ঢাকা ০৮:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নওগাঁয় ঠিকাদারের গাফিলতিতে দুর্ভোগে পথচারী

নওগাঁ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০১:০৬:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৬১৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নওগাঁয় ঠিকাদারের গাফিলতিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারী ও এলাকাবাসীদের। চুক্তির মেয়াদ দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি কাজ। ফলে কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারকে কাজ শেষ করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিএডি) থেকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এমনকি প্রকৌশলীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। আবার রাস্তার কিছু কাজ করা হলেও কোন টাকা দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন নওগাঁর মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজ ও জয়েন্ট ভেঞ্চার এর ঠিকাদার খলিলুর রহমান।

নওগাঁ সদর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগ (সিরাজগঞ্জ জেলা ব্যতিত) পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এর আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে সদর উপজেলার হাঁপানিয়া বাজার থেকে জেলার বদলগাছী উপজেলার প্রধানকুন্ডি এলাকা পর্যন্ত সাত দশমিক ৩৭৫কিলোমিটার সড়ক সংস্কার
কাজ শুরু হয়। যার চুক্তিমূল্য ধরা হয় তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ি কাজটি শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে। কাজ শেষ হওয়ার সময় পেরিয়ে গেছে এক বছর আট মাস। সঠিক নির্মাণ পদ্ধতিতে কাজ করতে ঠিকাদারকে পরপর সাতটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ তাকে চলতি বছরের ২৫
সেপ্টেম্বর চিঠি দেওয়া হয়।

হাঁপানিয়া জিসি-মাতাজিহাট জিসি রাস্তাটি সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল এক বছর আট মাস আগে। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই ঠিকাদার গড়িমশি শুরু করে। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করতে গিয়ে বার বার বাঁধার মুখে পড়তে হয় ঠিকাদারকে। এলাকাবাসীসহ সদর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগও তার ওপর
ক্ষিপ্ত। বার বার তাকে তাগাদা দিয়ে কাজ করে নিতে হয়। অবেশেষে আর কাজ না করেই ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। কাজ পড়ে থাকায় শুরু হয়েছে জনদূর্ভোগ। দ্রুত এর প্রতিকার চান স্থানীয়রা।

চকআতিতা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানায়, এ রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়ায় করতে হয়। বিশেষ করে ট্রাক ও ট্রাক্টর যখন এ রাস্তা দিয়ে যায় তখন রাস্তার ধুলায় আমাদের জামা-কাপড় নোংরা হয়ে যায়। ধুলার কারণে হাঁছি ও
কাঁশি হয়। এমনকি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত এ রাস্তার কাজ শেষ করে চলাচলের উপযোগী করা হোক।

কসবা গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, এই রাস্তায় দিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতে হয়। দীর্ঘদিন রাস্তাটি পড়ে থাকায় মাঝে মধ্যে খোয়া উঠে গর্ত হয়েছে। ঝুাঁকুনিতে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। রোগীদের জন্য আরো বেশি সমস্যা। নিম্ন মানের উপকরণ দিয়ে রাস্তাটি কাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বর্ষাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান আলী বলেন, রাস্তার কাজ হচ্ছে হবে এমন অবস্থা। কবে শেষ হবে তা আমরা কেউ জানি না। তবে রাস্তা এভাবে ফেলে রাখার কারণে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে আসা-যাওয়া করলে জামা-কাপড়ে ধুলার স্তুপ জমে যায়। পুরাতন যে ইট ও
পাথর ছিল সেগুলো পুনরায় ধামাচাপা দিয়ে রাস্তায় বিছানো হয়েছে।

বর্ষাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার কাজ ঠিকমতো না করে দীর্ঘদিন থেকে ফেলে রেখেছে। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। পুরাতন ইট ভেঙ্গে রাস্তায় দেওয়া হয়েছে। কাজের মান ভাল না।

