ঢাকা ০৪:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ট্রেন দুর্ঘটনার দায় কাঁধে নিয়ে গ্রিসের পরিবহনমন্ত্রীর পদত্যাগ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:২৯:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৪৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

গ্রিসে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ৪৩ জন নিহত হওয়ার পর এজন্য ‘মানুষের ভুলকে’ দায়ী করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কাইরিয়াকোস মিতাসোতাকিস। আর এ ঘটনার পর দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করেছেন গ্রিসের পরিবহনমন্ত্রী।

স্থানীয় সময় বুধবার (১ মার্চ) দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

লরিসা শহরের কাছে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে একটি টানেল থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মালবাহীর ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় যাত্রীবাহী ট্রেনের। ট্রেনটিতে ৩৫০ জনের বেশি আরোহী ছিলেন। তারা রাজধানী এথেন্স থেকে থেসালোনিকির দিকে যাচ্ছিলেন।

কেন দুটি পরিষেবা একই ট্র্যাকে চলছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। জীবিতদের খোঁজে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালাচ্ছেন উদ্ধারকারী দলগুলো।

সিগন্যালিংয়ের দায়িত্বে থাকা স্টেশনমাস্টার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তার দাবি, প্রযুক্তিগত ব্যর্থতার জন্য দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর গ্রিক প্রধানমন্ত্রী মিসোটাকিস বলেন, সবকিছুই (আলামত) ‘একটি দুঃখজনক মানব ত্রুটিকে” নির্দেশ করে। আইন অনুযায়ী বিচার হবে। জনগণের কাছে অবশ্যই সরকার জবাবদিহি করবে।

কোস্টাস কারামানলিস বলেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনা যখন ঘটেছে, তখন কিছু না ঘটার ভান করে কাজ চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি এই ব্যর্থতার দায় নিচ্ছি এবং পরিবহনমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় যে মানুষেরা মারা গেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ পদত্যাগ করা আমার কর্তব্য। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

বিবিসি বলছে, গত মঙ্গলবার গ্রিসের লারিসা শহরের কাছে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনের সঙ্গে মালবাহী একটি ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৮ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮৫ জন।

লারিসা শহরের কর্তৃপক্ষ জানায়, যাত্রীবাহী ট্রেনটি গ্রিসের রাজধানী এথেন্স থেকে উত্তরাঞ্চলীয় শহর থেসালোনিকি যাচ্ছিল। আর মালবাহী ট্রেনটি থেসালোনিকি থেকে লারিসা যাচ্ছিল।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, যাত্রীবাহী ট্রেনটিতে ৩৫০ জন আরোহী ছিলেন। দুর্ঘটনার পর প্রায় ২৫০ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সংঘর্ষের কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কারামানলিস ঘটনাস্থল পরির্দশনের পর দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুলিশ লারিসা শহরের স্টেশন মাস্টারকে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে গাফিলতির কারণে নরহত্যার অভিযোগ এনেছে। ৫৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ট্রেনের সিগন্যাল দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন।

তবে ভুল করার কথা অস্বীকার করেছেন স্টেশন মাস্টার। তিনি দুর্ঘটনার জন্য প্রযুক্তিগত ত্রুটিকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে এই দুর্ঘটনাকে ‘অকল্পনীয় এক মর্মান্তিক ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছেন গ্রিসের প্রেসিডেন্ট ক্যাটেরিনা সাকেলারোপলু। সেইসঙ্গে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।

ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে জীবন বাঁচিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী স্টারজিওস মিনেনিস। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলছিলেন, ‘আমরা একটা বিকট শব্দ শুনতে পাই। ট্রেনের কামরার মধ্যে আমরা গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম। তারপর এটি (বগি) গড়িয়ে একদিকে থামলো। তারপর সবার মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হলো। চারিদিকে তার ঝুলছে, আগুন। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে গিয়েছিল। আমরা আগুনে পুড়ে যাচ্ছিলাম।’

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে। কোন প্রাথমিক ধারণা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। দেড়শোর বেশি দমকলকর্মী এবং ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনাস্থলে কাজ করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্রেন দুর্ঘটনার দায় কাঁধে নিয়ে গ্রিসের পরিবহনমন্ত্রীর পদত্যাগ

