ঢাকা ১২:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:৪৪:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৪৩৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মিলন মাহামুদ : 

বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। এ কারণে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নতুন কারও শপথ নেওয়ার কথা।

রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তিনি। দেশের সংবিধান অনুযায়ী তার আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। সে কারণে নতুন কাউকে দেখা যাবে তার জায়গায়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শেষ করতে হবে। সে হিসেবে জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই হবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। যথাসময়ে নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনও তাদের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে হলে সংসদ সদস্য হতে হয় না। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সংবিধানের ৪৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকিবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ-সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হইবেন।

সংবিধানমতে, ৩৫ বৎসরের কম বয়সের কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য নির্বাচনে অযোগ্য এবং অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ হইতে অপসারিত কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।

যেহেতু জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, তাই ধরে নেওয়া হয় তারাই এই পদে প্রার্থী দেবে এবং সেই প্রার্থীই নির্বাচিত হবেন। যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই হবেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।

সংবিধানের ৫০(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, একাদিক্রমে হউক না হউক দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না। বর্তমান রাষ্ট্রপতি পরপর দুই মেয়াদে এ দায়িত্ব পালন করে ফেলেছেন।

রাষ্ট্রপতির মেয়াদ এবং পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিষয়ে সাংবিধানিক বিধানের কথা স্মরণ করে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কিছুদিন আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে।

রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যেহেতু তিনি (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) দুই টার্ম থেকেছেন, সংবিধান অনুযায়ী আর থাকতে পারেন না। সেহেতু আমরা নতুন রাষ্ট্রপতি দেখব।

আবদুল হামিদকে তৃতীয় মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে হলে সংবিধান পাল্টাতে হবে কথা জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত সংবিধান পাল্টানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

তৃণমূল থেকে উঠে আসা বর্ষীয়ান ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ মো. আবদুল হামিদ বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রপতি, যিনি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথমে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন তিনি। পাঁচ বছর মেয়াদপূর্তির পর ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

সংবিধান অনুযায়ী তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধানের ৫০(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একাধিক্রমে হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।

কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। রাষ্ট্রের শীর্ষ পদটির জন্য অনেকের নামও শোনা যাচ্ছে।

রাজনীতির অন্দরমহলে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির নাম আলোচিত হচ্ছে। তবে আলাপ-আলোচনা যাই থাকুক না কেন, দিন শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা সেটিই এখন সর্বত্র আলোচনায়। রাষ্ট্রের সবচেয়ে পদে রাজনৈতিকভাবে পোড় খাওয়া ও বিশ্বস্ত কাউকে বেছে নিতে চাইবে আওয়ামী লীগ।

দলীয় সভাপতি বিষয়টি নিয়ে এখনো আলাপ আলোচনা করেননি, এমনটি জানিয়ে দলের অনেক নেতারা বলেন, এখনো সময় আছে। সবকিছু বিবেচনা করে একজন যোগ্য ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হবে, যিনি কোনো রকম প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হলে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন।

বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। সে অনুযায়ী, ২৩ জানুয়ারি থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। এরই ধারাবাহিতকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচন কর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরপর তপশিল ঘোষণা করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন)-এর ৫ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য তফশিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এই নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।

রোববার (১৫ জানুয়ারি) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে নির্বাচন কশিমনার (ইসি) মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, যথাসময়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ‘প্রক্রিয়া’ শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া আমরা শুরু করে দিয়েছি। যথাসময়ে নির্বাচন হবে।

তবে কবে নাগাদ তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে, সে বিষয়ে মন্তব্য করেননি এই নির্বাচন কমিশনার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এভাবে তো বলতে পারবো না, যথাসময়ে হবে। প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আইন অনুযায়ী স্পিকারের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এ প্রসঙ্গে আলাপ হবে।

রাষ্ট্রপতি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন না। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের ভোটে। রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে হলে সংসদ সদস্য হতে হয় না। তবে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে প্রস্তাবক এবং একজনকে সমর্থক হতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে শপথ না নেওয়া পর্যন্ত বর্তমান রাষ্ট্রপতি নিজ পদে বহাল থাকবেন।

