ঢাকা ০৪:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

আড়াই লক্ষাধিক টাকার বিদ্যুৎ বিল রাতারাতি হয়ে গেলো ৪৬৫ টাকা 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:০০:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
  • / ৪৪৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

// রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি //

টংয়ের ‘চা দোকানীর আড়াই লাখ টাকার ভুতুরে বিদ্যুৎ বিল’ শিরোণামে শনিবার ‘বাংলা খবর বিডি’সহ গণমাধ্যমে সচিত্র রিপোর্ট প্রকাশের পরে বরিশালের বানারীপাড়ার সেই চা দোকানীর আড়াই লক্ষাধিক টাকার বিদ্যুৎ বিল রাতারাতি হয়ে গেলো মাত্র ৪৬৫ টাকা!  পত্রিকায় রিপোর্ট দেখে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। শুরু হয় দৌঁড়ঝাপ। ওই দিন বিকেলে বরিশাল পল্লী বিদুৎ সমিতি-২’র বানারীপাড়া সাব জোনাল অফিসের প্রকৌশলী আ. আলিম মিটার রিডার রাসেল ও রিপনকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলার মাদারকাঠি গ্রামের রাস্তার পাশের সেই ক্ষুদ্র চা দোকানী হানিফ হাওলাদারের কাছে ছুঁটে যান। কম্পিউটারের সফ্টওয়্যারের ভুলের কারণে তার চায়ের দোকানে ব্যবহৃত ৩০ ইউনিটের স্থলে অস্বাভাবিক ইউনিট আসার ফলে ৪৬৫ টাকার স্থলে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৮৩ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসায় হানিফের কাছে ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করেন। এ সময় তারা হানিফের কাছ থেকে পূর্বে দেওয়া বিশাল অঙ্কের বিদ্যুৎ বিলের কাগজ ফেরত নিয়ে ৩০ ইউনিট ব্যবহারে ৪৬৫ টাকার সংশোধিত বিদ্যুতের বিলের কাগজ তার হাতে তুলে দেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে বরিশাল পল্লী বিদুৎ সমিতি-২’র বানারীপাড়া সাব জোনাল অফিসের এজিএম প্রকৌশলী মতিউর রহমানের মুঠোফোনে কল দিলে তার স্ত্রী রিসিভ করে জানান, স্বামীর (এজিএম) গলায় টিউমারের অপারেশনের জন্য তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। অসুস্থতার জন্য তিনি কথা বলতে পারছেন না।

পরে প্রকৌশলী আ. আলিমের বক্তব্য জানতে বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিলে মিটার রিডার মো. রাসেল জানান, শনিবার রাতে স্ট্রোক করার ফলে স্যারকে (প্রকৌশলী) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাসেল আরও জানান, অফিসের কম্পিউটারের সফ্টওয়্যারের ভুলের কারণে বিশাল অঙ্কের বিল এসেছিলো; পরে তা সংশোধন করে ৪৬৫ টাকার নতুন বিদ্যুৎ বিল গ্রাহক হানিফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, উপজেলার  মাদারকাঠি গ্রামে রাস্তার পাশের ক্ষুদ্র চা দোকানী হানিফ হাওলাদার মাত্র ৫শ’ টাকায় মাসিক ভাড়ার জীর্ণশীর্ণ একটি টং দোকানে চা, পান, বিড়ি, বিস্কুট ও কলা বিক্রি করে কোনমতে চার সদস্যের সংসার চালান।  তার এ দোকানে মালপত্রসহ সর্বসাকুল্যে ১০ হাজার টাকারও পুজিঁ নেই। হানিফের এ চায়ের দোকানে একটি বাল্ব (বাতি) ও ছোট আকারের বৈদ্যুতিক পাখা (খাঁচার ফ্যান) ব্যবহারে প্রতিমাসে ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ শ’ ৪০ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। ঘর মালিক সালাউদ্দিনের নামে বিদ্যুতের মিটার হলেও ব্যবহারকারী হিসেবে ভাড়াটিয়া হানিফ এ বিল পরিশোধ করে থাকেন। গত এপ্রিল মাসে তার বিদ্যুৎ বিল হয়েছিল মাত্র ৩৪০ টাকা। চলতি মে মাসে তার সেই দোকানে বিদ্যুৎ বিল আসে ২ লাখ ৬০ হাজার ১শ’ ৮৩ টাকা। ভুতুরে এ বিলের কাগজ হাতে পেয়ে দরিদ্র চা দোকানী হানিফ হতবাক ও দিশেহারা হয়ে পড়েন। চলতি মে মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে এ বিল পরিশোধ না করলে বিলম্ব মাশুলসহ (সুদ) আগামী ৯ জুনের মধ্যে তাকে গুনতে হবে ২ লাখ ৭২ হাজার ৫শ’ ৭২টাকা। নইলে তার আয়ের একমাত্র উৎস এ দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এ দুঃশ্চিন্তায় তার দু’চোথে অমানিশার ঘোর অন্ধকার নেমে আসে।

এ বিষয়ে চা দোকানী হানিফ হাওলাদার বলেন, ২ লাখ ৬০ হাজার ১শ’ ৮৩ টাকার বিদ্যুৎ বিল হাতে পেয়ে তার স্ট্রোক করার মত অবস্থা হয়। পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশের ফলে তার বিপুল অঙ্কের এ বিদ্যুৎ বিল সংশোধিত হয়ে মাত্র ৪৬৫ টাকা আসায় তিনি স্বস্তির কথা জানিয়ে বানারীপাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি রাহাদ সুমনের প্রতি অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আড়াই লক্ষাধিক টাকার বিদ্যুৎ বিল রাতারাতি হয়ে গেলো ৪৬৫ টাকা 

