ঢাকা ০১:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দুর্নীতি নয়, মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি: প্রধানমন্ত্রী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:১১:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৪০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক : 
দুর্নীতি নয়, মানুষের ভাগ্য গড়তে দেশে ফিরে এসেছি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (১ জানুয়ারি) পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। বাবা-মা-পরিবার হারিয়ে এদেশে দুর্নীতি করতে ফিরে আসিনি। সব হারিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে এসেছি, এটাই আমার লক্ষ্য। ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সরকারের একটি নীতিমালা ছিল ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করা, সেটাই করেছি।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব মিলিয়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দা ঘোষণা করলেও বাংলাদেশ সে পথে যায়নি বলে মন্তব্য করে তিনি প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক দেশের অর্থনীতি হিমশিম খাচ্ছে, তবুও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। একটি টাকাও রিজার্ভ ছিল না সেই সময়, কোনো কারেন্সি ছিল না। সেই অবস্থা থেকে তিনি দেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশ গড়তে পেরেছি, এটাই আমাদের অর্জন।

প্রধানমন্ত্রী  বলেন, এখনকার ডিপ্লোমেসি (কূটনীতি) পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি না, ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি হবে। প্রত্যকটা দূতাবাসকে রফতানি বাণিজ্য, কোনো দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, আমরা কী রফতানি করতে পারি বা কোথায় থেকে আমরা বিনিয়োগ আনতে পারি, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার নিদের্শ দিয়েছি।

গ্যাস-বিদ্যুতে উৎপাদন খরচ দিতে হবে, ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি, ওই এলাকার বাংলাদেশের যারা রাষ্ট্রদূত তাদের ডেকে সেভাবে ব্রিফ করেছি। আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সেটা বলে দেওয়া আছে। দূতাবাস চেষ্টা করবে, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা আছে। আমরা সেটাই রফতানি করতে চেষ্টা করবো। এ ভাবেই বাণিজ্য বৃদ্ধি করব।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা রফতানিযোগ্য কিছু পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। সেটাকে বহুমুখী করার কথা, আমি বার বার একথা বলে যাচ্ছি, এখনও বলছি, যত বেশি পণ্য বহুমুখি করতে পারব, যত বেশি নতুন নতুন বাজার পাবো, তত বেশি পণ্য রফতানি করতে পারব। আমাদের মানুষের কর্মক্ষমতাও বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সেজন্য আমি সবাইকে আহ্বান করেছি- এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে। একশ অঞ্চলে আপনারা নানা ধরনের ব্যবসা করেন, খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করেন। আমরা মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছের চাহিদা এখন অনেক বেশি। এমন কী কাঁচা কাঠালের কী পরিমাণে চাহিদা বেড়েছে এটা আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না। অবশ্যই একটা ভালো সুখবর আছে, বার মাস যাতে কাঁঠাল উৎপাদন হয় আমাদের গবেষকরা তার ব্যবস্থা করেছে। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল।

বাণিজ্যমেলা-2

তিনি আরো বলেন, যেসব সমস্ত কৃষিপণ্য, পাট, চা, তরি-তরকারি, শাক-সবজি, ফল-মূল যাই আমাদের উৎপাদন হচ্ছে; সেগুলো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি জন্য প্রক্রিয়াজাত করা। খাদ্যের চাহিদা আমার মনে হয় কখনও বন্ধ হবে না। যেহেতু সারাবিশ্বে খাদ্যে মন্দা এবং পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য একটা সুযোগ আছে। আপনারা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলুন। তাতে আমাদের দেশীয় উৎপাদকরা যেমন লাভবান হবে, কর্মসংস্থানও হবে। পাশাপাশি রফতানির জন্য নতুন পণ্য হবে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম সব কিছু আমরা উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। যত বেশি খাদ্য রফতানি হবে তত বেশি সুবিধা হবে। এভাবে কাজ করলে আমরা আরও বেশি রফতানি বাড়াতে পারব। আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আপনারা কাজ করবেন।

