ঢাকা ০৬:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পাবনার গাঁজনার বিলে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম বেড়েছে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:১৭:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩
  • / ৪৭৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

এ.এইচ. মাসুক, পাবনা প্রতিনিধি :

দেশের অন্যতম মৎস্য প্রজনন ও উৎপাদনস্থল পাবনার সুজানগর উপজেলার গাঁজনার বিল। উর্বর মাটির কারণে এ বিলে ফসলের আবাদও ভালো হয়। বিশেষ করে ধান, পাট ও পেঁয়াজের উৎপাদন হয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ। তবে মাটি নিয়ে ব্যবসা করা একটি চক্রের নজর পড়েছে এই বিলের দিকে। অবাধে চলছে জমির উপরিভাগ কেটে ইটভাঁটাসহ অন্যত্র বিক্রি। মাটির ধরন ও জায়গা বুঝে প্রতি ট্রলি মাটি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে হাজার টাকায়। বেশিরভাগ মাটিই বিক্রি হচ্ছে আশপাশের ইটভাঁটায়। মসজিদ, মাদরাসা আর স্কুলের উন্নয়নের নাম করে বিলের কৃষিজমির মাটি কেটে বিশাল বিশাল পুকুরও খনন করা হচ্ছে।

বিলের অন্তত ১৫টি স্থান থেকে মাটি কেটে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আয় করছে চক্রটি। তবে প্রশাসন যেন দেখেও দেখছে না। চক্রটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এই মহাযজ্ঞে মেতেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষের। অনেকেই জানিয়েছেন, প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করায় অবৈধভাবে বিলের মাটি কাটা ও পুকুর খনন বন্ধ হচ্ছে না। এ অবস্থায় কৃষিজমি যেমন কমে যাচ্ছে, কমছে উর্বরতাও। আর বিলে মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় , সুজানগর উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের ছয়টির অবস্থান এই গাঁজনার বিল এলাকায়। বিলের পার্শ্ববর্তী দুলাই, হাটখালি, মানিকহাট, আহম্মেদপুর, তাঁতিবন্ধ ও সাগরকান্দি ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি স্থানে প্রকাশ্যে ভেকু মেশিন দিয়ে চলছে অবাধ মাটি লুট। একদিকে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দিন-রাত চলছে পুকুর খনন, ধ্বংস হচ্ছে কৃষিজমি আর অন্যদিকে বিলের উপরি ভাগের মাটি বিক্রি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে মাটিখেকো চক্র। দেখে মনে হবে, এ যেন কোন এক মগের মুল্লুুক, যার যেমন খুশি বিলের মাটি কেটে করছে পুকুর খনন। সাধারণ কৃষকরা তাদের বাধা দিতে গিয়েও হচ্ছেন ব্যর্থ, তাদের আহাজারিতে যেন কর্ণপাতই নেই কারও। মাটিখেকোরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও সাহস করছে না সাধারণ ভুক্তভোগী কৃষকরা। এমনকি মাটি লুটের জন্য বিলের জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষেও জড়াচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন গ্রুপ ।

সরেজমিন গিয়ে কথা হয় জানে আলম, জাহাঙ্গীর, আবুল মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। আক্ষেপ করে তারা বলেন, আমাদের কথার কোনো দাম নেই ভাই। বিলের ধারে জমির মাটি কেটে যারা বিক্রি করছে তারা অনেক ক্ষমতাবান। নেতারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটছে। পুলিশ আসার আগেই সব ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ চলে গেলে তারা আবার চলে আসে।

মাটিখেকোদের দৌরত্ম রুখতে অভিযানের বিষয়ে কথা হয় সুজানগর থানার ওসি মো. আবদুল হান্নানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের মাটি ও বালুর মালিক আমি না। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। সম্প্রতি ইউএনও স্যারও বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছেন। বেশ কয়েকজনকে জেল-জরিমানাও করা হয়েছে।’

এ সময় মাটিখেকোদের সঙ্গে প্রশাসনের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাটি লুটের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক থাকবে কেন? বিলের মাটি, নদীর বালু-এগুলোর মালিক জেলা প্রশাসক। প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা আমাদের নির্দেশ দিলে আর সাধারণ কৃষকদের অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান করা হয়।’

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হয় সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, গাঁজনা বিল এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনস্থল হিসেবে বেশ পরিচিত। গাঁজনার বিলের মাটি কৃষি-ফসলের জন্য বেশ ভালো। আর বর্ষার সময়ে এই বিলে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যায় সেটি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও সরবরাহ হয়ে থাকে। তবে এই বিলে সম্প্রতি একটি চক্র রাতের আঁধারে মাটি কেটে পুকুর খনন করছে, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। সম্প্রতি বেশ কিছু স্থানে অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধভাবে বিলের পরিবেশ ধ্বংস করার সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

 

 