ক্ষমতাসীন দল তাদের আস্থাভাজন ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের মনোনীত প্রার্থীই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ ৩৫০টি আসনের মধ্যে ৩০২টি আওয়ামী লীগের। জাতীয় পার্টির ২৬টি, ওয়ার্কার্স পার্টির ৪টি, জাসদের ২টি, বিকল্পধারার ২টি, গণফোরামের ২টি, তরীকত ফেডারেশনের ১টি, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১টি এবং স্বতন্ত্র ৩টি আসন। বিএনপির সাতজন পদত্যাগ করায় সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই। ওই সাত আসনে উপনির্বাচনের কার্যক্রম চলছে।

আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা, গণফোরাম এবং স্বতন্ত্র সদস্যদের রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী দেওয়ার আলোচনা নেই। জাতীয় পার্টি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা, গণফোরাম কিংবা স্বতন্ত্র হিসেবে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেবে। অবশ্যই একজন দক্ষ, সাহসী, মেধাবী ও পরীক্ষিত ব্যক্তিই প্রাধান্য পাবেন। নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে ড. আব্দুর রাজ্জাকের প্রত্যাশা, সব রাজনৈতিক দল যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে- সে বিষয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিতে পারেন। প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও করা যেতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকারের কোনো নির্বাচনের ব্যাপারেই বিএনপির আগ্রহ নেই। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে জাতিরও কিছু যায়-আসে না। আর বর্তমান রাষ্ট্রপতির মতো নতুন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকেও সংকট উত্তরণে কিছুই প্রত্যাশা নেই বিএনপির। এখন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিএনপি বর্তমান অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে এগোচ্ছে। এটাই রাজনৈতিক সংকট সমাধানের একমাত্র উপায়।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে তাঁদের প্রার্থী না থাকলে এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দেবে জাতীয় পার্টি। অবশ্য এর আগে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে একজন পরীক্ষিত রাজনীতিককে প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে আমলা চাই না। কেননা, রাজনৈতিক ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হলে তিনি রাজনীতির ভাষা বুঝতে পারবেন।

এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা নেই। সংবিধানের বাইরে যাওয়া অসম্ভব।

রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের দৃষ্টিতে, এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের পাশাপাশি নির্বাচনের সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা খুবই গুরুত্ব বহন করবে। তাই নির্বাচনকেন্দ্রিক যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় একজন দক্ষ, সাহসী, মেধাবী, পরীক্ষিত ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বিশ্বস্ত ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি করাটা জরুরি মনে করবেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা।

এরই মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে কয়েকজনের নাম ঘিরে। সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতির তালিকায় রয়েছেন রয়েছেন- স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার নামও রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নের আলোচনায় আছে বলে জানান আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।

রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জাতীয় সংসদের বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নিয়ে। এর পেছনে যুক্তিও আছে। প্রথমত এর আগে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্পিকার ছিলেন। সেজন্য স্পিকার থেকে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করতে পারে-এরকম একটি ধারণা অনেকের মধ্যে কাজ করছে। আবার অনেকেই মনে করছেন, ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন।

আবদুল হামিদ যেমন স্পিকার হিসেবে আস্থাভাজন ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য ছিলেন তেমনি শিরিন শারমিনেরও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এ কারণে তাকে আবদুল হামিদের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া শেখ হাসিনা তার চার মেয়াদের শাসনামলে নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীকে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকার, সংসদ উপনেতা পদগুলোতে নারীরা রয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতি পদেও প্রথমবারের মতো কোনো নারীকে দেখা যেতে পারে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। তিনি পরপর তিন দফায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সঙ্গে মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন দক্ষতার সঙ্গে।

নতুন রাষ্ট্রপতির সম্ভাব্য তালিকায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নামও রয়েছে। তিনি তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিক। গাজীপুর-১ আসনের এমপি এবং গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। মন্ত্রিসভা সদস্যদের মধ্যে তিনি সিনিয়র।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নামও রাষ্ট্রপতি হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। তিনি টানা তিন দফায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য হন।

নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায় দিয়েছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নামও রয়েছে নতুন রাষ্ট্রপতির সম্ভাব্য তালিকায়। তিনি আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

