ঢাকা ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নাব্যতা সংকটে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না পন্যবাহী জাহাজ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:৫৪:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৪৫৭ বার পড়া হয়েছে

বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না জাহাজ

বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিবেদক :

যমুনা নদীতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় বিভিন্ন পয়েন্টে নব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে ৯-১০ ফুট ড্রাফটের জাহাজ সরাসরি বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়তে পারছে না। এর ফলে রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী জাহাজ অর্ধেকলোড নিয়ে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে আসছে। আবার জাহাজ অর্ধেকলোড নিয়ে বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে। এদিকে বিআইডাব্লিউটিএ ড্রেজিং স্পয়েল নদীতে ফেলায় স্রোতের টানে ভাটিতে পলি জমে আবারো ডুবো চরের সৃষ্টি হচ্ছে।

বাঘাবাড়ী বন্দরের সহকারী পরিচালক এস এম সাজ্জাদুর রহমান জানান, দৌলতদিয়া-বাঘাবাড়ী নৌপথে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানী তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মাধ্যম। এ নৌপথে জ্বালানী তেলবাহী ট্যাংকার, রাসায়নিক সার ও বিভিন্ন পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করে। বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে চাহিদার ৯০ ভাগ জ্বলানী তেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে বাঘাবাড়ী বন্দর দিয়ে চাল ও গমসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। নাব্যতা সংকটে বন্দরে আমদানি রফতানি ব্যাহত হচ্ছে। বিআইডাব্লিউটিএ নৌ চ্যানেলের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

রাজশাহী ও রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বোরো মওসুমে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, টাংগাইল, ময়মনসিং ও জামালপুর জেলায় সেঁচের জন্য আট লাখ ৯৬ হাজার ৭৫টি সেঁচযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ ডিজেল ও ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎচালিত। সেঁচ মওসুমে ডিজেল চালিত ৮২৮টি গভীর নলকূপ, ছয় লাখ ৭৩ হাজার ৮৭০টি অগভীর নলকূপ, ১১ হাজার ৩৭৭টি শক্তিচালিত পাম্পের সাহায্যে সেঁচ কার্যক্রম চলবে। এর জন্য প্রায় ৫৫-৬০ কোটি লিটার ডিজেলের প্রয়োজন হবে। ডিজেল চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ি অয়েল ডিপো থেকে সরবরাহ করা হয়।

উত্তরাঞ্চলে জ্বালানী তেলচালিত বেড়ার ৭১ মেঘাওয়াট, বাঘাবাড়ীর ৫০ মেঘাওয়াট, রাজশাহীর আমনুরা ৫০ মেঘাওয়াটসহ ৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্পের রয়েছে দুই লাখ ১০ হাজার। এর জন্য বাড়তি বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। উত্তরের ১৬ জেলায় জ্বালানী তেল সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার না গেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। সেই সাথে এ অঞ্চলের সেঁচ নীর্ভর বোরো আবাদ ও উৎপাদনে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। প্রতিবছর মওসুমের এ সময়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বাঘাবাড়ী-দৌলতদিয়া নৌপথ নিয়ে সরকারকে স্নায়ুচাপে থাকতে হয়।

উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ১৪টি বাফার গুদামে রাসায়নিক সার চাহিদার ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে যোগান দেয়া হয়। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক সার সড়ক পথে বাফার গুদামগুলোতে সরবরাহ করা হয়। যমুনা নদীর নাব্যতা সংকটে বাফার গুদামগুলোতে সার সরবরাহ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বিসিআইসি’র বগুড়া আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা যায়, বোরো আবাদ মওসুমে উত্তরাঞ্চলে ১২ লাখ টন রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদার বেশিরভাগ সার বাঘাবাড়ি বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়। যমুনায় নাব্যতা সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় বাফার গুদামে সার সরবরাহ কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে আসা ব্রক্ষপুত্র ও তিস্তা নদীর প্রবাহ একসঙ্গে ধারণ করে যমুনা নদী বিস্তীর্ণ জনপদের ভেতর দিয়ে পবাহিত হয়ে আসছে। ভারত তিস্তা ও ব্রক্ষপুত্রে নদের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সেঁচের জন্য পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এদিকে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ কমে গেছে। এর বিরুপ প্রভাবে যমুনা নদীতে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি প্রবাহ না বাড়লে এই নাব্যতা সংকট সহসা দুর হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের কর্মরত শ্রমিকরা জানান, নাব্যতা সংকটের কারণে ৯-১০ ফুট ড্রাফটের জাহাজ বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না। লাইটারেজ করে রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্য বাঘাবাড়ী বন্দরে নিয়ে আসা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই বন্দরের কাজকর্ম কমে গেছে। এতে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিদিন বন্দরে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ শ্রমিক কাজ করতো। বন্দরে জাহাজ ভিড়তে না পাড়ায় ৫০০ থেকে ৭০০ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাঘাবাড়ী বন্দরমূখী রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্যবাহী কার্গোজাহাজ পূর্ণলোড নিয়ে বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না, পাটুরিয়া-দৌলদিয়ায় জাহাজের রাসায়নিক সার, ক্লিংকারসহ অন্যান্য পণ্য অর্ধেকের বেশি খালাস করে ছোট ছোট নৌকা অথবা লাইটারেজ জাহাজে করে বাঘাবাড়ী বন্দরে আনা হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের জাহাজ প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। এ কারণে ব্যবসায়ী ও জাহাজ মালিকরা জ্বালানি তেল ছাড়া অন্যান্য মালামাল নগরবাড়ি বন্দরে আনলোড করছে।

