ঢাকা ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

গত বছরের তুলনায় প্রতি বস্তায় ধানের দাম কমেছে ৪শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত : হতাশ কৃষক

মো: খাদেমুল ইসলাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০১:৪৪:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪
  • / ৪৩২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দিনাজপুরের ১৩ টি উপজেলায় বোরো ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক কৃষাণীরা। কৃষকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ধান ক্রয় করছে পাইকাররা। কীটনাশক, ডিজেল, শ্রমিকের মজুরিসহ ধান উৎপাদনের জন্য প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ায় বেড়েছে উৎপাদন খরচ। কিন্তু গেল বারে যে ধান বিক্রি করেছে ২৩০০ টাকা বস্তা এবার সেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮শ টাকা বস্তা। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে শ্রমিক সংকট নিরসনে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করা হয়েছে। আগামীতে বাড়বে ধানের দাম।

জেলার বিরল উপজেলার ৭ নং বিজোড়া ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকার মোঃ হাবিবুর রহমান এবার সাড়ে চার বিঘা জমিতে চিকন জাতের ধানের আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকা থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি বিঘায় ধান পেয়েছেন প্রায় ২৬ মন করে। পাইকারের কাছে বাকিতে প্রতি বস্তা ধান বিক্রি করেছেন ১৮০০ শত টাকা করে। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, কীটনাশক এর দাম বৃদ্ধি, সারের দাম বৃদ্ধি সবকিছু বিবেচনায় লাভের অংকটা খুব একটা বেশি নয়। এই টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

একই ইউনিয়নের গনির মোর এলাকার কৃষক মোঃ হামিদুল আলী পাঁচ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছেন। মালিক কে তার অংশ দেওয়ার পর যা থাকছে তা দিয়ে কোনমতেই সংসার চালাতে পারছেন না তিনি। গেলো বারের চেয়ে ধানের দাম কমে যাওয়ায় বেশ হতাশ তিনি

“বাজারে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি শুধু ধানের দাম কমি যাছে। এইভাবে ধানের দাম কমিলে হামরা তো মরি যাম”অকপটে এমন মন্তব্য করলেন তিনি।

বিরল উপজেলার ১০ নং রানী পুকুর এলাকার কৃষক মোশারফ হোসেন জানালেন,অনেক পাইকার ধান নিতেই চাচ্ছে না। বাকিতে পাইকারদের কাছে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। টাকা যে কখন দিবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এমন অবস্থা যে সংসার আর চলে না। জমিত আর ফেলেই দেখা যায় না বাধ্য হয়ে ধান আবাদ করতে হচ্ছে।

উপজেলার খোসলডাঙ্গী এলাকার পাইকার জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা যেসব মিলাদের কাছে ধান সরবরাহ করি তারা আমাদেরকে ধান কেনার দাম বেঁধে দিয়েছে আমরা সেই মোতাবেক ধান ক্রয় করছি। মিলারাও আমাদেরকে সময় মতো ধানের টাকা দিচ্ছে না যে কারণে কৃষকদের কাছ থেকে অনেক ক্ষেত্রে বাকিতে ধান কিনতে হচ্ছে। তবে ধানের দাম আরো বৃদ্ধি পেলে কৃষক লাভবান হবে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, আমরা গড়পরতায় চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি ৪.৮৭ প্রতি হেক্টরে ও উচ্চ ফলনশীল ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টরে চালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪.৩১ মেট্রিক টন। এই লক্ষমাত্রা পূরণ হবে বলে আমরা আশাবাদী।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুজ্জামান বলেন, শ্রমিক সংকট নিরসনে আমরা কৃষিকে ধীরে ধীরে যান্ত্রিকীকরণ করছি। এর ফলে দূর হবে শ্রমিক সংকট। কৃষকের সময়ের অপচয় নিরসন সম্ভব হবে। ধান কেবল কাঁটামারা শুরু হয়েছে। আগামীতে ধানের দাম বাড়বে বলে আশাবাদী তিনি।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অংশ হিসেবে যন্ত্র দানবের মতো মাঠ থেকে ধান কেটে বস্তায় ধান ভরছে কৃষক। ধান মাড়াই চলছে রাস্তার দুই ধারে যান্ত্রিক উপায়ে। এতে শ্রমিক সংকট ও সময় কিছুটা কম লাগলেও ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ জেলার ১৩ টি উপজেলার কৃষক এমন মন্তব্য জেলার বাম দলের নেতা মোঃ হবিবর রহমান।

দিনাজপুর জেলার ১৩ টি উপজেলায় প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ মেট্রিক টন।

 

