ঢাকা ০৬:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কটিয়াদীতে নানা অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত গচিহাটা রেলস্টেশন

এম এ কুদ্দুছ , কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৬:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৬৮০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা রেলওয়ে স্টেশনের যাত্রীদের দূভোগ চরমে পৌঁচেছে। নানা অনিয়ম আর চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে রেল স্টেশনটি। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়মিত অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি। ফলে যে কোন সময় বড় কোন দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জোগাড় হয়েছে যাত্রীদের। তাই প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী যাত্রীরা অভিযোগ করেন কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিকালে তাৎক্ষণিক স্টেশনটি পরিদর্শনে যান। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এগারোসিন্ধু গোধূলি ট্রেনটি স্টেশনে আসবে বলে যাত্রী ছিল প্রচুর। কিন্তু স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা দশজন হলেও তখন উপস্থিত ছিলেন মাত্র একজন। সে সময় স্টেশন মাস্টারের চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালন করছিলেন মদন মোহন দাস নামে এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি নিজেকে স্টেশন মাস্টার পরিচয় দিলেও তার কথাবার্তা ও অসঙ্গতিপূর্ণ আচারণ সন্দেহের সৃষ্টি করে। পরে মদন মোহন দাস স্বীকার করেন তিনি প্রকৃত স্টেশন মাস্টার নয়। তিনি এক সময় রেলওয়েতে চাকরি করেছেন, এখন অবসরপ্রাপ্ত। বর্তমান স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন ফকির কর্মস্থলে বাইরে থাকায়, তার অনুপস্থিতে স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করছেন।

এ সময় স্টেশন মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সহকারী স্টেশন মাস্টার মাহাবুব হোসেনকে দায়িত্ব দিয়ে এসেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনিও অনুপস্থিত, ঢাকায় আছেন। অন্য সহকারী স্টেশন মাস্টার প্রশিক্ষণে আছেন। পয়েন্টসম্যান হিসাবে স্টেশনে অস্থায়ী একজনসহ পাঁচজন কর্মরত আছেন। তাদের কাউকেই স্টেশনে পাওয়া যায়নি। গেইট কিপার হিসাবে দুজনের মধ্যে একজনকে পাওয়া গেছে।

যাত্রীরা জানান, কিছুক্ষণের মধ্যে এগারোসিন্ধু গোধূলি ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে এই স্টেশনে এসে পৌঁছবে। তাই দায়িত্বরত স্টেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনুপস্থিতির ফলে যেকোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ও স্কুল পরিদর্শনে সহশ্রাম- ধুলদিয়া ইউনিয়ানে যান তিনি। ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এ সময় কটিয়াদী ধুলদিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত গচিহাটা রেলস্টেশন এলাকায় গেলে যাত্রীরা এসে স্টেশনে টিকেটের কালোবাজারি, স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং তাদের নিয়মিত অনুপস্থিতির অভিযোগ করেন। আমি তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে স্টেশনটি পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়গুলো অনুসন্ধানের চেষ্টা করি। সেখানে গিয়ে মদন মোহন দাস নামে এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে স্টেশন মাস্টার হিসাবে পরিচয় দেন। বিষয়টি আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হলে, আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বর্তমান স্টেশন মাস্টার নয় বলে জানান, তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি বর্তমান স্টেশন মাস্টার অনুপস্থিত থাকায় দায়িত্বপালন করছেন। এ সময় জানা যায়, সহকারী দুই জন স্টেশন মাস্টারের মধ্যে একজন ঢাকায় অবস্থান করছেন ও অন্যজন প্রশিক্ষণে আছেন, পয়েন্টসম্যান পাঁচজনের মধ্যে কাউকে পাওয়া যায়নি। দুজন গেইট কিপারের মধ্যে একজনকে পাওয়া যায়। সে সময় যাত্রীদের টিকেট কালোবাজারি অভিযোগ সম্পর্কে মদন মোহন দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন, ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। উপস্থিত যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা তিনি ফেরত দেন।

ইউএনও আরো বলেন, স্টেশনের কর্মরতদের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। তাই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।

বিষয়টি নিয়ে আরো জানতে স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন ফকিরের মোবাইল ফোনে কল দিলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

