ঢাকা ১১:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২৫ ভাগ- সিপিডি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৩০:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৬৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে গত এক বছরে দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। বিশেষ করে মাছ, মাংস ও ডিমের দাম বেড়েছে বেশি। ফলে সীমিত আয়ের মানুষ জীবন যাপনের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।

আজ (সোমবার) রাজধানীতে সেন্টার ফর পলিসি এন্ড ডায়ালগ- সিপিডির কার্যালয়ে আগামী বাজেট নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।

এ সময় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে দুর্বলতা ঘনিভূত হচ্ছে, সেটি মোকাবেলা করার একমাত্র উপায় আগামী বাজেট। আসন্ন এই বাজেটে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে যেমন সামঞ্জস্য রাখতে হবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজস্ব আদায়ের খাতগুলোকে বিবেচনায় রাখতে হবে’।

এছাড়া আগামী অর্থবছরে নির্বাচনের ব্যয় কিভাবে কমানো যায় তাও ভাবনার বিষয় বলে জানান তিনি।

সিপিডি বলছে, একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ খাবারের পেছনে খরচ করতে হয়।

সিপিডি আরও বলেছে, ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা শহরের চারজনের এক পরিবারে প্রতি মাসে খাবার কিনতে খরচ হয়েছিল ১৮ হাজার ১১৫ টাকা। মাছ-মাংস না খেলে সেই খরচ ছিল ৫ হাজার ৬৮৮ টাকা। এখন একই পরিবারে প্রতি মাসে খাবারের পেছনেই খরচ হয় ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। তবে মাছ-মাংস না খেলে এই খরচ দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকায়। এই হিসাব গত ফেব্রুয়ারি মাসের। একবছরের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি খাবার খরচ বেড়েছে ২৫.১১ শতাংশ।

সোমবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য দেন গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি খাতে ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা উচিত। পারলে এই ঈদেই বেতন-ভাতা বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়া জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। তাই সব খাতের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো উচিত।

এ ছাড়া এমন অবস্থায় আগামী বাজেটে করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে ন্যূনতম করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।

কয়েক মাস ধরেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চাল, ডাল, তেলের পাশাপাশি মাছ-মাংস, ডিমের দামও বেশ চড়া। সবশেষ বাজারদর অনুযায়ী, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। গরুর মাংসের দাম কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। আর এলাকাভেদে ১ ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকায়। মাছ-মাংসের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের খাবারের পাত থেকে মাছ-মাংস উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

সিপিডি আরও যেসব সুপারিশ করেছে
পাচারের টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে ৭ শতাংশ কর দিলে কোনো প্রশ্ন করবে না সরকার, আগামী বাজেটে এই সুযোগ বন্ধ করার সুপারিশ করেছে সিপিডি। সিপিডি বলছে, এই ধরনের সুযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন। এ ছাড়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগও বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছে সিপিডি। অন্যদিকে ব্যাংক খাতের সংস্কারের জন্য একটি ব্যাংক কমিশন করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।

ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়িয়ে ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সমালোচনা করেছে সংস্থাটি। সিপিডি বলেছে, বিদ্যুতের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে প্রতি মাসে একবার পর্যালোচনা করা উচিত। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ প্রথা বাতিল করে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পে’ ব্যবস্থায় যাওয়া দরকার।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য, রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবণতা, উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি, ব্যাংকে তারল্য ও ডলার-সংকট, আর্থিক খাতের ভারসাম্যহীনতা, রিজার্ভ হ্রাস-এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে আগামী বাজেট করতে হবে। মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতিতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা আনতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করুন

খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২৫ ভাগ- সিপিডি

আপডেট সময় : ০৮:৩০:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে গত এক বছরে দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। বিশেষ করে মাছ, মাংস ও ডিমের দাম বেড়েছে বেশি। ফলে সীমিত আয়ের মানুষ জীবন যাপনের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।

আজ (সোমবার) রাজধানীতে সেন্টার ফর পলিসি এন্ড ডায়ালগ- সিপিডির কার্যালয়ে আগামী বাজেট নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।

এ সময় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে দুর্বলতা ঘনিভূত হচ্ছে, সেটি মোকাবেলা করার একমাত্র উপায় আগামী বাজেট। আসন্ন এই বাজেটে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে যেমন সামঞ্জস্য রাখতে হবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজস্ব আদায়ের খাতগুলোকে বিবেচনায় রাখতে হবে’।

এছাড়া আগামী অর্থবছরে নির্বাচনের ব্যয় কিভাবে কমানো যায় তাও ভাবনার বিষয় বলে জানান তিনি।

সিপিডি বলছে, একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে মোট আয়ের ৬০ শতাংশ খাবারের পেছনে খরচ করতে হয়।

সিপিডি আরও বলেছে, ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা শহরের চারজনের এক পরিবারে প্রতি মাসে খাবার কিনতে খরচ হয়েছিল ১৮ হাজার ১১৫ টাকা। মাছ-মাংস না খেলে সেই খরচ ছিল ৫ হাজার ৬৮৮ টাকা। এখন একই পরিবারে প্রতি মাসে খাবারের পেছনেই খরচ হয় ২২ হাজার ৬৬৪ টাকা। তবে মাছ-মাংস না খেলে এই খরচ দাঁড়ায় ৭ হাজার ১৩১ টাকায়। এই হিসাব গত ফেব্রুয়ারি মাসের। একবছরের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি খাবার খরচ বেড়েছে ২৫.১১ শতাংশ।

সোমবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। বক্তব্য দেন গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসরকারি খাতে ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি করা উচিত। পারলে এই ঈদেই বেতন-ভাতা বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়া জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। তাই সব খাতের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো উচিত।

এ ছাড়া এমন অবস্থায় আগামী বাজেটে করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে ন্যূনতম করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।

কয়েক মাস ধরেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চাল, ডাল, তেলের পাশাপাশি মাছ-মাংস, ডিমের দামও বেশ চড়া। সবশেষ বাজারদর অনুযায়ী, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। গরুর মাংসের দাম কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। আর এলাকাভেদে ১ ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকায়। মাছ-মাংসের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের খাবারের পাত থেকে মাছ-মাংস উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

সিপিডি আরও যেসব সুপারিশ করেছে
পাচারের টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে ৭ শতাংশ কর দিলে কোনো প্রশ্ন করবে না সরকার, আগামী বাজেটে এই সুযোগ বন্ধ করার সুপারিশ করেছে সিপিডি। সিপিডি বলছে, এই ধরনের সুযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন। এ ছাড়া কালোটাকা সাদা করার সুযোগও বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছে সিপিডি। অন্যদিকে ব্যাংক খাতের সংস্কারের জন্য একটি ব্যাংক কমিশন করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।

ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়িয়ে ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সমালোচনা করেছে সংস্থাটি। সিপিডি বলেছে, বিদ্যুতের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে প্রতি মাসে একবার পর্যালোচনা করা উচিত। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ প্রথা বাতিল করে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পে’ ব্যবস্থায় যাওয়া দরকার।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য, রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবণতা, উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি, ব্যাংকে তারল্য ও ডলার-সংকট, আর্থিক খাতের ভারসাম্যহীনতা, রিজার্ভ হ্রাস-এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে আগামী বাজেট করতে হবে। মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতিতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা আনতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।