ঢাকা ০৪:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নিকলীর তালপাতার পাখার কদর দেশজুড়ে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:১২:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩
  • / ৪৭৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
// হেলাল উদ্দিন, নিজস্ব প্রতিনিধি //
বিদ্যুতের লোডশেডিং কিংবা প্রকৃতির বাতাস যখন থমকে দাঁড়ায়, গরমে মানুষ যখন অতিষ্ট হয়ে পড়ে, তখন হাতপাখা খোঁজা হয়। অতিগরমে খানিকটা সময় হাতপাখায়ার বাতাস একটু প্রশান্তি এনে দেয় মানুষকে । আবার প্রকৃতি যখন লু-হাওয়া ছড়ায় তখনও হাতপাখার প্রয়োজন হয়। আগের দিনে গ্রাম-গঞ্জে বিয়েতে কনের সঙ্গে কারুকার্যমন্ডিত বাহারি তালপাতার পাখা দেয়ার রেওয়াজ ছিল। এ রেওয়াজ উঠে গেলেও এর কদর কমেনি।কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অধ্যুষিত নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের টেকপাড়া ও সূত্রধর পাড়া গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় ২৫ বছর ধরে তালপাতার বাহারি অথবা কারুকার্যমন্ডিত পাখা তৈরি করছে। তালপাতার পাখ তৈরি করে তারা সংসারে  সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে। এখানকার  গ্রামের তালপাতার পাখার কদর দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
 বাংলা চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত তাদের তৈরি এসব হাত পাখাগুলো বিভিন্ন জেলার পাইকাররা নিতে আসে । এ গ্রামের শিল্পীদের তৈরি প্রতিটি তালপাতার পাখা প্রকার মূল্য সর্বোচ্চ  ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। শীতকাল ছাড়া বছরের সব সময় এ হাত পাখা বিক্রি হয়। তালপাতার পাখা সাধারণত গ্রামের মহিলা শিল্পীরাই তৈরী করে  থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের টেকপাড়া গ্রামে এসব  পাখা তৈরি হচ্ছে।  শিল্পী মনোয়ারা খাতুন (৫০) সাথে এ নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে আমি তালপাতার পাখা তৈরি করছি। সংসারের কাজকর্ম সেরে অবসরে তালপাতার পাখা তৈরি করি। পাখা বিক্রির আয় দিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ যুগিয়েছি। আমরা পাখাগুলো খুচরা ও পাইকারিতে বিক্রি করে থাকি। বিভিন্ন এলাকার লোকজন আমাদের পাখাগুলো কিনে নেয়। শুনেছি আমাদের তালপাতা পাখা বিদেশেও যাচ্ছে। এ পাখার জন্য বাঁশ, তালপাতা, বেত, প্লাস্টিক এসব উপকরণ বিভিন্ন গ্রাম থেকে আমাদের সংগ্রহ করতে হয়।’
একই গ্রামের বিধবা ফুলনা রানী কর্মকার বলেন, ‘একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে এ গ্রামের প্রায় ৪৬ জন পুরুষকে পাকবাহিনীরা ধরে মেরে ফেলে। তখন থেকে তাদের বিধবা স্ত্রীরা তালপাতার পাখা তৈরির কাজ হাতে নেয়। এরপর থেকে অধ্যাবদি এর রেওয়াজ চলে আসছে। আমি সরকারের দেয়া বিধবা ভাতা পাই। এ দিয়ে চলতে পারি না। তাই তালপাতার পাখা তৈরি করে বিক্রি করে সংসার চালাই।  রুমা আক্তার (২৮) বলেন, ‘আমার মায়ের কাছ থেকে তালপাতা পাখা তৈরি কাজ শিখেছি। আমরা এর আয় দিয়ে পড়ালেখা করেছি। এখন চাকুরি করি। এরপরও অবসরে মাকে সহায়তা করি। বর্তমানে এ কাজ করে এ গ্রামের সবাই খেয়ে-পড়ে চলতে পারে।’
 দামপাড়া কারার মাহাতাব উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী সালমা বেগম বলেন, ‘পড়ালেখার ফাঁকে তালপাতার পাখা তৈরি করি। মা-বাবাকে এর উপর্জিত অর্থ দিই। এতে করে আমাদের সংসার ভালোই চলে।’
টেকপাড়ার গ্রামের অলকা রায়, দিপা রায়, চম্পা রানী রায় বলেন, ‘বর্তমান সরকার যদি আমাদের প্রতি সুনজর দেন তাহলে আমরা আরও সাবলম্বী হবো

