ঢাকা ১০:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ব্লাক গোল্ড খ্যাত পেঁয়াজবীজ চাষে ভাগ্য বদল

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:১২:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৪৬৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি //

ফসলের মাঠে গেলে আপনার চোখ আটকে যাবে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের দিকে। সবুজ লম্বা ডগার আগায় থোকা থোকা সাদা ফুলের বৃত্তাকার মঞ্জুরি। অসংখ্য মৌমাছির গুঞ্জরণের মিছিল। এমন দৃশ্য নজর কাড়ে সবার। পাবনার মাঠে মাঠে এখন পেঁয়াজবীজ গাছের ফুলের এমন দৃশ্য সবার অতি পরিচিত। পেঁয়াজবীজ আবাদ করে এ অঞ্চলের প্রায় আড়াই হাজার কৃষক পরিবার অভাব জয় করেছেন। ভারতীয় বীজের ওপর নির্ভরতা কমাতে অসামান্য অবদান রাখছেন তারা। পেঁয়াজ রোপণ মওসুমে প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। “ব্লাক গোল্ড” খ্যাত পেয়াজবীজ চাষ লাভজনক হওয়ায় দিনদিন এ বীজ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা।
জানা গেছে, পাবনা সদর, বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধির সাথে সাথে পেঁয়াজবীজ আবাদের পরিমান দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় ও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষক বীজ উৎপাদনের দিকে নজর দেন। পেঁয়াজের দাম কম হলেও বীজের বাজার সব সময় চড়া থাকে। পাঁচ-সাত বছর আগেও এ অঞ্চলে হাতে গোনা কয়েকজন কৃষক পরীক্ষামূলক ভাবে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেন। এখন অবস্থা ভিন্ন। বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় পেঁয়াজ বীজ চাষ বাড়ছে। এ অঞ্চলের প্রায় আড়াই হাজার কৃষক পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন।
চাটমোহরের চাষি হায়দার আলী বলেন, বীজ উৎপাদন জমি চাষ, সার, বালাই নাশক, সেচ, শ্রমিক খরচ সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না ঘটলে বিঘা প্রতি প্রায় ১০০ কেজি পেঁয়াজ বীজ পাবেন। বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজের দাম দুই হাজার টাকা। সে দেড় বিঘা জমির পেঁয়াজ বীজ থেকে খরচ বাদে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, কোন কোন বছর প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজের দাম পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। তখন বেশি লাভ হয়।
জানা যায়, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ১৯ লাখ টন। সেখানে উৎপাদন হয় মাত্র ১২ লাখ টন। ঘাটতি থাকে সাত লাখ টন। এই পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। পেঁয়াজ আবাদের মাত্র ৩০ শতাংশ বীজ দেশে উৎপন্ন হয়। বীজের অভাব ও চড়া মূল্যের কারণে প্রতি বছর অনেক কৃষক ইচ্ছা থাকা সত্বেও পেঁয়াজ আবাদ করতে পারেন না। পাবনা জেলার মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজবীজ উৎপাদনের উপযোগী। ফলে দেশের মধ্যে পাবনার বীজ উৎকৃষ্টমানের। পাবনার চাষিদের উৎপাদিত পেঁয়াজবীজ দেশের চাহিদা পুরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (খামার বাড়ী) সূত্রে জানা যায়, পাবনার সুজানগর উপজেলায় ১২ হাজার ৮০০ হেক্টরে এক লাখ ৯৫ হাজার টন, সাঁথিয়ায় ১১ হাজার ৫০০ হেক্টরে এক লাখ ৭৫ হাজার টন, পাবনা সদরে পাঁচ হাজার হেক্টরে ৭৫ হাজার টন, ঈশ্বরদীতে দুই হাজার ২১০ হেক্টরে ৩৩ হাজার ১৫০ টন, বেড়ায় দুই হাজার ২০০ হেক্টরে ৩৩ হাজার টন, ফরিদপুরে এক হাজার ১০০ হেক্টরে সাড়ে ১৬ হাজার টন, চাটমোহরে এক হাজার ১০০ হেক্টরে সাড়ে ১৬ হাজার টন, ভাঙ্গুড়ায় এক হাজার হেক্টরে ১৫ হাজার টন ও আটঘড়িয়ায় এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সাড়ে ২২ হাজার টন হিসেবে জেলায় মোট সাত লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। টানা খরায় পেঁয়াজের চারা ব্যাপক ক্ষতি হওযায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই লাখ ১০ হাজার টন কম হবে বলে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মী ও চাষিরা জানিয়েছেন
