ঢাকা ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বঙ্গোপসাগরে বিচ্ছিন্ন চরে রঙ্গিন পাকা ঘরে আলোর ছোয়া

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:২৫:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৫০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মো: জাকির হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি :

দিনের আলো শেষ হবার সাথে সাথে যে চরের মানুষের জীবনে নেমে আসতো অন্ধকারের নিকশ কালো, সুপেয় পানির জন্য মাথায় করে কলস নিয়ে যেতে হতো ১ কিলোমিটার দূরে, একটু ঝড় বৃষ্টি হলেই চরম আতংকে কাটাতে হতো ঝুপড়ি ঘড়ে নির্ঘুম রাত পরিবার পরিজন নিয়ে সেই চরের মানুষ এখন বসবাস করছেন পাকা টিন সেডের বিদ্যুতের আলোর আলোকিত গৃহে,পান করছেন নিজেদের আঙ্গিনায় বসানো ডিপ টিউব ওয়েলের সুপেয় পানি।

বলছিলাম বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁসা রাঙ্গাবালী উপজেলার বিচ্ছন্ন চরকাশেমের অধিবাসীদের কথা। কথা কলছিলেন ৫০ উর্ধ্ব রেজাউল হাওলাদার । তিনি জানান, ৩২ বছর আগে বাবা মারা যাবার পরে অভাবের তাড়নায় রাঙাবালীর কাচিবুনিয়া ইউনিয়নের জুগীড় হাওলা থেকে মা, নাবালক তিন কন্যা সন্তান সহ ৩২ বছরের বিধবা বড় বোনকে নিয়ে জীবন বাঁচাতে জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রায় জনমানবহীন চরকাশেমে চলে আসেন ।
চরকাশেমের তারা যে বর্তমান স্থানটিতে বসবাস করছেন সেখানে মাত্র ৩ টি পরিবার এবং পাশ্ববর্তী ১ কিলোমিটার দূরে চরকাশেমে ঐ এলাকায় মাত্র ১৮ টি ঝুপড়ি ঘড় ছিল। ঝড় বৃষ্টি উপক্ষো করে নদী ও খালে বিধবা মা, বোন নিয়ে তিনজন মিলে মাছ ধরে শুরু করেন জীবন বাচাতে নতুন করে সংগ্রাম। বাধেঁ নতুন করে ঘর-সংসার, সেই ঘরে আজ তিন ছেলে সন্তান, বড় ছেলেটির বয়স ১৭, মেঝটি ৮, পরেরটি ৭। মাঝে বোন কহিনুর বেগম মারা গিয়েছেন, দিয়েছেন তিনটি এতিম ভাগ্নির বিয়ে। ৭০ বছর উর্ধ্ব মা সালেহা বেগম এখনো জীবিত থাকলেও জোটেনি বয়স্ক বা বিধবা ভাতা।

এদিকে বড় ছেলে মিরাজকে শিক্ষিত করতে নৌকায় করে সামুদাবাদ নদী পার হয়ে একঘন্টা সময়ের দূরবর্তী সামুদাবাদ প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করেছিলেন তিনি। কিন্তু স্কুলে ছেলেটি পড়াকালীন সময় বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী সামুদাবাদ নদীতে একটি নৌকা দূর্ঘটনায় ঝড়ের কবলে পরে লোক মারা যাওয়ার পরে ছেলের জীবনের মায়ায় ভয়ে আর স্কুলে পাঠানো হয়নি সন্তানকে। মেঝ ছেলে আল আমিন (৮) ও ছোট ছেলে দ্বীন ইসলাম (৭) সন্তানরা সবাই মাছ ধরার কাজে বাবাকে সহায়তা করছেন এ নিয়েই এগিয়ে চলছে অভাবের সংসার ।