আপডেট সময় : ০৩:২৯:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

গ্রিসে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ৪৩ জন নিহত হওয়ার পর এজন্য ‘মানুষের ভুলকে’ দায়ী করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কাইরিয়াকোস মিতাসোতাকিস। আর এ ঘটনার পর দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করেছেন গ্রিসের পরিবহনমন্ত্রী।

স্থানীয় সময় বুধবার (১ মার্চ) দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

লরিসা শহরের কাছে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে একটি টানেল থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মালবাহীর ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় যাত্রীবাহী ট্রেনের। ট্রেনটিতে ৩৫০ জনের বেশি আরোহী ছিলেন। তারা রাজধানী এথেন্স থেকে থেসালোনিকির দিকে যাচ্ছিলেন।

কেন দুটি পরিষেবা একই ট্র্যাকে চলছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। জীবিতদের খোঁজে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালাচ্ছেন উদ্ধারকারী দলগুলো।

সিগন্যালিংয়ের দায়িত্বে থাকা স্টেশনমাস্টার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তার দাবি, প্রযুক্তিগত ব্যর্থতার জন্য দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর গ্রিক প্রধানমন্ত্রী মিসোটাকিস বলেন, সবকিছুই (আলামত) ‘একটি দুঃখজনক মানব ত্রুটিকে” নির্দেশ করে। আইন অনুযায়ী বিচার হবে। জনগণের কাছে অবশ্যই সরকার জবাবদিহি করবে।

কোস্টাস কারামানলিস বলেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনা যখন ঘটেছে, তখন কিছু না ঘটার ভান করে কাজ চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি এই ব্যর্থতার দায় নিচ্ছি এবং পরিবহনমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় যে মানুষেরা মারা গেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ পদত্যাগ করা আমার কর্তব্য। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

বিবিসি বলছে, গত মঙ্গলবার গ্রিসের লারিসা শহরের কাছে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনের সঙ্গে মালবাহী একটি ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৮ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৮৫ জন।

লারিসা শহরের কর্তৃপক্ষ জানায়, যাত্রীবাহী ট্রেনটি গ্রিসের রাজধানী এথেন্স থেকে উত্তরাঞ্চলীয় শহর থেসালোনিকি যাচ্ছিল। আর মালবাহী ট্রেনটি থেসালোনিকি থেকে লারিসা যাচ্ছিল।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, যাত্রীবাহী ট্রেনটিতে ৩৫০ জন আরোহী ছিলেন। দুর্ঘটনার পর প্রায় ২৫০ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সংঘর্ষের কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কারামানলিস ঘটনাস্থল পরির্দশনের পর দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুলিশ লারিসা শহরের স্টেশন মাস্টারকে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে গাফিলতির কারণে নরহত্যার অভিযোগ এনেছে। ৫৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ট্রেনের সিগন্যাল দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন।

তবে ভুল করার কথা অস্বীকার করেছেন স্টেশন মাস্টার। তিনি দুর্ঘটনার জন্য প্রযুক্তিগত ত্রুটিকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে এই দুর্ঘটনাকে ‘অকল্পনীয় এক মর্মান্তিক ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছেন গ্রিসের প্রেসিডেন্ট ক্যাটেরিনা সাকেলারোপলু। সেইসঙ্গে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।

ট্রেন থেকে লাফিয়ে পড়ে জীবন বাঁচিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী স্টারজিওস মিনেনিস। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলছিলেন, ‘আমরা একটা বিকট শব্দ শুনতে পাই। ট্রেনের কামরার মধ্যে আমরা গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম। তারপর এটি (বগি) গড়িয়ে একদিকে থামলো। তারপর সবার মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হলো। চারিদিকে তার ঝুলছে, আগুন। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে গিয়েছিল। আমরা আগুনে পুড়ে যাচ্ছিলাম।’

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে। কোন প্রাথমিক ধারণা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। দেড়শোর বেশি দমকলকর্মী এবং ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনাস্থলে কাজ করে।