বাঘাবাড়ি নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, স্বাভাবিক ভাবে রাসায়নিক সার ও অন্যান্য পন্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য নদীতে ১০ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন। বাঘাবাড়ী থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌ-পথের মোহনগঞ্জ, পেচাকোলা, হরিরামপুর, কল্যাণপুর, চরসাফুলা, চরশিবালয়, নাকালী ও রাকশাসহ ১০টি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে ৭ থেকে ৮ ফুটে দাঁড়িয়েছে। কয়েক স্থানে সরু হয়ে গেছে নৌ-চ্যানেল। যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিআইডাব্লিউটিএ ড্রেজিং করে পলি নদীতেই ফেলছে। ফলে স্রোতের টানে পলিমাটি ভাটিতে গিয়ে আবারো ডুবো চরের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে যমুনা নদীর ওই পয়েন্টগুলোর ডুবোচরে জাহাজ আটকা পড়ছে।

বিআইডাব্লিউটিএ আরিচা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরই এসময় দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী পর্যন্ত ৪৫ কিঃ মিঃ নৌ-পথে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে এ রুটে ৭ থেকে ৮ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। নৌ-চ্যানেল সচল রাখার জন্য যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজিং শুরু হয়েছে। বালির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ড্রেজিং করার পরও পলি পড়ে ডুবোচরগুলো আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। জাহাজগুলো অতিরিক্ত মালামাল বহন করায় ডুবোচরে আটকা পড়ছে। এছাড়া পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে।

বিপিসি’র বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপো সূত্রে জানা যায়, বাঘাবাড়ীতে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি তেল কোম্পানির ডিপোতে পর্যাপ্ত পরিমান জ্বালানী তেল মজুদ আছে। এছাড়া চিটাগাং পতেঙ্গা থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের উদ্দেশ্যে একাধিক জ্বালানী তেলবাহী জাহাজ ছেড়ে এসেছে। ফলে জ্বালানী তেল সঙ্কটের কোন সম্ভাবনা নাই বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

নাব্যতা সংকটে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না পন্যবাহী জাহাজ

আপডেট সময় : ০১:৫৪:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২২

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিবেদক :

যমুনা নদীতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় বিভিন্ন পয়েন্টে নব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে ৯-১০ ফুট ড্রাফটের জাহাজ সরাসরি বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়তে পারছে না। এর ফলে রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী জাহাজ অর্ধেকলোড নিয়ে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে আসছে। আবার জাহাজ অর্ধেকলোড নিয়ে বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে। এদিকে বিআইডাব্লিউটিএ ড্রেজিং স্পয়েল নদীতে ফেলায় স্রোতের টানে ভাটিতে পলি জমে আবারো ডুবো চরের সৃষ্টি হচ্ছে।

বাঘাবাড়ী বন্দরের সহকারী পরিচালক এস এম সাজ্জাদুর রহমান জানান, দৌলতদিয়া-বাঘাবাড়ী নৌপথে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানী তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মাধ্যম। এ নৌপথে জ্বালানী তেলবাহী ট্যাংকার, রাসায়নিক সার ও বিভিন্ন পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করে। বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে চাহিদার ৯০ ভাগ জ্বলানী তেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে বাঘাবাড়ী বন্দর দিয়ে চাল ও গমসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। নাব্যতা সংকটে বন্দরে আমদানি রফতানি ব্যাহত হচ্ছে। বিআইডাব্লিউটিএ নৌ চ্যানেলের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

রাজশাহী ও রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বোরো মওসুমে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, টাংগাইল, ময়মনসিং ও জামালপুর জেলায় সেঁচের জন্য আট লাখ ৯৬ হাজার ৭৫টি সেঁচযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ ডিজেল ও ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎচালিত। সেঁচ মওসুমে ডিজেল চালিত ৮২৮টি গভীর নলকূপ, ছয় লাখ ৭৩ হাজার ৮৭০টি অগভীর নলকূপ, ১১ হাজার ৩৭৭টি শক্তিচালিত পাম্পের সাহায্যে সেঁচ কার্যক্রম চলবে। এর জন্য প্রায় ৫৫-৬০ কোটি লিটার ডিজেলের প্রয়োজন হবে। ডিজেল চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ি অয়েল ডিপো থেকে সরবরাহ করা হয়।