তাদের মধ্য থেকে একজনকে রাষ্ট্রপতি করা হতে পারে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন- সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আগামী দিনের জন্য যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, তিনিই হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। তবে আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে সাহসিকতা, দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিনি সংকট উত্তরণে সঠিক অবস্থান নিতে পারবেন, এমন একজনকেই রাষ্ট্রপতি করা হবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।

সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। রাষ্ট্রের প্রধান হলেও রাষ্ট্রপতির তেমন কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। সরকারপ্রধান কিংবা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন রাষ্ট্রপতি। তবে সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, তিনি প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধান বিচারপতি নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি পরামর্শ করতে বাধ্য নন। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হলো নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকে পাঁচ বছর। এর আগে সরকার পরিবর্তন হলেও সংবিধানের বিধান অনুযায়ী তাঁর উত্তরসূরি দায়িত্ব না পাওয়া পর্যন্ত তিনিই রাষ্ট্রপতি থাকবেন।

যেভাবে হবে নির্বাচন: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদ সদস্যরাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটার। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে। এর মুড়ি অংশে স্বাক্ষর দিয়ে ভোটারদের ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। ভোট দেওয়ার পর সংসদকক্ষে স্থাপিত এক বা একাধিক ব্যাটল বাক্সে তা জমা দিতে হবে। প্রত্যেক সংসদ সদস্যের একটি মাত্র ভোট থাকবে। সংসদ সদস্য হিসেবে স্পিকারও এ নির্বাচনে ভোটার। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদকক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচনি কর্মকর্তা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিকসংখ্যক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নাম আলোচনায় সর্বাগ্রে। তবে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতির বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ সারথী হিসেবে ওবায়দুল কাদের যেভাবে দল ও সরকারের কাজ নিরলসভাবে করছেন, তাকে রাষ্ট্রপতি করা হলে দলীয় এবং সরকারি সেসব কাজে ব্যাঘাত বা ছন্দপতন হয় কি না, সে ভাবনা এখন সামনে আসছে। যে কারণে আলোচনায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও আছেন।

রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, এটি একান্তই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবেচনা বা পছন্দের বিষয়। ওনার আস্থায় যিনি আছেন, তাকে তিনি ঠিক করবেন। উনি যেটা ঠিক করেন, দলের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী ওনাকে সেভাবে সহযোগিতা করেন। সুতরাং এই ব্যাপার একান্তই ওনার নিজস্ব এখতিয়ারের মধ্যে। এটি আগাম কারও পক্ষে বলা সমীচীন নয়, সহজও নয়। এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই, ধারণাও নেই।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল অব. ফারুক খান বলেন, সবকিছুই দেশের সংবিধান অনুযায়ী চলছে। তাই যথাসময়ে, যথা নিয়মে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। আগামী রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন এটা নিয়ে এখনো দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি। আওয়ামী লীগ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিবে।

তবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি পদের যোগ্য মনে করেন না বলে দাবি করেছেন ওবায়দুল কাদের। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তার নাম আলোচনায় আসছে জানিয়ে প্রশ্ন করলে ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ওই পদে বসার যোগ্যতা আমার নেই।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়া নিয়ে আমি কখনো প্রত্যাশা ব্যাত করেনি। আমি দলের কর্মী হিসেবে যখন যে দায়িত্ব পেয়েছে চেষ্টা করেছি কাজ করার জন্য এখনো যে দায়িত্ব আছে আমি আমার সার্থমতো চেষ্টা করছে কাজ করার জন্য। রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য আমার নাম কিভাবে আসছে আমি তা জানিনা আমি কখনো এটা নিয়ে ভাবিনি। দল যাকে ভাল মনে করবে তাকে দায়িত্ব দেবে।

সংবিধানের একই ভাগে ১১৯- এ রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পিত আছে। সুতরাং নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে যাবতীয় প্রস্তুতি ও তফসিল ঘোষণা করবে। তবে এই অধিবেশনেই অর্থাৎ ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই নির্বাচন হবে।

উল্লেখ্য, আবদুল হামিদ ১০ বছর ধরে রাষ্ট্রপতির পদে থাকা ছাড়াও দুই দফায় স্পিকার ছিলেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা?