সরকারপ্রধান বলেন, বিদ্যুৎ আর গ্যাস যদি একেবারে নিবচ্ছিন্নভাবে চান, এগুলো ক্রয় করতে বা উৎপাদন করতে যে খরচ হবে সেই খরচের দামটা দিতে হবে। কত আর ভর্তুকি দেওয়া যাবে। ভর্তুকি তো জনগণের টাকা, এতো বেশি দেওয়াও যায় না। ব্যবসায়ী বা ইন্ডাস্ট্রিয়ালদের এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, এই মেলায় আমাদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উৎপাদিত পণ্যে সমরোহ ঘটবে। দেশি-বিদেশি পণ্য নিয়ে সবাই আসবে। আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে। সেদিক থেকে আমি মনে করি মেলা সফল হবে। সারা বিশ্বে একটা মন্দা চলছে, তার প্রভাবটা আমাদের বাণিজ্যে কিছুটা আসবে। আমাদের দেশে ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। আমরা সেভাবে একটা বিরাট মার্কেট তৈরি করতে পারি।

বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইস্ট, ওয়েস্ট, নর্থ সাউর্থের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি। এই সুযোগটা নিয়েই বেশি বেশি পণ্য উৎপাদন করতে পারব, রফতানি করতে পারব, বাণিজ্য করতে পারব। এছাড়া সেবাখাতের উন্নতি করতে পারব। আমরা পর্যটক টানতে পারব। অনেক সুবিধা আমাদের সামনে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭ সালে যখন জেলে ছিলাম তখন ওখানে লিখে রেখে ছিলাম ২০২১ সালে কী কী করব। ২০২১ সালের ভেতরে বাংলাদেশকে কীভাবে উন্নত করব। ২০০৮ নির্বাচনে সেটা সংযুক্ত করে আরও উন্নতমানের সেই টার্গেট অর্জন করেছি। এখন লক্ষ্য ২০৪১ সাল। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হবে, ৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। দ্বিতীয়টা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রত্যকে ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে দক্ষ হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট বিজনেস, স্মার্ট হেলথ, স্মার্ট এডুকেশনসহ সব কিছু আমরা করব। এসময় সবাইকে ২০২৩ সালের ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, হ্যাপি নিউ ইয়ার।

তিনি বলেন, রপ্তানির নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি দেশের বাজারের দিকেও নজর দিতে হবে। যত বেশি পণ্য বহুমুখি করতে পারব, তত বেশি নতুন নতুন বাজার পাব। তাহলে পণ্য রপ্তানিও বেশি করতে পারব।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মর্যাদা কার্যকর করার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন কমিটি করে কোন খাতে কী কী করণীয় সেগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তবে কোভিডের কারণে আমাদের দুই বছর সময় নিতে হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এটাই বাংলাদেশের অর্জন। ২০২৬ সালের মধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশ কার্যকর করব, ২০২৪ এ করার কথা ছিল।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে ৫-জি চালু করা হবে। শিল্প-কারখানা অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে হবে, বাইরে করলে কোনো সার্ভিস পাবেন না। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। পণ্যের বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজার তৈরির দিকে ব্যবসায়ীদের নজর দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়ানোর পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি, ওই অঞ্চলে আমাদের যারা রাষ্ট্রদূত আছে, তাদের ডেকে ব্রিফ করেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এমন নির্দেশনা দেওয়া আছে যে, প্রত্যেকটা দূতাবাস চেষ্টা করবে, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা আছে (তা জানাবে), সেই পণ্য আমরা আমাদের দেশে উৎপাদন করব, রফতানি করব। এভাবেই বাণিজ্য আমরা বৃদ্ধি করব।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমরা রফতানিযোগ্য কিছু পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। সেটাকে বহুমুখী করার কথা, আমি বারবার একথা বলে যাচ্ছি, এখনো বলছি, যত বেশি পণ্য বহুমুখী করতে পারব, যত বেশি নতুন নতুন বাজার পাব, তত বেশি পণ্য রফতানি করতে পারব। আমাদের মানুষের কর্মক্ষমতাও বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি জসীম উদ্দিন এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান। অনুষ্ঠানে দেশের ব্যবসায়ী নেতা, রফতানিকারক, মেলায় অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি এবং স্থানীয় জনসাধারণও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ ১২টি দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। মেলায় ১৭টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। মেলায় দেশ-বিদেশের মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি।

