ঢাকা ০২:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পাইকগাছায় টেন্ডার ছাড়াই স্কুলের গাছ বিক্রির অভিযোগ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৬:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৬৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
আশরাফুল ইসলাম সবুজ,পাইকগাছা প্রতিনিধি :
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালীতে কোন রকম টেন্ডার বা কোটেশন ছাড়াই ইউআরএসএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাশ ও সভাপতি প্রফেসর হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে স্কুলের গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল ১মার্চ বুধবার সরেজমিনে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি,অবিভাবক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নে উলুডাঙ্গা নামক স্থানে ইউআরএসএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি পতিত জমি আছে। উক্ত জমিতে দীর্ঘ ১০/১২ বছর পূর্বে শতাধিক শিরিষ গাছের চারা রোপন করা হয়। গাছগুলো বেশ বড় আকৃতির হওয়ায় নজরে আসে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির। পরবর্তীতে তারা ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডেকে কৌশলে কোন রকম টেন্ডার বা কোটেশন ছাড়াই সভাপতির ভাইপো স্থানীয় তানজিম মুস্তাফিজ বাচ্চু’র নিকট ২৮হাজার টাকা মূল্যে ৫০/৬০টি মূল্যবান শিরিষ গাছ বিক্রি করেছেন। তবে গাছগুলো ২৮হাজার টাকায় বিক্রি করা হলেও গাছগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় লক্ষাধিক টাকা বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে গাছ ক্রেতা বাচ্চু ঐ বিদ্যালয়ের পতিত জমি থেকে মূল্যবান শিরিষ গাছ কেটে নিচ্ছেন বলে সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে।
এ সময় এলাকাবাসি আরো জানান, স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক এর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। ইতিপূর্বে তারা বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগে এলাকায় মানববন্ধন সহ আদালতে মামলাও হয়েছে। সর্বশেষ এ ঘটনায় এলাকার অবিভাবক ও সাধারন মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে।
সরেজমিনে গাছ কাটা শ্রমিকরা জানান, বাচ্চু স্কুলের এ গাছ কিনেছে। তার নির্দেশে আমরা গাছ কেটে নিচ্ছি। গত ৩দিন ধরে আমরা এখানে গাছ কাটছি।
এ বিষয়ে গাছ ক্রেতা তানজিম মুস্তাফিজ বাচ্চুর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাশের কাছ থেকে গাছ কিনেছি। তবে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকই ভালো বলতে পারবেন।
বিদ্যালয়ের অবিভাবক সদস্য হালিম মোড়ল ও আফজাল মোড়ল জানান, হরিঢালীর উলুডাঙ্গা নামক স্থানে ইউআরএসএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি পতিত জমিতে দীর্ঘ ১০/১২ বছর পূর্বে লাগানো শিরিষ গাছগুলো বর্তমানে বেশ বড় আকৃতির হওয়ায় নজর পড়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির। পরবর্তীতে তারা সু-কৌশলে ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডেকে কোন রকম টেন্ডার বা কোটেশন ছাড়াই সভাপতির ভাইপো বাচ্চু’র নিকট ২৮হাজার টাকা মূল্যে বিদ্যালয়ের ৫০/৬০টি মূল্যবান শিরিষ গাছ বিক্রি করেছেন। এ মিটিং এ সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ছাড়া মাত্র দু’জন অবিভাবক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। গাছ বিক্রির সময় রেজুলেশনের সিদ্ধান্ত হলেও এখনো আমরা কেউ ঐ রেজুলেশনে সই করিনি।
তারা আরো জানান, গত ৩দিন ধরে বাচ্চু গাছ কাটছে। এদিকে ঐ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অন্য দু’ অবিভাবক সদস্য ওয়াদুদ কাগজি ও প্রকাশ দে জানান, গাছ বিক্রির বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে  কোন রেজুলেশনেও তারা সই করেননি।
ঐদিন বিদ্যালয়ে যেয়ে প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাশকে না পাওয়ায় মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নির্দেশে স্কুলের পতিত জমির শিরিষ গাছ বিক্রির বিষয়ে মিটিং ডেকে রেজুলেশনের সিদ্ধান্তে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। তবে রেজুলেশনে এখনো পর্যন্ত কেউ সই করেননি। গাছ বিক্রির ক্ষেত্রে টেন্ডার বা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এসব লাগে না। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তবে এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিই আরো ভালো বলতে পারবেন।
মুঠোফোনে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হারুন-অর-রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের সাথে সমন্বয় করে রেজুলেশনের মাধ্যমে গাছ বিক্রি করা হয়েছে।
উপজেলার বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ জানান, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটতে হলে সঠিক কারন দেখিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করতে হবে। তারপর আমরা পরিমাপ করে দিলে তারা গাছ কাটতে পারবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাহান আলী শেখ জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরবর্তী সিদ্ধান্ত ব্যাতিত গাছ না কাটার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম জানান, বিষয়টি জানা মাত্রই মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
বা/খ: জই