রেজাউল হাওলাদার যখন চরে এসে নতুন করে জীবন বাঁচাতে সংগ্রাম শুরু করেন তখন সবচেয়ে বড় অসুবিধা ছিল সুপেয় পানির অভাব। তখন চরের সকল অধিবাসীকে খাবার পানির জন্য নৌকায় করে নদী পার হয়ে ২ ঘন্টা সময় ব্যায় করে সামুদাবাদ এলাকা থেকে পানি নিয়ে আসতে হতো কষ্ট করে। পরবর্তীতে তাদের এলাকা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে চরেই ২৫ বছর আগে টিউব ওয়েল বসানো হলেও তাদের পানি বহন করে নিয়ে আসার কষ্টটা শেষ হয় ২০২২ সালে বলে জানান রেজাউল হাওলাদার। ৫ শতাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত চর কাসেমের দুটি প্লটে ২২ ও ১২ টি করে মোট ৩৬ টি সরকারী আবাসনের রঙ্গিন টিনের পাকা ঘরে ২৫০ এর উপরে ভোটার রয়েছে । ঐ চরের বাসিন্দাদের মূল কাজ বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী এলাকায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা। মাসের ১৪ দিন জোবা চলাকালীণ সময় তারা মাছ ধরতে পারেন বাকী ১৫-১৬ দিন তাদের অলস সময় কাটে। এ সময় প্রতিদিন ১ থেকে দেড় হাজার টাকার মাছ বিক্রী করতে পারেন। এ ছাড়াও ঐ চরে লোকজন গরু মহিষ পালন ছাড়া অন্য কোন কাজ করতে পারছেন না নিজেদের ব্যক্তিগত জমি না থাকার কারনে। এ ছাড়াও সরকারী ভাবে ঐ জনগোষ্ঠির জন্য বিকল্প কোন আয়ের ব্যবস্থা অদ্যাবধি করা হয়নি। এই এলাকায় নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,পাশ্বর্তী সামুদাবাদ সরকারী প্রাইমারী স্কুলে যেতে নদী পার হয়ে ১ ঘন্টার বেশী সময় লাগে স্কুলে যেতে। ঝুকি নিয়ে বছরের ২-৩ মাস স্কুলে যায় কিছু সংখ্যক কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বর্ষা মৌসুমে বঙোগাপসাগরের নিকটবর্তী সামুদাবাদ নদিটি হয়ে ওঠে প্রমত্তা ঝুকিপূর্ন, যার ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে খুব বেশী উৎসাহী নয়।

রেজাউল হাওলাদার জানান, বঙ্গোপসাগরের একেবারে নিকটবর্তী মূলখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চারদিকে প্রলয়ংকরী কলাগাছিয়া, চরতুফানিয়া, চরকানকুনির চর বেষ্টিত নদীগুলি ঘেরা চর কাসেমের মানুষের জীবন বদলের গল্পটার শুরু করেন ২০২২ সাল পর্যন্ত রাঙ্গাবালীতে কর্মরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান।

বঙ্গোপসাগরের একেবারে নিকটবর্তী ঐ চরের একাধিক বাসিন্দা জানান, তাদের দীর্ঘ্য দিনের দাবী সরকারী আবাসনের ঘর পাওয়ার বিষয়টি সমাধান করার ক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন সম্প্রতি রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে বদলি হয়ে যাওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান। করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে ২০২১ সালে তিনি ত্রানসামগ্রী নিয়ে ট্রলারে করে ঐ দূর্গম চরে যান । সেখানকার মানুষের দূর্বিসহ জীবন যাত্রা দেখে তিনি তাদের জন্য সরকারী আবাসন সুবিধার আওতায় পাকা টিন সেড ঘরের ব্যবস্থা করে দেন ২০২২ সালে। করেন পাশ্ববর্তী ভোলা জেলা থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদুৎ এর সুবিধা, করে দেন একাধিক ডিপ টিউবওয়েল। ঐ চরের বাসিন্দারা কৃতজ্ঞতার সাথে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমানের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বর্তমান সরকারের উন্নয়নের সুবিধার আওতায় প্রত্যন্ত বিচ্ছিন্ন চরে বসে তারা বিদৎু সুবিধার কারনে আধুনিক জীবনযাত্রার সুফল ভোগ করতে পারছেন।

এ বিষয়ে বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চর কাশেমের সাধারন মানুষগুলি বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী বিচ্ছিন্ন চরে চরম ঝুকির মধ্যে দীর্ঘ্য দিন ধরে বসবাস করে আসছেন। দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া শুরু হলে চরম উৎকন্ঠার মধ্যে কাটে লোকজনের দিন, সিগনাল শুরু হলে তাদেরকে নিরাপদে নদী পার করে লোকালয়ে নিয়ে আসতে চরম বিপদের মধ্যে পড়তে হয়, ঘটে বড় ধরনের নৌ-দূর্ঘটনা। আমি রাঙ্গাবালীতে কর্মরত থাকাকালীন অবস্থায় অসহায় ঐ চরের মানুষগুলিকে বর্তমান সরকারের সকল ধরনের সুযোগসুবিধা প্রদান করতে আপ্রান চেষ্টা করেছি। ঐ চরের মানুষগুলো শুধুমাত্র মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন, বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য চরের সরকারী খাসজমি চাষের জন্য বরাদ্দ দিলে তারা সেখানে ফসল ফলাতে পারতেন। চর কাশেমে কোন সাইক্লোন সেল্টার না থাকায় জনগনকে চরম উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে হয়। কোন স্কুল না থাকায় আমি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সাইক্লোন সেল্টার-কাম স্কুলের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম।

 