নিউজটি শেয়ার করুন

দুর্নীতি নয়, মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০২:১১:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জানুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 
দুর্নীতি নয়, মানুষের ভাগ্য গড়তে দেশে ফিরে এসেছি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (১ জানুয়ারি) পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। বাবা-মা-পরিবার হারিয়ে এদেশে দুর্নীতি করতে ফিরে আসিনি। সব হারিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে এসেছি, এটাই আমার লক্ষ্য। ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সরকারের একটি নীতিমালা ছিল ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করা, সেটাই করেছি।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব মিলিয়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দা ঘোষণা করলেও বাংলাদেশ সে পথে যায়নি বলে মন্তব্য করে তিনি প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক দেশের অর্থনীতি হিমশিম খাচ্ছে, তবুও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। একটি টাকাও রিজার্ভ ছিল না সেই সময়, কোনো কারেন্সি ছিল না। সেই অবস্থা থেকে তিনি দেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশ গড়তে পেরেছি, এটাই আমাদের অর্জন।

প্রধানমন্ত্রী  বলেন, এখনকার ডিপ্লোমেসি (কূটনীতি) পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি না, ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি হবে। প্রত্যকটা দূতাবাসকে রফতানি বাণিজ্য, কোনো দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, আমরা কী রফতানি করতে পারি বা কোথায় থেকে আমরা বিনিয়োগ আনতে পারি, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার নিদের্শ দিয়েছি।

গ্যাস-বিদ্যুতে উৎপাদন খরচ দিতে হবে, ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি, ওই এলাকার বাংলাদেশের যারা রাষ্ট্রদূত তাদের ডেকে সেভাবে ব্রিফ করেছি। আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সেটা বলে দেওয়া আছে। দূতাবাস চেষ্টা করবে, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা আছে। আমরা সেটাই রফতানি করতে চেষ্টা করবো। এ ভাবেই বাণিজ্য বৃদ্ধি করব।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা রফতানিযোগ্য কিছু পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। সেটাকে বহুমুখী করার কথা, আমি বার বার একথা বলে যাচ্ছি, এখনও বলছি, যত বেশি পণ্য বহুমুখি করতে পারব, যত বেশি নতুন নতুন বাজার পাবো, তত বেশি পণ্য রফতানি করতে পারব। আমাদের মানুষের কর্মক্ষমতাও বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সেজন্য আমি সবাইকে আহ্বান করেছি- এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে। একশ অঞ্চলে আপনারা নানা ধরনের ব্যবসা করেন, খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করেন। আমরা মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছের চাহিদা এখন অনেক বেশি। এমন কী কাঁচা কাঠালের কী পরিমাণে চাহিদা বেড়েছে এটা আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না। অবশ্যই একটা ভালো সুখবর আছে, বার মাস যাতে কাঁঠাল উৎপাদন হয় আমাদের গবেষকরা তার ব্যবস্থা করেছে। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল।

বাণিজ্যমেলা-2

তিনি আরো বলেন, যেসব সমস্ত কৃষিপণ্য, পাট, চা, তরি-তরকারি, শাক-সবজি, ফল-মূল যাই আমাদের উৎপাদন হচ্ছে; সেগুলো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি জন্য প্রক্রিয়াজাত করা। খাদ্যের চাহিদা আমার মনে হয় কখনও বন্ধ হবে না। যেহেতু সারাবিশ্বে খাদ্যে মন্দা এবং পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য একটা সুযোগ আছে। আপনারা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলুন। তাতে আমাদের দেশীয় উৎপাদকরা যেমন লাভবান হবে, কর্মসংস্থানও হবে। পাশাপাশি রফতানির জন্য নতুন পণ্য হবে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম সব কিছু আমরা উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। যত বেশি খাদ্য রফতানি হবে তত বেশি সুবিধা হবে। এভাবে কাজ করলে আমরা আরও বেশি রফতানি বাড়াতে পারব। আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আপনারা কাজ করবেন।