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, অন্যান্য বছরের চেয়ে জেলায় এবছর বেশি জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ হয়েছে। সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজ ও বীজের আবাদ হয়ে থাকে। পাবনা সদর, বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ১২ হাজার কৃষক পেঁয়াজবীজ চাষ করছেন। এখানে তিন জাতের বীজ চাষ হয়। তাহেরপুরী, ফরিদপুরি ও মিটকা। তবে তাহেরপুরী জাতের চাষ বেশি হয়।
এখন পর্যন্ত বিরুপ আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হওয়ায় মাঠে মাঠে পেঁয়াজ গাছে ফুলের অবস্থা খুবই ভাল। কৃষকেরা মাঠ থেকে পুরোপুরি পেঁয়াজবীজ সংগ্রহ শুরু করেছেন। প্রতি একরে গড় ফলন হবে ৮ থেকে ৯ মণ বীজ বলে আশা করছেন কৃষকেরা। বাজার দর স্বাভাবিক থাকলে প্রতি মণ বীজ বিক্রি হবে ৮০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রতি একরে আট মণ বীজের মূল্য প্রায় ছয় লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এসব পেঁয়াজবীজ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাজন ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে কেজি দরে কিনে নিয়ে যান। এসব বীজ উচ্চমূল্যে ভারতে পাচার হয়। গত বছর বীজের কেজি ছিল তিন-চার হাজার টাকা। বর্তমানে বাজার দর দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এলাকাভিত্তিক এ দাম আরো বেড়ে যায়। এ এলাকার উৎপাদিত বীজের চাহিদা দেশের সর্বত্র।
সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামের পেঁয়াজবীজ চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, গত বছর ৬০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ করে পাঁচ মণ বীজ পেয়েছিলেন। প্রতি কেজি বীজ আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন। এ বছর তিনি এক একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ করেছেন।
সুজানগর উপজেলার বিলগাজনা গ্রামের পেঁয়াজবীজ চাষি সন্তোষ মন্ডল ও রফিক মোল্লা জানান, পেঁয়াজের দানা উৎপাদন অতি লাভজনক হলেও ঝুঁকিও রয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে একজন কৃষক এক মওসুমেই ধনী হতে পারেন। প্রতি একর জমিতে বীজ উৎপাদন করতে ৭৫ হাজার টাকার বেশি খরচ পড়ে। পেঁয়াজ দানা উৎপাদন করতে অর্থের প্রয়োজন হয়, যা প্রান্তিক বা গরিব চাষিদের পক্ষে যোগান দেয়া সম্ভব নয়।
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নূরে আলম বলেন, পেঁয়াজের দানা বীজ উৎপাদনে কৃষকদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। লাভজনক হওয়ায় দিনদিন এ চাষ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ (খামারবাড়ী) অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপরিচালক মোঃ লোকমান হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, চলতি বছর এ অঞ্চলের ২৫ হাজার কৃষক ফরিদপুরি, তাহেরপুরী ও মিটকা জাতের পেঁয়াজ আবাদ করেন। তবে তাহেরপুরী জাতের আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। প্রায় ৩৯ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রতি হেক্টরে সাড়ে ১৩ টন হিসেবে প্রায় ৭ লাখ টন। এবছর পেঁয়াজ রোপণ সময় থেকে টানা খরায় উৎপাদন দুই লাখ ১০ টন কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৯০ হাজার টন। এ ছাড়া ১৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১২০ টন পেঁয়াজবীজ উৎপাদন হবে। যার বর্তমান বাজার দর প্রায় ৪০ কোটি টাকার বেশি।