উত্তরাঞ্চলে জ্বালানী তেলচালিত বেড়ার ৭১ মেঘাওয়াট, বাঘাবাড়ীর ৫০ মেঘাওয়াট, রাজশাহীর আমনুরা ৫০ মেঘাওয়াটসহ ৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্পের রয়েছে দুই লাখ ১০ হাজার। এর জন্য বাড়তি বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। উত্তরের ১৬ জেলায় জ্বালানী তেল সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার না গেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। সেই সাথে এ অঞ্চলের সেঁচ নীর্ভর বোরো আবাদ ও উৎপাদনে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। প্রতিবছর মওসুমের এ সময়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বাঘাবাড়ী-দৌলতদিয়া নৌপথ নিয়ে সরকারকে স্নায়ুচাপে থাকতে হয়।

উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ১৪টি বাফার গুদামে রাসায়নিক সার চাহিদার ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে যোগান দেয়া হয়। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক সার সড়ক পথে বাফার গুদামগুলোতে সরবরাহ করা হয়। যমুনা নদীর নাব্যতা সংকটে বাফার গুদামগুলোতে সার সরবরাহ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বিসিআইসি’র বগুড়া আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা যায়, বোরো আবাদ মওসুমে উত্তরাঞ্চলে ১২ লাখ টন রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদার বেশিরভাগ সার বাঘাবাড়ি বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়। যমুনায় নাব্যতা সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় বাফার গুদামে সার সরবরাহ কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে আসা ব্রক্ষপুত্র ও তিস্তা নদীর প্রবাহ একসঙ্গে ধারণ করে যমুনা নদী বিস্তীর্ণ জনপদের ভেতর দিয়ে পবাহিত হয়ে আসছে। ভারত তিস্তা ও ব্রক্ষপুত্রে নদের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সেঁচের জন্য পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এদিকে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ কমে গেছে। এর বিরুপ প্রভাবে যমুনা নদীতে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি প্রবাহ না বাড়লে এই নাব্যতা সংকট সহসা দুর হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের কর্মরত শ্রমিকরা জানান, নাব্যতা সংকটের কারণে ৯-১০ ফুট ড্রাফটের জাহাজ বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে ভিড়তে পারছে না। লাইটারেজ করে রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্য বাঘাবাড়ী বন্দরে নিয়ে আসা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই বন্দরের কাজকর্ম কমে গেছে। এতে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিদিন বন্দরে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ শ্রমিক কাজ করতো। বন্দরে জাহাজ ভিড়তে না পাড়ায় ৫০০ থেকে ৭০০ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাঘাবাড়ী বন্দরমূখী রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্যবাহী কার্গোজাহাজ পূর্ণলোড নিয়ে বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না, পাটুরিয়া-দৌলদিয়ায় জাহাজের রাসায়নিক সার, ক্লিংকারসহ অন্যান্য পণ্য অর্ধেকের বেশি খালাস করে ছোট ছোট নৌকা অথবা লাইটারেজ জাহাজে করে বাঘাবাড়ী বন্দরে আনা হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের জাহাজ প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। এ কারণে ব্যবসায়ী ও জাহাজ মালিকরা জ্বালানি তেল ছাড়া অন্যান্য মালামাল নগরবাড়ি বন্দরে আনলোড করছে।

বাঘাবাড়ি নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, স্বাভাবিক ভাবে রাসায়নিক সার ও অন্যান্য পন্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য নদীতে ১০ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন। বাঘাবাড়ী থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌ-পথের মোহনগঞ্জ, পেচাকোলা, হরিরামপুর, কল্যাণপুর, চরসাফুলা, চরশিবালয়, নাকালী ও রাকশাসহ ১০টি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে ৭ থেকে ৮ ফুটে দাঁড়িয়েছে। কয়েক স্থানে সরু হয়ে গেছে নৌ-চ্যানেল। যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিআইডাব্লিউটিএ ড্রেজিং করে পলি নদীতেই ফেলছে। ফলে স্রোতের টানে পলিমাটি ভাটিতে গিয়ে আবারো ডুবো চরের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে যমুনা নদীর ওই পয়েন্টগুলোর ডুবোচরে জাহাজ আটকা পড়ছে।

বিআইডাব্লিউটিএ আরিচা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরই এসময় দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী পর্যন্ত ৪৫ কিঃ মিঃ নৌ-পথে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে এ রুটে ৭ থেকে ৮ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। নৌ-চ্যানেল সচল রাখার জন্য যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজিং শুরু হয়েছে। বালির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ড্রেজিং করার পরও পলি পড়ে ডুবোচরগুলো আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। জাহাজগুলো অতিরিক্ত মালামাল বহন করায় ডুবোচরে আটকা পড়ছে। এছাড়া পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে।

বিপিসি’র বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপো সূত্রে জানা যায়, বাঘাবাড়ীতে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি তেল কোম্পানির ডিপোতে পর্যাপ্ত পরিমান জ্বালানী তেল মজুদ আছে। এছাড়া চিটাগাং পতেঙ্গা থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের উদ্দেশ্যে একাধিক জ্বালানী তেলবাহী জাহাজ ছেড়ে এসেছে। ফলে জ্বালানী তেল সঙ্কটের কোন সম্ভাবনা নাই বলে সূত্রটি জানিয়েছে।