ঢাকা ০৪:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সুন্দরবনে এবার খোদ রেঞ্জ অফিস চত্বরেই দেখা মিলল বাঘের

বাগেরহাট সংবাদদাতা
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৮:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৭০৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সুন্দরবনের অনেক প্রাণি এখন আর চোখে পড়েনা,  প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে বিলুপ্তির পথে নাই বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আবারও বাঘের দেখা মিললো এবার খোদ পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের চত্বরেই। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সরাসরি এবং রাত ১২টার দিকে বাঘের উপস্থিতি টের পান বনরক্ষীরা। সন্ধ্যায় বাঘটি রেঞ্জ অফিস চত্বরে বিচরণ করা হরিণের পালে আক্রমণ করে। এ সময় বনরক্ষীরা কৌশলে বাঘটি তাড়িয়ে দিলে গভীররাতে আবার ফিরে আসে। এ ঘটনার পর থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ কর্মরত বনরক্ষীদের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

এ নিয়ে চলতি বছরে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন অফিসে চার বারে ৬টি বাঘের দেখা পেলেন বনক্ষীরা। এর আগে ৭ অক্টোবর রাতে ধানসাগর ফরেস্ট স্টেশন অফিসের বনরক্ষীদের ব্যারাকের সামনে দুটি বাঘ দেখা গেছে। ৮ আগস্ট সকালে কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের বনরক্ষীদের ব্যারাকের খুব কাছে চলে আসে বিশাল এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এ সময় মোবাইলে বাঘটির ভিডিও ধারণ করেন বনরক্ষীরা। এছাড়া গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রেঞ্জের চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ি অফিসের পুকুর পাড়ে দেখা মেলে জোড়া বাঘের। একদিন-একরাত (প্রায় ২২ ঘন্টা) সেখানে অবস্থান করে বাঘ দুটি আবার বনে ফিরে যায়।

শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মাগরিবের নামাজ পড়ছিলেন। পুরোপুরি অন্ধকার নামেনি। তখন অফিস চত্বরে কয়েকটি হরিণ ঘাস খাচ্ছিল। অফিসের বেলকোনিতে দাড়িয়ে শিশু কন্যাকে নিয়ে তার স্ত্রী সেই হরিণের বিচরণ দেখছিলেন। এরই মধ্যে বনের ভেতর থেকে বিশাল একটি বাঘ এসে আক্রমণ করে হরিণের পালে। তার স্ত্রী ও কন্যা বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করে রুমের মধ্যে চলে যায়। এই দৃশ্য ব্যারাক থেকে বনরক্ষীরাও দেখতে পেয়ে তাকে (রেঞ্জ কর্মকর্তা) মোবাইল করে জানান। এ সময় নানাভাবে শব্দ করে বাঘটি তাড়িয়ে দেয়া হয়। বাঘটি বনে চলে যাওয়ার সময় এক বনক্ষী টর্চলাইট মেরে মোবাইলে ভিডিও করার চেষ্টা করলেও তা স্পষ্ট হয়নি। পরবর্তীতে রাত ১২টার দিকে হরিণের অস্বাভাবিক ডাকাডাকি শুনতে পান তারা। এতে ধারণা করা হচ্ছে বাঘটি গভীররাতে আবার ফিসে এসে হরিণ শিকারে চেষ্টা করেছে।

এসিএফ শেখ মাহাবুব হাসান জানান, আগেও গভীর রাতে প্রায়ই বাঘ এসেছে রেঞ্জ অফিস চত্বরে। সরাসরি দেখতে না পেলেও বিভিন্ন স্থানে বাঘের পায়ের অসংখ্য ছাপ দেখে বুঝতে তা পেরেছেন তারা। তবে এভাবে সন্ধ্যার সময় আসেনি কখনও। তারা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছেন। বাঘ দেখার পর থেকে রাতে কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। সন্ধ্যার পরে কোনো বনরক্ষীকে একা বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।