বা/খ: এসআর।

নিউজটি শেয়ার করুন

ব্লাক গোল্ড খ্যাত পেঁয়াজবীজ চাষে ভাগ্য বদল

আপডেট সময় : ০৪:১২:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

// শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিনিধি //

ফসলের মাঠে গেলে আপনার চোখ আটকে যাবে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের দিকে। সবুজ লম্বা ডগার আগায় থোকা থোকা সাদা ফুলের বৃত্তাকার মঞ্জুরি। অসংখ্য মৌমাছির গুঞ্জরণের মিছিল। এমন দৃশ্য নজর কাড়ে সবার। পাবনার মাঠে মাঠে এখন পেঁয়াজবীজ গাছের ফুলের এমন দৃশ্য সবার অতি পরিচিত। পেঁয়াজবীজ আবাদ করে এ অঞ্চলের প্রায় আড়াই হাজার কৃষক পরিবার অভাব জয় করেছেন। ভারতীয় বীজের ওপর নির্ভরতা কমাতে অসামান্য অবদান রাখছেন তারা। পেঁয়াজ রোপণ মওসুমে প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। “ব্লাক গোল্ড” খ্যাত পেয়াজবীজ চাষ লাভজনক হওয়ায় দিনদিন এ বীজ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা।
জানা গেছে, পাবনা সদর, বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধির সাথে সাথে পেঁয়াজবীজ আবাদের পরিমান দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় ও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষক বীজ উৎপাদনের দিকে নজর দেন। পেঁয়াজের দাম কম হলেও বীজের বাজার সব সময় চড়া থাকে। পাঁচ-সাত বছর আগেও এ অঞ্চলে হাতে গোনা কয়েকজন কৃষক পরীক্ষামূলক ভাবে পেঁয়াজ বীজের চাষ করেন। এখন অবস্থা ভিন্ন। বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় পেঁয়াজ বীজ চাষ বাড়ছে। এ অঞ্চলের প্রায় আড়াই হাজার কৃষক পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন।
চাটমোহরের চাষি হায়দার আলী বলেন, বীজ উৎপাদন জমি চাষ, সার, বালাই নাশক, সেচ, শ্রমিক খরচ সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না ঘটলে বিঘা প্রতি প্রায় ১০০ কেজি পেঁয়াজ বীজ পাবেন। বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজের দাম দুই হাজার টাকা। সে দেড় বিঘা জমির পেঁয়াজ বীজ থেকে খরচ বাদে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, কোন কোন বছর প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজের দাম পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। তখন বেশি লাভ হয়।
জানা যায়, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ১৯ লাখ টন। সেখানে উৎপাদন হয় মাত্র ১২ লাখ টন। ঘাটতি থাকে সাত লাখ টন। এই পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। পেঁয়াজ আবাদের মাত্র ৩০ শতাংশ বীজ দেশে উৎপন্ন হয়। বীজের অভাব ও চড়া মূল্যের কারণে প্রতি বছর অনেক কৃষক ইচ্ছা থাকা সত্বেও পেঁয়াজ আবাদ করতে পারেন না। পাবনা জেলার মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজবীজ উৎপাদনের উপযোগী। ফলে দেশের মধ্যে পাবনার বীজ উৎকৃষ্টমানের। পাবনার চাষিদের উৎপাদিত পেঁয়াজবীজ দেশের চাহিদা পুরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (খামার বাড়ী) সূত্রে জানা যায়, পাবনার সুজানগর উপজেলায় ১২ হাজার ৮০০ হেক্টরে এক লাখ ৯৫ হাজার টন, সাঁথিয়ায় ১১ হাজার ৫০০ হেক্টরে এক লাখ ৭৫ হাজার টন, পাবনা সদরে পাঁচ হাজার হেক্টরে ৭৫ হাজার টন, ঈশ্বরদীতে দুই হাজার ২১০ হেক্টরে ৩৩ হাজার ১৫০ টন, বেড়ায় দুই হাজার ২০০ হেক্টরে ৩৩ হাজার টন, ফরিদপুরে এক হাজার ১০০ হেক্টরে সাড়ে ১৬ হাজার টন, চাটমোহরে এক হাজার ১০০ হেক্টরে সাড়ে ১৬ হাজার টন, ভাঙ্গুড়ায় এক হাজার হেক্টরে ১৫ হাজার টন ও আটঘড়িয়ায় এক হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সাড়ে ২২ হাজার টন হিসেবে জেলায় মোট সাত লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। টানা খরায় পেঁয়াজের চারা ব্যাপক ক্ষতি হওযায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই লাখ ১০ হাজার টন কম হবে বলে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মী ও চাষিরা জানিয়েছেন