আপডেট সময় : ০২:৪৪:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩

মিলন মাহামুদ : 

বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। এ কারণে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নতুন কারও শপথ নেওয়ার কথা।

রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তিনি। দেশের সংবিধান অনুযায়ী তার আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। সে কারণে নতুন কাউকে দেখা যাবে তার জায়গায়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শেষ করতে হবে। সে হিসেবে জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই হবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। যথাসময়ে নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনও তাদের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে হলে সংসদ সদস্য হতে হয় না। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সংবিধানের ৪৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকিবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ-সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হইবেন।

সংবিধানমতে, ৩৫ বৎসরের কম বয়সের কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য নির্বাচনে অযোগ্য এবং অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ হইতে অপসারিত কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।

যেহেতু জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, তাই ধরে নেওয়া হয় তারাই এই পদে প্রার্থী দেবে এবং সেই প্রার্থীই নির্বাচিত হবেন। যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই হবেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।

সংবিধানের ৫০(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, একাদিক্রমে হউক না হউক দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না। বর্তমান রাষ্ট্রপতি পরপর দুই মেয়াদে এ দায়িত্ব পালন করে ফেলেছেন।

রাষ্ট্রপতির মেয়াদ এবং পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিষয়ে সাংবিধানিক বিধানের কথা স্মরণ করে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কিছুদিন আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে।

রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এক কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যেহেতু তিনি (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) দুই টার্ম থেকেছেন, সংবিধান অনুযায়ী আর থাকতে পারেন না। সেহেতু আমরা নতুন রাষ্ট্রপতি দেখব।

আবদুল হামিদকে তৃতীয় মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে হলে সংবিধান পাল্টাতে হবে কথা জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত সংবিধান পাল্টানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

তৃণমূল থেকে উঠে আসা বর্ষীয়ান ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ মো. আবদুল হামিদ বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রপতি, যিনি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথমে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন তিনি। পাঁচ বছর মেয়াদপূর্তির পর ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

সংবিধান অনুযায়ী তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধানের ৫০(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একাধিক্রমে হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।

কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। রাষ্ট্রের শীর্ষ পদটির জন্য অনেকের নামও শোনা যাচ্ছে।

রাজনীতির অন্দরমহলে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির নাম আলোচিত হচ্ছে। তবে আলাপ-আলোচনা যাই থাকুক না কেন, দিন শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা সেটিই এখন সর্বত্র আলোচনায়। রাষ্ট্রের সবচেয়ে পদে রাজনৈতিকভাবে পোড় খাওয়া ও বিশ্বস্ত কাউকে বেছে নিতে চাইবে আওয়ামী লীগ।

দলীয় সভাপতি বিষয়টি নিয়ে এখনো আলাপ আলোচনা করেননি, এমনটি জানিয়ে দলের অনেক নেতারা বলেন, এখনো সময় আছে। সবকিছু বিবেচনা করে একজন যোগ্য ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হবে, যিনি কোনো রকম প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হলে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন।

বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। সে অনুযায়ী, ২৩ জানুয়ারি থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। এরই ধারাবাহিতকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলবেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচন কর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরপর তপশিল ঘোষণা করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন)-এর ৫ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য তফশিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এই নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।

রোববার (১৫ জানুয়ারি) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে নির্বাচন কশিমনার (ইসি) মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, যথাসময়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ‘প্রক্রিয়া’ শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া আমরা শুরু করে দিয়েছি। যথাসময়ে নির্বাচন হবে।

তবে কবে নাগাদ তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে, সে বিষয়ে মন্তব্য করেননি এই নির্বাচন কমিশনার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এভাবে তো বলতে পারবো না, যথাসময়ে হবে। প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আইন অনুযায়ী স্পিকারের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এ প্রসঙ্গে আলাপ হবে।

রাষ্ট্রপতি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন না। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের ভোটে। রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে হলে সংসদ সদস্য হতে হয় না। তবে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে প্রস্তাবক এবং একজনকে সমর্থক হতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে শপথ না নেওয়া পর্যন্ত বর্তমান রাষ্ট্রপতি নিজ পদে বহাল থাকবেন।

