ঢাকা ১০:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দিনাজপুরে একদিকে তীব্র তাপদাহ অন্যদিকে চলছে সরকারি গাছ কাটার মহোৎসব

মো: খাদেমুল ইসলাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৩:২০:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মে ২০২৪
  • / ৪৩৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

তীব্র দাপদাহে পুড়ছে উত্তরের জেলা দিনাজপুর। ৩৯ থেকে ৪১ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করছে তাপমাত্রার পারদ। কিন্তু এরই মধ্যে জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জে সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য কাটা হচ্ছে ২৯৮টি মুল্যবান গাছ। তীব্র দাপদাহের মধ্যে গাছ কাটার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

১৯৯০ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রাস্তার পাশে জেলা পরিষদ বোচাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে মেহগনি, বকাইল, পাকুড়, কদম, কৃষ্ণচুড়া, কাঁঠাল, আম, কামরাঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রজাতির রোপন করেছিল। সেই সড়কগুলো প্রশস্ত করণের কাজ শুর“ করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। কিš‘ রাস্তা প্রশস্ত করণে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে প্রায় ৩৫ বছর বয়সী গাছগুলো। গত ৪ ফেব্রুয়ারী জেলা পরিষদ বোচাগঞ্জ উপজেলার পুলেরহাট বাজার, মাধবপুর, ডাকবাংলা অডিটোরিয়াম মোড়, জালগাঁও, বকুলতলা এলাকায় ৭টি লটে ২৯৮টি গাছ বিক্রির ইজারা প্রদান করে। আর ১৬ এপ্রিল গাছ কাটার কার্যাদেশ প্রদান করে। স্থানীয়দের অভিযোগ- রাস্তা প্রশস্ত করণের নামে একাধারে রাস্তার দুপাশের গাছ কাটা হচ্ছে। এমনকি রাস্তা থেকে অনেক দুরের গাছগুলোও কাটা হচ্ছে। তীব্র তাপদাহের মধ্যে গাছ কাটার ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।

স্থানীয় বাসিন্দা মনতাজুল ইসলাম বলেন, “রাস্তা বাড়াতে গিয়ে যে গাছ সীমানার মধ্যে পড়বে সেটা কাটুক। কিন্তু রাস্তা থেকে অনেক দুরের গাছগুলো কেন কাটা হচ্ছে। আমরা তাদের বাধা দিলে কোন কথা শুনে না। তারা তো গাছ কেটে এলাকাকে মরুভুমি বানায় দিচ্ছে। রাস্তার পাশে গাছ থাকলে মানুষ গাড়ী রেখে একটু আরাম করে। কিন্তু গাছ না থাকলে এখানে তো আর মানুষ দাড়াবে না।

রাসেল ইসলাম বলেন, গরমের পর যদি গাছগুরো কাটা হতো তাহলে কি তাদের অনেক বড় ক্ষতি হতো। কিন্তু তারা এই গরমের মধ্যে গাছগুলো কেটে সাবাড় করে দিল। এরা তো জাতির শত্রু। উপর মহলের নির্দেশে তো গাছগুলো কাটা হলো। তারা তো এসিতে বসে গাছ কাটার অর্ডার দেয়। আমরা চাই গাছগুলো যেন কাটা না হয়। গাছ কাটার ফলে ওই এলাকার অর্ধশত দোকানে বেচাকেনা কমে গেছে। তীব্র রোদের কারণে দোকানের সামনে ক্রেতারা দাড়াতে চান না বলে দোকানীদের অভিযোগ। স্থানীয় কম্পিউটার দোকানদার জয়নাল আবেদিন বলেন, এক সপ্তাহ পূর্বে আমার দোকানের সামনে মানুষ মোটরসাইকেল রেখে দোকানে কাজ করাতো। কিন্তু গাছগুলো কাটার পর দোকানে বসে থাকতে পারি না। সাধারণ মানুষও আর কাজ নিয়ে আসছে না। এই গরমের সময়ে গাছ কেটে তারা ঠিক করে নাই।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, “জেলা পরিষদ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো কিনে নেয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের কর্মকর্তার তদারকিতে কার্যাদেশ মোতাবেক গাছগুলো কাটা হচ্ছে।

দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সড়ক উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন বলেন, “সড়ক প্রশস্ত করনের কাজ চলমান রয়েছে। আগে রাস্তা ১৮ ফিট ছিল। এখন প্রশস্ত করে ২৪ ফিট করা হবে। তাই রাস্তার ধারের গাছগুলো কর্তনের জন্য জেলা পরিষদকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ সেই মোতাবেক গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে দিয়েছে। গাছ কাটার সমস্ত দায়-দায়িত্ব জেলা পরিষদের। সড়কের জায়গার মধ্যে যে সকল গাছ পড়েছে সেগুলো কাটার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে গাছ কাটলে সেটার দায়ভার জেলা পরিষদকে নিতে হবে।

দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোকলেসুর রহমান বলেন, আমি যোগদানের আগে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে একটা রিকুইজেশন এসেছিল। রাস্তার উন্নয়নে কাজ করা হবে, তাই এই গাছগুলো সরিয়ে দেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রিকুইজেশন মোতাবেক বন বিভাগ থেকে মুল্য সংগ্রহ, জেলা প্রশাসক কার্যালয় এবং বিভাগীয় কমিশনার অফিসে অনুমোদন করা হয়েছে।

এরপর আমরা টেন্ডার দিয়েছি। কিন্তু আমার কাছে অভিযোগ আসছে যে- কিছু গাছ আছে রাস্তা থেকে অনেক দুরে। সেগুলো কাটা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি ইঞ্জিনিয়ার সাথে কথা বলেছি। কিš‘ তারা আমাকে কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। একটি গাছ বড় করতে অনেক সময় লাগে। কিš‘ এভাবে কাটা হওয়ায় আমি অবাক হয়েছি। আমি বিষয়টি নিয়ে মিটিংয়ে কথা বলেছি। ভবিষ্যতে রাস্তা থেকে দুরের গাছগুলো যেন না কাটা হয়।

 

বাখ//আর

নিউজটি শেয়ার করুন

দিনাজপুরে একদিকে তীব্র তাপদাহ অন্যদিকে চলছে সরকারি গাছ কাটার মহোৎসব

আপডেট সময় : ০৩:২০:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মে ২০২৪

তীব্র দাপদাহে পুড়ছে উত্তরের জেলা দিনাজপুর। ৩৯ থেকে ৪১ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করছে তাপমাত্রার পারদ। কিন্তু এরই মধ্যে জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জে সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য কাটা হচ্ছে ২৯৮টি মুল্যবান গাছ। তীব্র দাপদাহের মধ্যে গাছ কাটার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

১৯৯০ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রাস্তার পাশে জেলা পরিষদ বোচাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে মেহগনি, বকাইল, পাকুড়, কদম, কৃষ্ণচুড়া, কাঁঠাল, আম, কামরাঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রজাতির রোপন করেছিল। সেই সড়কগুলো প্রশস্ত করণের কাজ শুর“ করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। কিš‘ রাস্তা প্রশস্ত করণে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে প্রায় ৩৫ বছর বয়সী গাছগুলো। গত ৪ ফেব্রুয়ারী জেলা পরিষদ বোচাগঞ্জ উপজেলার পুলেরহাট বাজার, মাধবপুর, ডাকবাংলা অডিটোরিয়াম মোড়, জালগাঁও, বকুলতলা এলাকায় ৭টি লটে ২৯৮টি গাছ বিক্রির ইজারা প্রদান করে। আর ১৬ এপ্রিল গাছ কাটার কার্যাদেশ প্রদান করে। স্থানীয়দের অভিযোগ- রাস্তা প্রশস্ত করণের নামে একাধারে রাস্তার দুপাশের গাছ কাটা হচ্ছে। এমনকি রাস্তা থেকে অনেক দুরের গাছগুলোও কাটা হচ্ছে। তীব্র তাপদাহের মধ্যে গাছ কাটার ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।