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, অন্যান্য বছরের চেয়ে জেলায় এবছর বেশি জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ হয়েছে। সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজ ও বীজের আবাদ হয়ে থাকে। পাবনা সদর, বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ১২ হাজার কৃষক পেঁয়াজবীজ চাষ করছেন। এখানে তিন জাতের বীজ চাষ হয়। তাহেরপুরী, ফরিদপুরি ও মিটকা। তবে তাহেরপুরী জাতের চাষ বেশি হয়।
এখন পর্যন্ত বিরুপ আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হওয়ায় মাঠে মাঠে পেঁয়াজ গাছে ফুলের অবস্থা খুবই ভাল। কৃষকেরা মাঠ থেকে পুরোপুরি পেঁয়াজবীজ সংগ্রহ শুরু করেছেন। প্রতি একরে গড় ফলন হবে ৮ থেকে ৯ মণ বীজ বলে আশা করছেন কৃষকেরা। বাজার দর স্বাভাবিক থাকলে প্রতি মণ বীজ বিক্রি হবে ৮০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে প্রতি একরে আট মণ বীজের মূল্য প্রায় ছয় লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এসব পেঁয়াজবীজ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাজন ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে কেজি দরে কিনে নিয়ে যান। এসব বীজ উচ্চমূল্যে ভারতে পাচার হয়। গত বছর বীজের কেজি ছিল তিন-চার হাজার টাকা। বর্তমানে বাজার দর দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এলাকাভিত্তিক এ দাম আরো বেড়ে যায়। এ এলাকার উৎপাদিত বীজের চাহিদা দেশের সর্বত্র।
সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামের পেঁয়াজবীজ চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, গত বছর ৬০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ করে পাঁচ মণ বীজ পেয়েছিলেন। প্রতি কেজি বীজ আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন। এ বছর তিনি এক একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ করেছেন।
সুজানগর উপজেলার বিলগাজনা গ্রামের পেঁয়াজবীজ চাষি সন্তোষ মন্ডল ও রফিক মোল্লা জানান, পেঁয়াজের দানা উৎপাদন অতি লাভজনক হলেও ঝুঁকিও রয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে একজন কৃষক এক মওসুমেই ধনী হতে পারেন। প্রতি একর জমিতে বীজ উৎপাদন করতে ৭৫ হাজার টাকার বেশি খরচ পড়ে। পেঁয়াজ দানা উৎপাদন করতে অর্থের প্রয়োজন হয়, যা প্রান্তিক বা গরিব চাষিদের পক্ষে যোগান দেয়া সম্ভব নয়।
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নূরে আলম বলেন, পেঁয়াজের দানা বীজ উৎপাদনে কৃষকদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। লাভজনক হওয়ায় দিনদিন এ চাষ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ (খামারবাড়ী) অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপরিচালক মোঃ লোকমান হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, চলতি বছর এ অঞ্চলের ২৫ হাজার কৃষক ফরিদপুরি, তাহেরপুরী ও মিটকা জাতের পেঁয়াজ আবাদ করেন। তবে তাহেরপুরী জাতের আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। প্রায় ৩৯ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রতি হেক্টরে সাড়ে ১৩ টন হিসেবে প্রায় ৭ লাখ টন। এবছর পেঁয়াজ রোপণ সময় থেকে টানা খরায় উৎপাদন দুই লাখ ১০ টন কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৯০ হাজার টন। এ ছাড়া ১৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১২০ টন পেঁয়াজবীজ উৎপাদন হবে। যার বর্তমান বাজার দর প্রায় ৪০ কোটি টাকার বেশি।

বা/খ: এসআর।