শুক্রবার এলেই দাম বাড়ছে সব কিছুই
- আপডেট সময় : ০৩:৩৯:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২
- / ৪৫৩ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার এলেই মানুষের ধুম পড়ে মাছ-মাংস আর শাকসবজি কেনার। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও এখন একদিনেই সপ্তাহের বাজার করে কিছুটা নিশ্চিন্তে থাকতে চান। তবে, শুক্রবারকেন্দ্রীক মানুষের এই চাহিদাকে ঘিরে ব্যবসায়ীরাও নিয়ে থাকে নানা কৌশল। প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই দাম বেড়ে যায় কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।
শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। বিক্রেতারাও অকপটে স্বীকার করছে সপ্তাহ ব্যবধানে এমন দামের বিষয়ে।
মাংসের বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, আজকের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। গরুর কলিজাও বিক্রি হচ্ছে একই দামে। তবে, খাসি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে, কলিজাও বিক্রি হচ্ছে খাসির মাংসের দামে।
এদিকে, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৬০-১৭০ টাকা, তবে অন্যান্য দিনে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা করে বিক্রি হয়। এছাড়াও লাল কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকা কেজি দরে। আর পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-২৯০ টাকা কেজি, যা অন্যান্য দিনে বিক্রি হয় ২৭০ টাকা কেজি দরে।
মুরগির বিক্রেতা মো. রুবেল বলেন, সরবরাহ ভালো থাকায় কম দামে মুরগি বিক্রি করছি। আগের দামে বিক্রি হচ্ছে লেয়ার মুরগি। শীতকালে মুরগির উৎপাদন কম হলে দাম বাড়ে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি মাছের বাজারেও কিছুটা উত্তাপ দেখা গেছে। বড় চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৫০ টাকা, বোয়াল ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ টাকা, রুই মাছ ২৮০ টাকা, কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি।
শুক্রবারকেন্দ্রীক সবজি বাজারেও কিছুটা দাম বেড়েছে। আকারভেদে বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। লম্বা বেগুনের কেজি ৬০-৭০ টাকা, গোল বেগুন ৮০-৯০ টাকা ও টমেটো ১০০-১২০ টাকা। শিমের কেজি ৪০-৬০ টাকা, করলা ৬০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতিটি ৫০-৬০ টাকা, লাউ প্রতিটি আকারভেদে ৫০-৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৫০-৫৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০, পটল ৬০, ঢেঁড়স ৬০, কচুর লতি ৭০-৮০, পেঁপে ৩০-৪০, বরবটি ৬০-৮০ ও ধুন্দুল ৬০-৭০ টাকা কেজি।
এদিকে বাজারদর নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে নানা অভিযোগ আর ক্ষোভ দেখা গেছে। তারা বলছেন, শীতের সিজনেও সবজির বাজারে সবকিছুর দাম বেশি, অথচ এই সময়ে অনেক কম থাকার কথা। তাদের অভিযোগ, বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, যেকারণে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।
আর একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে, সেটা আর কমতে চায় না। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে কিনে আনায় কম দামে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।
মাহমুদ হাসান নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, বাজারে সবকিছুরই দাম বেশি। মুরগির দামটা একটু কমেছিল, কিন্তু আজকে দেখলাম আবারও বেড়ে গেছে। এখন সবজির মৌসুম তারপরও সবজির দাম সেভাবে কমছে না।
কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা, লেবুর হালি ১৫-২০ টাকা।
বাজারে কমেছে আলুর দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ২৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হতো। পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। সাত দিন আগেও কেজি ছিল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা। রসুনের কেজি ১২০-১৩০ টাকা। আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
১১ নম্বর বাজারের আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. কবির বলেন, আলুর উৎপাদন ভালো হওয়ায় দাম কমেছে। সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
গরুর মাংস বিক্রেতা সজিব হোসেন বলেন, মানুষের হাতে এখন টাকা পয়সা কম, যেকারণে আমাদের বেচাকেনাও কম। অথচ শুক্রবার এলেই আগে বিক্রি করে শেষ করতে পারতাম না, মানুষ এসে দাঁড়িয়ে থাকতো।
দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরুর মাংসের দাম আমরা সব সময় যে দামে বিক্রি করি, শুক্রবারেও সেই দামে বিক্রি করি। তবে অনেকেই আছে শুক্রবারে সমান ৭০০ টাকা বিক্রি করে। খাসির মাংসের দাম গত একমাসে কমেওনি, বাড়েওনি।
বাজারে খোলা চিনি প্রতি কেজি পাওয়া যাচ্ছে ১২০ টাকায়। প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল চিনির কেজি ১৪০ টাকা।
বাজারে খোলা আটার কেজি ৬৫ টাকা। কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা।প্যাকেটজাত আটা কেজিপ্রতি ৭২-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। দেশি মসুরের ডালের কেজি ১৩০-১৪০ টাকা। ইন্ডিয়ান মসুরের ডালের কেজি ১২০-১২৫ টাকা।
সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। পাঁচ লিটারের বোতল ৯২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে লবণের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়।
আগের দামে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগির ডিম। ফার্মের লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ১৮০-১৯০ টাকা।