ঢাকা ০৯:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

মামলা তুলে নিতে হুমকি

রামপালে ধর্ষণে অন্তঃসত্বা তরুণীর আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি

বাগেরহাট সংবাদদাতা
  • আপডেট সময় : ০৯:৩১:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৫৮২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাগেরহাটের রামপালে ধর্ষিতা অন্তঃসত্ত্বা তরুণী (১৭) এর পিতা বাগেরহাটের বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করে বিপাকে পড়েছেন। আসামীর প্রভাবশালী পিতামহ তার লোকজন মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অসহায় ভিকটিমের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবী করেছেন।

জানা গেছে, রামপাল উপজেলার বর্ণি ছায়রাবাদ গ্রামের জনৈক ব্যক্তির কলেজ পড়ুয়া মেয়ে (১৭) কে ধর্ষণ করে তারেক হাসান বাপ্পি নামের এক লম্পট। এ ঘটনায় বাদী হয়ে বাগেরহাটের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত -২ এর আদালতে একটি মামলা করেন ভিকটিমের পিতা। আদালতের বিচারক গত  ১২ অক্টোবর শুনানি শেষে রামপাল থানা পুলিশের ওসিকে এজাহার করে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। রামপাল থানার ওসি আদেশের কপি পেয়ে গত ইংরেজি ০১-১১-২০২৪ তারিখ মামলাটি রুজু করে গৌরম্ভা ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. নাসির উদ্দীনকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা রবিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাটের বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (রামপাল) এর আদালতে ভিকটিম অন্তঃসত্ত্বা তরুণীকে হাজির করে ২২ ধারায় তার জবানবন্দি গ্রহণ করিয়েছেন।

বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ইংরেজি ১০-০৪-২০২৩ তারিখ উপজেলার গৌরম্ভা গ্রামের ইকবাল গাজীর ছেলে তারেক হাসান বাপ্পি ভিকটিমের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা ধার নেয়। আসামী বাপ্পী টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে ওইদিন সন্ধ্যা ৭ টায় তাদের বাড়ির পাশে স্থাপিত গ্রামীণ ফোনের টাওয়ারের ফাঁকা পাহারাদারের রুমে নিয়ে যায়। টাকা দিতে একটু দেরি হবে বলে ভিকটিমকে অপেক্ষা করতে বলে। এদিকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যায়। আসামী বাপ্পী ভিকটিমকে জড়িয়ে ধরে বিভিন্ন প্রলোভন দেওয়ার এক পর্যায়ে তাকে ধর্ষণ করে। এতে ভিকটিম কান্না করতে থাকলে তাকে বিবাহ করবে বলে সান্ত্বনা দেয়। এরপরে সে বলে একথা কাউকে বললে তোমার মা বাবার ক্ষতি হবে বলে ভয় দেখায়। আর বেশী বাড়াবাড়ি করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোমার ভিডিও ছেড়ে দিবো। এতে কলেজ পড়ুয়া ওই তরুণী ভীত হয়ে পড়ে। ওইদিন রাত ৯ টায় বাড়িতে গিয়ে ভিকটিম তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। পরে ভিকটিমের পিতাকে ঘটনাটি জানালে সে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। পরে আসামী বাপ্পির পিতার কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন। আত্মসম্মানের চিন্তা করে আসামী বাপ্পী ও তার পিতা ইকবাল গাজীকে বিষয়টি জানিয়ে গোপনে মিমাংসার চেষ্টা করেন। লম্পট আসামীর পিতা তাদের তাড়িয়ে দেন।

গত ইংরেজি ২৮-০৮-২০২৩ তারিখ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভিকটিমকে পরীক্ষা করালে ২১+ সপ্তাহের গর্ভবতী বলে ডাক্তার রিপোর্ট দেন। বর্তমানে ভিকটিম ২৯ সপ্তাহের গর্ভবতী। গরীব ও অসহায় বাদী আসামীর বাড়িতে গিয়ে তার কন্যাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামীর পিতা তাদের তাড়িয়ে দেন।
এরপর সমাজপতিদের দ্বারেদ্বারে ধর্ণা দিয়ে কোন ফয়সালা না পেয়ে অবশেষে বাগেরহাটের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এ মামলা দায়ের করেছেন।

এ বিষয়ে তারেক হাসান বাপ্পীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার পিতা ইকবাল গাজীকে পাওয়া গেলেও তিনি সাংবাদিকদের বসতে বলে গা ঢাকা দেন, যে কারণে তাঁদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

রামপাল থানার ওসি এস, এম আশরাফুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। গত ২৬ অক্টোবর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর পাঠানো কপি হাতে পেয়েই মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ভিকটিম কে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করে ইতিমধ্যে ২২ ধারার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। আসামী আটকের জোর চেষ্টা করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

