ঢাকা ০২:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

খুলে গেছে সম্ভাবনার নবদিগন্ত

শাহজাদপুরের তাঁতবস্ত্র রফতানি হচ্ছে ভারতসহ নানা দেশে

মোঃ শামছুর রহমান শিশির ও জাহিদ হাসান
  • আপডেট সময় : ০৫:৪১:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪
  • / ৭৭৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রোজার ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বাংলাদেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র দ্বারিয়াপুর বাজারে অবস্থিত উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাট থেকে কোটি কোটি টাকার তাঁতবস্ত্র রফতানি হচ্ছে ভারত, জার্মানী, ইটালী, ইংল্যান্ডসহ বহিঃর্বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে। ফলে দেশি তাঁতে তৈরি শাড়ির জন্য বহিঃর্বিশ্বে খুলে গেছে সম্ভাবনার নবদিগন্তের দ্বার।

বর্তমানে দেশে উৎপাদিত তাঁতের শাড়ির শতকরা ৪০ ভাগ রফতানি হচ্ছে ভারতে। নানা রং-বেরংয়ের বাহারী ডিজাইনের দেশি তাঁতের শাড়ির গুণগত মান ও বাজার দর ভারতীয় বস্ত্র বাজারের অনুকূলে থাকায় শাহজাদপুরসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ এলাকায় উৎপাদিত তাঁতের শাড়ির কদর ও চাহিদা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ক্রমশই বাড়ছে। ভারতে ব্যাপকভিত্তিতে দেশি তাঁতের শাড়ি রফতানি করতে পারায় তাঁতীরা সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

রমজানের ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের তাঁত পল্লীগুলো কর্মমূখর হয়ে উঠেছে। তাঁত মালিক ও শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের উন্নত আধুনিক রুচিশীল শাড়ী ও লুঙ্গী। শাড়ীর উপরে বর্ণিল সুতা, ব্লক ও চুমকির কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া, কাপড়ের উপর রঙ তুলির আঁচড়ে হাতে করা হচ্ছে নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর নানা নকশা। আর এই নান্দনিক মনোমুগ্ধকর নানা নকশার তৈরি টেকসই কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে।

ঐহিত্যবাহী শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের লালমিয়া সুপার মার্কেটের আকন্দ টেক্সটাইল পরিদর্শনকালে তাঁতবস্ত্র রফতানিকারক লুৎফর রহমান লিটন আকন্দ জানান, ‘ঐহিত্যবাহী শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে সিজনের প্রতি হাটে শতাধিক ভারতীয় ক্রেতা শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে শাড়ি কাপড় ক্রয়ে আসছেন। তারা একেকজন কমপক্ষে ২ হাজার জোড়া তাঁতের শাড়ি থেকে শুরু করে ১৫ হাজার জোড়া তাঁতের শাড়ি ক্রয় করছেন। তার দোকানে সাড়ে ৭’শ টাকা জোড়া থেকে শুরু করে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষনীয় ডিজাইনের সাড়ে ৩৫’শ টাকা জোড়া আধুনিক ও উন্নতমানের তাঁতের শাড়ি রয়েছে। যার সিংহভাগ কাপড়ই ভারতীয় পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’