এ বিষয়ে মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজ ও জয়েন্ট ভেঞ্চার এর ঠিকাদার খলিলুর রহমান বলেন, ভালমানের উপকরণ দিয়ে রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কাজের একটি টাকাও আমাকে দেওয়া হয়নি। আর টাকা না পেলে কাজ করবো কি দিয়ে। উপজেলা প্রকৌশলী আমার সাথে বার বার ঝামেলা করার চেষ্টা করছেন। তাকে হুমকি-ধামকি দেওয়ার বিষয়টি ঠিক না।

নওগাঁ সদর উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন বলেন, রাস্তা ও ঠিকাদারকে নিয়ে বিড়ম্বনার মধ্যে আছি। ঠিকাদার সঠিক নির্মাণ পদ্ধতিতে কাজ না করে রাতের আধারে নিম্নমানের মালামাল নিয়ে এসে নিজের মতো করতে চাইছেন। কাজটি শেষ করার জন্য তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কাজ শেষের মেয়াদও প্রায় দেড় বছর পার। পর পর
সাতটি চিঠি দেয়া হযেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর তাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কাজ করছেন না। এখনো দুই ইঞ্চি উঁচু করে খোয়া ফেলতে হবে। তবে মাত্র দুই কিলোমিটার ডব্লিউবিএম করা হয়েছে। তারপর পাঁকাকরণ করতে হবে। কেন কাজ করছেন তা তিনিই ভাল জানেন।

তিনি বলেন- ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রি দিয়ে কাজ করতে চান। নিয়মবর্হিভূতভাবে বেড তৈরিকরণ, এজিং, হার্ডবেড তৈরিকরণ ও ডব্লিউবিএম কাজ করেছেন। কিন্তু আমরা তাকে বাঁধা দিয়। বাঁধা দেয়ায় তিনি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত। আমার অফিস স্টাফদের সাথে খাবার ব্যবহার করে। এমনকি জোরপূর্বক কাজের বিল নেওয়ার জন্য অফিসে এসে হুমকি-ধামকি দিয়েছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারন ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তবে ঠিকাদারকে কাজের কোন টাকা এখনো দেওয়া হয়নি। আর কাজটি ফেলে রাখায় জনদুর্ভোগ শুরু হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

নওগাঁয় ঠিকাদারের গাফিলতিতে দুর্ভোগে পথচারী

আপডেট সময় : ০১:০৬:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩

নওগাঁয় ঠিকাদারের গাফিলতিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারী ও এলাকাবাসীদের। চুক্তির মেয়াদ দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি কাজ। ফলে কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারকে কাজ শেষ করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিএডি) থেকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এমনকি প্রকৌশলীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। আবার রাস্তার কিছু কাজ করা হলেও কোন টাকা দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন নওগাঁর মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজ ও জয়েন্ট ভেঞ্চার এর ঠিকাদার খলিলুর রহমান।

নওগাঁ সদর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিভাগ (সিরাজগঞ্জ জেলা ব্যতিত) পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এর আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে সদর উপজেলার হাঁপানিয়া বাজার থেকে জেলার বদলগাছী উপজেলার প্রধানকুন্ডি এলাকা পর্যন্ত সাত দশমিক ৩৭৫কিলোমিটার সড়ক সংস্কার
কাজ শুরু হয়। যার চুক্তিমূল্য ধরা হয় তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ি কাজটি শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে। কাজ শেষ হওয়ার সময় পেরিয়ে গেছে এক বছর আট মাস। সঠিক নির্মাণ পদ্ধতিতে কাজ করতে ঠিকাদারকে পরপর সাতটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ তাকে চলতি বছরের ২৫
সেপ্টেম্বর চিঠি দেওয়া হয়।

হাঁপানিয়া জিসি-মাতাজিহাট জিসি রাস্তাটি সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল এক বছর আট মাস আগে। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই ঠিকাদার গড়িমশি শুরু করে। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করতে গিয়ে বার বার বাঁধার মুখে পড়তে হয় ঠিকাদারকে। এলাকাবাসীসহ সদর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগও তার ওপর
ক্ষিপ্ত। বার বার তাকে তাগাদা দিয়ে কাজ করে নিতে হয়। অবেশেষে আর কাজ না করেই ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। কাজ পড়ে থাকায় শুরু হয়েছে জনদূর্ভোগ। দ্রুত এর প্রতিকার চান স্থানীয়রা।

