ঢাকা ০৬:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

আদালতের ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাণীনগরে তিন ফসলী জমিতে জোরপূর্বক জনপ্রতিনিধির রাস্তা নির্মাণ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:০৩:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩
  • / ৪৮৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// নওগাঁ প্রতিনিধি //

নওগাঁর রাণীনগরের বড়গাছা ইউনিয়নের চামটা গ্রামে জোরপূর্বক তিন ফসলী জমির উপর দিয়ে জনপ্রতিনিধিরা রাস্তা নির্মাণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি আদালতের আমলে আনলে আদালত থেকে গত ১৫মে তারিখে ওই রাস্তার উপর ১৪৪ ধারা জারী করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারি কমিশনার (ভূমি) রাণীনগরকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ওই স্থানে এই রাস্তা নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

অভিযোগকারী চামটা গ্রামের বীরেন্দ্র নাথ সরকারের ছেলে বিথীন্দ্র নাথ সরকার বলেন, আমি পেশার তাগিদে ঢাকায় থাকি। চামটা গ্রামের যাতায়াতের জন্য আমার জমির পাশদিয়ে ১৯৬০সাল থেকে একটি পায়ে হেটে যাওয়ার রাস্তা আছে। সেই রাস্তা সংস্কার না করে গ্রামের মাত্র তিনটি প্রভাবশালী পরিবারের চলাচলের জন্য ওই গ্রামের সন্তোষ কুমার সরকারের ছেলে সুবাস সরকার (৩২), রমনীকান্ত সরকারের ছেলে সন্তোষ কুমার সরকার (৬০), মৃত-নীপেন সরকারের ছেলে উত্তম সরকার (৪৩) ও উৎপল সরকার (৩৭), মৃত-অনাথ বন্ধ বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ কুমার বিশ্বাস (৪৭) ও বীরেন্দ্র নাথ সরকারের ছেলে বিকাশ চন্দ্র সরকার (৪৮) দীর্ঘদিন ধরে আমার চামটা মৌজার আরএস ৩৮১নং খতিয়ানের ১৬৩৫দাগের ২১শতাংশ ধানী জমি দখল করে আরেকটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করার পায়তারা করে আসছে।

তারই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসের ৮ তারিখে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রাস্তা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করার পর ১২ তারিখে স্থানীয় মেম্বার মেরিনা আক্তারের যোগসাজসে একটি নামমাত্র প্রকল্প তৈরি করে আমাকে না জানিয়ে আমার আরেক তিনফসলী জমির পশ্চিম ও উত্তর দিকের অংশ দখল করে চামটা হরিমন্দির থেকে নতুন করে আরেকটি রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করে। তখন আমি বিষয়টি জানার পর ওই স্থানে গেলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়ার সঙ্গে প্রাণনাশের হুমকি দিলে আমি সেখান থেকে চলে আসি।

পরে চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে ওই জমির উপর দিয়ে রাস্তা হবে না মর্মে শতভাগ আশ্বস্ত করেন। কিন্তু পরবর্তিতে অদৃশ্য কারণে জনপ্রতিনিধিদের অনুমতিতে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করলে আমি তাৎক্ষণিক ভাবে কাজ বন্ধ রাখার জন্য আদালতের আশ্রয়ে গেলে আদালত থেকে চলতি মাসের ১৫তারিখে ওই রাস্তার উপর ১৪৪ ধারা জারী করলেও তারা সরকারি প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে ওই রাস্তার প্রাথমিক নির্মাণ কাজ শেষ করে। পরবর্তিতে সুষ্ঠ বিচারের দাবীতে উপজেলা প্রশাসন, ভূমি অফিস ও পুলিশ প্রশাসন বরাবর লিখিত ভাবে অভিযোগ করেও আজ পর্যন্ত কোন ফল পাইনি। আমি উপায় না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের দৃষ্টিতে আনার চেস্টা করি। সরকারি ভাবে আগের পুরাতন রাস্তা সংস্কার না করে আমার তিনফসলী জমি দখল করে নতুন রাস্তা কেন নির্মাণ করা হলো আমি সরকারের কাছে এই অন্যায়ের সুষ্ঠ বিচারসহ আমার ফসলী জমি ফেরত চাই।

ওই গ্রামের বীরেন্দ্র নাথ সরকারের ছেলে মাস্টার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন পুরাতর রাস্তা দিয়ে আমাদের কয়েকটি পরিবারকে অনেক ঘুরে আসতে হয়। এতে করে প্রতিনিয়তই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের। তাই বিথীন্দ্র নাথ সরকারের অনুমতি না নিয়েই স্থানীয় ইউপি মেম্বারের সহযোগিতায় তার জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছি। এই রাস্তাটি নির্মাণ হওয়ায় আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। বিথীন্দ্র নাথ যখন এই গ্রামে বসবাস করবে তখন সেও এই রাস্তার উপকারিতা বুঝতে পারবে।

এই বিষয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মেরিনা আক্তারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মাস্টার বলেন, গ্রামবাসীর চাহিদার ভিত্তিতে ও উপর মহলের সুপারিশ থাকায় ওই রাস্তা নির্মাণ করার প্রকল্প প্রদান করা হয় স্থানীয় মহিলা মেম্বারকে। পরবর্তিতে প্রয়োজন হলে আগের পুরাতন রাস্তাটিও সংস্কার করা হবে। তবে জমির মালিকের অনুমতি ছাড়া তার জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা কতটুকু যৌক্তিক সেই বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন, এই বিষয়ে আমি বিথীন্দ্র নাথ সরকারের কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত সরেজমিন পরিদর্শন করে দুই পক্ষকে ডেকে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান করে দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