নিউজটি শেয়ার করুন

পাইকগাছায় টেন্ডার ছাড়াই স্কুলের গাছ বিক্রির অভিযোগ

আপডেট সময় : ০৪:৫৬:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩
আশরাফুল ইসলাম সবুজ,পাইকগাছা প্রতিনিধি :
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালীতে কোন রকম টেন্ডার বা কোটেশন ছাড়াই ইউআরএসএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাশ ও সভাপতি প্রফেসর হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে স্কুলের গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল ১মার্চ বুধবার সরেজমিনে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি,অবিভাবক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নে উলুডাঙ্গা নামক স্থানে ইউআরএসএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি পতিত জমি আছে। উক্ত জমিতে দীর্ঘ ১০/১২ বছর পূর্বে শতাধিক শিরিষ গাছের চারা রোপন করা হয়। গাছগুলো বেশ বড় আকৃতির হওয়ায় নজরে আসে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির। পরবর্তীতে তারা ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডেকে কৌশলে কোন রকম টেন্ডার বা কোটেশন ছাড়াই সভাপতির ভাইপো স্থানীয় তানজিম মুস্তাফিজ বাচ্চু’র নিকট ২৮হাজার টাকা মূল্যে ৫০/৬০টি মূল্যবান শিরিষ গাছ বিক্রি করেছেন। তবে গাছগুলো ২৮হাজার টাকায় বিক্রি করা হলেও গাছগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় লক্ষাধিক টাকা বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে গাছ ক্রেতা বাচ্চু ঐ বিদ্যালয়ের পতিত জমি থেকে মূল্যবান শিরিষ গাছ কেটে নিচ্ছেন বলে সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে।
এ সময় এলাকাবাসি আরো জানান, স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক এর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। ইতিপূর্বে তারা বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগে এলাকায় মানববন্ধন সহ আদালতে মামলাও হয়েছে। সর্বশেষ এ ঘটনায় এলাকার অবিভাবক ও সাধারন মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে।
সরেজমিনে গাছ কাটা শ্রমিকরা জানান, বাচ্চু স্কুলের এ গাছ কিনেছে। তার নির্দেশে আমরা গাছ কেটে নিচ্ছি। গত ৩দিন ধরে আমরা এখানে গাছ কাটছি।
এ বিষয়ে গাছ ক্রেতা তানজিম মুস্তাফিজ বাচ্চুর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাশের কাছ থেকে গাছ কিনেছি। তবে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকই ভালো বলতে পারবেন।
বিদ্যালয়ের অবিভাবক সদস্য হালিম মোড়ল ও আফজাল মোড়ল জানান, হরিঢালীর উলুডাঙ্গা নামক স্থানে ইউআরএসএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি পতিত জমিতে দীর্ঘ ১০/১২ বছর পূর্বে লাগানো শিরিষ গাছগুলো বর্তমানে বেশ বড় আকৃতির হওয়ায় নজর পড়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির। পরবর্তীতে তারা সু-কৌশলে ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডেকে কোন রকম টেন্ডার বা কোটেশন ছাড়াই সভাপতির ভাইপো বাচ্চু’র নিকট ২৮হাজার টাকা মূল্যে বিদ্যালয়ের ৫০/৬০টি মূল্যবান শিরিষ গাছ বিক্রি করেছেন। এ মিটিং এ সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ছাড়া মাত্র দু’জন অবিভাবক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। গাছ বিক্রির সময় রেজুলেশনের সিদ্ধান্ত হলেও এখনো আমরা কেউ ঐ রেজুলেশনে সই করিনি।
তারা আরো জানান, গত ৩দিন ধরে বাচ্চু গাছ কাটছে। এদিকে ঐ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অন্য দু’ অবিভাবক সদস্য ওয়াদুদ কাগজি ও প্রকাশ দে জানান, গাছ বিক্রির বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে  কোন রেজুলেশনেও তারা সই করেননি।
ঐদিন বিদ্যালয়ে যেয়ে প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাশকে না পাওয়ায় মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নির্দেশে স্কুলের পতিত জমির শিরিষ গাছ বিক্রির বিষয়ে মিটিং ডেকে রেজুলেশনের সিদ্ধান্তে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। তবে রেজুলেশনে এখনো পর্যন্ত কেউ সই করেননি। গাছ বিক্রির ক্ষেত্রে টেন্ডার বা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এসব লাগে না। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তবে এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিই আরো ভালো বলতে পারবেন।
মুঠোফোনে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হারুন-অর-রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের সাথে সমন্বয় করে রেজুলেশনের মাধ্যমে গাছ বিক্রি করা হয়েছে।
উপজেলার বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ জানান, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটতে হলে সঠিক কারন দেখিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করতে হবে। তারপর আমরা পরিমাপ করে দিলে তারা গাছ কাটতে পারবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাহান আলী শেখ জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে গাছ কাটা বন্ধ করে দিয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরবর্তী সিদ্ধান্ত ব্যাতিত গাছ না কাটার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম জানান, বিষয়টি জানা মাত্রই মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
বা/খ: জই