শাহজাদপুর হাটে আগত ভারতীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ভারতের পশ্চিমবাংলার উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিন ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর, হুগলী, বর্ধমান, নদীয়, মূর্শীদাবাদ, মালদহ, জলপাইগুড়ি, পশ্চিমদিনাজপুর, উত্তরদিনাজপুর, দক্ষিণদিনাজপুর, কুচবিহার, হওড়া ও হুগলীসহ বিভিন্ন জেলার ছোট-বড় নামিদামী শপিংমল ও বিপণী বিতানগুলোতে বাংলাদেশে তৈরি বিভিন্ন ব্রান্ডের শাড়ি বিক্রি হয়। রমজানের ঈদ ও বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সেখানে বাংলাদেশি শাড়ির বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাংগাইল, ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ জেলার তাঁত কারখানাগুলোতে তৈরি সিল্ক জামদানী, সুতি জামদানী, কাতান, সুতি কাতান, রাজশাহী সিল্ক, বেনারশী, চোষা, শেড, স্বর্ণলতা, কটন শাড়ী ভারতে রফতানি হচ্ছে। আর এই নান্দনিক মনোমুগ্ধকর নানা নকশার তৈরি উন্নতমান, টেকসই, রুচিশীল শাড়ীর দাম কম হওযায় পশ্চিমবাংলার মহিলাদের বেশি পছন্দ বাংলাদেশি শাড়ী।

পশ্চিমবাংলার শিলিগুড়ির আমদানিকারক সেলিম খাঁন জানান, রমজানের ঈদ ও পহেলা বৈশাখের বাজার ধরা জন্য পশ্চিমবাংলার আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা আতাইকুলা, শাহজাদপুরহাট, এনায়েতপুরহাট, করোটিয়াহাট, বাবুরহাট ও ডেমরাহাট থেকে শাড়ী কিনছেন। এছাড়া রাজশাহীর সিল্ক, গরদ, পাবনার ঈশ্বরদীর বেনারশি কাতান, সিরাজগঞ্জের স্বর্ণলতা, চোষা ও শেড শাড়ী, টাংগাইলের সুতি জামদানি, সিল্ক জামদানি ঢাকার মিরপুরের বেনারশি, কাতান ও নারায়নগঞ্জের ডেমরার জামদানি তাঁত কারখানাগুলোতে গিয়ে পছন্দমতো শাড়ী কিনে পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জেলার শপিংমল, বিপণীবিতানগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সরেজমিন শাহজাদপুর কাপড়ের হাট পরিদর্শন করে ও অসংখ্য তাঁতিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ, নরসিংন্দী, ঢাকার মিরপুরের বেনারসী, সোঁনারগাঁ’র জামদানী, যশোরের মোমিননগর নওদ গ্রামে তৈরি হস্তচালিত ও বৈদ্যুতিক পাওয়ারলুলে উৎপাদিত তাঁতের শাড়িসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ প্রায় সকল এলাকা থেকে শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে তাঁতের শাড়ি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য শতশত ব্যবসায়ী সপ্তাহের দুটি হাটে শাহজাদপুরে আসছেন।আবার অনেকে শো-রূম নিয়ে স্থায়ীভাবে শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে তাঁতের শাড়ি কাপড়ের ব্যবসা করে আসছেন। দেশের তাঁতসমৃদ্ধ জনপদের প্রায় সব জায়গারই তাঁতের শাড়ি বিক্রির শো-রুম রয়েছে শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে।

শাহজাদপুর একটি উপজেলা শহর হলেও উত্তরাঞ্চলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যবসায় সফল এলাকা হওয়ায় এখানে সরকারি ব্যাংকগুলোর শাখা’র পাশাপাশি বেসরকারি ডাচবাংলা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাক, আল আরাফা ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংকসহ বিভিন্ন তফশীলি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। ফলে সব ধরনের ব্যাংকিং লেদনের সুযোগ থাকায় ব্যাপারী পাইকারদের শাড়ির ব্যাবসা করতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না।