এসিএফ আরো জানান, রেঞ্জ অফিসটির পূর্ব পাশ থেকেই গহীন বন এবং পশ্চিম পাশে ভোরা নদী। তাই পূর্ব পাশ থেকেই বাঘ, হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণি অফিস চত্বরে সহজেই প্রবেশ করতে পারে। পূর্বপাশের পৌণে এক কিলোমিটার এলাকা যদি কাটাতারের বেড়া দিয়ে আটকানো যায় তাহলে আর কোনো বন্যপ্রাণি ঢুকতে পারবে না। বাঘ দেখার পরে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই হয়তো সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।

রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহাবুব হাসান জানিয়েছেন, পূর্ব সুন্দরবনে ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ে বাঘ গননা। চাঁদপাই রেঞ্জে চলছে ক্যামেরা বসানোর কাজ। শরণখোলা রেঞ্জে ক্যামেরা বসানো শুরু হলে রেঞ্জ অফিসের কাছে একটি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য বলা হবে সংশ্লিষ্টদের। সম্প্রতি যেভাবে বাঘের দেখা মিলছে তাতে মনে হচ্ছে সুন্দরবনে আগের তুলনায় বাঘ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঘের সংখ্যা এবং সংরক্ষণে এই জরিপ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ মন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। রবিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে বনের হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র থেকে এই উদ্ধোধন করা হয়। পরে উপমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুন্দরবন বাঁচলে বাঘ বাঁচবে। তাই সুন্দরবন সুরক্ষা করে বাঘ সংরক্ষণ করতে হবে। তাই তৃতীয়বারেরমতো বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বাঘ গননার কাজ শুরু হয়েছে’।

এ সময় উপমন্ত্রীর সাথে খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো, বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ড. আবু নাসের মহাসিন হোসেন, বন্য প্রাণি ব্যবস্থাপনা বিভাগের (খুলনা) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোঃ নুরুল করিম, চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব ও করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ওসি হাওলাদার আজাদ কবিরসহ বাঘ গননার কাজে বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরনখোলা রেঞ্জের আওতায় প্রাকৃতিক বনে ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করা হবে এবং সুন্দরবনে কতোগুলো বাঘ রয়েছে তার সংখ্যা আগামী বছরের ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে ঘোষণা করা হবে। এ তথ্য দিয়ে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ড. আবু নাসের মহাসিন হোসেন জানান, ২০১৩-১৪ সালে প্রথমবার সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ ও জরিপ কাজ শুরু করা হয়। ২০১৫ সালে সেই জরিপে ১০৬টি বাঘ সুন্দরবনে আছে বলে জানা যায়। এরপর ২০১৮ সালে জরিপ চালিয়ে ১১৪টি বাঘের তথ্য পাওয়া যায়। এখন সে বাঘ কমেছে নাকি বেড়েছে তা জানতে নতুন করে রবিবার থেকে জরিপ চালানোর কাজ শুরু করা হয়েছে।

আগামী বছরের এপ্রিল মাসে এই জরিপ কাজ শেষ হবে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, সুন্দরবনের চাঁদপাই এবং শরনখোলা রেঞ্জে ৩০০টি ষ্টেশনে দুটি করে মোট ৬০০ ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। পরে তা বিশ্লেষণ শেষে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে বাঘের প্রকৃত সংখ্যা তুলে ধরা হবে। ‘বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে’র আওতায় বাঘ গননার কাজে দুই কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

ড. আবু নাসের মহাাসিন জানান, ‘সুন্দরবনে বাঘের শিকার প্রাণি বাড়ছে। গত বছর এর সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার। তাই সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলেও ধারনা করা হচ্ছে’।

বনবিভাগ সুত্র জানায়, বাঘ গননার বৈশ্বিক যে পদ্ধতি সেটা হলো ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতি। এর মাধ্যমে বাঘের ঘনত্ব নির্ণয় করে বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়। বাংলাদেশেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করে ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটারের চার হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটারে বাঘ গননার কাজ চালানো হবে। ক্যামেরার মাধ্যমে বাঘের মুখমন্ডল ও ডোরা কাটার ছাপ উঠে আসবে। এটা জটিল একটা পরিসংখ্যান কাজ। এ কাজ করেই বাঘের সংখ্যা বের করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

