ঢাকা ১২:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দৃশ্যমান ২ কিলোমিটার

বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর ৬৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১২:৫৪:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৩
  • / ৫৭৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতুর কাজ। ৬৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে সেতুর। মূল সেতুর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের মধ্যে উত্তাল যমুনার বুকে এখন দৃশ্যমান ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। বসেছে ২০টি স্প্যান।

জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ডাব্লিউ ডি-১ ও ডাব্লিউ ডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন। ডাব্লিউ ডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টো. আ কর্পোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেঞ্চার। টাঙ্গাইলের প্রান্তে সেতুর ২৪ থেকে ৫০ নম্বর পিলার পর্যন্ত কাজ করছে তারা। ডাব্লিউ ডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার। সিরাজগঞ্জের প্রান্তে ২৩ থেকে ১ নম্বর পিলার পর্যন্ত সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে তারা। সেতুটি নির্মাণে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, নেপাল ও বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল অংশে ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। নির্মিত হলে এটিই হবে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু।

বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩’শ মিটার উজানে দেশি-বিদেশী প্রকৌশলী আর নির্মাণ শ্রমিকদের পরিশ্রমে এগিয়ে চলছে কর্মযজ্ঞ। ৫০টি পিলার আর ৪৯টি স্প্যানের ওপর নির্মিত হবে ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতু। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ৩১ টি পিলারের কাজ। তার ওপর বসেছে ২২টি স্প্যান।

রেলসেতু নির্মাণে সকল ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। প্রধান প্রকৌশলী তানবিরুল ইসলাম বলেন, দুই পাশের স্টেশনের কাজ চলমাণ আছে। একপাশে ফাউন্ডেশনের কাজ চলছে আরেকপাশের ছাদের রড বাইন্ডিং এর কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, দুটি প্যাকেজের টাঙ্গাইল অংশে ৭৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও সিরাজগঞ্জ অংশে ৫৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ সেতু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়েছে ৬৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ৭ হাজার ৩৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক কাজ করছেন। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে।

সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল-ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, এই সেতু নির্মাণ কাজে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীরা রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সঠিক সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতুর নির্মাণে ২০২১ সালের মার্চে সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। যথাসময়ে কাজ শেষ করা গেলে ২০২৪ সালে এ সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তখন ঢাকার সঙ্গে উত্তরপশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের রেল যোগাযোগে মানুষের যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনে আরও গতি আসবে।

২০২০ সালে ১৬ হাজার ৭শ ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয়, রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ। আগামী বছরের শেষ দিকে বিশাল এই কর্মযজ্ঞ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। রেলসেতুটি নির্মাণ হলে এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে। এতে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের রেলযোগাযোগে প্রসার ঘটবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পরে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়। এতে যাত্রী ভোগান্তি বাড়ছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা একটি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। রেলসেতুটি নির্মাণ হলে এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে। এতে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের রেলযোগাযোগে প্রসার ঘটবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

দৃশ্যমান ২ কিলোমিটার

বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর ৬৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন

আপডেট সময় : ১২:৫৪:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৩

দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতুর কাজ। ৬৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে সেতুর। মূল সেতুর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের মধ্যে উত্তাল যমুনার বুকে এখন দৃশ্যমান ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। বসেছে ২০টি স্প্যান।

জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ডাব্লিউ ডি-১ ও ডাব্লিউ ডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন। ডাব্লিউ ডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টো. আ কর্পোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেঞ্চার। টাঙ্গাইলের প্রান্তে সেতুর ২৪ থেকে ৫০ নম্বর পিলার পর্যন্ত কাজ করছে তারা। ডাব্লিউ ডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার। সিরাজগঞ্জের প্রান্তে ২৩ থেকে ১ নম্বর পিলার পর্যন্ত সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে তারা। সেতুটি নির্মাণে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, নেপাল ও বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল অংশে ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। নির্মিত হলে এটিই হবে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু।

বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩’শ মিটার উজানে দেশি-বিদেশী প্রকৌশলী আর নির্মাণ শ্রমিকদের পরিশ্রমে এগিয়ে চলছে কর্মযজ্ঞ। ৫০টি পিলার আর ৪৯টি স্প্যানের ওপর নির্মিত হবে ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতু। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ৩১ টি পিলারের কাজ। তার ওপর বসেছে ২২টি স্প্যান।

রেলসেতু নির্মাণে সকল ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। প্রধান প্রকৌশলী তানবিরুল ইসলাম বলেন, দুই পাশের স্টেশনের কাজ চলমাণ আছে। একপাশে ফাউন্ডেশনের কাজ চলছে আরেকপাশের ছাদের রড বাইন্ডিং এর কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, দুটি প্যাকেজের টাঙ্গাইল অংশে ৭৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও সিরাজগঞ্জ অংশে ৫৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ সেতু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়েছে ৬৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ৭ হাজার ৩৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক কাজ করছেন। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে।

সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল-ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, এই সেতু নির্মাণ কাজে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীরা রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সঠিক সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতুর নির্মাণে ২০২১ সালের মার্চে সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। যথাসময়ে কাজ শেষ করা গেলে ২০২৪ সালে এ সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তখন ঢাকার সঙ্গে উত্তরপশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের রেল যোগাযোগে মানুষের যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনে আরও গতি আসবে।

২০২০ সালে ১৬ হাজার ৭শ ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয়, রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ। আগামী বছরের শেষ দিকে বিশাল এই কর্মযজ্ঞ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। রেলসেতুটি নির্মাণ হলে এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে। এতে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের রেলযোগাযোগে প্রসার ঘটবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পরে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়। এতে যাত্রী ভোগান্তি বাড়ছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা একটি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। রেলসেতুটি নির্মাণ হলে এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে। এতে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের রেলযোগাযোগে প্রসার ঘটবে।