মামলা তুলে নিতে হুমকি

রামপালে ধর্ষণে অন্তঃসত্বা তরুণীর আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি

আপডেট সময় : ০৯:৩১:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০২৩

বাগেরহাটের রামপালে ধর্ষিতা অন্তঃসত্ত্বা তরুণী (১৭) এর পিতা বাগেরহাটের বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করে বিপাকে পড়েছেন। আসামীর প্রভাবশালী পিতামহ তার লোকজন মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অসহায় ভিকটিমের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবী করেছেন।

জানা গেছে, রামপাল উপজেলার বর্ণি ছায়রাবাদ গ্রামের জনৈক ব্যক্তির কলেজ পড়ুয়া মেয়ে (১৭) কে ধর্ষণ করে তারেক হাসান বাপ্পি নামের এক লম্পট। এ ঘটনায় বাদী হয়ে বাগেরহাটের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত -২ এর আদালতে একটি মামলা করেন ভিকটিমের পিতা। আদালতের বিচারক গত  ১২ অক্টোবর শুনানি শেষে রামপাল থানা পুলিশের ওসিকে এজাহার করে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। রামপাল থানার ওসি আদেশের কপি পেয়ে গত ইংরেজি ০১-১১-২০২৪ তারিখ মামলাটি রুজু করে গৌরম্ভা ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. নাসির উদ্দীনকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা রবিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাটের বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (রামপাল) এর আদালতে ভিকটিম অন্তঃসত্ত্বা তরুণীকে হাজির করে ২২ ধারায় তার জবানবন্দি গ্রহণ করিয়েছেন।

বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ইংরেজি ১০-০৪-২০২৩ তারিখ উপজেলার গৌরম্ভা গ্রামের ইকবাল গাজীর ছেলে তারেক হাসান বাপ্পি ভিকটিমের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা ধার নেয়। আসামী বাপ্পী টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে ওইদিন সন্ধ্যা ৭ টায় তাদের বাড়ির পাশে স্থাপিত গ্রামীণ ফোনের টাওয়ারের ফাঁকা পাহারাদারের রুমে নিয়ে যায়। টাকা দিতে একটু দেরি হবে বলে ভিকটিমকে অপেক্ষা করতে বলে। এদিকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যায়। আসামী বাপ্পী ভিকটিমকে জড়িয়ে ধরে বিভিন্ন প্রলোভন দেওয়ার এক পর্যায়ে তাকে ধর্ষণ করে। এতে ভিকটিম কান্না করতে থাকলে তাকে বিবাহ করবে বলে সান্ত্বনা দেয়। এরপরে সে বলে একথা কাউকে বললে তোমার মা বাবার ক্ষতি হবে বলে ভয় দেখায়। আর বেশী বাড়াবাড়ি করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোমার ভিডিও ছেড়ে দিবো। এতে কলেজ পড়ুয়া ওই তরুণী ভীত হয়ে পড়ে। ওইদিন রাত ৯ টায় বাড়িতে গিয়ে ভিকটিম তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। পরে ভিকটিমের পিতাকে ঘটনাটি জানালে সে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। পরে আসামী বাপ্পির পিতার কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন। আত্মসম্মানের চিন্তা করে আসামী বাপ্পী ও তার পিতা ইকবাল গাজীকে বিষয়টি জানিয়ে গোপনে মিমাংসার চেষ্টা করেন। লম্পট আসামীর পিতা তাদের তাড়িয়ে দেন।

গত ইংরেজি ২৮-০৮-২০২৩ তারিখ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভিকটিমকে পরীক্ষা করালে ২১+ সপ্তাহের গর্ভবতী বলে ডাক্তার রিপোর্ট দেন। বর্তমানে ভিকটিম ২৯ সপ্তাহের গর্ভবতী। গরীব ও অসহায় বাদী আসামীর বাড়িতে গিয়ে তার কন্যাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামীর পিতা তাদের তাড়িয়ে দেন।
এরপর সমাজপতিদের দ্বারেদ্বারে ধর্ণা দিয়ে কোন ফয়সালা না পেয়ে অবশেষে বাগেরহাটের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এ মামলা দায়ের করেছেন।

এ বিষয়ে তারেক হাসান বাপ্পীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার পিতা ইকবাল গাজীকে পাওয়া গেলেও তিনি সাংবাদিকদের বসতে বলে গা ঢাকা দেন, যে কারণে তাঁদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

রামপাল থানার ওসি এস, এম আশরাফুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। গত ২৬ অক্টোবর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর পাঠানো কপি হাতে পেয়েই মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ভিকটিম কে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করে ইতিমধ্যে ২২ ধারার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। আসামী আটকের জোর চেষ্টা করছি।