শাহজাদপুরে উৎপন্ন দুধ দেশের দুধের চাহিদা মেটাচ্ছে
- আপডেট সময় : ০৩:২৬:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৬১২ বার পড়া হয়েছে
তেপান্তরের মাঠজুড়ে তাজা সবুজ ঘাস। আর তাতে মুখ ডুবিয়ে আছে হাজার হাজার গাভী। প্রতিটি গাভীর আবার আলাদা আলাদা নাম-শাবানা, কবরী, মৌসুমি, শাবনুর, আরও কত কি! হৃষ্টপুষ্ট গাভীর নাম আবার ময়ুরী। নাম ধরে ডাক দিলেই হাম্বাহাম্বা রবে চলে আসে এক ময়না। তাকে দেখে তিড়িং বিড়িং করে ছুটে চলে আসে তারই বাছুর মুনিয়া। এমনটি শুনতে মনে হবে অবিশ্বাস্য ! তবে বাস্তবতা কখনো কখনো কল্পনাকেও হার মানায় । শাহজাদপুরের বাথান (গো-খামার) না ঘুরলে এমন বাস্তবতা রুপকথার গল্পের মতই মনে হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার ইটাখোলা, ভুরভুরা , রাউতবাড়ী, কাওয়াক, হার্নি, বিশাখালী ও বহলবাড়ী এলাকার সরকারী খাস জমিতে গড়ে উঠেছে বিস্তৃর্ণ এক গোচারণভূমি। এই বিস্তৃর্ণ গোচারণ ভূমিতে চরে বেড়ায় প্রায় এক লাখেরও বেশী গরু-বাছুর। জনশ্রুতি রয়েছে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শাহজাদপুরে এই গোচারণভূমি গড়ে ওঠায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছিলেন। গোচারণভূমিতে আছে শতশত বাথান। বাথানের উন্নতজাতের গাভীর ওপর নীর্ভর করে শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী এলাকায় গড়ে উঠেছে মিল্কভিটার বিশাল কারখানা।
বাথানের ইতিহাস: শাহজাদপুরের বাথানে গাভী পালনের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। এই এলাকার আদি বাসিন্দারা বংশ পরষ্পরায় বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে জেনে এসেছেন এই ইতিহাস। জনশ্রুতি রয়েছে, প্রথমে এক ইংরেজী শাষক ও পরবর্তী সময়ে কবিগুরু রবীন্দ্রথান ঠাকুর শাহজাদপুরবাসীকে গাভী পালনে উদ্বুদ্ধ করেন। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ইংরেজ শাষক লর্ড লিন লিথদো শাহজাদপুরের বাথান এলাকায় গবাদীপশু পালনের সম্ভাবনা আঁচ করেন । তিনিই সর্বপ্রথম উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উন্নতজাতের বেশকিছু গরু এখানে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারী তদারকি করতে শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ীতে আসেন। শাহজাদপুর অঞ্চলে কবিগুরু পশুপালনের সম্ভাবনা দেখে উপমহাদেশের হরিয়ানা ও মুলতান থেকে বেশকিছু উন্নতজাতের ষাঁড় ও গাভী শাহজাদপুরে নিয়ে আসেন। মূলত: সেই সময় থেকেই শাহজাদপুরের বাথানে দেশী উন্নতজাতের গরুর মধ্যে সংকরায়ন শুরু হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ অঞ্চলের গো -সম্পদের ওপর ভিত্তি করে বাঘাবাড়ীতে গড়ে ওঠে মিল্কভিটার বিশাল কারখানা। বর্তমানে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বেও বিভিন্ন দেশের ষাঁড়ের সঙ্গে স্থানীয় জাতের গাভীর প্রজননের মাধ্যমে উন্নতজাতের সংকরজাতের গাভীর জন্ম দেওয়া হয়। শাহজাদপুরে বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়ান, শাহীওয়াল , জার্সি, ফ্রিজিয়ান, এফ এস ও সিন্ধিসহ বিভিন্নজাতের সংকর গাভী রয়েছে।
বাঘাবাড়ী মিল্কশেড এরিয়ায় প্রতিদিন ৩ লক্ষাধিক লিটার দুধ উৎপাদিত হয় । উৎপাদিত দুধের সিংহভাগ বাঘাবাড়ীস্থ মিল্কভিটা কারখানার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। মিল্কভিটার বাইরে প্রান, এমোমিল্ক, আফতাবসহ বিভিন্ন বেসরকারি ডেইরি প্রজেক্টের কুলিং সেন্টার শাহজাদপুর থেকে দুধ সংগ্রহ করে শীতলীকরন করে সারাদেশে সরবরাহ করছে।
খামারীরা খামারে প্রাথমিকভাবে দুধ সংগ্রহ করে। এরপর সেই দুধ তারা দুধ সমিতিতে সরবরাহ করেন । প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি তাদের সমিতির সদস্যদের দুধ একত্রিত করে। এরপর ওই দুধ মিল্কভিটাসহ নানা ডেইরি প্রজেক্টের কুলিং সেন্টারে পৌছে দেয়। মিল্কভিটা প্রথমে দুধের গুনাগুন যাচাই বাছাই করে । তারপরে ওই দুধ কারখানায় অভ্যান্তরের পাইপলাইনে ঢুকিয়ে দেয়। মিল্কভিটার মতো অন্যান্য কারখানায়ও একইভাবে দুধ প্রক্রিয়াকরনের মাধ্যমে তরলদুধ, গুঁড়োদুধ, ঘি, মাখন, কনডেন্সড্ মিল্ক ও আইসক্রিম তৈরি করে পরিবেশকের মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌছে দেওয়া হয় । ওইসব খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে দেশের সর্বসাধারনের হাতে গিয়ে পৌছে শাহজাপুরের খাঁটি দুধের তৈরি বিভিন্ন দুগ্ধজাত সামগী যা দেশের দুধের চাহিদা পূরণ করছে।