বাখ//আর

নিউজটি শেয়ার করুন

গত বছরের তুলনায় প্রতি বস্তায় ধানের দাম কমেছে ৪শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত : হতাশ কৃষক

আপডেট সময় : ০১:৪৪:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

দিনাজপুরের ১৩ টি উপজেলায় বোরো ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক কৃষাণীরা। কৃষকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ধান ক্রয় করছে পাইকাররা। কীটনাশক, ডিজেল, শ্রমিকের মজুরিসহ ধান উৎপাদনের জন্য প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ায় বেড়েছে উৎপাদন খরচ। কিন্তু গেল বারে যে ধান বিক্রি করেছে ২৩০০ টাকা বস্তা এবার সেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮শ টাকা বস্তা। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে শ্রমিক সংকট নিরসনে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করা হয়েছে। আগামীতে বাড়বে ধানের দাম।

জেলার বিরল উপজেলার ৭ নং বিজোড়া ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকার মোঃ হাবিবুর রহমান এবার সাড়ে চার বিঘা জমিতে চিকন জাতের ধানের আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকা থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি বিঘায় ধান পেয়েছেন প্রায় ২৬ মন করে। পাইকারের কাছে বাকিতে প্রতি বস্তা ধান বিক্রি করেছেন ১৮০০ শত টাকা করে। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, কীটনাশক এর দাম বৃদ্ধি, সারের দাম বৃদ্ধি সবকিছু বিবেচনায় লাভের অংকটা খুব একটা বেশি নয়। এই টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

একই ইউনিয়নের গনির মোর এলাকার কৃষক মোঃ হামিদুল আলী পাঁচ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছেন। মালিক কে তার অংশ দেওয়ার পর যা থাকছে তা দিয়ে কোনমতেই সংসার চালাতে পারছেন না তিনি। গেলো বারের চেয়ে ধানের দাম কমে যাওয়ায় বেশ হতাশ তিনি

“বাজারে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি শুধু ধানের দাম কমি যাছে। এইভাবে ধানের দাম কমিলে হামরা তো মরি যাম”অকপটে এমন মন্তব্য করলেন তিনি।

বিরল উপজেলার ১০ নং রানী পুকুর এলাকার কৃষক মোশারফ হোসেন জানালেন,অনেক পাইকার ধান নিতেই চাচ্ছে না। বাকিতে পাইকারদের কাছে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। টাকা যে কখন দিবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এমন অবস্থা যে সংসার আর চলে না। জমিত আর ফেলেই দেখা যায় না বাধ্য হয়ে ধান আবাদ করতে হচ্ছে।

উপজেলার খোসলডাঙ্গী এলাকার পাইকার জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা যেসব মিলাদের কাছে ধান সরবরাহ করি তারা আমাদেরকে ধান কেনার দাম বেঁধে দিয়েছে আমরা সেই মোতাবেক ধান ক্রয় করছি। মিলারাও আমাদেরকে সময় মতো ধানের টাকা দিচ্ছে না যে কারণে কৃষকদের কাছ থেকে অনেক ক্ষেত্রে বাকিতে ধান কিনতে হচ্ছে। তবে ধানের দাম আরো বৃদ্ধি পেলে কৃষক লাভবান হবে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, আমরা গড়পরতায় চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি ৪.৮৭ প্রতি হেক্টরে ও উচ্চ ফলনশীল ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টরে চালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪.৩১ মেট্রিক টন। এই লক্ষমাত্রা পূরণ হবে বলে আমরা আশাবাদী।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুজ্জামান বলেন, শ্রমিক সংকট নিরসনে আমরা কৃষিকে ধীরে ধীরে যান্ত্রিকীকরণ করছি। এর ফলে দূর হবে শ্রমিক সংকট। কৃষকের সময়ের অপচয় নিরসন সম্ভব হবে। ধান কেবল কাঁটামারা শুরু হয়েছে। আগামীতে ধানের দাম বাড়বে বলে আশাবাদী তিনি।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অংশ হিসেবে যন্ত্র দানবের মতো মাঠ থেকে ধান কেটে বস্তায় ধান ভরছে কৃষক। ধান মাড়াই চলছে রাস্তার দুই ধারে যান্ত্রিক উপায়ে। এতে শ্রমিক সংকট ও সময় কিছুটা কম লাগলেও ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ জেলার ১৩ টি উপজেলার কৃষক এমন মন্তব্য জেলার বাম দলের নেতা মোঃ হবিবর রহমান।

দিনাজপুর জেলার ১৩ টি উপজেলায় প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ মেট্রিক টন।

 

বাখ//আর