ঢাকা ১২:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পাঁচবিবিতে সার নিয়ে তেলেসমাতি কারবার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৪৪:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৪৩৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মোঃ জিহাদ মন্ডল, পাঁচবিবি(জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে চলতি রবি শস্য মৌসুমে সার নিয়ে তেলেসমাতি কারবার শুরু হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিলারদের নিকট দিনের পর দিন ধর্না দিয়েও মিলছে সরকার নির্ধারিত মুল্যের সার। অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ও মোড়ে খোলা বাজারে বিভিন্ন প্রকার সারের দাম বেশি নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রবি শস্য চাষিরা। এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন সার কিনতে আসা কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে আলু, সরিষা ও গম চাষের জন্য সার না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে সার কিনে আবাদ করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে কৃষকরা জানান।

কৃষকদের অভিযোগ, বর্তমানে এ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ডিলারদের সারের দোকানে সরকারি মূল্যের চেয়ে প্রতি বস্তা ইউরিয়া ১ হাজার ১০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ হতে ১ হাজার ৩০০, ডিএপি ৮০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার হতে ১ হাজার ১০০, এমওপি ৭৫০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ৩শ হতে ১ হাজার ৪০০ ও টিএসপি ১ হাজার ১০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ হতে ১ হাজার ২৫০ টাকা দরে কৃষকদের কিনতে হচ্ছে। কিন্তুু সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার কিনতে চাইলে সার সংকটের অজুহাতে কৃষকদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন ডিলাররা।
উপজেলার পাগলাবাজার এলাকার কৃষক মোঃ সবুজ হোসেন বলেন, আমি এবার ১০ একর জমিতে সরিষা চাষ করব। কিন্তুু ডিলালের নিকট সার নিতে গেলে ডিলার সার নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। আবার রাতের অন্ধকারে বেশি দামে সার বিক্রিও করছেন তারা। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি হলেও উপজেলা প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারি নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।

উপজেলার ভারাহুত গ্রামের কৃষক জুয়েল রানা, আব্দুর রহিম, ও আঃ আলিম অভিযোগ করে বলেন, ডিলারের সারের দোকানের সামনে মূল্য তালিকা ঝুলানো থাকলেও দোকানের ভিতরের চিত্র ভিন্ন। ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে সার বিক্রি করছে। আবার সার বিক্রয়ের কোন রশিদ দেওয়া হচ্ছে না।

উপজেলার বিসিআইসি নিযুক্ত সার ডিলার সুকুমার কন্ডু সার সংকটের বিষয়টি অস্কীকার করে বলেন, কৃষি অফিসের নির্দেশনা মতে প্রতি বিঘায় যে হারে সার প্রয়োগ করতে বলা হয়,কৃষকরা তার ৫গুন হারে জমিতে সার প্রয়োগ করায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি এবছর আলু, সরিষা ও গমের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়াও এই সংকটের একটি কারণ বলে তিনি মনে করেন। তবে ডিলারদের নিকট থেকে সরকার
নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই।

সূত্র জানায়,উপজেলায় সরকারিভাবে ১২ জন বিসিআইসি এবং ১৮ জন বিএডিসি ডিলারসহ মোট ৩০ জন ডিলারের মাধ্যমে উপজেলার তালিকাভুক্ত ৮১ জন সাব ডিলালের মাধ্যমে ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের সাধারণ কৃষকদের মাঝে সার বিক্রয় করা হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি শস্য মৌসুমে উপজেলায় আলু ৭হাজার ১শ ৫৫ হেক্টর, সড়িষা ৬ হাজার ১শ ৬২ হেক্টর ও গম ১ হাজার ৪শ ২৫ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত মৌসুমে ছিল আলু ৭হাজার ৫শ হেক্টর, সড়িষা ৫ হাজার ১শ হেক্টর ও গম ১হাজার ৪শ ৫৫ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ৬শ ৮৭ হেক্টর জমিতে বেশি শস্য উৎপাদন হচ্ছে। তবে কৃষকরা বিভিন্ন ফসল চাষাবাদের দিকে ঝুকে পড়ায় চলতি রবি মৌসুমে এ লক্ষ্যমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানান কৃষি অফিস।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি বরমান হোসেন বলেন, উপজেলায় সারের সংকট নেই, তবে প্রয়োজনের তুলনায় কৃষক জমিতে অতিরিক্ত সার ব্যবহার ও চলতি রবি শস্য মৌসুমে ফসলের চাষাবাদ বিগত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সাময়িক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আশা করা যায়, এক সপ্তাহের মধ্যে এ সংকট কেটে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

