ঢাকা ০২:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দোশের ৫৬ জেলায় তাপদাহ, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:২২:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৪৬১ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা দেশে টানা মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। দেশের ৫৬টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং সেটি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশজুড়ে তাপমাত্রা আরও বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়। রোজায় দীর্ঘ সময় পানি না খাওয়া অবস্থায় প্রচুর ঘাম হলে শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি হতে পারে। হতে পারে হিট স্ট্রোক। এ অবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে কেনাকাটার প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হতে হচ্ছে সব বয়সের মানুষকে। রোজাদার ব্যক্তিরা রোজা রেখে বাইরে যাচ্ছেন। তীব্র গরমে বেশি ঘাম হলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। আবার যারা রোজা রাখছেন না, তারা বাইরের খোলা খাবার, শরবত, ঠান্ডা পানি খেয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই তাপপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট তীব্র গরমে মানুষের শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে পানি শূন্যতা তৈরি হতে পারে। শরীর থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে মানুষের হৃদপিন্ড ও নাড়ির গতি বেড়ে যায়। এ থেকে মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাব হতে পারে। অনেক সময় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। এই অবস্থাকে বলা হয়, হিট স্ট্রোক। এ পরিস্থিতির শিকার হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ছায়াময় স্থানে নিয়ে যেতে হবে। সম্ভব হলে শীতলতম স্থানে নিয়ে যেতে হবে। শরীরের কাপড় ঢিলে করে দিতে হবে। চোখেমুখে পানি দিতে তবে। পাশাপাশি স্যালাইন ও স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করাতে হবে। এ পরিস্থিতিতে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে বাইরের খাবার, শরবত, পানি, বরফ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বাইরে যাওয়ার সময় ঘর থেকে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে রাখতে হবে।’

ডা. লেলিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে কিছু ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মামস, জলবসন্ত, ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বেড়ে যায়। বয়স্ক, শিশু ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যেমন—গর্ভবতীদের মধ্যে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।’

ইতোমধ্যেই দেশে এধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে ডা. লেলিন এসময় বয়স্ক, শিশু ও গর্ভবতীদের বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে সুতি কাপড় পরা, বাসার খাবার ও পানি সঙ্গে রাখার পরামর্শও দেন।

ডা. লেলিন বলেন, ‘এসময় শিশুদের মধ্যে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ থেকে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। তাই এসময় শিশুদের ঘরের বাইরে না যাওয়া, ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ও বরফ খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি, রাজশাহী বিভাগের ৮টি, খুলনা বিভাগের ১০টি, বরিশাল বিভাগের ৬টি, সিলেট বিভাগের ৪টি ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৪টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

আগামী চার-পাঁচদিনের মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস দিতে পারেনি আবহাওয়া বিভাগ। এছাড়া আগামী দু-একদিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কোনো কোনো স্থানে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়ে তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রিকে মৃদু, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রিকে মাঝারি ও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।

গতকাল বুধবার (১২ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গায় এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজারহাটে ১৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

আজ দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য কোনো সতর্কবার্তা নেই এবং কোনো সংকেতও দেখাতে হবে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

নিউজটি শেয়ার করুন

দোশের ৫৬ জেলায় তাপদাহ, বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

আপডেট সময় : ০১:২২:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা দেশে টানা মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। দেশের ৫৬টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং সেটি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশজুড়ে তাপমাত্রা আরও বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়। রোজায় দীর্ঘ সময় পানি না খাওয়া অবস্থায় প্রচুর ঘাম হলে শরীরে পানি শূন্যতা তৈরি হতে পারে। হতে পারে হিট স্ট্রোক। এ অবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে কেনাকাটার প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হতে হচ্ছে সব বয়সের মানুষকে। রোজাদার ব্যক্তিরা রোজা রেখে বাইরে যাচ্ছেন। তীব্র গরমে বেশি ঘাম হলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। আবার যারা রোজা রাখছেন না, তারা বাইরের খোলা খাবার, শরবত, ঠান্ডা পানি খেয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই তাপপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট তীব্র গরমে মানুষের শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে পানি শূন্যতা তৈরি হতে পারে। শরীর থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ার ফলে মানুষের হৃদপিন্ড ও নাড়ির গতি বেড়ে যায়। এ থেকে মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাব হতে পারে। অনেক সময় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। এই অবস্থাকে বলা হয়, হিট স্ট্রোক। এ পরিস্থিতির শিকার হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ছায়াময় স্থানে নিয়ে যেতে হবে। সম্ভব হলে শীতলতম স্থানে নিয়ে যেতে হবে। শরীরের কাপড় ঢিলে করে দিতে হবে। চোখেমুখে পানি দিতে তবে। পাশাপাশি স্যালাইন ও স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করাতে হবে। এ পরিস্থিতিতে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে বাইরের খাবার, শরবত, পানি, বরফ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বাইরে যাওয়ার সময় ঘর থেকে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে রাখতে হবে।’

ডা. লেলিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে কিছু ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মামস, জলবসন্ত, ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বেড়ে যায়। বয়স্ক, শিশু ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যেমন—গর্ভবতীদের মধ্যে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।’

ইতোমধ্যেই দেশে এধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে ডা. লেলিন এসময় বয়স্ক, শিশু ও গর্ভবতীদের বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে সুতি কাপড় পরা, বাসার খাবার ও পানি সঙ্গে রাখার পরামর্শও দেন।

ডা. লেলিন বলেন, ‘এসময় শিশুদের মধ্যে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ থেকে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। তাই এসময় শিশুদের ঘরের বাইরে না যাওয়া, ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ও বরফ খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি, রাজশাহী বিভাগের ৮টি, খুলনা বিভাগের ১০টি, বরিশাল বিভাগের ৬টি, সিলেট বিভাগের ৪টি ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৪টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

আগামী চার-পাঁচদিনের মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার কোনো পূর্বাভাস দিতে পারেনি আবহাওয়া বিভাগ। এছাড়া আগামী দু-একদিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কোনো কোনো স্থানে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়ে তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রিকে মৃদু, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রিকে মাঝারি ও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।

গতকাল বুধবার (১২ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গায় এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজারহাটে ১৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

আজ দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য কোনো সতর্কবার্তা নেই এবং কোনো সংকেতও দেখাতে হবে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।