আপডেট সময় : ০২:০০:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩

// রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি //

টংয়ের ‘চা দোকানীর আড়াই লাখ টাকার ভুতুরে বিদ্যুৎ বিল’ শিরোণামে শনিবার ‘বাংলা খবর বিডি’সহ গণমাধ্যমে সচিত্র রিপোর্ট প্রকাশের পরে বরিশালের বানারীপাড়ার সেই চা দোকানীর আড়াই লক্ষাধিক টাকার বিদ্যুৎ বিল রাতারাতি হয়ে গেলো মাত্র ৪৬৫ টাকা!  পত্রিকায় রিপোর্ট দেখে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। শুরু হয় দৌঁড়ঝাপ। ওই দিন বিকেলে বরিশাল পল্লী বিদুৎ সমিতি-২’র বানারীপাড়া সাব জোনাল অফিসের প্রকৌশলী আ. আলিম মিটার রিডার রাসেল ও রিপনকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলার মাদারকাঠি গ্রামের রাস্তার পাশের সেই ক্ষুদ্র চা দোকানী হানিফ হাওলাদারের কাছে ছুঁটে যান। কম্পিউটারের সফ্টওয়্যারের ভুলের কারণে তার চায়ের দোকানে ব্যবহৃত ৩০ ইউনিটের স্থলে অস্বাভাবিক ইউনিট আসার ফলে ৪৬৫ টাকার স্থলে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৮৩ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসায় হানিফের কাছে ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করেন। এ সময় তারা হানিফের কাছ থেকে পূর্বে দেওয়া বিশাল অঙ্কের বিদ্যুৎ বিলের কাগজ ফেরত নিয়ে ৩০ ইউনিট ব্যবহারে ৪৬৫ টাকার সংশোধিত বিদ্যুতের বিলের কাগজ তার হাতে তুলে দেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে বরিশাল পল্লী বিদুৎ সমিতি-২’র বানারীপাড়া সাব জোনাল অফিসের এজিএম প্রকৌশলী মতিউর রহমানের মুঠোফোনে কল দিলে তার স্ত্রী রিসিভ করে জানান, স্বামীর (এজিএম) গলায় টিউমারের অপারেশনের জন্য তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। অসুস্থতার জন্য তিনি কথা বলতে পারছেন না।

পরে প্রকৌশলী আ. আলিমের বক্তব্য জানতে বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিলে মিটার রিডার মো. রাসেল জানান, শনিবার রাতে স্ট্রোক করার ফলে স্যারকে (প্রকৌশলী) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাসেল আরও জানান, অফিসের কম্পিউটারের সফ্টওয়্যারের ভুলের কারণে বিশাল অঙ্কের বিল এসেছিলো; পরে তা সংশোধন করে ৪৬৫ টাকার নতুন বিদ্যুৎ বিল গ্রাহক হানিফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, উপজেলার  মাদারকাঠি গ্রামে রাস্তার পাশের ক্ষুদ্র চা দোকানী হানিফ হাওলাদার মাত্র ৫শ’ টাকায় মাসিক ভাড়ার জীর্ণশীর্ণ একটি টং দোকানে চা, পান, বিড়ি, বিস্কুট ও কলা বিক্রি করে কোনমতে চার সদস্যের সংসার চালান।  তার এ দোকানে মালপত্রসহ সর্বসাকুল্যে ১০ হাজার টাকারও পুজিঁ নেই। হানিফের এ চায়ের দোকানে একটি বাল্ব (বাতি) ও ছোট আকারের বৈদ্যুতিক পাখা (খাঁচার ফ্যান) ব্যবহারে প্রতিমাসে ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ শ’ ৪০ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। ঘর মালিক সালাউদ্দিনের নামে বিদ্যুতের মিটার হলেও ব্যবহারকারী হিসেবে ভাড়াটিয়া হানিফ এ বিল পরিশোধ করে থাকেন। গত এপ্রিল মাসে তার বিদ্যুৎ বিল হয়েছিল মাত্র ৩৪০ টাকা। চলতি মে মাসে তার সেই দোকানে বিদ্যুৎ বিল আসে ২ লাখ ৬০ হাজার ১শ’ ৮৩ টাকা। ভুতুরে এ বিলের কাগজ হাতে পেয়ে দরিদ্র চা দোকানী হানিফ হতবাক ও দিশেহারা হয়ে পড়েন। চলতি মে মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে এ বিল পরিশোধ না করলে বিলম্ব মাশুলসহ (সুদ) আগামী ৯ জুনের মধ্যে তাকে গুনতে হবে ২ লাখ ৭২ হাজার ৫শ’ ৭২টাকা। নইলে তার আয়ের একমাত্র উৎস এ দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এ দুঃশ্চিন্তায় তার দু’চোথে অমানিশার ঘোর অন্ধকার নেমে আসে।

এ বিষয়ে চা দোকানী হানিফ হাওলাদার বলেন, ২ লাখ ৬০ হাজার ১শ’ ৮৩ টাকার বিদ্যুৎ বিল হাতে পেয়ে তার স্ট্রোক করার মত অবস্থা হয়। পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশের ফলে তার বিপুল অঙ্কের এ বিদ্যুৎ বিল সংশোধিত হয়ে মাত্র ৪৬৫ টাকা আসায় তিনি স্বস্তির কথা জানিয়ে বানারীপাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি রাহাদ সুমনের প্রতি অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।