ক্ষমতাসীন দল তাদের আস্থাভাজন ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয়। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তাদের মনোনীত প্রার্থীই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ ৩৫০টি আসনের মধ্যে ৩০২টি আওয়ামী লীগের। জাতীয় পার্টির ২৬টি, ওয়ার্কার্স পার্টির ৪টি, জাসদের ২টি, বিকল্পধারার ২টি, গণফোরামের ২টি, তরীকত ফেডারেশনের ১টি, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১টি এবং স্বতন্ত্র ৩টি আসন। বিএনপির সাতজন পদত্যাগ করায় সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই। ওই সাত আসনে উপনির্বাচনের কার্যক্রম চলছে।

আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা, গণফোরাম এবং স্বতন্ত্র সদস্যদের রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী দেওয়ার আলোচনা নেই। জাতীয় পার্টি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা, গণফোরাম কিংবা স্বতন্ত্র হিসেবে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেবে। অবশ্যই একজন দক্ষ, সাহসী, মেধাবী ও পরীক্ষিত ব্যক্তিই প্রাধান্য পাবেন। নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে ড. আব্দুর রাজ্জাকের প্রত্যাশা, সব রাজনৈতিক দল যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে- সে বিষয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিতে পারেন। প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও করা যেতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকারের কোনো নির্বাচনের ব্যাপারেই বিএনপির আগ্রহ নেই। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে জাতিরও কিছু যায়-আসে না। আর বর্তমান রাষ্ট্রপতির মতো নতুন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকেও সংকট উত্তরণে কিছুই প্রত্যাশা নেই বিএনপির। এখন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিএনপি বর্তমান অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে এগোচ্ছে। এটাই রাজনৈতিক সংকট সমাধানের একমাত্র উপায়।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে তাঁদের প্রার্থী না থাকলে এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দেবে জাতীয় পার্টি। অবশ্য এর আগে দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে একজন পরীক্ষিত রাজনীতিককে প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে আমলা চাই না। কেননা, রাজনৈতিক ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হলে তিনি রাজনীতির ভাষা বুঝতে পারবেন।

এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা নেই। সংবিধানের বাইরে যাওয়া অসম্ভব।

রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের দৃষ্টিতে, এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের পাশাপাশি নির্বাচনের সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা খুবই গুরুত্ব বহন করবে। তাই নির্বাচনকেন্দ্রিক যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় একজন দক্ষ, সাহসী, মেধাবী, পরীক্ষিত ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বিশ্বস্ত ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি করাটা জরুরি মনে করবেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা।

এরই মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে কয়েকজনের নাম ঘিরে। সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতির তালিকায় রয়েছেন রয়েছেন- স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার নামও রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নের আলোচনায় আছে বলে জানান আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।

রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জাতীয় সংসদের বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নিয়ে। এর পেছনে যুক্তিও আছে। প্রথমত এর আগে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্পিকার ছিলেন। সেজন্য স্পিকার থেকে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করতে পারে-এরকম একটি ধারণা অনেকের মধ্যে কাজ করছে। আবার অনেকেই মনে করছেন, ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন।

আবদুল হামিদ যেমন স্পিকার হিসেবে আস্থাভাজন ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য ছিলেন তেমনি শিরিন শারমিনেরও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এ কারণে তাকে আবদুল হামিদের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া শেখ হাসিনা তার চার মেয়াদের শাসনামলে নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীকে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকার, সংসদ উপনেতা পদগুলোতে নারীরা রয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতি পদেও প্রথমবারের মতো কোনো নারীকে দেখা যেতে পারে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। তিনি পরপর তিন দফায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সঙ্গে মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন দক্ষতার সঙ্গে।

নতুন রাষ্ট্রপতির সম্ভাব্য তালিকায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নামও রয়েছে। তিনি তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিক। গাজীপুর-১ আসনের এমপি এবং গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। মন্ত্রিসভা সদস্যদের মধ্যে তিনি সিনিয়র।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নামও রাষ্ট্রপতি হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। তিনি টানা তিন দফায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য হন।

নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায় দিয়েছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নামও রয়েছে নতুন রাষ্ট্রপতির সম্ভাব্য তালিকায়। তিনি আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

