বাজারে কমতে শুরু করেছে শীতের সবজির দাম
- আপডেট সময় : ০২:০৩:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২২
- / ৪৫২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে কমতে শুরু করেছে টমেটো, সিম ও বেগুনসহ শীতকালীন সবজির দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা দাম কমে আসায় একদিকে যেমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে বেচাকেনা বাড়ায় খুশি খুচরা বিক্রেতারাও। বাজারে দাম বেড়েছে আলু ও চালের দাম। এছাড়া বাজারে অপরিবর্তিত আছে অন্য সব পণ্যের দাম।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আকার ভেদে বাধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। লম্বা ও গোল বেগুনের কেজি যথাক্রমে ৬০-৭০ ও ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল টমেটো বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা করে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। শিমের কেজি ৪০-৬০ টাকা। করলা ৬০-৮০, চিচিঙ্গা ৬০, পটল ৬০, ঢেঁড়স ৬০, কচুর লতি ৭০-৮০, পেঁপে ৩০-৪০, বরবটি ৬০-৮০ ও ধুন্দুল ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শালগমের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালকুমড়া প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। আর লাউ প্রতিটি আকারভেদে দাম হাঁকানো হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। মিষ্টি কুমড়া অবশ্য কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, ৫০-৫৫ টাকায়।
এসব বাজারে কাঁচামরিচ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। এছাড়া কাঁচাকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। লেবুর হালি ১৫-২০ টাকা, যা আগের দরই।
সবজি বিক্রেতা নাহিদ বলেন, সাধারণত গরমের সময় যে সবজিগুলো বেশি বিক্রি হয়, সেগুলোর দাম না কমলেও শীতকালীন সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় সবজি ভেদে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। দাম কিছুটা কম হওয়ায় বিক্রিও ভালো হচ্ছে।
বিক্রেতারা দাম কমার কথা বললেও ভোক্তাদের অভিযোগ, শীতকালীন সবজি বাজারে আসলেও অন্যান্য বছরের মতো দাম কমছে না। বরং দাম অনেক বেশি।
বাজার করতে আসা মো. আবু বকর নামক এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, শীতের মৌসুমেও সবজির বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। অথচ এই সময়ে অনেক কম থাকার কথা। বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, যে কারণে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। আর একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে, সেটা আর কমতে চায় না।
সবজির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও দাম বেড়েছে আলুর। কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে আলু আরও ৫ টাকা কমে পাওয়া যেত।
এদিকে পেঁয়াজের বাজার দর কেজি প্রতি ৫০-৫৫ টাকা। নতুন পেঁয়াজের দাম কম, ৩৫ টাকা কেজি। এসব বাজারে রসুনের কেজি আজ ১২০-১৩০ টাকা। আর এক কেজি আদা কিনতে গুনতে হচ্ছে ১২০ টাকা।
বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা। প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১২৫-১৩০ টাকা। লাল চিনির কেজি ১৪০ টাকা।
বাজারে খোলা আটার কেজি ৬০-৬৫ টাকা। প্যাকেট আটার কেজি ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২ কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়।
এসব বাজারে দেশি মসুরের ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। ইন্ডিয়ান মসুরের ডালের কেজি ১২০-১২৫ টাকা।
বাজারে সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতল এ মুহূর্তে পাওয়া যাচ্ছে ৯২৫ টাকায়। এসব বাজারে লবনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা।
এসব বাজারে আগের দামে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগির ডিম। ফার্মের লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ১৮০-১৯০ টাকা।
বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৮০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০-৯০০ টাকায়।
বাজারে কমেছে মাছের দাম। ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে চাষের কই, তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছ। এছাড়া রুই, কাতলা কার্পজাতীয় চাষের মাছ ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। তবে দেশি জাতের মাছের দাম খুব একটা হেরফের হয়নি। এ ছাড়া মাংস ও অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মালিবাগ বাজারের মাছ বিক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, এখন মাছের দাম কম। সব ধরনের চাষের মাছের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
বাজারে সব ধরনের পণ্যের দরদাম বিভিন্ন সময় ওঠা-নামা করলেও কখনই কমতে দেখা যায় না গরুর মাংসের দাম। বিক্রেতারা গরু কেনা থেকে শুরু করে মাংস বিক্রি পর্যন্ত নানা ধাপ পার হয়ে ক্রেতার হাতে গরুর মাংস পৌঁছায়। বিভিন্ন সময় বিক্রেতাদের গরু কেনার দামেরও কম-বেশি হয়, তবুও সেই প্রভাব বাজারে পড়ে না কখনও।
ক্রেতারা বলেন, সব জিনিসেরই তো দাম কম-বেশি হয়। কিন্তু গরু কিংবা খাসির মাংস কখনো নির্ধারিত দামের চেয়ে কমতে দেখা যায় না। কোনো উপলক্ষ আসলেই বরং দাম বেড়ে যায়, তবে কখনও দাম কমে না।
সব ধরনের মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা। কমেছে সোনালি মুরগির দাম। কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৭০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকায়।
বাজারে এ সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে । প্রতি কেজি মোটা চাল গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫২-৬০ টাকায়। পাইজাম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫ টাকায়। বিআর-২৮ চালের প্রতি কেজি ৫৬-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৮ থেকে ৭৮ টাকার মধ্যে।
নাজিরশাইল চাল মানভেদে পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কেজি ৭৪ থেকে ৮৫ টাকায়। বিভিন্ন কোম্পানি প্যাকেটজাত যেসব চাল বিক্রি করে, তা প্রতি কেজি ১০০ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি চালের বাজার রহিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. রহিম বলেন, চালের বাজারে সরবরাহ আছে। কিন্তু বিআর-২৮,মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম কমেনি।
বিশ্ববাজারে মসলার দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দেশের বাজারেও বেড়েছে মসলার দাম। ৫০ টাকা বেড়ে জিরা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। এ ছাড়া, এলাচ দারুচিনি ও লবঙ্গের দাম মান ভেদে বেড়েছে ৫০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।
রামপুরা বাজারের ক্রেতা আলেয়া বেগম বলেন, কোনো পণ্যের দাম বাড়লে সেটা সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায়। কিন্তু কমলে সেটা আর আর কমে না। এগুলো দেখার কেউ নেই। সরকার দেখেও দেখে না। আমরা প্রতারিত হচ্ছি। বাজার এখন একটা মগের মুল্লুক।