সরকারপ্রধান বলেন, বিদ্যুৎ আর গ্যাস যদি একেবারে নিবচ্ছিন্নভাবে চান, এগুলো ক্রয় করতে বা উৎপাদন করতে যে খরচ হবে সেই খরচের দামটা দিতে হবে। কত আর ভর্তুকি দেওয়া যাবে। ভর্তুকি তো জনগণের টাকা, এতো বেশি দেওয়াও যায় না। ব্যবসায়ী বা ইন্ডাস্ট্রিয়ালদের এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, এই মেলায় আমাদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উৎপাদিত পণ্যে সমরোহ ঘটবে। দেশি-বিদেশি পণ্য নিয়ে সবাই আসবে। আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে। সেদিক থেকে আমি মনে করি মেলা সফল হবে। সারা বিশ্বে একটা মন্দা চলছে, তার প্রভাবটা আমাদের বাণিজ্যে কিছুটা আসবে। আমাদের দেশে ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। আমরা সেভাবে একটা বিরাট মার্কেট তৈরি করতে পারি।

বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইস্ট, ওয়েস্ট, নর্থ সাউর্থের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি। এই সুযোগটা নিয়েই বেশি বেশি পণ্য উৎপাদন করতে পারব, রফতানি করতে পারব, বাণিজ্য করতে পারব। এছাড়া সেবাখাতের উন্নতি করতে পারব। আমরা পর্যটক টানতে পারব। অনেক সুবিধা আমাদের সামনে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭ সালে যখন জেলে ছিলাম তখন ওখানে লিখে রেখে ছিলাম ২০২১ সালে কী কী করব। ২০২১ সালের ভেতরে বাংলাদেশকে কীভাবে উন্নত করব। ২০০৮ নির্বাচনে সেটা সংযুক্ত করে আরও উন্নতমানের সেই টার্গেট অর্জন করেছি। এখন লক্ষ্য ২০৪১ সাল। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হবে, ৪১ সালে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। দ্বিতীয়টা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রত্যকে ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে দক্ষ হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট বিজনেস, স্মার্ট হেলথ, স্মার্ট এডুকেশনসহ সব কিছু আমরা করব। এসময় সবাইকে ২০২৩ সালের ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, হ্যাপি নিউ ইয়ার।

তিনি বলেন, রপ্তানির নতুন বাজার খোঁজার পাশাপাশি দেশের বাজারের দিকেও নজর দিতে হবে। যত বেশি পণ্য বহুমুখি করতে পারব, তত বেশি নতুন নতুন বাজার পাব। তাহলে পণ্য রপ্তানিও বেশি করতে পারব।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মর্যাদা কার্যকর করার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন কমিটি করে কোন খাতে কী কী করণীয় সেগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তবে কোভিডের কারণে আমাদের দুই বছর সময় নিতে হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এটাই বাংলাদেশের অর্জন। ২০২৬ সালের মধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশ কার্যকর করব, ২০২৪ এ করার কথা ছিল।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে ৫-জি চালু করা হবে। শিল্প-কারখানা অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে হবে, বাইরে করলে কোনো সার্ভিস পাবেন না। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। পণ্যের বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজার তৈরির দিকে ব্যবসায়ীদের নজর দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়ানোর পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছি, ওই অঞ্চলে আমাদের যারা রাষ্ট্রদূত আছে, তাদের ডেকে ব্রিফ করেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এমন নির্দেশনা দেওয়া আছে যে, প্রত্যেকটা দূতাবাস চেষ্টা করবে, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা আছে (তা জানাবে), সেই পণ্য আমরা আমাদের দেশে উৎপাদন করব, রফতানি করব। এভাবেই বাণিজ্য আমরা বৃদ্ধি করব।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমরা রফতানিযোগ্য কিছু পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। সেটাকে বহুমুখী করার কথা, আমি বারবার একথা বলে যাচ্ছি, এখনো বলছি, যত বেশি পণ্য বহুমুখী করতে পারব, যত বেশি নতুন নতুন বাজার পাব, তত বেশি পণ্য রফতানি করতে পারব। আমাদের মানুষের কর্মক্ষমতাও বাড়ে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি জসীম উদ্দিন এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান। অনুষ্ঠানে দেশের ব্যবসায়ী নেতা, রফতানিকারক, মেলায় অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি এবং স্থানীয় জনসাধারণও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপালসহ ১২টি দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। মেলায় ১৭টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। মেলায় দেশ-বিদেশের মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২২৫টি।