চকআতিতা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানায়, এ রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়ায় করতে হয়। বিশেষ করে ট্রাক ও ট্রাক্টর যখন এ রাস্তা দিয়ে যায় তখন রাস্তার ধুলায় আমাদের জামা-কাপড় নোংরা হয়ে যায়। ধুলার কারণে হাঁছি ও
কাঁশি হয়। এমনকি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত এ রাস্তার কাজ শেষ করে চলাচলের উপযোগী করা হোক।

কসবা গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, এই রাস্তায় দিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতে হয়। দীর্ঘদিন রাস্তাটি পড়ে থাকায় মাঝে মধ্যে খোয়া উঠে গর্ত হয়েছে। ঝুাঁকুনিতে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। রোগীদের জন্য আরো বেশি সমস্যা। নিম্ন মানের উপকরণ দিয়ে রাস্তাটি কাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বর্ষাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান আলী বলেন, রাস্তার কাজ হচ্ছে হবে এমন অবস্থা। কবে শেষ হবে তা আমরা কেউ জানি না। তবে রাস্তা এভাবে ফেলে রাখার কারণে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে আসা-যাওয়া করলে জামা-কাপড়ে ধুলার স্তুপ জমে যায়। পুরাতন যে ইট ও
পাথর ছিল সেগুলো পুনরায় ধামাচাপা দিয়ে রাস্তায় বিছানো হয়েছে।

বর্ষাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার কাজ ঠিকমতো না করে দীর্ঘদিন থেকে ফেলে রেখেছে। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। পুরাতন ইট ভেঙ্গে রাস্তায় দেওয়া হয়েছে। কাজের মান ভাল না।

এ বিষয়ে মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজ ও জয়েন্ট ভেঞ্চার এর ঠিকাদার খলিলুর রহমান বলেন, ভালমানের উপকরণ দিয়ে রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কাজের একটি টাকাও আমাকে দেওয়া হয়নি। আর টাকা না পেলে কাজ করবো কি দিয়ে। উপজেলা প্রকৌশলী আমার সাথে বার বার ঝামেলা করার চেষ্টা করছেন। তাকে হুমকি-ধামকি দেওয়ার বিষয়টি ঠিক না।

নওগাঁ সদর উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন বলেন, রাস্তা ও ঠিকাদারকে নিয়ে বিড়ম্বনার মধ্যে আছি। ঠিকাদার সঠিক নির্মাণ পদ্ধতিতে কাজ না করে রাতের আধারে নিম্নমানের মালামাল নিয়ে এসে নিজের মতো করতে চাইছেন। কাজটি শেষ করার জন্য তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কাজ শেষের মেয়াদও প্রায় দেড় বছর পার। পর পর
সাতটি চিঠি দেয়া হযেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর তাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কাজ করছেন না। এখনো দুই ইঞ্চি উঁচু করে খোয়া ফেলতে হবে। তবে মাত্র দুই কিলোমিটার ডব্লিউবিএম করা হয়েছে। তারপর পাঁকাকরণ করতে হবে। কেন কাজ করছেন তা তিনিই ভাল জানেন।

তিনি বলেন- ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রি দিয়ে কাজ করতে চান। নিয়মবর্হিভূতভাবে বেড তৈরিকরণ, এজিং, হার্ডবেড তৈরিকরণ ও ডব্লিউবিএম কাজ করেছেন। কিন্তু আমরা তাকে বাঁধা দিয়। বাঁধা দেয়ায় তিনি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত। আমার অফিস স্টাফদের সাথে খাবার ব্যবহার করে। এমনকি জোরপূর্বক কাজের বিল নেওয়ার জন্য অফিসে এসে হুমকি-ধামকি দিয়েছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারন ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তবে ঠিকাদারকে কাজের কোন টাকা এখনো দেওয়া হয়নি। আর কাজটি ফেলে রাখায় জনদুর্ভোগ শুরু হয়েছে।