ঢাকা ০৩:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ অবস্থার ডেঙ্গু পরিস্থিতি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৩:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০২৩
  • / ৪৫২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে হু হু করে। এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যুও পৌনে দু’শ ছুঁইছুঁই। চিকিৎসকরা বলছেন, এবারে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরণ সক্রিয় রয়েছে। রোগী যদি একই সাথে একাধিক ধরনে আক্রান্ত হয় তবে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায়। এদিকে, কীটতত্তবিদরা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ঘাটতি না থাকলে পরিস্থিতি এই পর্যায়ে আসতো না। এখন সবচেয়ে জরুরী মশা নিয়ন্ত্রণ করা।

স্মরণকালের মধ্যে এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থার ডেঙ্গু পরিস্থিতি। রাজধানীর মুগদা, ঢাকা মেডিকেল, কুর্মিটোলা, বিএসএমএমইউসহ সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগির ভিড়। গত সাত মাসে মৃত্যু দেড়শ ছাড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্যবারের চেয়ে এবারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রোগি খুব তাড়াতাড়ি দূর্বল হয়ে পড়ছে। এবার ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরণের মধ্যে একটি বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে, এই ধরণ বিশ্লেষণ শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য। রোগী যে ধরণেই আক্রান্ত হোক, উপসর্গ এবং চিকিৎসা একই। তবে, রোগি কখনো কখনো একসাথে দুই বা তিন ধরণের ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগির চিকিৎসা জটিল হয়ে যায়।

ডেঙ্গু মোকাবেলার স্বার্থে এখনই এই ধরণগুলো নিয়ে বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন কীটতত্ত¡বিদরা। সেই সাথে মশা নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়ায় কোথাও একটা ঘাটতি রয়ে গেছে বলে মনে করেন তারা। শুধু বর্ষা মৌসুমে নয়, সারাবছরই জোরালোভাবে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটি করতে হবে বলে জানান তারা।

হাসপাতালগুলোতে নতুন রোগী ভর্তি করার জন্য যথেষ্ট সিট নেই, মেঝেতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিছানা পেতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। চলতি মাসে সংক্রমণ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। জনসাধারণের মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়নি বলে খারাপ অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে আসছে। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের যথেষ্ট প্রচেষ্টা না থাকায় ডেঙ্গু ক্রমেই ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মশক নিধনে যে কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নতুন করে কার্যকর মশক নিধন কীটনাশক নিয়ে আসার দাবি করেছেন।

ডেঙ্গু জীবানুবাহী এডিস মশা যেমন পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপখাইয়ে নেয়ার সক্ষমতা গড়ে তুলেছে তেমনি এই মশার সবগুলো স্ট্রেইনই কার্যকর বলে এ মাসে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। ঢাকা শহরেই ডেঙ্গু সবচেয়ে বেশি। চলতি মাসে দেশে যত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এর বেশির ভাগই ঢাকা শহরের ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে। যেমন চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত দেশে ১৯ হাজার ৪৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী কেবল হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে, এর মধ্যে ঢাকা শহরের ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে ১৩ হাজার ১০৯ জন।

ঢাকা শহরের ৬৭.৩৮ শতাংশ রোগীই ঢাকা শহরে ভর্তি হয়েছে। এর বাইরে আরো অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রয়েছে যারা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বার থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছে। মেডিসিন ও রিউমাটোলজির বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা: সৈয়দ আতিকুল হক এ ব্যাপারে বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুর যে ৪টি সেরুটাইপ রয়েছে (ডেন ১ থেকে ৪ পর্যন্ত) সবগুলো সেরুটাইপই এডিস মশা বহন করছে এবং সেরুটাইপ বেশি কার্যকর বলে মানুষ বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে।

এর আগে কখনো সবগুলো সেরুটাইপ কার্যকর ছিল না। ডেঙ্গু জীবাণুবাহিত এডিস মশা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা: মো: শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সিটি করপোরেশন মশক নিধনে যে কীটনাশক ব্যবহার করছে এই কীটনাশকে মশা মরে কি না তা নতুন করে পরীক্ষা করাতে হবে। মশক নিধনে এখন কীটনাশক কার্যকর না হলে পৃথিবীর যেখানে কার্যকর কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে সেখান থেকে নিয়ে আসতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ অবস্থার ডেঙ্গু পরিস্থিতি