স্থানীয় বাসিন্দা মনতাজুল ইসলাম বলেন, “রাস্তা বাড়াতে গিয়ে যে গাছ সীমানার মধ্যে পড়বে সেটা কাটুক। কিন্তু রাস্তা থেকে অনেক দুরের গাছগুলো কেন কাটা হচ্ছে। আমরা তাদের বাধা দিলে কোন কথা শুনে না। তারা তো গাছ কেটে এলাকাকে মরুভুমি বানায় দিচ্ছে। রাস্তার পাশে গাছ থাকলে মানুষ গাড়ী রেখে একটু আরাম করে। কিন্তু গাছ না থাকলে এখানে তো আর মানুষ দাড়াবে না।

রাসেল ইসলাম বলেন, গরমের পর যদি গাছগুরো কাটা হতো তাহলে কি তাদের অনেক বড় ক্ষতি হতো। কিন্তু তারা এই গরমের মধ্যে গাছগুলো কেটে সাবাড় করে দিল। এরা তো জাতির শত্রু। উপর মহলের নির্দেশে তো গাছগুলো কাটা হলো। তারা তো এসিতে বসে গাছ কাটার অর্ডার দেয়। আমরা চাই গাছগুলো যেন কাটা না হয়। গাছ কাটার ফলে ওই এলাকার অর্ধশত দোকানে বেচাকেনা কমে গেছে। তীব্র রোদের কারণে দোকানের সামনে ক্রেতারা দাড়াতে চান না বলে দোকানীদের অভিযোগ। স্থানীয় কম্পিউটার দোকানদার জয়নাল আবেদিন বলেন, এক সপ্তাহ পূর্বে আমার দোকানের সামনে মানুষ মোটরসাইকেল রেখে দোকানে কাজ করাতো। কিন্তু গাছগুলো কাটার পর দোকানে বসে থাকতে পারি না। সাধারণ মানুষও আর কাজ নিয়ে আসছে না। এই গরমের সময়ে গাছ কেটে তারা ঠিক করে নাই।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, “জেলা পরিষদ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো কিনে নেয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের কর্মকর্তার তদারকিতে কার্যাদেশ মোতাবেক গাছগুলো কাটা হচ্ছে।

দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সড়ক উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন বলেন, “সড়ক প্রশস্ত করনের কাজ চলমান রয়েছে। আগে রাস্তা ১৮ ফিট ছিল। এখন প্রশস্ত করে ২৪ ফিট করা হবে। তাই রাস্তার ধারের গাছগুলো কর্তনের জন্য জেলা পরিষদকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ সেই মোতাবেক গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে দিয়েছে। গাছ কাটার সমস্ত দায়-দায়িত্ব জেলা পরিষদের। সড়কের জায়গার মধ্যে যে সকল গাছ পড়েছে সেগুলো কাটার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে গাছ কাটলে সেটার দায়ভার জেলা পরিষদকে নিতে হবে।

দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোকলেসুর রহমান বলেন, আমি যোগদানের আগে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে একটা রিকুইজেশন এসেছিল। রাস্তার উন্নয়নে কাজ করা হবে, তাই এই গাছগুলো সরিয়ে দেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রিকুইজেশন মোতাবেক বন বিভাগ থেকে মুল্য সংগ্রহ, জেলা প্রশাসক কার্যালয় এবং বিভাগীয় কমিশনার অফিসে অনুমোদন করা হয়েছে।

এরপর আমরা টেন্ডার দিয়েছি। কিন্তু আমার কাছে অভিযোগ আসছে যে- কিছু গাছ আছে রাস্তা থেকে অনেক দুরে। সেগুলো কাটা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি ইঞ্জিনিয়ার সাথে কথা বলেছি। কিš‘ তারা আমাকে কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। একটি গাছ বড় করতে অনেক সময় লাগে। কিš‘ এভাবে কাটা হওয়ায় আমি অবাক হয়েছি। আমি বিষয়টি নিয়ে মিটিংয়ে কথা বলেছি। ভবিষ্যতে রাস্তা থেকে দুরের গাছগুলো যেন না কাটা হয়।

 

বাখ//আর