নিউজটি শেয়ার করুন

নিকলীর তালপাতার পাখার কদর দেশজুড়ে

আপডেট সময় : ১২:১২:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩
// হেলাল উদ্দিন, নিজস্ব প্রতিনিধি //
বিদ্যুতের লোডশেডিং কিংবা প্রকৃতির বাতাস যখন থমকে দাঁড়ায়, গরমে মানুষ যখন অতিষ্ট হয়ে পড়ে, তখন হাতপাখা খোঁজা হয়। অতিগরমে খানিকটা সময় হাতপাখায়ার বাতাস একটু প্রশান্তি এনে দেয় মানুষকে । আবার প্রকৃতি যখন লু-হাওয়া ছড়ায় তখনও হাতপাখার প্রয়োজন হয়। আগের দিনে গ্রাম-গঞ্জে বিয়েতে কনের সঙ্গে কারুকার্যমন্ডিত বাহারি তালপাতার পাখা দেয়ার রেওয়াজ ছিল। এ রেওয়াজ উঠে গেলেও এর কদর কমেনি।কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অধ্যুষিত নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের টেকপাড়া ও সূত্রধর পাড়া গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় ২৫ বছর ধরে তালপাতার বাহারি অথবা কারুকার্যমন্ডিত পাখা তৈরি করছে। তালপাতার পাখ তৈরি করে তারা সংসারে  সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে। এখানকার  গ্রামের তালপাতার পাখার কদর দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
 বাংলা চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত তাদের তৈরি এসব হাত পাখাগুলো বিভিন্ন জেলার পাইকাররা নিতে আসে । এ গ্রামের শিল্পীদের তৈরি প্রতিটি তালপাতার পাখা প্রকার মূল্য সর্বোচ্চ  ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। শীতকাল ছাড়া বছরের সব সময় এ হাত পাখা বিক্রি হয়। তালপাতার পাখা সাধারণত গ্রামের মহিলা শিল্পীরাই তৈরী করে  থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের টেকপাড়া গ্রামে এসব  পাখা তৈরি হচ্ছে।  শিল্পী মনোয়ারা খাতুন (৫০) সাথে এ নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে আমি তালপাতার পাখা তৈরি করছি। সংসারের কাজকর্ম সেরে অবসরে তালপাতার পাখা তৈরি করি। পাখা বিক্রির আয় দিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ যুগিয়েছি। আমরা পাখাগুলো খুচরা ও পাইকারিতে বিক্রি করে থাকি। বিভিন্ন এলাকার লোকজন আমাদের পাখাগুলো কিনে নেয়। শুনেছি আমাদের তালপাতা পাখা বিদেশেও যাচ্ছে। এ পাখার জন্য বাঁশ, তালপাতা, বেত, প্লাস্টিক এসব উপকরণ বিভিন্ন গ্রাম থেকে আমাদের সংগ্রহ করতে হয়।’
একই গ্রামের বিধবা ফুলনা রানী কর্মকার বলেন, ‘একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে এ গ্রামের প্রায় ৪৬ জন পুরুষকে পাকবাহিনীরা ধরে মেরে ফেলে। তখন থেকে তাদের বিধবা স্ত্রীরা তালপাতার পাখা তৈরির কাজ হাতে নেয়। এরপর থেকে অধ্যাবদি এর রেওয়াজ চলে আসছে। আমি সরকারের দেয়া বিধবা ভাতা পাই। এ দিয়ে চলতে পারি না। তাই তালপাতার পাখা তৈরি করে বিক্রি করে সংসার চালাই।  রুমা আক্তার (২৮) বলেন, ‘আমার মায়ের কাছ থেকে তালপাতা পাখা তৈরি কাজ শিখেছি। আমরা এর আয় দিয়ে পড়ালেখা করেছি। এখন চাকুরি করি। এরপরও অবসরে মাকে সহায়তা করি। বর্তমানে এ কাজ করে এ গ্রামের সবাই খেয়ে-পড়ে চলতে পারে।’
 দামপাড়া কারার মাহাতাব উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী সালমা বেগম বলেন, ‘পড়ালেখার ফাঁকে তালপাতার পাখা তৈরি করি। মা-বাবাকে এর উপর্জিত অর্থ দিই। এতে করে আমাদের সংসার ভালোই চলে।’
টেকপাড়ার গ্রামের অলকা রায়, দিপা রায়, চম্পা রানী রায় বলেন, ‘বর্তমান সরকার যদি আমাদের প্রতি সুনজর দেন তাহলে আমরা আরও সাবলম্বী হবো