ঢাকা ১১:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০১:০৬:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৩
  • / ৫৩৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সরাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত জুলাই মাসের ৩১ দিনে ডেঙ্গুতে যতজন আক্রান্ত হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনে। গত তিনদিন মারা গেছেন নয়জন করে ডেঙ্গু রোগী। এদের নিয়ে দেশে চলতি বছর মৃতের সংখ্যা ৪৫০ ছাড়িয়ে গেল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত জুলাই মাসে ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। আগস্টের ১৭ দিনে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৪৪ হাজার ৪৫ জনে। জুলাইয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২০৪ জনের। আগস্টে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২০২ জনের।

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা প্রতিবেদনে জনানো হয়, বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৪৫৩ জন। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৫৬৫ জন ডেঙ্গুরোগী। এর মধ্যে ৮০৪ জন ঢাকার বাসিন্দা। আর ৭৬১ জন ঢাকার বাইরের।

গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯৫ হাজার ৮৭৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪৬ হাজার ৯৩৩ জন। আর ৪৮ হাজার ৯৪৪ জন ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি হচ্ছে তাতে এবার অন্যান্য বছরের রেকর্ড ছাড়াতে পারে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি বলেও মনে করছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, রাজধানীতে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ঢাকার বাইরে সাত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এসব এলাকার ডেঙ্গু প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সিভিল সার্জন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

২০২০ সালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়।

২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়। ওই বছর ২৮১ জনের মৃত্যুর কথা জানায় অধিদপ্তর। কিন্তু চলতি বছরের ৩ আগস্ট সে রেকর্ড ভেঙে যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি মাসে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৪ হাজার ৪৫ জন, আর এখন পর্যন্ত মৃত্যু হলো ২০২ জনের।

এর আগে গত জুলাই মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন। অর্থাৎ চলতি মাসের ১৮ দিনেই গত জুলাই মাসের পুরো রোগী সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল। আর গত জুলাইতে মৃত্যু হয়েছিল ২০৪ জনের। ফলে এই মাসের ১৮তম দিনেই আগের গোটা মাসের মৃত্যুর সংখ্যাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলল।

জুন মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন। সে সময় মারা যান ৩৪ জন। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন এবং মে মাসে এক হাজার ৩৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। মারা যান জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন এবং এপ্রিল ও মে মাসে দুজন করে।

দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রথম নজরে আসে ২০০০ সালে। এরপর সবচেয়ে ডেঙ্গু বেশি রোগী শনাক্ত হয় ২০১৯ সালে। সে বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন এবং মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।

নিউজটি শেয়ার করুন

আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু

আপডেট সময় : ০১:০৬:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৩

সরাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত জুলাই মাসের ৩১ দিনে ডেঙ্গুতে যতজন আক্রান্ত হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনে। গত তিনদিন মারা গেছেন নয়জন করে ডেঙ্গু রোগী। এদের নিয়ে দেশে চলতি বছর মৃতের সংখ্যা ৪৫০ ছাড়িয়ে গেল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত জুলাই মাসে ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। আগস্টের ১৭ দিনে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৪৪ হাজার ৪৫ জনে। জুলাইয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২০৪ জনের। আগস্টে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২০২ জনের।

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা প্রতিবেদনে জনানো হয়, বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৪৫৩ জন। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৫৬৫ জন ডেঙ্গুরোগী। এর মধ্যে ৮০৪ জন ঢাকার বাসিন্দা। আর ৭৬১ জন ঢাকার বাইরের।

গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯৫ হাজার ৮৭৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪৬ হাজার ৯৩৩ জন। আর ৪৮ হাজার ৯৪৪ জন ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি হচ্ছে তাতে এবার অন্যান্য বছরের রেকর্ড ছাড়াতে পারে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি বলেও মনে করছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, রাজধানীতে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ঢাকার বাইরে সাত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এসব এলাকার ডেঙ্গু প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সিভিল সার্জন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

২০২০ সালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়।

২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়। ওই বছর ২৮১ জনের মৃত্যুর কথা জানায় অধিদপ্তর। কিন্তু চলতি বছরের ৩ আগস্ট সে রেকর্ড ভেঙে যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, চলতি মাসে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৪ হাজার ৪৫ জন, আর এখন পর্যন্ত মৃত্যু হলো ২০২ জনের।

এর আগে গত জুলাই মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন। অর্থাৎ চলতি মাসের ১৮ দিনেই গত জুলাই মাসের পুরো রোগী সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল। আর গত জুলাইতে মৃত্যু হয়েছিল ২০৪ জনের। ফলে এই মাসের ১৮তম দিনেই আগের গোটা মাসের মৃত্যুর সংখ্যাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলল।

জুন মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন। সে সময় মারা যান ৩৪ জন। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন এবং মে মাসে এক হাজার ৩৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। মারা যান জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন এবং এপ্রিল ও মে মাসে দুজন করে।

দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রথম নজরে আসে ২০০০ সালে। এরপর সবচেয়ে ডেঙ্গু বেশি রোগী শনাক্ত হয় ২০১৯ সালে। সে বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন এবং মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।