ঢাকা ১২:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দেশকে এগিয়ে নিতে শুধু পরিকল্পনা নয়, বাস্তবায়ন করছি: প্রধানমন্ত্রী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:০২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৪৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে আমরা শুধু পরিকল্পনাই করছি না, সেটা বাস্তবায়নও করছি।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, ‘এনএসটি ফেলোশিপ’ ও ‘বিশেষ গবেষণা অনুদান’ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অগ্রযাত্রা এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের। আমরা কোনও অংশে কারও থেকে পিছিয়ে থাকবো না। কারও কাছে হাত পেতে চলবো না। স্বাধীন বাংলাদেশ ১৪ বছরে বাংলাদেশের বিরাট পরিবর্তন এসেছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন স্মার্ট জনগোষ্ঠী। আমাদের অর্থনীতি হবে স্মার্ট অর্থনীতি। আত্মসামাজিক ক্ষেত্রে স্মার্ট উন্নতি আমরা করবো। কৃষি, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি যার ভিত্তি বঙ্গবন্ধুই স্থাপন করে যান। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন রাঙামাটির বেতবুনিয়াতে তিনি দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা এদেশের মানুষের উন্নয়ন ও মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটা করে যেতে পারেননি। পঁচাত্তরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সে সময়ে প্রাণ হারান আমার পরিবারের ১৮ জন সদস্য।

জাতির পিতা আণবিক শক্তি কমিশন, ইউজিসি, ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন, স্থলসীমানা চুক্তি সমুদ্রসীমা আইন করে গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পচাত্তরের পরবর্তী সরকার কোনও উদ্যোগ নেয়নি। তবে আমরা এসে সম্পন্ন করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতির পিতা ভিত্তিটা তৈরি করে গেছেন। আমরা সেটাকে ধরে কাজ করতে চেষ্টা করেছি।

‘স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে গবেষণা খুবই কম, সেটা বাড়াতে হবে’

সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু সে সময়ের বাজেটে শিক্ষার জন্য ২১ শতাংশ বরাদ্দ রাখেন। আমাদের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত ই খুদার নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শিক্ষাক্ষেত্রের ব্যয়কে দেশের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন করেন। কৃষি, বিজ্ঞান, গবেষণা ও উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ তিনি নিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে আনবিক শক্তি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার সে বিষয়ে কাজ শুরু করি। মাত্র ৫ বছরে আমরা সে কাজ সম্পন্ন করতে পারিনি। কিন্তু পরেরবার ক্ষমতায় এসে আমরা সে অধিকার বুঝে নিয়েছি। জাতির পিতা শুধু করেই দিয়ে যাননি, আমাদের জন্য সবকিছুর ভিত্তি প্রস্তর করে গেছেন তিনি।

সরকার গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রেখেছি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করি। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাপক গবেষণার জন্য বিভিন্ন ইন্সস্টিটিউট তৈরি করি।

সরকার প্রধান বলেন, একটা সময়ে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম ছিল। কিন্তু একটা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও গবেষণা কতটা জরুরি তা আমরা উপলব্ধি করি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। শুধু নিজের দেশে নয়, বিদেশ থেকে জ্ঞান আহরণ করে দেশের উন্নয়নেও যেন ভূমিকা রাখতে পারে সে ব্যবস্থাও করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি গবেষণায় সব থেকে বেশ সফলতা আমরা পেয়েছি। লবণাক্তসহিষ্ণু ধান আমরা দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদন করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আসবে। সেটাকে মোকাবিলা করে ভবিষ্যতে চলার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরাই প্রথম ২০০৯ সালে আলাদা ট্রাস্ট ফান্ড করেছি এবং কী কী প্রজেক্ট নিতে হবে সেগুলো শুরু করি। আমাদের আরও দক্ষ বিজ্ঞানী দরকার। আমরা সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। যারা ফেলোশিপ পেয়েছেন আন্তরিকতার সঙ্গে গবেষণা করবেন। জানতেও চাই কী কী উদ্ভাবন করলেন, এটা কতটুকু দেশের জন্য কাজে লাগবে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নভোথিয়েটার করতে যাওয়ার কারণে আমার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া দুটি মামলা দিয়েছিল। কেন দিয়েছিল জানি না। যে কাজই করতে গিয়েছি মামলা খেয়েছি। আমার বিরুদ্ধে এসব কারণে এক ডজন মামলা দিয়েছিল। আমরা এখন বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে নভোথিয়েটার করে দিচ্ছি। আমাদের যত বেশি গবেষণা বাড়বে জাতি হিসেবে তত বেশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমরা অবদান রাখতে পারবো।

প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ভোকেশনাল শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। কর্মসংস্থান হাইটেক পার্ট, হাইটেক সিটি, ইনকিউভেশন সেন্টার করে দিচ্ছি। শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি সবকিছুতেই আমরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারছি।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জে আমাদের লোকবল কম লাগবে কিন্তু টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। তার জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি দরকার। তবে আমরা সম্পূর্ণ সেদিকে যেতে চাই না। আমরা শ্রমনির্ভর শিল্পও করতে চাই কারণ আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দুটো মিলিয়ে কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে পারি, সেই চিন্তাটা সবার মাথায় থাকতে হবে।

গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতবেশি গবেষণা বাড়বে ততবেশি জাতি হিসেবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের দেশের মানুষ অবদান রাখতে পারবে।

গবেষণা আমাদের সাফল্য এনে দিতে পারে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি; আমিষ উৎপাদনে আমরা সফলতা অর্জন করেছি। সবই গবেষণার ফসল।

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের বাধাপ্রাপ্ত হতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে সারা দেশের মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে। সব বাধা মোকাবিলা করেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

সমুদ্র সম্পদ আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সুনীল অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। এজন্য আমাদের দক্ষ বিজ্ঞানী দরকার।

দেশে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান নিয়ে খুবই কম গবেষণা হচ্ছে জানিয়ে এ সেক্টরে গবেষণা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষি গবেষণা চলছে, বিজ্ঞানেও চলছে। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য খাতে গবেষণাটা খুবই সীমিত, খুবই কম।

সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে: প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যারা ডাক্তার হন, তারা ডাক্তার হয়ে পুলিশের চাকরিতে চলে যান বা রাজনীতিবিদ হয়ে যান। তারা ডাক্তারিও করেন না গবেষণাও করেন না। আর এক শ্রেণি আছে তারা শুধু টাকা কামাই করতেই ব্যস্ত। সরকারি চাকরিও করবেন আবার প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করবেন। সরকারি চাকরি আর প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করে সেখানে আর কিন্তু গবেষণা হয় না।

স্বাস্থ্য সেক্টরে গবেষণা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, এই সেক্টরে গবেষণাটা খুব দরকার। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা খুবই সীমিত কয়েকজন করেন। এটা যেন আরো হয় সেজন্য সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।

এ সময় অনুষ্ঠানে উপিস্থিত সরকারি দলের এমপি ডাক্তার রুহুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি চিকিৎসক। উনি যেন স্বাস্থ্যের গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেন।

যারা ফেলোশিপ পেয়েছেন তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে গবেষণার করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি যারা এ ফেলশিপ বা গবেষণার জন্য সহায়তা পেয়েছেন, আপনারা একটু আন্তরিকতার সঙ্গে গবেষণা করবেন। আমি তো জানতেও চাই কি কি উদ্ভাবন আপনারা করলেন, কতটুকু কাজে লাগবে। আসলে গবেষণার কোনো শেষ নেই।

এ দিন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ১০ জনকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, ২১ জনকে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ এবং ১৬ জনকে বিশেষ গবেষণা অনুষদের চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

নিউজটি শেয়ার করুন

দেশকে এগিয়ে নিতে শুধু পরিকল্পনা নয়, বাস্তবায়ন করছি: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০২:০২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে আমরা শুধু পরিকল্পনাই করছি না, সেটা বাস্তবায়নও করছি।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, ‘এনএসটি ফেলোশিপ’ ও ‘বিশেষ গবেষণা অনুদান’ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অগ্রযাত্রা এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের। আমরা কোনও অংশে কারও থেকে পিছিয়ে থাকবো না। কারও কাছে হাত পেতে চলবো না। স্বাধীন বাংলাদেশ ১৪ বছরে বাংলাদেশের বিরাট পরিবর্তন এসেছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন স্মার্ট জনগোষ্ঠী। আমাদের অর্থনীতি হবে স্মার্ট অর্থনীতি। আত্মসামাজিক ক্ষেত্রে স্মার্ট উন্নতি আমরা করবো। কৃষি, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি যার ভিত্তি বঙ্গবন্ধুই স্থাপন করে যান। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন রাঙামাটির বেতবুনিয়াতে তিনি দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা এদেশের মানুষের উন্নয়ন ও মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটা করে যেতে পারেননি। পঁচাত্তরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সে সময়ে প্রাণ হারান আমার পরিবারের ১৮ জন সদস্য।

জাতির পিতা আণবিক শক্তি কমিশন, ইউজিসি, ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন, স্থলসীমানা চুক্তি সমুদ্রসীমা আইন করে গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পচাত্তরের পরবর্তী সরকার কোনও উদ্যোগ নেয়নি। তবে আমরা এসে সম্পন্ন করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতির পিতা ভিত্তিটা তৈরি করে গেছেন। আমরা সেটাকে ধরে কাজ করতে চেষ্টা করেছি।

‘স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে গবেষণা খুবই কম, সেটা বাড়াতে হবে’

সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু সে সময়ের বাজেটে শিক্ষার জন্য ২১ শতাংশ বরাদ্দ রাখেন। আমাদের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত ই খুদার নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শিক্ষাক্ষেত্রের ব্যয়কে দেশের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন করেন। কৃষি, বিজ্ঞান, গবেষণা ও উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ তিনি নিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে আনবিক শক্তি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার সে বিষয়ে কাজ শুরু করি। মাত্র ৫ বছরে আমরা সে কাজ সম্পন্ন করতে পারিনি। কিন্তু পরেরবার ক্ষমতায় এসে আমরা সে অধিকার বুঝে নিয়েছি। জাতির পিতা শুধু করেই দিয়ে যাননি, আমাদের জন্য সবকিছুর ভিত্তি প্রস্তর করে গেছেন তিনি।

