ বেশ কয়েকজনকে মারপিট করে আহত করে প্রতিপক্ষের লোকজন। বর্তমানে ৩জনের অবস্থা গুরুতর বলে তিনি জানান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সাজিনুর মিয়া বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য টাঙ্গুয়ার হাওরের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় গনিয়াকুড়ি হাওরে ফসলরক্ষা বেরিবাঁধ দেয়া হয় না। এটা স্হানীভাবে আমাদের মেরামত করতে হয়। কিন্তু অভিযুক্তরা শক্তি প্রদর্শন করে বাঁধ কেটে দিয়ে মাছ ধরে প্রতিবছর। বাধা দিলে হামলা-মামলা করে সাধারণ মানুষের উপর। এবার প্রায় একশ একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই জনপ্রতিনিধি।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, হাওরে বাঁধ কেটে দেয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বাঁধটি দ্রুত মেরামত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। ফসল তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

বা/খ: জই

নিউজটি শেয়ার করুন

“হাওরে জমি না থাকলে এলাকা ছেড়ে চলে যাইতাম”

আপডেট সময় : ১০:৫৮:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩

রাজু আহমেদ রমজান, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :

“হাওরে জমি থাকার কারণে অত্যাচার সহ্য করেও এখানে বসবাস করছি। জমি না থাকলে এলাকা ছেড়ে চলে যাইতাম। মাছ ধরার লোভে বাঁধ কেটে দেওয়ায় আমাদের জমি আজ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখন আমরা কেমনে বাঁচবো’’। এসব কথা মুজরাই গ্রামের কৃষাণী সুজিতা বর্মণের। গোলায় সোনালী ধান তোলার আশাভঙ্গে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে একই গ্রামের বৃদ্ধা নিরমালা বর্মণ ও আশুলতা বর্মণের।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের গনিয়াকুড়ি হাওরে বোরো ফসলী জমি আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন মন্দিয়াতা, মইয়াজুরি, ছিড়িয়ারগাঁও এবং মুজরাই গ্রামের কৃষক। এ হাওরে প্রতিবছরের ন্যায় এবারো প্রায় চারশ একর জমি চাষাবাদ করা হয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, মাছ ধরার ফন্দিতে গত ২২ মার্চ সকালে গনিয়াকুড়ি হাওরের বাঁধ কেটে দেন মন্দিয়াতা গ্রামের আব্দুস ছাত্তার ও তার সহযোগীরা। এতে হাওরের প্রায় একশ একর বোরো ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। হুমকির মুখে রয়েছে অন্যান্য আবাদি জমি। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে কৃষকদের পক্ষে একই গ্রামের কৃষক জায়েদ মিয়া ওইদিন দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর পৃথকভাবে লিখিত আবেদন দাখিল করেন।

এতে তিনি উল্লেখ করেন, মাছ ধরার ফন্দিতে দলবদ্ধ হয়ে গত ২২ মার্চ সকালে গনিয়াকুড়ি হাওরের বাঁধ কেটে দেন মন্দিয়াতা গ্রামের আব্দুস ছাত্তার ও তার সহযোগীরা। হাওরপাড়ের সাধারণ কৃষকরা এর প্রতিবাদ করলে তাদের মারধর করে আব্দুস ছাত্তার বাহিনী। এ ঘটনায় আব্দুস ছাত্তার, আলী আমজদ, আব্দুল জব্বার, সজিব মিয়া, রাজীব মিয়া, বোরহান মিয়া, দিলোয়ার হোসেন, আলম মিয়া, আলীজান, তুয়েল মিয়া, ছিড়িয়ারগাঁও গ্রামের আব্দুল কাদিরসহ অনেকের নাম উল্লেখ করা হয়।

প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে এখন বিপাকে স্থানীয় কৃষকরা। উল্টো অভিযোগকারী ও সাধারণ কৃষকদের ফাঁসিয়ে দিতে বিভিন্ন অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বাঁধ কাটার দায়ে অভিযুক্তরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও কৃষকদের তাচ্ছিল্য করে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়ে আসছেন তারা এমন অভিযোগ উঠেছে।

উল্লেখ্য, গনিয়াকুড়ি হাওরে বাঁধ কেটে ফসলহানি ঘটিয়ে মাছ ধরার অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর সংঘবদ্ধ ছাত্তার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন মন্দিয়াতা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম। ফলে এ বাহিনীর চক্ষুশুলে পরিণত হয়েছেন কৃষক সাইফুল ইসলামসহ অনেকেই। এদিকে গত ২২ মার্চের ঘটনায় জনস্বার্থে জায়েদ মিয়া নামে এক কৃষকের দায়েরকৃত অভিযোগের পর মুজরাই গ্রামের কৃষক আরাধন বর্মণের উপর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আব্দুস ছাত্তার ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে গত ২৩ মার্চ তাহিরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতনের শিকার আরাধন বর্মণ।

বাঁধ কাটার দায়ে অভিযুক্ত আব্দুস ছাত্তার এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ০১৭২২-৬৩৪৭০৩ নম্বরে শনিবার রাতে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর স্বজন বুরহান মিয়া বলেন, বাঁধ কেটে ফসলি সম্পদ নষ্ট করা এমন অভিযোগ অযৌক্তিক। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে বাঁধ দিয়ে কিছু পানি প্রবেশ করছে এমন খবর পাওয়ার পর আমরা বাঁধটি মেরামত করি। মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে আমাদের অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে। বাঁধ কাটার ইস্যু তৈরি করে আমার চাচা আব্দুল ছাত্তারসহ বেশ কয়েকজনকে মারপিট করে আহত করে প্রতিপক্ষের লোকজন। বর্তমানে ৩জনের অবস্থা গুরুতর বলে তিনি জানান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সাজিনুর মিয়া বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য টাঙ্গুয়ার হাওরের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় গনিয়াকুড়ি হাওরে ফসলরক্ষা বেরিবাঁধ দেয়া হয় না। এটা স্হানীভাবে আমাদের মেরামত করতে হয়। কিন্তু অভিযুক্তরা শক্তি প্রদর্শন করে বাঁধ কেটে দিয়ে মাছ ধরে প্রতিবছর। বাধা দিলে হামলা-মামলা করে সাধারণ মানুষের উপর। এবার প্রায় একশ একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই জনপ্রতিনিধি।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, হাওরে বাঁধ কেটে দেয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বাঁধটি দ্রুত মেরামত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। ফসল তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

বা/খ: জই