উত্তর জনপদের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে সপ্তাহে দুইদিন ভারত, জার্মানী, ইটালী, ইংল্যান্ডসহ দেশ বিদেশের অসংখ্য ব্যাপারী পাইকার রোজার ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে হাজার হাজার জোড়া তাঁতের শাড়ি, থ্রিপিছ, লুঙ্গি ও গামছা কিনছেন। সুবিধাজনক আধুনিক সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা গ্রহনের সুযোগ থাকার ফলে শাহজাদপুর কাপড়ের হাট থেকে সপ্তাহের দ্ইু দিনের প্রতি হাটে কোটি কোটি টাকার দেশীয় তাঁতে উৎপাদিত তাঁতবস্ত্র বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ভারতের সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে ওই বিপুল পরিমান দেশীয় তাঁতের শাড়ি ভারতে রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট রফতানিকারক তাঁতীদের অভিমত। এজন্য দেশের সর্ববৃহৎ কুটিরশিল্পখ্যাত তাঁত শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লক্ষ লক্ষ তাঁতী ভারতে প্রতি সপ্তাহের দুইদিন রোববার ও বুধবারে শাহজাদপুর কাপড়ের হাট থেকে কোটি কোটি টাকার দেশীয় তাঁতের শাড়ি রপ্তানি করতে পারায় সরকারের যুগোপুযোগী কার্যকর পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

বাংলাদেশ স্পেশালাইজ্ড হ্যান্ডলুম এন্ড পাওয়ারলুম ওনার্স এসোসিয়েশনের পরিচালক  বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হায়দার আলী জানান, ‘ রোজার ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে শাহজাদপুরে উৎপাদিত ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ি, থ্রিপিছ, লুঙ্গি ও গামছা উৎপাদনের মোট অংশের শতকরা ৪০ ভাগ ভারতে রফতানি হচ্ছে। এছাড়া জার্মানী, ইটালী, ইংল্যান্ডসহ বহিঃর্বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ব্যক্তি উদ্যোগে দেশীয় তাঁতবস্ত্র রফতানি হচ্ছে।’

দেশের হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুমে উৎপাদিত বিশ্বমানের তাঁতবস্ত্র বিশ্বের প্রতিটি দেশের রফতানির জন্য যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জোড়ালো দাবির পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে বিশ্বমানের তাঁতের শাড়ি তৈরিতে তাঁতীদের ব্যাপকভিত্তিতে প্রশিক্ষণ প্রদান কর্মসূচী অবিলম্বে প্রচলনেরও দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় তাঁতীরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

খুলে গেছে সম্ভাবনার নবদিগন্ত

শাহজাদপুরের তাঁতবস্ত্র রফতানি হচ্ছে ভারতসহ নানা দেশে

আপডেট সময় : ০৫:৪১:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

রোজার ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বাংলাদেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র দ্বারিয়াপুর বাজারে অবস্থিত উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাট থেকে কোটি কোটি টাকার তাঁতবস্ত্র রফতানি হচ্ছে ভারত, জার্মানী, ইটালী, ইংল্যান্ডসহ বহিঃর্বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে। ফলে দেশি তাঁতে তৈরি শাড়ির জন্য বহিঃর্বিশ্বে খুলে গেছে সম্ভাবনার নবদিগন্তের দ্বার।

বর্তমানে দেশে উৎপাদিত তাঁতের শাড়ির শতকরা ৪০ ভাগ রফতানি হচ্ছে ভারতে। নানা রং-বেরংয়ের বাহারী ডিজাইনের দেশি তাঁতের শাড়ির গুণগত মান ও বাজার দর ভারতীয় বস্ত্র বাজারের অনুকূলে থাকায় শাহজাদপুরসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ এলাকায় উৎপাদিত তাঁতের শাড়ির কদর ও চাহিদা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ক্রমশই বাড়ছে। ভারতে ব্যাপকভিত্তিতে দেশি তাঁতের শাড়ি রফতানি করতে পারায় তাঁতীরা সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

রমজানের ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের তাঁত পল্লীগুলো কর্মমূখর হয়ে উঠেছে। তাঁত মালিক ও শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের উন্নত আধুনিক রুচিশীল শাড়ী ও লুঙ্গী। শাড়ীর উপরে বর্ণিল সুতা, ব্লক ও চুমকির কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া, কাপড়ের উপর রঙ তুলির আঁচড়ে হাতে করা হচ্ছে নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর নানা নকশা। আর এই নান্দনিক মনোমুগ্ধকর নানা নকশার তৈরি টেকসই কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে।