তাদের মধ্য থেকে একজনকে রাষ্ট্রপতি করা হতে পারে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন- সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আগামী দিনের জন্য যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, তিনিই হবেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। তবে আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে সাহসিকতা, দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিনি সংকট উত্তরণে সঠিক অবস্থান নিতে পারবেন, এমন একজনকেই রাষ্ট্রপতি করা হবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।

সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। রাষ্ট্রের প্রধান হলেও রাষ্ট্রপতির তেমন কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। সরকারপ্রধান কিংবা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন রাষ্ট্রপতি। তবে সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, তিনি প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধান বিচারপতি নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি পরামর্শ করতে বাধ্য নন। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হলো নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকে পাঁচ বছর। এর আগে সরকার পরিবর্তন হলেও সংবিধানের বিধান অনুযায়ী তাঁর উত্তরসূরি দায়িত্ব না পাওয়া পর্যন্ত তিনিই রাষ্ট্রপতি থাকবেন।

যেভাবে হবে নির্বাচন: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদ সদস্যরাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটার। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে। এর মুড়ি অংশে স্বাক্ষর দিয়ে ভোটারদের ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। ভোট দেওয়ার পর সংসদকক্ষে স্থাপিত এক বা একাধিক ব্যাটল বাক্সে তা জমা দিতে হবে। প্রত্যেক সংসদ সদস্যের একটি মাত্র ভোট থাকবে। সংসদ সদস্য হিসেবে স্পিকারও এ নির্বাচনে ভোটার। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদকক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচনি কর্মকর্তা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিকসংখ্যক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নাম আলোচনায় সর্বাগ্রে। তবে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতির বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ সারথী হিসেবে ওবায়দুল কাদের যেভাবে দল ও সরকারের কাজ নিরলসভাবে করছেন, তাকে রাষ্ট্রপতি করা হলে দলীয় এবং সরকারি সেসব কাজে ব্যাঘাত বা ছন্দপতন হয় কি না, সে ভাবনা এখন সামনে আসছে। যে কারণে আলোচনায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও আছেন।

রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, এটি একান্তই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিবেচনা বা পছন্দের বিষয়। ওনার আস্থায় যিনি আছেন, তাকে তিনি ঠিক করবেন। উনি যেটা ঠিক করেন, দলের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী ওনাকে সেভাবে সহযোগিতা করেন। সুতরাং এই ব্যাপার একান্তই ওনার নিজস্ব এখতিয়ারের মধ্যে। এটি আগাম কারও পক্ষে বলা সমীচীন নয়, সহজও নয়। এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই, ধারণাও নেই।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল অব. ফারুক খান বলেন, সবকিছুই দেশের সংবিধান অনুযায়ী চলছে। তাই যথাসময়ে, যথা নিয়মে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। আগামী রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন এটা নিয়ে এখনো দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি। আওয়ামী লীগ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিবে।

তবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি পদের যোগ্য মনে করেন না বলে দাবি করেছেন ওবায়দুল কাদের। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তার নাম আলোচনায় আসছে জানিয়ে প্রশ্ন করলে ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ওই পদে বসার যোগ্যতা আমার নেই।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়া নিয়ে আমি কখনো প্রত্যাশা ব্যাত করেনি। আমি দলের কর্মী হিসেবে যখন যে দায়িত্ব পেয়েছে চেষ্টা করেছি কাজ করার জন্য এখনো যে দায়িত্ব আছে আমি আমার সার্থমতো চেষ্টা করছে কাজ করার জন্য। রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য আমার নাম কিভাবে আসছে আমি তা জানিনা আমি কখনো এটা নিয়ে ভাবিনি। দল যাকে ভাল মনে করবে তাকে দায়িত্ব দেবে।

সংবিধানের একই ভাগে ১১৯- এ রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পিত আছে। সুতরাং নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে যাবতীয় প্রস্তুতি ও তফসিল ঘোষণা করবে। তবে এই অধিবেশনেই অর্থাৎ ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই নির্বাচন হবে।

উল্লেখ্য, আবদুল হামিদ ১০ বছর ধরে রাষ্ট্রপতির পদে থাকা ছাড়াও দুই দফায় স্পিকার ছিলেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।