পাঁচবিবিতে সার নিয়ে তেলেসমাতি কারবার

আপডেট সময় : ১২:৪৪:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০২২

মোঃ জিহাদ মন্ডল, পাঁচবিবি(জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে চলতি রবি শস্য মৌসুমে সার নিয়ে তেলেসমাতি কারবার শুরু হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিলারদের নিকট দিনের পর দিন ধর্না দিয়েও মিলছে সরকার নির্ধারিত মুল্যের সার। অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ও মোড়ে খোলা বাজারে বিভিন্ন প্রকার সারের দাম বেশি নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রবি শস্য চাষিরা। এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন সার কিনতে আসা কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে আলু, সরিষা ও গম চাষের জন্য সার না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে সার কিনে আবাদ করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে কৃষকরা জানান।

কৃষকদের অভিযোগ, বর্তমানে এ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ডিলারদের সারের দোকানে সরকারি মূল্যের চেয়ে প্রতি বস্তা ইউরিয়া ১ হাজার ১০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ হতে ১ হাজার ৩০০, ডিএপি ৮০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার হতে ১ হাজার ১০০, এমওপি ৭৫০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ৩শ হতে ১ হাজার ৪০০ ও টিএসপি ১ হাজার ১০০ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ হতে ১ হাজার ২৫০ টাকা দরে কৃষকদের কিনতে হচ্ছে। কিন্তুু সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার কিনতে চাইলে সার সংকটের অজুহাতে কৃষকদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন ডিলাররা।
উপজেলার পাগলাবাজার এলাকার কৃষক মোঃ সবুজ হোসেন বলেন, আমি এবার ১০ একর জমিতে সরিষা চাষ করব। কিন্তুু ডিলালের নিকট সার নিতে গেলে ডিলার সার নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। আবার রাতের অন্ধকারে বেশি দামে সার বিক্রিও করছেন তারা। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি হলেও উপজেলা প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারি নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।

উপজেলার ভারাহুত গ্রামের কৃষক জুয়েল রানা, আব্দুর রহিম, ও আঃ আলিম অভিযোগ করে বলেন, ডিলারের সারের দোকানের সামনে মূল্য তালিকা ঝুলানো থাকলেও দোকানের ভিতরের চিত্র ভিন্ন। ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে সার বিক্রি করছে। আবার সার বিক্রয়ের কোন রশিদ দেওয়া হচ্ছে না।

উপজেলার বিসিআইসি নিযুক্ত সার ডিলার সুকুমার কন্ডু সার সংকটের বিষয়টি অস্কীকার করে বলেন, কৃষি অফিসের নির্দেশনা মতে প্রতি বিঘায় যে হারে সার প্রয়োগ করতে বলা হয়,কৃষকরা তার ৫গুন হারে জমিতে সার প্রয়োগ করায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি এবছর আলু, সরিষা ও গমের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়াও এই সংকটের একটি কারণ বলে তিনি মনে করেন। তবে ডিলারদের নিকট থেকে সরকার
নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই।

সূত্র জানায়,উপজেলায় সরকারিভাবে ১২ জন বিসিআইসি এবং ১৮ জন বিএডিসি ডিলারসহ মোট ৩০ জন ডিলারের মাধ্যমে উপজেলার তালিকাভুক্ত ৮১ জন সাব ডিলালের মাধ্যমে ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের সাধারণ কৃষকদের মাঝে সার বিক্রয় করা হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি শস্য মৌসুমে উপজেলায় আলু ৭হাজার ১শ ৫৫ হেক্টর, সড়িষা ৬ হাজার ১শ ৬২ হেক্টর ও গম ১ হাজার ৪শ ২৫ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত মৌসুমে ছিল আলু ৭হাজার ৫শ হেক্টর, সড়িষা ৫ হাজার ১শ হেক্টর ও গম ১হাজার ৪শ ৫৫ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ৬শ ৮৭ হেক্টর জমিতে বেশি শস্য উৎপাদন হচ্ছে। তবে কৃষকরা বিভিন্ন ফসল চাষাবাদের দিকে ঝুকে পড়ায় চলতি রবি মৌসুমে এ লক্ষ্যমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানান কৃষি অফিস।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি বরমান হোসেন বলেন, উপজেলায় সারের সংকট নেই, তবে প্রয়োজনের তুলনায় কৃষক জমিতে অতিরিক্ত সার ব্যবহার ও চলতি রবি শস্য মৌসুমে ফসলের চাষাবাদ বিগত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সাময়িক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আশা করা যায়, এক সপ্তাহের মধ্যে এ সংকট কেটে যাবে।