ঐহিত্যবাহী শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের লালমিয়া সুপার মার্কেটের আকন্দ টেক্সটাইল পরিদর্শনকালে তাঁতবস্ত্র রফতানিকারক লুৎফর রহমান লিটন আকন্দ জানান, ‘ঐহিত্যবাহী শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে সিজনের প্রতি হাটে শতাধিক ভারতীয় ক্রেতা শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে শাড়ি কাপড় ক্রয়ে আসছেন। তারা একেকজন কমপক্ষে ২ হাজার জোড়া তাঁতের শাড়ি থেকে শুরু করে ১৫ হাজার জোড়া তাঁতের শাড়ি ক্রয় করছেন। তার দোকানে সাড়ে ৭’শ টাকা জোড়া থেকে শুরু করে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষনীয় ডিজাইনের সাড়ে ৩৫’শ টাকা জোড়া আধুনিক ও উন্নতমানের তাঁতের শাড়ি রয়েছে। যার সিংহভাগ কাপড়ই ভারতীয় পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’

শাহজাদপুর হাটে আগত ভারতীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ভারতের পশ্চিমবাংলার উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিন ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর, হুগলী, বর্ধমান, নদীয়, মূর্শীদাবাদ, মালদহ, জলপাইগুড়ি, পশ্চিমদিনাজপুর, উত্তরদিনাজপুর, দক্ষিণদিনাজপুর, কুচবিহার, হওড়া ও হুগলীসহ বিভিন্ন জেলার ছোট-বড় নামিদামী শপিংমল ও বিপণী বিতানগুলোতে বাংলাদেশে তৈরি বিভিন্ন ব্রান্ডের শাড়ি বিক্রি হয়। রমজানের ঈদ ও বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সেখানে বাংলাদেশি শাড়ির বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাংগাইল, ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ জেলার তাঁত কারখানাগুলোতে তৈরি সিল্ক জামদানী, সুতি জামদানী, কাতান, সুতি কাতান, রাজশাহী সিল্ক, বেনারশী, চোষা, শেড, স্বর্ণলতা, কটন শাড়ী ভারতে রফতানি হচ্ছে। আর এই নান্দনিক মনোমুগ্ধকর নানা নকশার তৈরি উন্নতমান, টেকসই, রুচিশীল শাড়ীর দাম কম হওযায় পশ্চিমবাংলার মহিলাদের বেশি পছন্দ বাংলাদেশি শাড়ী।

পশ্চিমবাংলার শিলিগুড়ির আমদানিকারক সেলিম খাঁন জানান, রমজানের ঈদ ও পহেলা বৈশাখের বাজার ধরা জন্য পশ্চিমবাংলার আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা আতাইকুলা, শাহজাদপুরহাট, এনায়েতপুরহাট, করোটিয়াহাট, বাবুরহাট ও ডেমরাহাট থেকে শাড়ী কিনছেন। এছাড়া রাজশাহীর সিল্ক, গরদ, পাবনার ঈশ্বরদীর বেনারশি কাতান, সিরাজগঞ্জের স্বর্ণলতা, চোষা ও শেড শাড়ী, টাংগাইলের সুতি জামদানি, সিল্ক জামদানি ঢাকার মিরপুরের বেনারশি, কাতান ও নারায়নগঞ্জের ডেমরার জামদানি তাঁত কারখানাগুলোতে গিয়ে পছন্দমতো শাড়ী কিনে পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জেলার শপিংমল, বিপণীবিতানগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সরেজমিন শাহজাদপুর কাপড়ের হাট পরিদর্শন করে ও অসংখ্য তাঁতিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুরসহ সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ, নরসিংন্দী, ঢাকার মিরপুরের বেনারসী, সোঁনারগাঁ’র জামদানী, যশোরের মোমিননগর নওদ গ্রামে তৈরি হস্তচালিত ও বৈদ্যুতিক পাওয়ারলুলে উৎপাদিত তাঁতের শাড়িসহ দেশের তাঁতসমৃদ্ধ প্রায় সকল এলাকা থেকে শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে তাঁতের শাড়ি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য শতশত ব্যবসায়ী সপ্তাহের দুটি হাটে শাহজাদপুরে আসছেন।আবার অনেকে শো-রূম নিয়ে স্থায়ীভাবে শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে তাঁতের শাড়ি কাপড়ের ব্যবসা করে আসছেন। দেশের তাঁতসমৃদ্ধ জনপদের প্রায় সব জায়গারই তাঁতের শাড়ি বিক্রির শো-রুম রয়েছে শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে।