কটিয়াদীতে নানা অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত গচিহাটা রেলস্টেশন

আপডেট সময় : ০৫:৫৬:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০২৩

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা রেলওয়ে স্টেশনের যাত্রীদের দূভোগ চরমে পৌঁচেছে। নানা অনিয়ম আর চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে রেল স্টেশনটি। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়মিত অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি। ফলে যে কোন সময় বড় কোন দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জোগাড় হয়েছে যাত্রীদের। তাই প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী যাত্রীরা অভিযোগ করেন কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিকালে তাৎক্ষণিক স্টেশনটি পরিদর্শনে যান। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এগারোসিন্ধু গোধূলি ট্রেনটি স্টেশনে আসবে বলে যাত্রী ছিল প্রচুর। কিন্তু স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা দশজন হলেও তখন উপস্থিত ছিলেন মাত্র একজন। সে সময় স্টেশন মাস্টারের চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালন করছিলেন মদন মোহন দাস নামে এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি নিজেকে স্টেশন মাস্টার পরিচয় দিলেও তার কথাবার্তা ও অসঙ্গতিপূর্ণ আচারণ সন্দেহের সৃষ্টি করে। পরে মদন মোহন দাস স্বীকার করেন তিনি প্রকৃত স্টেশন মাস্টার নয়। তিনি এক সময় রেলওয়েতে চাকরি করেছেন, এখন অবসরপ্রাপ্ত। বর্তমান স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন ফকির কর্মস্থলে বাইরে থাকায়, তার অনুপস্থিতে স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করছেন।

এ সময় স্টেশন মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সহকারী স্টেশন মাস্টার মাহাবুব হোসেনকে দায়িত্ব দিয়ে এসেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনিও অনুপস্থিত, ঢাকায় আছেন। অন্য সহকারী স্টেশন মাস্টার প্রশিক্ষণে আছেন। পয়েন্টসম্যান হিসাবে স্টেশনে অস্থায়ী একজনসহ পাঁচজন কর্মরত আছেন। তাদের কাউকেই স্টেশনে পাওয়া যায়নি। গেইট কিপার হিসাবে দুজনের মধ্যে একজনকে পাওয়া গেছে।

যাত্রীরা জানান, কিছুক্ষণের মধ্যে এগারোসিন্ধু গোধূলি ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে এই স্টেশনে এসে পৌঁছবে। তাই দায়িত্বরত স্টেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনুপস্থিতির ফলে যেকোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ও স্কুল পরিদর্শনে সহশ্রাম- ধুলদিয়া ইউনিয়ানে যান তিনি। ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এ সময় কটিয়াদী ধুলদিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত গচিহাটা রেলস্টেশন এলাকায় গেলে যাত্রীরা এসে স্টেশনে টিকেটের কালোবাজারি, স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং তাদের নিয়মিত অনুপস্থিতির অভিযোগ করেন। আমি তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে স্টেশনটি পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়গুলো অনুসন্ধানের চেষ্টা করি। সেখানে গিয়ে মদন মোহন দাস নামে এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে স্টেশন মাস্টার হিসাবে পরিচয় দেন। বিষয়টি আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হলে, আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বর্তমান স্টেশন মাস্টার নয় বলে জানান, তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি বর্তমান স্টেশন মাস্টার অনুপস্থিত থাকায় দায়িত্বপালন করছেন। এ সময় জানা যায়, সহকারী দুই জন স্টেশন মাস্টারের মধ্যে একজন ঢাকায় অবস্থান করছেন ও অন্যজন প্রশিক্ষণে আছেন, পয়েন্টসম্যান পাঁচজনের মধ্যে কাউকে পাওয়া যায়নি। দুজন গেইট কিপারের মধ্যে একজনকে পাওয়া যায়। সে সময় যাত্রীদের টিকেট কালোবাজারি অভিযোগ সম্পর্কে মদন মোহন দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন, ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। উপস্থিত যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা তিনি ফেরত দেন।

ইউএনও আরো বলেন, স্টেশনের কর্মরতদের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। তাই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।

বিষয়টি নিয়ে আরো জানতে স্টেশন মাস্টার শাহাবুদ্দিন ফকিরের মোবাইল ফোনে কল দিলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।