ঢাকা ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নতুন পেঁয়াজের দামে হতাশ পাবনার চাষীরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৯:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ৪৫০ বার পড়া হয়েছে

নতুন পেঁয়াজের দামে হতাশ পাবনার চাষীরা

বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিবেদক :

পাবনায় আগাম জাতের ‘মুড়িকাটা’ নতুন পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবুও মন ভালো নেই চাষীদের। তাদের অভিযোগ, বাজার দরে ভারসাম্যহীনতায় মিলছে না ন্যায্যমূল্য। লোকসান ঠেকাতে কৃষক পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট বাজার মূল্য নির্ধারণের দাবী পেঁয়াজ চাষীদের। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। আর বাজারে একসাথে সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কম পাচ্ছেন চাষীরা।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় পাবনায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের বাম্পার ফলন পেয়েছেন চাষীরা। বিঘা প্রতি গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ মণ গড় ফলনে ছাড়িয়েছে কৃষিবিভাগের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। মওসুমের প্রথমদিকে, চাষীরা প্রতি মণ পেঁয়াজে এক হাজার ৩০০ টাকা পেলেও, এখন হাট-বাজারে সরবরাহ বাড়ায় হঠাৎই কমে গেছে দাম। যেকারণে, ভালো ফলনেও চাষীরা পড়েছেন লোকসানের দুঃশ্চিন্তায়।
পেঁয়াজ উৎপাদনে খ্যাত পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আফড়া, পুন্ডুরিয়া, মনমথপুর, ধুলাউড়িসহ কয়েকটি মাঠে দেখা যায়, কুয়াশা ঢাকা শীতের ভোরে মাঠ থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। আগাম জাতের এই পেঁয়াজ আবাদে কিছুটা লোকসানে পড়েছেন তারা। সেই সাথে বাজারে পেঁয়াজ বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছেন উত্তরের পেঁয়াজ চাষীরা।

আলাপাকালে আফড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষী আব্দুল কাদের, মফিজ উদ্দিন বলেন, বিঘা প্রতি যে পরিমাণ খরচ তাতে এক হাজার টাকা মন পেঁয়াজ বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে। বীজ, সার, শ্রমিক, কীটনাশকের যে দাম তাতে বর্তমান বাজার মুল্যে লোকসানই হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিমণ নতুন পেঁয়াজ ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ধুলাউড়ি গ্রামের কৃষক আবু বক্কার, শাজাহান আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগাতে সব মিলিয়ে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন সেই এক বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকায়। উৎপাদন খরচই তো উঠছে না। এরকম হলে আগামীতে পেঁয়াজ আবাদ বাদ দিতে হবে। লোকসান ঠেকাতে আপাতত বিদেশী পেঁয়াজ আমদানী বন্ধের দাবী জানিয়েছেন এসব পেঁয়াজ চাষীরা।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টায় বেড়া সিঅ্যান্ডবি চতুরবাজার পেঁয়াজ হাটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় সরগরম হাট। চাষীদের পাশাপাশি কথা হয় কয়েকজ পাইকারদের সাথে।

তারা বলেন, সকালে এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ কেনার পর ঢাকার ব্যাপারীরা সেই পেঁয়াজের দাম বলছেন এক হাজার টাকা। হাটে পেঁয়াজ আসছে বেশি। এভাবে অনেকটা লোকসান দিয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জিব কুমার গোস্বামী মোবাইল ফোনে জানান, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। এটা অল্পদিন বাজারে থাকে। আর বাজারে একসাথে সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কম পাচ্ছেন চাষীরা। প্রথমদিকে কিছুটা দাম পেয়েছেন। ধান, গম, চাল সহ অন্যান্য কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ ও সরকারিভাবে সংগ্রহ করা হলেও, পেঁয়াজে সে ব্যবস্থা নেই। বিষয়টি তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবেন বলে জানান।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে পাবনা জেলায় নয় হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার মেট্রিকটন।