শাহজাদপুর একটি উপজেলা শহর হলেও উত্তরাঞ্চলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যবসায় সফল এলাকা হওয়ায় এখানে সরকারি ব্যাংকগুলোর শাখা’র পাশাপাশি বেসরকারি ডাচবাংলা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাক, আল আরাফা ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংকসহ বিভিন্ন তফশীলি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। ফলে সব ধরনের ব্যাংকিং লেদনের সুযোগ থাকায় ব্যাপারী পাইকারদের শাড়ির ব্যাবসা করতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না।

উত্তর জনপদের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে সপ্তাহে দুইদিন ভারত, জার্মানী, ইটালী, ইংল্যান্ডসহ দেশ বিদেশের অসংখ্য ব্যাপারী পাইকার রোজার ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে হাজার হাজার জোড়া তাঁতের শাড়ি, থ্রিপিছ, লুঙ্গি ও গামছা কিনছেন। সুবিধাজনক আধুনিক সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা গ্রহনের সুযোগ থাকার ফলে শাহজাদপুর কাপড়ের হাট থেকে সপ্তাহের দ্ইু দিনের প্রতি হাটে কোটি কোটি টাকার দেশীয় তাঁতে উৎপাদিত তাঁতবস্ত্র বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ভারতের সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে ওই বিপুল পরিমান দেশীয় তাঁতের শাড়ি ভারতে রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট রফতানিকারক তাঁতীদের অভিমত। এজন্য দেশের সর্ববৃহৎ কুটিরশিল্পখ্যাত তাঁত শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লক্ষ লক্ষ তাঁতী ভারতে প্রতি সপ্তাহের দুইদিন রোববার ও বুধবারে শাহজাদপুর কাপড়ের হাট থেকে কোটি কোটি টাকার দেশীয় তাঁতের শাড়ি রপ্তানি করতে পারায় সরকারের যুগোপুযোগী কার্যকর পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

বাংলাদেশ স্পেশালাইজ্ড হ্যান্ডলুম এন্ড পাওয়ারলুম ওনার্স এসোসিয়েশনের পরিচালক  বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হায়দার আলী জানান, ‘ রোজার ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে শাহজাদপুরে উৎপাদিত ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ি, থ্রিপিছ, লুঙ্গি ও গামছা উৎপাদনের মোট অংশের শতকরা ৪০ ভাগ ভারতে রফতানি হচ্ছে। এছাড়া জার্মানী, ইটালী, ইংল্যান্ডসহ বহিঃর্বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ব্যক্তি উদ্যোগে দেশীয় তাঁতবস্ত্র রফতানি হচ্ছে।’

দেশের হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুমে উৎপাদিত বিশ্বমানের তাঁতবস্ত্র বিশ্বের প্রতিটি দেশের রফতানির জন্য যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জোড়ালো দাবির পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে বিশ্বমানের তাঁতের শাড়ি তৈরিতে তাঁতীদের ব্যাপকভিত্তিতে প্রশিক্ষণ প্রদান কর্মসূচী অবিলম্বে প্রচলনেরও দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় তাঁতীরা।