আপডেট সময় : ০৩:৫৩:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে হু হু করে। এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যুও পৌনে দু’শ ছুঁইছুঁই। চিকিৎসকরা বলছেন, এবারে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরণ সক্রিয় রয়েছে। রোগী যদি একই সাথে একাধিক ধরনে আক্রান্ত হয় তবে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায়। এদিকে, কীটতত্তবিদরা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ঘাটতি না থাকলে পরিস্থিতি এই পর্যায়ে আসতো না। এখন সবচেয়ে জরুরী মশা নিয়ন্ত্রণ করা।

স্মরণকালের মধ্যে এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থার ডেঙ্গু পরিস্থিতি। রাজধানীর মুগদা, ঢাকা মেডিকেল, কুর্মিটোলা, বিএসএমএমইউসহ সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগির ভিড়। গত সাত মাসে মৃত্যু দেড়শ ছাড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যান্যবারের চেয়ে এবারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রোগি খুব তাড়াতাড়ি দূর্বল হয়ে পড়ছে। এবার ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরণের মধ্যে একটি বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে, এই ধরণ বিশ্লেষণ শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য। রোগী যে ধরণেই আক্রান্ত হোক, উপসর্গ এবং চিকিৎসা একই। তবে, রোগি কখনো কখনো একসাথে দুই বা তিন ধরণের ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগির চিকিৎসা জটিল হয়ে যায়।

ডেঙ্গু মোকাবেলার স্বার্থে এখনই এই ধরণগুলো নিয়ে বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন কীটতত্ত¡বিদরা। সেই সাথে মশা নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়ায় কোথাও একটা ঘাটতি রয়ে গেছে বলে মনে করেন তারা। শুধু বর্ষা মৌসুমে নয়, সারাবছরই জোরালোভাবে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটি করতে হবে বলে জানান তারা।

হাসপাতালগুলোতে নতুন রোগী ভর্তি করার জন্য যথেষ্ট সিট নেই, মেঝেতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিছানা পেতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। চলতি মাসে সংক্রমণ যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। জনসাধারণের মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করা যায়নি বলে খারাপ অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে আসছে। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের যথেষ্ট প্রচেষ্টা না থাকায় ডেঙ্গু ক্রমেই ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মশক নিধনে যে কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নতুন করে কার্যকর মশক নিধন কীটনাশক নিয়ে আসার দাবি করেছেন।

ডেঙ্গু জীবানুবাহী এডিস মশা যেমন পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপখাইয়ে নেয়ার সক্ষমতা গড়ে তুলেছে তেমনি এই মশার সবগুলো স্ট্রেইনই কার্যকর বলে এ মাসে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। ঢাকা শহরেই ডেঙ্গু সবচেয়ে বেশি। চলতি মাসে দেশে যত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এর বেশির ভাগই ঢাকা শহরের ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে। যেমন চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত দেশে ১৯ হাজার ৪৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী কেবল হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে, এর মধ্যে ঢাকা শহরের ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে ১৩ হাজার ১০৯ জন।

ঢাকা শহরের ৬৭.৩৮ শতাংশ রোগীই ঢাকা শহরে ভর্তি হয়েছে। এর বাইরে আরো অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রয়েছে যারা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বার থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছে। মেডিসিন ও রিউমাটোলজির বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা: সৈয়দ আতিকুল হক এ ব্যাপারে বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুর যে ৪টি সেরুটাইপ রয়েছে (ডেন ১ থেকে ৪ পর্যন্ত) সবগুলো সেরুটাইপই এডিস মশা বহন করছে এবং সেরুটাইপ বেশি কার্যকর বলে মানুষ বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে।

এর আগে কখনো সবগুলো সেরুটাইপ কার্যকর ছিল না। ডেঙ্গু জীবাণুবাহিত এডিস মশা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা: মো: শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সিটি করপোরেশন মশক নিধনে যে কীটনাশক ব্যবহার করছে এই কীটনাশকে মশা মরে কি না তা নতুন করে পরীক্ষা করাতে হবে। মশক নিধনে এখন কীটনাশক কার্যকর না হলে পৃথিবীর যেখানে কার্যকর কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে সেখান থেকে নিয়ে আসতে হবে।