ঢাকা ০৯:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:১১:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৫৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পঞ্চগড়ে জেলা প্রতিনিধি : 

কয়েকদিন ধরে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার কারণে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। দুইদিন ধরে বয়ে চলছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। সপ্তাহজুড়ে ঘনকুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসের কারণে হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। এই তাপমাত্রা দেশের মধ্যে এবং চলতি শীত মৌসুমের মধ্যেও সর্বনিম্ন। সোমবার (৯ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে সোমবার (৯ জানুয়ারি) সকালের পর থেকে সূর্যের দেখা মিলছে। দিনভর মিষ্টি রোদে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন ছিন্নমূল, খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। কিন্তু বিকেলের পর থেকেই বেড়েছে শীতের তীব্রতা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দুদিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ায় এ জেলায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তাপমাত্রা ৯.৬, ৯.৫ ও ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল। সোমবার তাপমাত্রা কমে ৭ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ১ ডিগ্রি কমে ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে।

সকাল থেকেই দেখা মিলেছে সূর্যের। তবে অনুভূত হচ্ছে প্রচন্ড শীত। সুর্যের মুখ দেখা গেলেও মিলছে না রোদের উষ্ণতা। শীত দুর্ভোগে পড়েছে নানান শ্রমজীবী-কর্মজীবী গরিব অসহায় মানুষ। পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে ছোটখাটো যানবাহন ভ্যান চালক মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে। তীব্র শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকে। তবে জীবিকার তাগিদে কাউকে নদীতে পাথর তুলতে, কাউকে চা-বাগানে আবার কাউকে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে। শীতের দুর্ভোগ বেড়েছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে। এসব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার যে ত্রাণ দিয়েছে তা একেবারে অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জেলা শহরের তেঁতুলিয়া রোডের পান দোকানদার আব্দুস সালাম বলেন, ঘনকুয়াশা আর ঠান্ডার কারণে কয়েকদিন ধরে সকাল সকাল দোকান খুলতে পারিনি। সোমবার সকালে রোদ থাকায় কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। দুইদিন ধরে সকাল সকাল দোকান খুলছি।

চা শ্রমিক জামাল, জাহেরুল ও নাসির জানান, সকালে বরফের মতো ঠান্ডা। চা বাগানে কাজ করতে গেলে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। কিন্তু জীবিকার তাগিদে কাজে বের হতে হয় আমাদের।

বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরাও। তারা জানান, ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতের কারণে ক্ষেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। দেরিতে মাঠে যেতে হচ্ছে। এখন বোরো মৌসুম। ভুট্টা, মরিচ, গমসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ বপন করতে হচ্ছে। শীতের কারণে দেরি করে জমিতে গিয়ে কাজ এগুচ্ছে না বলেও জানান তারা।

এদিকে শীতে প্রকোপে বেড়েছে নানান শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।

চিকিৎসকরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, কুয়াশা না থাকায় তাপমাত্রা কমেছে ও জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। উত্তরদিক থেকে হিমালয়ের হিমেল হাওয়া প্রবাহিত হওয়ায় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। সামনে আরও কয়েকদিন শৈত্যপ্রবাহ থাকবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মো.জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে এ পর্যন্ত চল্লিশ হাজার শীত বিতরণ করা হয়েছে। এ জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে

আপডেট সময় : ০১:১১:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৩

পঞ্চগড়ে জেলা প্রতিনিধি : 

কয়েকদিন ধরে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার কারণে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। দুইদিন ধরে বয়ে চলছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। সপ্তাহজুড়ে ঘনকুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসের কারণে হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। এই তাপমাত্রা দেশের মধ্যে এবং চলতি শীত মৌসুমের মধ্যেও সর্বনিম্ন। সোমবার (৯ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে সোমবার (৯ জানুয়ারি) সকালের পর থেকে সূর্যের দেখা মিলছে। দিনভর মিষ্টি রোদে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন ছিন্নমূল, খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। কিন্তু বিকেলের পর থেকেই বেড়েছে শীতের তীব্রতা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দুদিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ায় এ জেলায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তাপমাত্রা ৯.৬, ৯.৫ ও ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল। সোমবার তাপমাত্রা কমে ৭ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ১ ডিগ্রি কমে ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে।

সকাল থেকেই দেখা মিলেছে সূর্যের। তবে অনুভূত হচ্ছে প্রচন্ড শীত। সুর্যের মুখ দেখা গেলেও মিলছে না রোদের উষ্ণতা। শীত দুর্ভোগে পড়েছে নানান শ্রমজীবী-কর্মজীবী গরিব অসহায় মানুষ। পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে ছোটখাটো যানবাহন ভ্যান চালক মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে। তীব্র শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকে। তবে জীবিকার তাগিদে কাউকে নদীতে পাথর তুলতে, কাউকে চা-বাগানে আবার কাউকে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে। শীতের দুর্ভোগ বেড়েছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে। এসব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার যে ত্রাণ দিয়েছে তা একেবারে অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জেলা শহরের তেঁতুলিয়া রোডের পান দোকানদার আব্দুস সালাম বলেন, ঘনকুয়াশা আর ঠান্ডার কারণে কয়েকদিন ধরে সকাল সকাল দোকান খুলতে পারিনি। সোমবার সকালে রোদ থাকায় কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। দুইদিন ধরে সকাল সকাল দোকান খুলছি।

চা শ্রমিক জামাল, জাহেরুল ও নাসির জানান, সকালে বরফের মতো ঠান্ডা। চা বাগানে কাজ করতে গেলে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। কিন্তু জীবিকার তাগিদে কাজে বের হতে হয় আমাদের।

বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরাও। তারা জানান, ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতের কারণে ক্ষেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। দেরিতে মাঠে যেতে হচ্ছে। এখন বোরো মৌসুম। ভুট্টা, মরিচ, গমসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ বপন করতে হচ্ছে। শীতের কারণে দেরি করে জমিতে গিয়ে কাজ এগুচ্ছে না বলেও জানান তারা।

এদিকে শীতে প্রকোপে বেড়েছে নানান শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।

চিকিৎসকরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, কুয়াশা না থাকায় তাপমাত্রা কমেছে ও জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। উত্তরদিক থেকে হিমালয়ের হিমেল হাওয়া প্রবাহিত হওয়ায় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। সামনে আরও কয়েকদিন শৈত্যপ্রবাহ থাকবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মো.জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে এ পর্যন্ত চল্লিশ হাজার শীত বিতরণ করা হয়েছে। এ জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।