সরকার গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রেখেছি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করি। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাপক গবেষণার জন্য বিভিন্ন ইন্সস্টিটিউট তৈরি করি।

সরকার প্রধান বলেন, একটা সময়ে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম ছিল। কিন্তু একটা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও গবেষণা কতটা জরুরি তা আমরা উপলব্ধি করি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। শুধু নিজের দেশে নয়, বিদেশ থেকে জ্ঞান আহরণ করে দেশের উন্নয়নেও যেন ভূমিকা রাখতে পারে সে ব্যবস্থাও করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি গবেষণায় সব থেকে বেশ সফলতা আমরা পেয়েছি। লবণাক্তসহিষ্ণু ধান আমরা দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদন করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আসবে। সেটাকে মোকাবিলা করে ভবিষ্যতে চলার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরাই প্রথম ২০০৯ সালে আলাদা ট্রাস্ট ফান্ড করেছি এবং কী কী প্রজেক্ট নিতে হবে সেগুলো শুরু করি। আমাদের আরও দক্ষ বিজ্ঞানী দরকার। আমরা সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। যারা ফেলোশিপ পেয়েছেন আন্তরিকতার সঙ্গে গবেষণা করবেন। জানতেও চাই কী কী উদ্ভাবন করলেন, এটা কতটুকু দেশের জন্য কাজে লাগবে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নভোথিয়েটার করতে যাওয়ার কারণে আমার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া দুটি মামলা দিয়েছিল। কেন দিয়েছিল জানি না। যে কাজই করতে গিয়েছি মামলা খেয়েছি। আমার বিরুদ্ধে এসব কারণে এক ডজন মামলা দিয়েছিল। আমরা এখন বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে নভোথিয়েটার করে দিচ্ছি। আমাদের যত বেশি গবেষণা বাড়বে জাতি হিসেবে তত বেশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমরা অবদান রাখতে পারবো।

প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ভোকেশনাল শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। কর্মসংস্থান হাইটেক পার্ট, হাইটেক সিটি, ইনকিউভেশন সেন্টার করে দিচ্ছি। শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি সবকিছুতেই আমরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারছি।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জে আমাদের লোকবল কম লাগবে কিন্তু টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। তার জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি দরকার। তবে আমরা সম্পূর্ণ সেদিকে যেতে চাই না। আমরা শ্রমনির্ভর শিল্পও করতে চাই কারণ আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দুটো মিলিয়ে কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে পারি, সেই চিন্তাটা সবার মাথায় থাকতে হবে।

গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতবেশি গবেষণা বাড়বে ততবেশি জাতি হিসেবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের দেশের মানুষ অবদান রাখতে পারবে।

গবেষণা আমাদের সাফল্য এনে দিতে পারে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি; আমিষ উৎপাদনে আমরা সফলতা অর্জন করেছি। সবই গবেষণার ফসল।

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের বাধাপ্রাপ্ত হতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে সারা দেশের মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে। সব বাধা মোকাবিলা করেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

সমুদ্র সম্পদ আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সুনীল অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। এজন্য আমাদের দক্ষ বিজ্ঞানী দরকার।

দেশে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান নিয়ে খুবই কম গবেষণা হচ্ছে জানিয়ে এ সেক্টরে গবেষণা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষি গবেষণা চলছে, বিজ্ঞানেও চলছে। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য খাতে গবেষণাটা খুবই সীমিত, খুবই কম।

সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে: প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যারা ডাক্তার হন, তারা ডাক্তার হয়ে পুলিশের চাকরিতে চলে যান বা রাজনীতিবিদ হয়ে যান। তারা ডাক্তারিও করেন না গবেষণাও করেন না। আর এক শ্রেণি আছে তারা শুধু টাকা কামাই করতেই ব্যস্ত। সরকারি চাকরিও করবেন আবার প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করবেন। সরকারি চাকরি আর প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করে সেখানে আর কিন্তু গবেষণা হয় না।

স্বাস্থ্য সেক্টরে গবেষণা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, এই সেক্টরে গবেষণাটা খুব দরকার। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা খুবই সীমিত কয়েকজন করেন। এটা যেন আরো হয় সেজন্য সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।

এ সময় অনুষ্ঠানে উপিস্থিত সরকারি দলের এমপি ডাক্তার রুহুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি চিকিৎসক। উনি যেন স্বাস্থ্যের গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেন।

যারা ফেলোশিপ পেয়েছেন তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে গবেষণার করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি যারা এ ফেলশিপ বা গবেষণার জন্য সহায়তা পেয়েছেন, আপনারা একটু আন্তরিকতার সঙ্গে গবেষণা করবেন। আমি তো জানতেও চাই কি কি উদ্ভাবন আপনারা করলেন, কতটুকু কাজে লাগবে। আসলে গবেষণার কোনো শেষ নেই।

এ দিন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ১০ জনকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, ২১ জনকে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ এবং ১৬ জনকে বিশেষ গবেষণা অনুষদের চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।