নিউজটি শেয়ার করুন

আদালতের ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাণীনগরে তিন ফসলী জমিতে জোরপূর্বক জনপ্রতিনিধির রাস্তা নির্মাণ

আপডেট সময় : ০৪:০৩:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩

// নওগাঁ প্রতিনিধি //

নওগাঁর রাণীনগরের বড়গাছা ইউনিয়নের চামটা গ্রামে জোরপূর্বক তিন ফসলী জমির উপর দিয়ে জনপ্রতিনিধিরা রাস্তা নির্মাণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি আদালতের আমলে আনলে আদালত থেকে গত ১৫মে তারিখে ওই রাস্তার উপর ১৪৪ ধারা জারী করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারি কমিশনার (ভূমি) রাণীনগরকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ওই স্থানে এই রাস্তা নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

অভিযোগকারী চামটা গ্রামের বীরেন্দ্র নাথ সরকারের ছেলে বিথীন্দ্র নাথ সরকার বলেন, আমি পেশার তাগিদে ঢাকায় থাকি। চামটা গ্রামের যাতায়াতের জন্য আমার জমির পাশদিয়ে ১৯৬০সাল থেকে একটি পায়ে হেটে যাওয়ার রাস্তা আছে। সেই রাস্তা সংস্কার না করে গ্রামের মাত্র তিনটি প্রভাবশালী পরিবারের চলাচলের জন্য ওই গ্রামের সন্তোষ কুমার সরকারের ছেলে সুবাস সরকার (৩২), রমনীকান্ত সরকারের ছেলে সন্তোষ কুমার সরকার (৬০), মৃত-নীপেন সরকারের ছেলে উত্তম সরকার (৪৩) ও উৎপল সরকার (৩৭), মৃত-অনাথ বন্ধ বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ কুমার বিশ্বাস (৪৭) ও বীরেন্দ্র নাথ সরকারের ছেলে বিকাশ চন্দ্র সরকার (৪৮) দীর্ঘদিন ধরে আমার চামটা মৌজার আরএস ৩৮১নং খতিয়ানের ১৬৩৫দাগের ২১শতাংশ ধানী জমি দখল করে আরেকটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করার পায়তারা করে আসছে।

তারই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসের ৮ তারিখে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রাস্তা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করার পর ১২ তারিখে স্থানীয় মেম্বার মেরিনা আক্তারের যোগসাজসে একটি নামমাত্র প্রকল্প তৈরি করে আমাকে না জানিয়ে আমার আরেক তিনফসলী জমির পশ্চিম ও উত্তর দিকের অংশ দখল করে চামটা হরিমন্দির থেকে নতুন করে আরেকটি রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করে। তখন আমি বিষয়টি জানার পর ওই স্থানে গেলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়ার সঙ্গে প্রাণনাশের হুমকি দিলে আমি সেখান থেকে চলে আসি।

পরে চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে ওই জমির উপর দিয়ে রাস্তা হবে না মর্মে শতভাগ আশ্বস্ত করেন। কিন্তু পরবর্তিতে অদৃশ্য কারণে জনপ্রতিনিধিদের অনুমতিতে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করলে আমি তাৎক্ষণিক ভাবে কাজ বন্ধ রাখার জন্য আদালতের আশ্রয়ে গেলে আদালত থেকে চলতি মাসের ১৫তারিখে ওই রাস্তার উপর ১৪৪ ধারা জারী করলেও তারা সরকারি প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে ওই রাস্তার প্রাথমিক নির্মাণ কাজ শেষ করে। পরবর্তিতে সুষ্ঠ বিচারের দাবীতে উপজেলা প্রশাসন, ভূমি অফিস ও পুলিশ প্রশাসন বরাবর লিখিত ভাবে অভিযোগ করেও আজ পর্যন্ত কোন ফল পাইনি। আমি উপায় না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের দৃষ্টিতে আনার চেস্টা করি। সরকারি ভাবে আগের পুরাতন রাস্তা সংস্কার না করে আমার তিনফসলী জমি দখল করে নতুন রাস্তা কেন নির্মাণ করা হলো আমি সরকারের কাছে এই অন্যায়ের সুষ্ঠ বিচারসহ আমার ফসলী জমি ফেরত চাই।

ওই গ্রামের বীরেন্দ্র নাথ সরকারের ছেলে মাস্টার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন পুরাতর রাস্তা দিয়ে আমাদের কয়েকটি পরিবারকে অনেক ঘুরে আসতে হয়। এতে করে প্রতিনিয়তই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের। তাই বিথীন্দ্র নাথ সরকারের অনুমতি না নিয়েই স্থানীয় ইউপি মেম্বারের সহযোগিতায় তার জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছি। এই রাস্তাটি নির্মাণ হওয়ায় আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। বিথীন্দ্র নাথ যখন এই গ্রামে বসবাস করবে তখন সেও এই রাস্তার উপকারিতা বুঝতে পারবে।

এই বিষয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মেরিনা আক্তারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মাস্টার বলেন, গ্রামবাসীর চাহিদার ভিত্তিতে ও উপর মহলের সুপারিশ থাকায় ওই রাস্তা নির্মাণ করার প্রকল্প প্রদান করা হয় স্থানীয় মহিলা মেম্বারকে। পরবর্তিতে প্রয়োজন হলে আগের পুরাতন রাস্তাটিও সংস্কার করা হবে। তবে জমির মালিকের অনুমতি ছাড়া তার জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা কতটুকু যৌক্তিক সেই বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন, এই বিষয়ে আমি বিথীন্দ্র নাথ সরকারের কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত সরেজমিন পরিদর্শন করে দুই পক্ষকে ডেকে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান করে দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।