বা/খ: জই

নিউজটি শেয়ার করুন

বঙ্গোপসাগরে বিচ্ছিন্ন চরে রঙ্গিন পাকা ঘরে আলোর ছোয়া

আপডেট সময় : ০৩:২৫:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মো: জাকির হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি :

দিনের আলো শেষ হবার সাথে সাথে যে চরের মানুষের জীবনে নেমে আসতো অন্ধকারের নিকশ কালো, সুপেয় পানির জন্য মাথায় করে কলস নিয়ে যেতে হতো ১ কিলোমিটার দূরে, একটু ঝড় বৃষ্টি হলেই চরম আতংকে কাটাতে হতো ঝুপড়ি ঘড়ে নির্ঘুম রাত পরিবার পরিজন নিয়ে সেই চরের মানুষ এখন বসবাস করছেন পাকা টিন সেডের বিদ্যুতের আলোর আলোকিত গৃহে,পান করছেন নিজেদের আঙ্গিনায় বসানো ডিপ টিউব ওয়েলের সুপেয় পানি।

বলছিলাম বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁসা রাঙ্গাবালী উপজেলার বিচ্ছন্ন চরকাশেমের অধিবাসীদের কথা। কথা কলছিলেন ৫০ উর্ধ্ব রেজাউল হাওলাদার । তিনি জানান, ৩২ বছর আগে বাবা মারা যাবার পরে অভাবের তাড়নায় রাঙাবালীর কাচিবুনিয়া ইউনিয়নের জুগীড় হাওলা থেকে মা, নাবালক তিন কন্যা সন্তান সহ ৩২ বছরের বিধবা বড় বোনকে নিয়ে জীবন বাঁচাতে জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রায় জনমানবহীন চরকাশেমে চলে আসেন ।
চরকাশেমের তারা যে বর্তমান স্থানটিতে বসবাস করছেন সেখানে মাত্র ৩ টি পরিবার এবং পাশ্ববর্তী ১ কিলোমিটার দূরে চরকাশেমে ঐ এলাকায় মাত্র ১৮ টি ঝুপড়ি ঘড় ছিল। ঝড় বৃষ্টি উপক্ষো করে নদী ও খালে বিধবা মা, বোন নিয়ে তিনজন মিলে মাছ ধরে শুরু করেন জীবন বাচাতে নতুন করে সংগ্রাম। বাধেঁ নতুন করে ঘর-সংসার, সেই ঘরে আজ তিন ছেলে সন্তান, বড় ছেলেটির বয়স ১৭, মেঝটি ৮, পরেরটি ৭। মাঝে বোন কহিনুর বেগম মারা গিয়েছেন, দিয়েছেন তিনটি এতিম ভাগ্নির বিয়ে। ৭০ বছর উর্ধ্ব মা সালেহা বেগম এখনো জীবিত থাকলেও জোটেনি বয়স্ক বা বিধবা ভাতা।

এদিকে বড় ছেলে মিরাজকে শিক্ষিত করতে নৌকায় করে সামুদাবাদ নদী পার হয়ে একঘন্টা সময়ের দূরবর্তী সামুদাবাদ প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করেছিলেন তিনি। কিন্তু স্কুলে ছেলেটি পড়াকালীন সময় বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী সামুদাবাদ নদীতে একটি নৌকা দূর্ঘটনায় ঝড়ের কবলে পরে লোক মারা যাওয়ার পরে ছেলের জীবনের মায়ায় ভয়ে আর স্কুলে পাঠানো হয়নি সন্তানকে। মেঝ ছেলে আল আমিন (৮) ও ছোট ছেলে দ্বীন ইসলাম (৭) সন্তানরা সবাই মাছ ধরার কাজে বাবাকে সহায়তা করছেন এ নিয়েই এগিয়ে চলছে অভাবের সংসার ।