বা/খ: জই

নিউজটি শেয়ার করুন

পাবনার গাঁজনার বিলে মাটিখেকোদের দৌরাত্ম বেড়েছে

আপডেট সময় : ০২:১৭:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩

এ.এইচ. মাসুক, পাবনা প্রতিনিধি :

দেশের অন্যতম মৎস্য প্রজনন ও উৎপাদনস্থল পাবনার সুজানগর উপজেলার গাঁজনার বিল। উর্বর মাটির কারণে এ বিলে ফসলের আবাদও ভালো হয়। বিশেষ করে ধান, পাট ও পেঁয়াজের উৎপাদন হয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ। তবে মাটি নিয়ে ব্যবসা করা একটি চক্রের নজর পড়েছে এই বিলের দিকে। অবাধে চলছে জমির উপরিভাগ কেটে ইটভাঁটাসহ অন্যত্র বিক্রি। মাটির ধরন ও জায়গা বুঝে প্রতি ট্রলি মাটি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে হাজার টাকায়। বেশিরভাগ মাটিই বিক্রি হচ্ছে আশপাশের ইটভাঁটায়। মসজিদ, মাদরাসা আর স্কুলের উন্নয়নের নাম করে বিলের কৃষিজমির মাটি কেটে বিশাল বিশাল পুকুরও খনন করা হচ্ছে।

বিলের অন্তত ১৫টি স্থান থেকে মাটি কেটে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আয় করছে চক্রটি। তবে প্রশাসন যেন দেখেও দেখছে না। চক্রটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এই মহাযজ্ঞে মেতেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষের। অনেকেই জানিয়েছেন, প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করায় অবৈধভাবে বিলের মাটি কাটা ও পুকুর খনন বন্ধ হচ্ছে না। এ অবস্থায় কৃষিজমি যেমন কমে যাচ্ছে, কমছে উর্বরতাও। আর বিলে মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় , সুজানগর উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের ছয়টির অবস্থান এই গাঁজনার বিল এলাকায়। বিলের পার্শ্ববর্তী দুলাই, হাটখালি, মানিকহাট, আহম্মেদপুর, তাঁতিবন্ধ ও সাগরকান্দি ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি স্থানে প্রকাশ্যে ভেকু মেশিন দিয়ে চলছে অবাধ মাটি লুট। একদিকে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দিন-রাত চলছে পুকুর খনন, ধ্বংস হচ্ছে কৃষিজমি আর অন্যদিকে বিলের উপরি ভাগের মাটি বিক্রি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে মাটিখেকো চক্র। দেখে মনে হবে, এ যেন কোন এক মগের মুল্লুুক, যার যেমন খুশি বিলের মাটি কেটে করছে পুকুর খনন। সাধারণ কৃষকরা তাদের বাধা দিতে গিয়েও হচ্ছেন ব্যর্থ, তাদের আহাজারিতে যেন কর্ণপাতই নেই কারও। মাটিখেকোরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও সাহস করছে না সাধারণ ভুক্তভোগী কৃষকরা। এমনকি মাটি লুটের জন্য বিলের জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষেও জড়াচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন গ্রুপ ।

সরেজমিন গিয়ে কথা হয় জানে আলম, জাহাঙ্গীর, আবুল মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। আক্ষেপ করে তারা বলেন, আমাদের কথার কোনো দাম নেই ভাই। বিলের ধারে জমির মাটি কেটে যারা বিক্রি করছে তারা অনেক ক্ষমতাবান। নেতারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটছে। পুলিশ আসার আগেই সব ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ চলে গেলে তারা আবার চলে আসে।

মাটিখেকোদের দৌরত্ম রুখতে অভিযানের বিষয়ে কথা হয় সুজানগর থানার ওসি মো. আবদুল হান্নানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের মাটি ও বালুর মালিক আমি না। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। সম্প্রতি ইউএনও স্যারও বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছেন। বেশ কয়েকজনকে জেল-জরিমানাও করা হয়েছে।’

এ সময় মাটিখেকোদের সঙ্গে প্রশাসনের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাটি লুটের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক থাকবে কেন? বিলের মাটি, নদীর বালু-এগুলোর মালিক জেলা প্রশাসক। প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা আমাদের নির্দেশ দিলে আর সাধারণ কৃষকদের অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান করা হয়।’

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হয় সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, গাঁজনা বিল এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনস্থল হিসেবে বেশ পরিচিত। গাঁজনার বিলের মাটি কৃষি-ফসলের জন্য বেশ ভালো। আর বর্ষার সময়ে এই বিলে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যায় সেটি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও সরবরাহ হয়ে থাকে। তবে এই বিলে সম্প্রতি একটি চক্র রাতের আঁধারে মাটি কেটে পুকুর খনন করছে, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। সম্প্রতি বেশ কিছু স্থানে অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধভাবে বিলের পরিবেশ ধ্বংস করার সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

 

 

বা/খ: জই