ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুলা
- আপডেট সময় : ১২:৩৩:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জানুয়ারী ২০২৩
- / ৪৪৪ বার পড়া হয়েছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ব্রাজিলে তৃতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হলেন বামপন্থি লুলা দ্য সিলভা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ব্রাজিল ও অ্যামাজনকে বাঁচাবেন। দেশের দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং বর্ণবাদকে সমূলে উৎপাটন করার রাস্তা তৈরি করার।
স্থানীয় সময় রোববার (১ জানুয়ারি) এক জমকালো অনুষ্ঠানে তিনি শপথ নেন।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে লুলা এবং তার স্ত্রী রোজাঞ্জেলা দা সিলভা স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ব্রাসিলিয়ার মেট্রোপলিটন ক্যাথেড্রালে পৌঁছান। পরে সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সেরে তারা চলে যান দেশটির কংগ্রেস ভবনে।
প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার পরই লুলা বলেন, অতি-দক্ষিণপন্থি বলসোনারো ব্রাজিলকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছেন। তার কাজ হবে, ব্রাজিলকে বাঁচানো এবং অবশ্যই অ্যামাজনকে রক্ষা করা। বলসোনারো অ্যামাজনের জঙ্গল যথেচ্ছভাবে কেটে ফেলার পক্ষে ছিলেন। লুলা তার সম্পূর্ণ বিরোধী।
২০০৩ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন লুলা। গত অক্টোবরে বলসোনারোকে হারিয়ে তৃতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হলেন ৭৭ বছর বয়সী এই বামপন্থি নেতা।
প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পর লুলা বলেন, আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমি ব্রাজিলের সংবিধানের প্রতিপালন, সুরক্ষা এবং সেটিতে পূর্ণতা দেয়ার চেষ্টা করব। আইনের শাসন জারি রেখে ব্রাজিলের মানুষের কল্যাণে কাজ করব। ব্রাজিলীয়দের ঐক্য, দেশের অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করব। তিন কোটি ৩০ লাখ মানুষকে ক্ষুধার হাত থেকে বাঁচাবেন। ১০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে তুলবেন। বলসোনারো সরকার ব্রাজিলকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে ব্রাজিলকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে।
লুলার অভিযোগ, একেবারে শেষ দিকে বলসোনারো সরকারি টাকা নয়-ছয় করেছেন। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পুরো অর্থ খরচ করে দিয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা পরিবেশকে পুরোপুরি নষ্ট করার কাজ করেছে। স্কুলে খাবার, ভ্যাকসিন ও মানুষের নিরাপত্তার জন্য কোনো অর্থ রাখেনি।
লুলা বলেন, করোনাকালে ছয় লাখ ৮০ হাজার মানুষ ব্রাজিলে মারা গেছেন। এটা হয়েছে বলসোনারো সরকার ঠিকভাবে ব্যবস্থা না নেওয়ায়। তিনি জানিয়েছেন, কৃষির জন্য অ্যামাজনের জঙ্গল কাটার কোনো দরকার নেই। ব্রাজিলের পরিবেশগত যে শক্তি আছে, তা অন্য কোনো দেশের কাছে নেই।
লুলার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা ছিলেন। কিন্তু ছিলেন না সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। অনুষ্ঠানে ছিলেন স্পেনের রাজা, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, চিলি, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে ও পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু বলসোনারো শুক্রবারই (৩০ ডিসেম্বর) ফ্লোরিডা চলে যান।
শপথের পর লুলা খোলা রোলস রয়েস চেপে প্রাসাদে যান। তাকে অভিনন্দন জানান ৩০ হাজারের মতো মানুষ।
৭৬ বছর বয়সী লুলা এর আগে ২০০২ সালের অক্টোবরে প্রথমবারের মতো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে টানা ৮ বছর দায়িত্ব পালন শেষে ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর দায়িত্ব ত্যাগ করেন তিনি। তারপর দেশটির ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন দিলমা রুসেফ। তবে রুসেফ মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই অভিশংসনের কারণে ক্ষমতা হারান। দিলমা রুসেফের জায়াগায় ব্রাজিলের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হন মিশেল তেমের।
পরে ২০১৮ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করেন জাইর বলসোনারো। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সে বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বলসোনারো লুলার কাছে হেরে যান। সেই জয়ই লুলাকে তৃতীয় মেয়াদে আবারও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন সুযোগ তৈরি করে দেয়। সূত্র : ডয়েচে ভেলে, সিএনএন।