রেজাউল হাওলাদার যখন চরে এসে নতুন করে জীবন বাঁচাতে সংগ্রাম শুরু করেন তখন সবচেয়ে বড় অসুবিধা ছিল সুপেয় পানির অভাব। তখন চরের সকল অধিবাসীকে খাবার পানির জন্য নৌকায় করে নদী পার হয়ে ২ ঘন্টা সময় ব্যায় করে সামুদাবাদ এলাকা থেকে পানি নিয়ে আসতে হতো কষ্ট করে। পরবর্তীতে তাদের এলাকা থেকে ২ কিলোমিটার দূরে চরেই ২৫ বছর আগে টিউব ওয়েল বসানো হলেও তাদের পানি বহন করে নিয়ে আসার কষ্টটা শেষ হয় ২০২২ সালে বলে জানান রেজাউল হাওলাদার। ৫ শতাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত চর কাসেমের দুটি প্লটে ২২ ও ১২ টি করে মোট ৩৬ টি সরকারী আবাসনের রঙ্গিন টিনের পাকা ঘরে ২৫০ এর উপরে ভোটার রয়েছে । ঐ চরের বাসিন্দাদের মূল কাজ বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী এলাকায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা। মাসের ১৪ দিন জোবা চলাকালীণ সময় তারা মাছ ধরতে পারেন বাকী ১৫-১৬ দিন তাদের অলস সময় কাটে। এ সময় প্রতিদিন ১ থেকে দেড় হাজার টাকার মাছ বিক্রী করতে পারেন। এ ছাড়াও ঐ চরে লোকজন গরু মহিষ পালন ছাড়া অন্য কোন কাজ করতে পারছেন না নিজেদের ব্যক্তিগত জমি না থাকার কারনে। এ ছাড়াও সরকারী ভাবে ঐ জনগোষ্ঠির জন্য বিকল্প কোন আয়ের ব্যবস্থা অদ্যাবধি করা হয়নি। এই এলাকায় নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,পাশ্বর্তী সামুদাবাদ সরকারী প্রাইমারী স্কুলে যেতে নদী পার হয়ে ১ ঘন্টার বেশী সময় লাগে স্কুলে যেতে। ঝুকি নিয়ে বছরের ২-৩ মাস স্কুলে যায় কিছু সংখ্যক কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বর্ষা মৌসুমে বঙোগাপসাগরের নিকটবর্তী সামুদাবাদ নদিটি হয়ে ওঠে প্রমত্তা ঝুকিপূর্ন, যার ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে খুব বেশী উৎসাহী নয়।

রেজাউল হাওলাদার জানান, বঙ্গোপসাগরের একেবারে নিকটবর্তী মূলখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চারদিকে প্রলয়ংকরী কলাগাছিয়া, চরতুফানিয়া, চরকানকুনির চর বেষ্টিত নদীগুলি ঘেরা চর কাসেমের মানুষের জীবন বদলের গল্পটার শুরু করেন ২০২২ সাল পর্যন্ত রাঙ্গাবালীতে কর্মরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান।

বঙ্গোপসাগরের একেবারে নিকটবর্তী ঐ চরের একাধিক বাসিন্দা জানান, তাদের দীর্ঘ্য দিনের দাবী সরকারী আবাসনের ঘর পাওয়ার বিষয়টি সমাধান করার ক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন সম্প্রতি রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে বদলি হয়ে যাওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান। করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে ২০২১ সালে তিনি ত্রানসামগ্রী নিয়ে ট্রলারে করে ঐ দূর্গম চরে যান । সেখানকার মানুষের দূর্বিসহ জীবন যাত্রা দেখে তিনি তাদের জন্য সরকারী আবাসন সুবিধার আওতায় পাকা টিন সেড ঘরের ব্যবস্থা করে দেন ২০২২ সালে। করেন পাশ্ববর্তী ভোলা জেলা থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদুৎ এর সুবিধা, করে দেন একাধিক ডিপ টিউবওয়েল। ঐ চরের বাসিন্দারা কৃতজ্ঞতার সাথে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমানের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বর্তমান সরকারের উন্নয়নের সুবিধার আওতায় প্রত্যন্ত বিচ্ছিন্ন চরে বসে তারা বিদৎু সুবিধার কারনে আধুনিক জীবনযাত্রার সুফল ভোগ করতে পারছেন।

এ বিষয়ে বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চর কাশেমের সাধারন মানুষগুলি বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী বিচ্ছিন্ন চরে চরম ঝুকির মধ্যে দীর্ঘ্য দিন ধরে বসবাস করে আসছেন। দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া শুরু হলে চরম উৎকন্ঠার মধ্যে কাটে লোকজনের দিন, সিগনাল শুরু হলে তাদেরকে নিরাপদে নদী পার করে লোকালয়ে নিয়ে আসতে চরম বিপদের মধ্যে পড়তে হয়, ঘটে বড় ধরনের নৌ-দূর্ঘটনা। আমি রাঙ্গাবালীতে কর্মরত থাকাকালীন অবস্থায় অসহায় ঐ চরের মানুষগুলিকে বর্তমান সরকারের সকল ধরনের সুযোগসুবিধা প্রদান করতে আপ্রান চেষ্টা করেছি। ঐ চরের মানুষগুলো শুধুমাত্র মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন, বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য চরের সরকারী খাসজমি চাষের জন্য বরাদ্দ দিলে তারা সেখানে ফসল ফলাতে পারতেন। চর কাশেমে কোন সাইক্লোন সেল্টার না থাকায় জনগনকে চরম উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাতে হয়। কোন স্কুল না থাকায় আমি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সাইক্লোন সেল্টার-কাম স্কুলের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম।

 

বা/খ: জই