নিউজটি শেয়ার করুন

নতুন পেঁয়াজের দামে হতাশ পাবনার চাষীরা

আপডেট সময় : ০৪:৫৯:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

শফিউল আযম, বিশেষ প্রতিবেদক :

পাবনায় আগাম জাতের ‘মুড়িকাটা’ নতুন পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবুও মন ভালো নেই চাষীদের। তাদের অভিযোগ, বাজার দরে ভারসাম্যহীনতায় মিলছে না ন্যায্যমূল্য। লোকসান ঠেকাতে কৃষক পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট বাজার মূল্য নির্ধারণের দাবী পেঁয়াজ চাষীদের। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। আর বাজারে একসাথে সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কম পাচ্ছেন চাষীরা।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় পাবনায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের বাম্পার ফলন পেয়েছেন চাষীরা। বিঘা প্রতি গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ মণ গড় ফলনে ছাড়িয়েছে কৃষিবিভাগের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। মওসুমের প্রথমদিকে, চাষীরা প্রতি মণ পেঁয়াজে এক হাজার ৩০০ টাকা পেলেও, এখন হাট-বাজারে সরবরাহ বাড়ায় হঠাৎই কমে গেছে দাম। যেকারণে, ভালো ফলনেও চাষীরা পড়েছেন লোকসানের দুঃশ্চিন্তায়।
পেঁয়াজ উৎপাদনে খ্যাত পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আফড়া, পুন্ডুরিয়া, মনমথপুর, ধুলাউড়িসহ কয়েকটি মাঠে দেখা যায়, কুয়াশা ঢাকা শীতের ভোরে মাঠ থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। আগাম জাতের এই পেঁয়াজ আবাদে কিছুটা লোকসানে পড়েছেন তারা। সেই সাথে বাজারে পেঁয়াজ বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছেন উত্তরের পেঁয়াজ চাষীরা।

আলাপাকালে আফড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষী আব্দুল কাদের, মফিজ উদ্দিন বলেন, বিঘা প্রতি যে পরিমাণ খরচ তাতে এক হাজার টাকা মন পেঁয়াজ বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে। বীজ, সার, শ্রমিক, কীটনাশকের যে দাম তাতে বর্তমান বাজার মুল্যে লোকসানই হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিমণ নতুন পেঁয়াজ ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ধুলাউড়ি গ্রামের কৃষক আবু বক্কার, শাজাহান আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগাতে সব মিলিয়ে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন সেই এক বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকায়। উৎপাদন খরচই তো উঠছে না। এরকম হলে আগামীতে পেঁয়াজ আবাদ বাদ দিতে হবে। লোকসান ঠেকাতে আপাতত বিদেশী পেঁয়াজ আমদানী বন্ধের দাবী জানিয়েছেন এসব পেঁয়াজ চাষীরা।

শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টায় বেড়া সিঅ্যান্ডবি চতুরবাজার পেঁয়াজ হাটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় সরগরম হাট। চাষীদের পাশাপাশি কথা হয় কয়েকজ পাইকারদের সাথে।

তারা বলেন, সকালে এক হাজার ২০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ কেনার পর ঢাকার ব্যাপারীরা সেই পেঁয়াজের দাম বলছেন এক হাজার টাকা। হাটে পেঁয়াজ আসছে বেশি। এভাবে অনেকটা লোকসান দিয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জিব কুমার গোস্বামী মোবাইল ফোনে জানান, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। এটা অল্পদিন বাজারে থাকে। আর বাজারে একসাথে সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কম পাচ্ছেন চাষীরা। প্রথমদিকে কিছুটা দাম পেয়েছেন। ধান, গম, চাল সহ অন্যান্য কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ ও সরকারিভাবে সংগ্রহ করা হলেও, পেঁয়াজে সে ব্যবস্থা নেই। বিষয়টি তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবেন বলে জানান।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে পাবনা জেলায় নয় হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার মেট্রিকটন।