সুন্দরবনে এবার খোদ রেঞ্জ অফিস চত্বরেই দেখা মিলল বাঘের

আপডেট সময় : ০৭:৫৮:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩

সুন্দরবনের অনেক প্রাণি এখন আর চোখে পড়েনা,  প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে বিলুপ্তির পথে নাই বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আবারও বাঘের দেখা মিললো এবার খোদ পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের চত্বরেই। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সরাসরি এবং রাত ১২টার দিকে বাঘের উপস্থিতি টের পান বনরক্ষীরা। সন্ধ্যায় বাঘটি রেঞ্জ অফিস চত্বরে বিচরণ করা হরিণের পালে আক্রমণ করে। এ সময় বনরক্ষীরা কৌশলে বাঘটি তাড়িয়ে দিলে গভীররাতে আবার ফিরে আসে। এ ঘটনার পর থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ কর্মরত বনরক্ষীদের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

এ নিয়ে চলতি বছরে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন অফিসে চার বারে ৬টি বাঘের দেখা পেলেন বনক্ষীরা। এর আগে ৭ অক্টোবর রাতে ধানসাগর ফরেস্ট স্টেশন অফিসের বনরক্ষীদের ব্যারাকের সামনে দুটি বাঘ দেখা গেছে। ৮ আগস্ট সকালে কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের বনরক্ষীদের ব্যারাকের খুব কাছে চলে আসে বিশাল এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এ সময় মোবাইলে বাঘটির ভিডিও ধারণ করেন বনরক্ষীরা। এছাড়া গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রেঞ্জের চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ি অফিসের পুকুর পাড়ে দেখা মেলে জোড়া বাঘের। একদিন-একরাত (প্রায় ২২ ঘন্টা) সেখানে অবস্থান করে বাঘ দুটি আবার বনে ফিরে যায়।

শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মাগরিবের নামাজ পড়ছিলেন। পুরোপুরি অন্ধকার নামেনি। তখন অফিস চত্বরে কয়েকটি হরিণ ঘাস খাচ্ছিল। অফিসের বেলকোনিতে দাড়িয়ে শিশু কন্যাকে নিয়ে তার স্ত্রী সেই হরিণের বিচরণ দেখছিলেন। এরই মধ্যে বনের ভেতর থেকে বিশাল একটি বাঘ এসে আক্রমণ করে হরিণের পালে। তার স্ত্রী ও কন্যা বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করে রুমের মধ্যে চলে যায়। এই দৃশ্য ব্যারাক থেকে বনরক্ষীরাও দেখতে পেয়ে তাকে (রেঞ্জ কর্মকর্তা) মোবাইল করে জানান। এ সময় নানাভাবে শব্দ করে বাঘটি তাড়িয়ে দেয়া হয়। বাঘটি বনে চলে যাওয়ার সময় এক বনক্ষী টর্চলাইট মেরে মোবাইলে ভিডিও করার চেষ্টা করলেও তা স্পষ্ট হয়নি। পরবর্তীতে রাত ১২টার দিকে হরিণের অস্বাভাবিক ডাকাডাকি শুনতে পান তারা। এতে ধারণা করা হচ্ছে বাঘটি গভীররাতে আবার ফিসে এসে হরিণ শিকারে চেষ্টা করেছে।

এসিএফ শেখ মাহাবুব হাসান জানান, আগেও গভীর রাতে প্রায়ই বাঘ এসেছে রেঞ্জ অফিস চত্বরে। সরাসরি দেখতে না পেলেও বিভিন্ন স্থানে বাঘের পায়ের অসংখ্য ছাপ দেখে বুঝতে তা পেরেছেন তারা। তবে এভাবে সন্ধ্যার সময় আসেনি কখনও। তারা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছেন। বাঘ দেখার পর থেকে রাতে কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। সন্ধ্যার পরে কোনো বনরক্ষীকে একা বের হতে নিষেধ করা হয়েছে।

