নিজস্ব প্রতিবেদক :

দীর্ঘমেয়াদী রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং চলমান কোভিড-১৯ ভােইরাসের মহামারির কারণে বাংলাদেশ যেন কোন ভাবেই দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যের অপ্রতুলতার মতো পরিস্থিতিতে না পড়ে সেজন্য দেশবাসীকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মাটি ও মানুষ আছে। তাই এখন থেকেই আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে, বাংলাদেশ যাতে কখনো দুর্ভিক্ষ বা খাদ্য সংকটে না পড়ে। আমরা আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াব।’

বুধবার (১২ অক্টোবর) সকালে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৫ ও ১৪২৬’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই আবার রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে স্যাংশনের (নিষেধাজ্ঞা) প্রসঙ্গ টেনে দেশে প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষাবাদের আওতায় এনে উৎপাদন বাড়ানোর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।সেইসাথে বিশ্ববাজারে প্রতিটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তার সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানকালে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং সংস্থার প্রধানদের সাথে আলোচনায় আগামী বছর বিশ্ব একটি ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে পারে বলে সকলের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষ এখন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে উল্লেখ করে জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণে যুদ্ধ বন্ধ করার উদাত্ত আহ্বানের পাশাপাশি শিশুদের জন্য খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষার সাথে উন্নত জীবন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের সরকার প্রধান আরও জানান, তিনি মনে করেন না যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এত তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ অস্ত্র বিক্রির প্রয়োজনে যুদ্ধ চালিয়ে রাখতে পারলে কিছু দেশ লাভবান হয়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম। এছাড়া পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে থেকে শারমিন আক্তার বিজয়ীদের পক্ষে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাফল্য ও এর কার্যক্রমের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃষিমন্ত্রী কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ, সমবায়, উদ্বুদ্ধকরণ, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, বাণিজ্যিক চাষ, বনায়ন, গবাদি পশু পালন এবং মাছ চাষে অবদানের জন্য ৪৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৫ ও ১৪২৬ প্রদান করেন।

নির্বাচিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩টি স্বর্ণ, ২৫টি ব্রোঞ্জ এবং ১৬টি রৌপ্য পদক বিতরণ করা হয়।