এসিএফ আরো জানান, রেঞ্জ অফিসটির পূর্ব পাশ থেকেই গহীন বন এবং পশ্চিম পাশে ভোরা নদী। তাই পূর্ব পাশ থেকেই বাঘ, হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণি অফিস চত্বরে সহজেই প্রবেশ করতে পারে। পূর্বপাশের পৌণে এক কিলোমিটার এলাকা যদি কাটাতারের বেড়া দিয়ে আটকানো যায় তাহলে আর কোনো বন্যপ্রাণি ঢুকতে পারবে না। বাঘ দেখার পরে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই হয়তো সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।

রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহাবুব হাসান জানিয়েছেন, পূর্ব সুন্দরবনে ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ে বাঘ গননা। চাঁদপাই রেঞ্জে চলছে ক্যামেরা বসানোর কাজ। শরণখোলা রেঞ্জে ক্যামেরা বসানো শুরু হলে রেঞ্জ অফিসের কাছে একটি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য বলা হবে সংশ্লিষ্টদের। সম্প্রতি যেভাবে বাঘের দেখা মিলছে তাতে মনে হচ্ছে সুন্দরবনে আগের তুলনায় বাঘ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঘের সংখ্যা এবং সংরক্ষণে এই জরিপ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ মন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। রবিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে বনের হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র থেকে এই উদ্ধোধন করা হয়। পরে উপমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুন্দরবন বাঁচলে বাঘ বাঁচবে। তাই সুন্দরবন সুরক্ষা করে বাঘ সংরক্ষণ করতে হবে। তাই তৃতীয়বারেরমতো বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বাঘ গননার কাজ শুরু হয়েছে’।

এ সময় উপমন্ত্রীর সাথে খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো, বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ড. আবু নাসের মহাসিন হোসেন, বন্য প্রাণি ব্যবস্থাপনা বিভাগের (খুলনা) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোঃ নুরুল করিম, চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব ও করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ওসি হাওলাদার আজাদ কবিরসহ বাঘ গননার কাজে বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ও শরনখোলা রেঞ্জের আওতায় প্রাকৃতিক বনে ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করা হবে এবং সুন্দরবনে কতোগুলো বাঘ রয়েছে তার সংখ্যা আগামী বছরের ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে ঘোষণা করা হবে। এ তথ্য দিয়ে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ড. আবু নাসের মহাসিন হোসেন জানান, ২০১৩-১৪ সালে প্রথমবার সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ ও জরিপ কাজ শুরু করা হয়। ২০১৫ সালে সেই জরিপে ১০৬টি বাঘ সুন্দরবনে আছে বলে জানা যায়। এরপর ২০১৮ সালে জরিপ চালিয়ে ১১৪টি বাঘের তথ্য পাওয়া যায়। এখন সে বাঘ কমেছে নাকি বেড়েছে তা জানতে নতুন করে রবিবার থেকে জরিপ চালানোর কাজ শুরু করা হয়েছে।

আগামী বছরের এপ্রিল মাসে এই জরিপ কাজ শেষ হবে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, সুন্দরবনের চাঁদপাই এবং শরনখোলা রেঞ্জে ৩০০টি ষ্টেশনে দুটি করে মোট ৬০০ ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। পরে তা বিশ্লেষণ শেষে ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে বাঘের প্রকৃত সংখ্যা তুলে ধরা হবে। ‘বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে’র আওতায় বাঘ গননার কাজে দুই কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

ড. আবু নাসের মহাাসিন জানান, ‘সুন্দরবনে বাঘের শিকার প্রাণি বাড়ছে। গত বছর এর সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার। তাই সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলেও ধারনা করা হচ্ছে’।

বনবিভাগ সুত্র জানায়, বাঘ গননার বৈশ্বিক যে পদ্ধতি সেটা হলো ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতি। এর মাধ্যমে বাঘের ঘনত্ব নির্ণয় করে বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়। বাংলাদেশেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করে ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটারের চার হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটারে বাঘ গননার কাজ চালানো হবে। ক্যামেরার মাধ্যমে বাঘের মুখমন্ডল ও ডোরা কাটার ছাপ উঠে আসবে। এটা জটিল একটা পরিসংখ্যান কাজ। এ কাজ করেই বাঘের সংখ্যা বের করা হবে।